বাংলা প্রথমপত্র চূড়ান্ত প্রস্তুতি, এসএসসি ২৫
কেননা জ্ঞান স্তর ও অনুধাবন স্তরের প্রশ্নগুলো সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত সংশ্লিষ্ট অধ্যায় থেকে আসে। আর প্রয়োগ স্তর ও উচ্চতর দক্ষতা স্তরের প্রশ্নগুলো উদ্দীপক ও বইয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যায় মিলে হয়। তাই এ ক্ষেত্রে ভালো করে প্রস্তুতি নিতে চাইলে বইয়ের একটি অধ্যায় পড়ার পর ওই অধ্যায়ের কয়টি দিক ও চরিত্র রয়েছে, সেগুলো ভালোভাবে জানতে হবে। চরিত্রের কার কী ভূমিকা রয়েছে, তা ভালোভাবে বুঝে না দেখে খাতায় লেখার চর্চা করবে।
প্রতি উদ্দীপকে চিন্তন দক্ষতার চারটি স্তরের প্রশ্ন থাকে। সেগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানা দরকার।
ক. জ্ঞানমূলক:
অধ্যায়ের ভেতর থেকে যে বাক্যগুলো এক কথায় প্রশ্নোত্তর হয় সেখান থেকে, শব্দার্থ থেকে এবং লেখক-পরিচিতি থেকে জ্ঞান স্তরের প্রশ্ন হবে। এ স্তরের মান ১। খাতার মধ্যে শুধু একটি শব্দ দিয়ে জ্ঞান স্তরের আক্ষরিক অর্থটি উত্তর করতে পারবে; তবে একটি বাক্যে লেখাই উত্তম।
খ. অনুধাবনমূলক:
প্রশ্নপত্রে অনুধাবন স্তরের মান ২ লেখা থাকলেও তোমরা দুটি অংশে উত্তর লিখবে। অর্থাৎ প্রথম অংশে জ্ঞান স্তরের ১ নম্বরের জন্য একটি বাক্যে ভাবার্থ লিখবে। দ্বিতীয় অংশে অনুধাবন স্তরের ১ নম্বরের জন্য বইয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ের আঙ্গিকে তিন-চারটি বাক্যের মধ্যে উত্তর লিখবে। কেউ ইচ্ছা করলে অনুধাবন অংশটি আগেও লিখতে পারে এবং জ্ঞান স্তরের অংশটি পরে লিখতে পারবে।
গ. প্রয়োগমূলক:
প্রয়োগ স্তরের মান ৩ (জ্ঞান স্তর = ১, অনুধাবন স্তর = ১ ও প্রয়োগ স্তর = ১)। তোমরা উত্তরে জ্ঞান স্তরটি একটি বাক্যে লিখবে বই ও উদ্দীপকের ক্রমের ভাবানুবাদে। দ্বিতীয় প্যারায় অনুধাবন স্তরটি পাঁচ-ছয়টি বাক্যে লিখবে বইয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ের আঙ্গিকে। তৃতীয় প্যারায় প্রয়োগ স্তরটি পাঁচ-ছয় বাক্যে লিখবে আলোচ্য উদ্দীপক থেকে। উদ্দীপকের কথা হুবহু লেখা যাবে না, নিজের ভাষায় বর্ণনা করতে হবে। বই ও উদ্দীপক উভয় জায়গায় যেদিক ফুটে উঠেছে কিংবা যে চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে, সেটি ১ বাক্যে মিলিয়ে লিখলে ভালো। এভাবে তিন স্তর তিন প্যারায় লেখা উত্তম।
ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক:
উচ্চতর দক্ষতা স্তরের মান-বণ্টন ৪ (জ্ঞান স্তর = ১, অনুধাবন স্তর = ১, প্রয়োগ স্তর = ১ ও উচ্চতর দক্ষতা = ১)। তোমরা উত্তরে জ্ঞান স্তরটি কারণসহ এক-দুই বাক্যে লিখবে সিদ্ধান্তের ভাব অনুযায়ী। দ্বিতীয় প্যারায় অনুধাবন স্তরটি পাঁচ-ছয়টি বাক্যে লিখবে বইয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ের আঙ্গিকে। তৃতীয় প্যারায় প্রয়োগ স্তরটি পাঁচ-ছয়টি বাক্যে লিখবে প্রদত্ত উদ্দীপক থেকে। চতুর্থ প্যারায় উচ্চতর দক্ষতার স্তরটি পাঁচ-ছয় বাক্যে লিখবে বইয়ের সংশ্লিষ্ট অংশ এবং উদ্দীপকের অংশের সমন্বয় সাধন করে জ্ঞান স্তরে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা পুনরাবৃত্তি করে। এখানে চার প্যারা করলে ভালো হয়। ঘ. নম্বর প্রশ্নোত্তরের জ্ঞান স্তরের উত্তরও খুবই সাবধানে দিতে হবে। কেননা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে ওই প্রশ্নের অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতার দক্ষতা স্তরের ভুল উত্তরের প্রভাব পড়বে। তখন হয়তো পরীক্ষকরা ওই প্রশ্নোত্তরে খুবই কম নম্বর এমনকি শূন্য দিতে পারেন। (ঘ) নম্বর প্রশ্নে উচ্চতর দক্ষতা স্তরের মধ্যে জ্ঞানের উত্তরের সঙ্গে কারণ লেখা উত্তম বলে মনে করি। আর হ্যাঁ, মূলভাব কিংবা চরিত্র নিয়ে উদ্দীপক তৈরি হলে উচ্চতার দক্ষতা স্তরের প্রশ্নোত্তরে শেষ প্যারায় প্রাসঙ্গিক নৈতিকতার কোনো কথা এক বাক্যে লিখলে আরো ভালো।
