ads

একটুখানি স্নেহের ছোঁয়া




গ্রামের ছোট্ট স্কুলটিতে সকালের স্নিগ্ধ আলো পড়েছে। শিক্ষক রফিকুল ইসলাম শ্রেণিকক্ষে ঢুকতেই দেখলেন, শেষ বেঞ্চে বসে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সজীব কাঁদছে। রফিক স্যার ধীরে ধীরে তার কাছে গেলেন। সজীবের কান্নার কারণ জানতে চাইলেন। সজীবের চোখ দিয়ে অঝোরে পানি গড়িয়ে পড়ল। সে জানাল, গত রাতে লঞ্চ দুর্ঘটনায় তার মা-বাবা, দাদা-দাদি এবং দুই ভাই মারা গেছেন। পরিবারের একমাত্র সদস্য এখন সে।

রফিক স্যারের চোখেও পানি চলে এল। তিনি সজীবকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। ক্লাসের অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরাও নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল। সেদিন স্যার সজীবকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিলেন। তারপর থেকে নিয়মিত তার খোঁজখবর নিতে শুরু করলেন।

সজীবের প্রতিবেশী রহিমা খালা, যিনি সজীবের পরিবারের খুব কাছের মানুষ ছিলেন, তিনি সজীবের দেখাশোনার দায়িত্ব নিলেন। রহিমা খালার ছেলে শহিদ, যে ঢাকায় একটি ব্যাংকে চাকুরি করেন। সে সজীবের পড়াশোনার খরচ জোগাতে এগিয়ে এল। সাথে রফিক স্যারও তাকে সাথ্য মতো সহযোগিতা করেন।  শহিদ বলল, “সজীবের বাবা-মা চাইতেন সে বড়ো হয়ে ডাক্তার হোক। আমি তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।”

স্কুলের সহপাঠী সুলতান, যে সবসময় সজীবের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করত, সে এবার তার পাশে দাঁড়াল। সুলতান সজীবের পড়াশোনায় সাহায্য করতে লাগল। তার মা প্রতিদিন সজীবের জন্য বাড়ির খাবার পাঠাতেন।

রফিক স্যার একদিন সজীবের বাড়িতে গেলেন। সজীবের চোখে এখনও বেদনা, কিন্তু সে হাসতে শিখছে। রফিক স্যার বললেন, “জীবনে অনেক দুঃখ আসে, সজীব। কিন্তু তুমি একা নও। আমরা সবাই তোমার সঙ্গে আছি।”

সজীব ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে লাগল। সে বুঝতে পারল, জীবন যতই কঠিন হোক না কেন, মানুষের ভালোবাসা আর সান্ত্বনা তাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। রফিক স্যার, রহিমা খালা, শহিদ ভাই, সুলতান—সবাই মিলে সজীবের জীবনে নতুন আশার আলো জ্বালিয়ে দিল। 

রফিক স্যারের প্রায়ই সজীবের কথা মনে পড়ে। সে এখন কোথায় আছে, কেমন আছে—কিছুই জানেন না। রহিমা খালাও বার্ধক্যে ভুগছেন। শহিদ এখনও ঢাকায় কাজ করে, কিন্তু সজীবের সঙ্গে তারও যোগাযোগ নেই। সুলতান খ্যাতিমান ইঞ্জিনিয়ার, বনানীতে থাকে। 

একদিন রফিক স্যার স্কুলের পুরনো অ্যালবামে সজীবের ছবি দেখছিলেন। হঠাৎ তার মনে হলো, “সজীব কি তার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে? সে কি ডাক্তার হয়েছে? নাকি জীবনের কঠিন পথে হারিয়ে গেছে?”

রফিক স্যার চেষ্টা করলেন সজীবের খোঁজ নিতে। তিনি শহিদকে ফোন করলেন। শহিদ বলল, “স্যার, আমি অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু সজীবের কোনো খোঁজ পাইনি। সে হয়তো আমাদের ভুলে গেছে।”

রফিক স্যার হতাশ হলেন। তিনি ভাবলেন, “সজীব হয়তো এখনও তার বেদনা ভুলতে পারেনি। হয়তো সে আমাদের মনে রাখেনি।”

কিন্তু একদিন হঠাৎই রফিক স্যারের মোবাইল বেজে উঠল। অপর প্রান্ত থেকে একটি পরিচিত কণ্ঠ বলল, “স্যার, আমি সজীব।” রফিক স্যারের চোখে জল চলে এল। সজীব জানাল, সে এখন একজন ডাক্তার। ঢাকায় একটি হাসপাতালে কাজ করে। সে বলল, “স্যার, আপনাদের সাহায্য আর ভালোবাসা ছাড়া আমি এতদূর আসতে পারতাম না। রফিক স্যার আনন্দে কেঁদে ফেললেন। 







No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.