ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম শ্রেণি।। বাংলা ২য় পত্র।। অনুচ্ছেদ।। শীতের পিঠা।।
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ, আর শীতকাল এ দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। শীতের আগমনেই গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠাপুলির উৎসব। নতুন আমনের চালের মিহি গুঁড়ো আর খেজুরের রস থেকে তৈরি সোনালি গুড়ের মিশেলে রূপ নেয় নানান স্বাদ ও রূপের পিঠা। ভাপা পিঠার মিষ্টি গন্ধে মোহিত হয় শীতের সকাল, চিতই পিঠার সরলতা জুড়িয়ে দেয় মন, আর পাটিসাপটা বা পুলি পিঠার নান্দনিকতা লুকিয়ে থাকে এর ঘন স্তর আর ভর্তির মাঝে। পায়েস ও ক্ষীরের মতো মিষ্টান্ন শীতের রসনাকে করে তৃপ্ত। এই মৌসুমে শহরবাসীরা গ্রামমুখী হয় পিঠার স্বাদ নেওয়ার জন্য, ফলে গ্রামীণ বাড়িগুলো হয়ে ওঠে আত্মীয়তা আর উৎসবের মিলনস্থল। চুলোর পাশে গোল হয়ে বসে গরম গরম ভাপা পিঠা খাওয়ার যে সহজ সরল আনন্দ, তা শহুরে জীবনে দুর্লভ। তবে শহরের ফুটপাতেও শীত এলে ভাপা-চিতই পিঠার স্টলে ভিড় জমে। আধুনিক হোটেলগুলোতেও পিঠা উৎসবের আয়োজনে ফিরে আসে বাংলার প্রাচীন এই ঐতিহ্য। কৃত্রিমতার ভিড়ে গ্রাম্য পিঠার স্বাদ যদিও একটু আলাদা, তবু শহুরে মানুষও এই রসনাতৃপ্তি থেকে বঞ্চিত হয় না। আসলে শীতের পিঠা কেবল একটি খাবারই নয়, এটি বাঙালির সমাজজীবন, সম্পর্কের বন্ধন ও প্রাণের উৎসবের প্রতীক। নতুন ফসলের সুখ, প্রকৃতির দান আর মায়াবী শীতের সমন্বয়ে তৈরি এই সংস্কৃতি চিরায়ত বাংলাকে ধারণ করে এক মাটির গন্ধে। তাই পিঠা বানানো এবং খাওয়ার এই রীতি শীতকালীন বাংলার আবহমান ঐতিহ্যেরই জীবন্ত প্রকাশ।
No comments
Thank you, best of luck