ads

ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম শ্রেণি।। বাংলা ২য় পত্র।। ৮ অনুচ্ছেদ।। শীতের পিঠা।।২. সকালবেলা।। ৩. ঘরের সামনের রাস্তা।।৪. একটি বটগাছের আত্মকথা।। ৫. স্কুল লাইব্রেরি।। ৬.শীতের সকাল।। ৭.যানজট।। ৮.বাংলাদেশের কুটির শিল্প ।।

১. শীতের পিঠা 
ষড়ঋতুর দেশ এই বাংলাদেশ। শীতকাল এদের মধ্যে অন্যতম একটি ঋতু। শীতকালে নতুন ধান ওঠে। সেই ধানে ঘরে ঘরে পিঠা বানানোর উত্সব শুরু হয়। নতুন চালের গুঁড়া আর খেজুর রসের গুড় দিয়ে বানানো হয় নানা রকম পিঠা। নানা তাদের নাম, নানা তাদের রূপের বাহার। ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা ছাড়া আরও হরেক রকম পিঠা তৈরি হয় বাংলার ঘরে ঘরে। পায়েস, ক্ষীর ইত্যাদি মুখরোচক খাবার আমাদের রসনাকে তৃপ্ত করে শীতকালে। এ সময় শহর থেকে অনেকেই গ্রামে যায় পিঠা খেতে। তখন গ্রামের বাড়িগুলো নতুন অতিথিদের আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে। শীতের সকালে চুলার পাশে বসে গরম গরম ভাপা পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। গ্রামের মতো শহরে শীতের পিঠা সে রকম তৈরি হয় না। তবে শহরের রাস্তাঘাটে শীতকালে ভাপা ও চিতই পিঠা বানিয়ে বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া অনেক বড় বড় হোটেলে পিঠা উত্সব হয়। পিঠা বাঙালি সংস্কৃতির একটি অন্যতম উপাদান। আর শীতের পিঠা আমাদের খাদ্য তালিকায় এনেছে বৈচিত্র্য।


২. সকালবেলা
সকালবেলাটা আমার খুবই প্রিয় একটা সময়। আমি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠি। হাতমুখ ধুয়ে আমরা বাড়ির পাশে নদীর তীরে হাঁটতে যাই। সেখান থেকে সকালের সুর্যোদয় খুবই সুন্দর লাগে। সকালে শীতল বাতাস আমার দেহ-মন জুড়িয়ে দেয়। নানা রকম পাখির কলকাকলিতে পরিবেশটা মুখরিত হয়ে ওঠে। এ সময় কৃষকেরা গরু নিয়ে হাল চাষ করতে বের হন। গ্রামের মসজিদে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা সমস্বরে পবিত্র কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করে। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে আমি বাড়ি ফিরে নাশতা করে পড়তে বসি। তারপর বন্ধুদের সঙ্গে মিলে স্কুলে যাই। ছুটির দিনে সকালবেলা আমি বাবাকে নানা কাজে সাহায্য করি। সকালবেলা তাড়াতাড়ি উঠলে আমার সারাটা দিন খুব ভালো কাটে

৩. ঘরের সামনের রাস্তা
আমার ঘরের সামনে একটি পায়ে হাঁটা রাস্তা আছে। ঘর থেকেই রাস্তাটি দেখা যায়। রাস্তাটি শুরু হয়েছে পাশের গ্রাম থেকে। একটি বড় রাস্তার সঙ্গে গিয়ে এটি মিশেছে। সারা দিনই এ রাস্তা দিয়ে মানুষ যাওয়া-আসা করে। কত রকমের মানুষ যে এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করে তার হিসাব নেই। অফিসের কর্মচারী, কৃষক, ছাত্রছাত্রী, দিনমজুর, ফেরিওয়ালা প্রভৃতি পেশার মানুষ সকালবেলা তাদের কর্মক্ষেত্রে যায় এ রাস্তা দিয়ে। কাজ শেষে বিকেলে আবার ফিরে আসে তাদের বাড়িতে এ রাস্তা দিয়েই। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখি পথিকের আনাগোনা। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা—এক এক ঋতুতে রাস্তাটি এক এক রূপ ধারণ করে। পূর্ণিমার রাতে চাঁদের আলোয় রাস্তাটি খুব সুন্দর লাগে। তখন মনে হয় রাস্তাটি যেন চলে গেছে কোনো অজানার দেশে। আমার জীবনের একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে এ রাস্তা