২০২৫ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বাংলা প্রথম পত্রের লিখিত সৃজনশীল প্রশ্নে গদ্য, কবিতা এবং সহপাঠ অংশে উপন্যাস ও নাটক—এ চারটি বিভাগ থেকে মোট ১১টি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে। গদ্য অংশ থেকে ন্যূনতম দুটি, কবিতা অংশ থেকে ন্যূনতম দুটি, উপন্যাস অংশ থেকে ন্যূনতম একটি ও নাটক অংশ থেকে ন্যূনতম একটিসহ মোট সাত প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। তাই একজন পরীক্ষার্থীকে ৭০ নম্বরের পূর্ণ উত্তরে একটি উদ্দীপকের চারটি প্রশ্নোত্তরের (ক, খ, গ ও ঘ) জন্য প্রায় ৩৫টি বাক্যে গড়ে ২০ থেকে ২২ মিনিট সময় ভাগ করে নিলে ভালো হবে; অন্যথায় বাকি উত্তরগুলো ঠিকভাবে লিখে রিভিশন দেওয়ার সুযোগ পাবে না। সৃজনশীল উত্তর লেখার সময় (ক, খ, গ ও শেষে ঘ নম্বর প্রশ্নের উত্তর) ধারাবাহিকতা রক্ষার চেষ্টা করবে।
বানানের ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে (ক) নম্বর প্রশ্নের জ্ঞান স্তরের উত্তরে বানান ভুল হলে সাধারণত নম্বর দেওয়া হয় না। সম্মানিত ব্যক্তির নামের পরিবর্তে সম্ভ্রাত্মক সর্বনামে তাঁর বানানে চন্দ্রবিন্দু ( ঁ) দিতে হবে। যেকোনো কবিতা/প্রবন্ধ/গল্প/উপন্যাস/নাটক-এর নাম লিখতে হলে অবশ্যই উদ্ধরণ চিহ্ন (যেমন—‘বহিপীর’ নাটক) দেওয়া উচিত। অন্যান্য বিরামচিহ্নের ব্যাপারেও ঠিকভাবে লক্ষ রাখতে হবে। কেননা শুদ্ধভাবে বিরামচিহ্নের ব্যবহার না করলে অনেক সময় অর্থ বদলে যেতে পারে।
এবার বহু নির্বাচনি অংশ নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। পাঠ্যপুস্তক ভালোভাবে পড়া থাকলে বহু নির্বাচনি প্রশ্নে সর্বোৎষ্ট উত্তর নির্বাচন করতে তেমন সমস্যা হবে না বলে মনে করি। তবে বহুপদী সমাপ্তিসূচক ও অভিন্ন তথ্যভিত্তিক অংশে অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা স্তরে একাধিক অপশন থাকতে পারে বলে একটু কঠিন মনে হতে পারে; অবশ্য ঠান্ডা মাথায় ভেবে উত্তর নির্বাচন করলে তেমন কোনো কঠিন মনেই হবে না বলে আশা করি। ২০২৫ সালে বহু নির্বাচনি প্রশ্নপত্রে গদ্যাংশ (১২টি), কবিতাংশ (১২টি) ও সহপাঠ (উপন্যাস ৩টি ও নাটক ৩টি) থেকে মোট ৩০টি বহু নির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে। এই ৩০টি বহু নির্বাচনি প্রশ্ন থেকে তোমরা ৩০টির উত্তর ওএমআর-এ বৃত্ত ভরাট করবে। আর বহু নির্বাচনি পরীক্ষার সময় একটি প্রশ্নোত্তরে কখনোই একাধিক বৃত্ত ভরাট করবে না। এ ছাড়া ফ্লুয়িড ব্যবহার করা, ব্লেড দিয়ে ভুল উত্তরটির আস্তরণ তুলে ওএমআর-এ নতুন বৃত্ত ভরাট করবে না এবং ভাঁজ করবে না।
পরিশেষে বলতে চাই, পাঠ্যপুস্তক খুব ভালো করে পড়তে হবে তোমাদের। সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কেও ঠিক নিয়ম জানতে হবে। পরীক্ষায় যেকোনো উদ্দীপক/দৃশ্যকল্প এবং প্রশ্ন দেওয়া হোক না কেন, পাঠ্যপুস্তকের প্রতিটি অধ্যায়ের শিখন ফল ভালোভাবে আত্মস্থ থাকলে উত্তর দেওয়া তোমাদের পক্ষে খুব সহজ হবে। হাতের লেখা সুন্দর করার চেষ্টা করবে, শুদ্ধ ও যথার্থভাবে প্রাসঙ্গিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবে এবং শেষে রিভিশন দেওয়ার চেষ্টা করবে। তাহলেই আশা করি তোমরা পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফল পাবে।
No comments
Thank you, best of luck