৪. একটি বটগাছের আত্মকথা
আমার জন্ম সাল এখন আর মনে পড়ে না। তবে এ দেশের মানুষকে শ দুয়েক বছর ধরে দেখছি। অনেক সাধু-সন্ন্যাসী আমার ছায়ায় আস্তানা গেড়েছে। বাজার বসেছিল একটানা অনেক দিন। মাঝখানে শুধু মেলা বসত। যুদ্ধের বছরটাতে হাজার হাজার মানুষ চলার পথে আমার ছায়ায় শান্তি খুঁজেছে। অকারণে আমার ওপর অত্যাচারও কম হয়নি। অনেক ভয়ের কাহিনি আছে আমাকে নিয়ে। অনেক শুনেছি মানুষের কষ্টের কাহিনি, নীরব সাক্ষী হয়ে দেখেছিও অনেক। আমার ঝুরি ও ডালপালাগুলো দেখে বৃদ্ধ মনে হলেও এখনো আমি পাখির সঙ্গে, ফুলের সঙ্গে গাই যৌবনের গান। কালের সাক্ষী হিসেবে অনেক সম্মান পেয়েছি আমি। তবু মানুষের সেবা করতে পেরে ধন্য আমি। ধন্য আমার জন্ম।

৫. স্কুল লাইব্রেরি
আমাদের স্কুল লাইব্রেরিটি বেশ পুরোনো। স্কুলের প্রতিষ্ঠালগ্নেই এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় পাঁচ হাজার বই, দেশি-বিদেশি পত্রপত্রিকার এক সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা এটি। চারটি সারিতে ছাত্রছাত্রীরা বসে পড়তে পারে। শিক্ষকদের বসার ব্যবস্থাটাও দারুণ। বহিরাগত পাঠকেরা এখান থেকে বই ধার করে নিয়ে যান। সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত লাইব্রেরিটি খোলা থাকে। আগে স্কুল ভবনে থাকলেও এখন লাইব্রেরিটির জমি তার নিজস্ব। অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি এর সদস্য। প্রতিবছর একটি সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ হয় এখান থেকে। আমার ছাত্রছাত্রীরা এখান থেকেই স্বপ্ন সাজায় ভবিষ্যতের। প্রধান শিক্ষক সবকিছু পরিচালনা করেন। তবে বাংলা বিভাগের শিক্ষক লাইব্রেরির তত্ত্বাবধান করে থাকেন। এটি আমাদের সবার গর্ব।

৬.শীতের সকাল
ছয়টি ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। ছয় ঋতুর মধ্যে শীতের অবস্থান হেমন্তের পর আর বসন্তের আগে। গাছের ঝরা পাতায় ঘটে শীতের আগমন আর বসন্তের নতুন পাতা জাগিয়ে ঘটে শীতের বিদায়। শীতকাল এ দেশের প্রকৃতির অন্য রকম রূপ, যা সম্পূর্ণভাবে ধারণ করে শীতের সকাল। শীতের সকালে কুয়াশার চাদর পরিবেশকে করে মনোরম। যখন এই কুয়াশার চাদর ভেদ করে চারদিকে রুপালি আলো ছড়িয়ে পড়ে, তখন বাড়িঘর, গাছপালা ও প্রকৃতি ঝলমল করে ওঠে। শীতের সকালে নানা ধরনের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে। সকাল বেলার রোদে পিঠা খাওয়ার যে আনন্দ, তা সব আনন্দকেই ছাড়িয়ে যায়। এই আনন্দ চারপাশে উত্সবের সমারোহ তৈরি করলেও শীতের সকাল বেলাটা মানুষ লেপ-কাঁথার নিচেই কাটাতে ভালোবাসে। শীতের সকাল অলস আর উত্সবের আমেজে উপভোগ্য হলেও গরিবদের জন্য তা ঠিকই কষ্টের। সূর্যের আলোর তীব্রতা বাড়লে দূর হয় শীতের সকালের আমেজ। শীতের সকাল প্রকৃতিকে এক পবিত্র সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে, যা ছড়িয়ে থাকে সারা বেলা।

৭.যানজট
যানজট হচ্ছে গাড়ি বা যানবাহনের জট। রাস্তার যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে না পেরে যে অস্বাভাবিক জটের সৃষ্টি হয়, তা-ই যানজট। যানজট বাংলাদেশের শহরগুলোর এক বড় সমস্যা। এই সমস্যা দিন দিন প্রকট হয়েছে দেশের রাজধানী ঢাকায়। যানজটের সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার ঢাকার প্রতিটি মানুষ। ঢাকা বাংলাদেশের মূল কেন্দ্র। তাই দেশের সব শ্রেণির মানুষ ঢাকা শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। জনগণের প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যানবাহনের সংখ্যাও বাড়ছে, যা তৈরি করছে যানজট। এ ছাড়া রাস্তার স্বল্পতা, অপ্রশস্ততা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ আর ট্রাফিক আইন অমান্য করাই হচ্ছে ঢাকা শহরের যানজটের অন্যতম কারণ। আর যানজটের ফলে প্রায়ই মারাত্মক সব দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। প্রয়োজনীয় কাজ নির্ধারিত সময়ে করা সম্ভব হয় না, যা ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনসহ রাষ্ট্রীয় জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যানজট দূর করার জন্য সুষ্ঠুভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ আইন, ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে পালন করাই হতে পারে এ ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ। রাজধানী ঢাকার জীবনযাত্রা উন্নয়ন করার লক্ষ্যে যানজট সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

৮.বাংলাদেশের কুটির শিল্প 
বাংলাদেশের কুটির শিল্পের ঐতিহ্য বহু পুরোনো। কম মূলধনে কিছুসংখ্যক মানুষের শ্রমে ঘরে বসে উত্পাদিত পণ্যকে কুটির শিল্প বলে। এর উত্পত্তি গৃহ বা পরিবারকেন্দ্রিক এবং অবসর সময়ে কম অর্থ ব্যয়ে পরিচালিত। যদিও বর্তমান সময়ে অনেক কুটির শিল্পজাত পণ্য কারখানায় উত্পাদিত হচ্ছে। এ দেশের কুটির শিল্পের অতীতের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবের। ইউরোপে আঠারো শতকে শিল্প-বিপ্লবের আগে কুটির শিল্পই ছিল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তি। এ দেশে ইংরেজ আমলের আগে কুটির শিল্প বেশ সুনাম অর্জন করেছিল। ঢাকাই মসলিনের খ্যাতি পৃথিবীজুড়ে ছিল। আমাদের দেশে এখনো মৃিশল্প, তাঁতশিল্প, অলংকার শিল্পসহ বাঁশ, বেত, কাঠ ও পিতল-কাঁসার তৈজসপত্র ইত্যাদি কুটির শিল্পজাত পণ্য উত্পাদিত হয়। এ ছাড়া পাটের তৈরি সামগ্রীসহ রেশম শিল্প ও খাদি শিল্প উল্লেখযোগ্য। কিন্তু শিল্প-বিপ্লবের প্রবল আধিপত্যে কুটির শিল্প এখন হুমকির মুখে। অ্যালুমিনিয়াম, চীনামাটি, মেলামিনের বাসনপত্র মৃিশল্পকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পিতল-কাঁসার জিনিসপত্র এখন লোকে ব্যবহার করে না। এ ছাড়া বিদেশি পণ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ এবং কলকারখানায় উত্পাদিত পণ্য তুলনামূলক কম দামের কারণে মানুষ এখন কুটির শিল্পের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তাই কুটির শিল্পের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এই শিল্প রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে ভর্তুকি ও সংরক্ষণের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। তবেই কুটির শিল্পের পুরোনো ঐতিহ্য ফিরে আসবে।


No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.