ষষ্ঠ শ্রেণি - বাংলা প্রথম পত্র | মিনু : সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন:
১. আবদুল মালেকের ঘর আলো করে জন্ম নিল এক ফুটফুটে কন্যাশিশু। মালেক ও তার স্ত্রী অনেক আদর করে কন্যার নাম রাখলেন সাবিনা। পাঁচ বছরের সাবিনাকে রেখে মা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। সেই থেকে মেয়েটি চুপচাপ। কারও সঙ্গে মেশে না, কথা বলে না, কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তরও দেয় না। আবদুল মালেক শত চেষ্টা করেও মেয়েকে স্বাভাবিক করতে পারছেন না।
ক. মিনু কিসের সাহায্যে সব বুঝতে পারত?
খ. মিনু অবসর সময়ে ছাদে যেত কেন?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে মিনু গল্পের কোন দিকটির মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের ‘সাবিনা’ মিনু গল্পের মিনুর পুরোপুরি প্রতিচ্ছবি নয়—ব্যাখ্যা করো।
১ নং প্রশ্নের ক. এর উত্তর:
ক. মিনু ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের সাহাযে সবকিছু বুঝতে পারত।
১ নং প্রশ্নের খ. এর উত্তর:
খ. কাঁঠালগাছের শুকনো ডালে হলুদ পাখিটা বসেছে কি না, তা দেখার জন্য মিনু ছাদে যেত।
মিনুর বিশ্বাস, যেদিন কাঁঠালগাছে হলদে পাখি বসবে, সেদিন তার বাবা ফিরে আসবে। মিনু একদিন ছাদে দাঁড়িয়ে ছিল এবং কাঁঠালগাছের ডালে একটি হলুদ পাখি দেখতে পেল। সেদিনই পাশের বাড়ির টুনুর বাবা অনেক জিনিসপত্র নিয়ে বিদেশ থেকে এসেছিল।
১ নং প্রশ্নের গ. এর উত্তর:
গ. মিনু গল্পের মিনুর মা-বাবা হারানোর দুঃখ ও বেদনার দিকটি উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিটি শিশুই সঠিকভাবে বেড়ে ওঠে মা–বাবার আদর, স্নেহ-যত্নে। পৃথিবীতে মা–বাবার বিকল্প নেই। মা–বাবাহারা মিনু অনাথ শিশু। শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী মিনুর আশ্রয় হয় তার এক দূর সম্পর্কের পিসিমার কাছে। সেখানে সে মনের আনন্দেই দিন কাটায়। তার পরও তার মা–বাবার কথা প্রতিনিয়তই মনে পড়ে। তার দৃঢ় বিশ্বাস, তার বাবা এখনো বেঁচে আছে এবং তার আরও বিশ্বাস, যেদিন কাঁঠালগাছটির সরু ডালটিতে হলুদ পাখিটি এসে বসবে, সেদিনই তার বাবা তার জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসবে। দিনের পর দিন বাবাকে পাওয়ার আকুলতায় একসময় সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে উদ্দীপকের সাবিনা মাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ। সে কারও সঙ্গেই স্বাভাবিক হতে পারে না। উদ্দীপকের সাবিনা ও মিনুর জীবনে একই কষ্ট। যদিও গল্প এবং উদ্দীপকে প্রিয়জন হারানোর প্রেক্ষাপট ভিন্ন, তবু তারা দুজনই সম্পূর্ণভাবে না হলেও প্রিয়জন হারানোর দিক দিয়ে একে অপরের মিল রয়েছে। তাই বলা যায়, মিনু গল্পের মিনুর প্রিয়জন হারানোর দুঃখ ও বেদনার দিকটি উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে।
১ নং প্রশ্নের ঘ. এর উত্তর:
ঘ. উদ্দীপকের ‘সাবিনা’ মিনু গল্পের মিনুর পুরোপুরি প্রতিচ্ছবি নয় মন্তব্যটি সত্য কারণ সাবিনার সাথে মিনুর মা-বাবা হারানোর দুঃখ ও বেদনার দিকটির মিল থাকলেও মিনুর অন্যের বাড়িতে আশ্রিত থাকা, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন, সব কাজের দক্ষতাসহ অন্যান্য দিকের সাথে সাবিনার মিল নেই।
‘মিনু’ গল্পের মিনু সর্বগুণে গুণান্বিত পিতৃ-মাতৃহীন এক বোবা বালিকা। সে পিসিমার বাড়িতে সব ধরনের সাংসারিক কাজে দক্ষতা অর্জন করেছে। প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও তার কাজ সবাইকে হার মানায়। তার মধ্যে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের প্রভাব রয়েছে। সে এমন সব জিনিস বুঝতে পারে, এমন সব জিনিস মনে মনে সৃষ্টি করতে পারে, সাধারণ বুদ্ধিতে তার কোনো ব্যাখ্যা হয় না। সে আপন শক্তি দিয়ে তৈরি করে তার নিজস্ব জগৎ।
উদ্দীপকের সাবিনার মধ্যে এসব দিকের কোনোটিই নেই। বরং সাবিনা মাতৃশোকে কাতর হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনের আগ্রহই হারিয়ে ফেলেছে। তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও ব্যর্থ। সে মিনুর মতো করে আপন সৃষ্টিশীলতা দিয়ে তার মনের কষ্টকে জয় করতে পারেনি। এখানে দেখা যায়, মিনু চরিত্রের অনেকগুলো দিক সাবিনার মধ্যে অনুপস্থিত।
উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে তাই বলা যায়, মিনুর অন্যের বাড়িতে আশ্রিত থাকা, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন, আপন সৃষ্টিশীলতা, সব কাজের দক্ষতাসহ অন্যান্য দিকের সাথে সাবিনার মিল নেই। সুতরাং বলা যায়, সামগ্রিক বিবেচনায় বলা যায়, উদ্দীপকের ‘সাবিনা’ মিনু গল্পের মিনুর পুরোপুরি প্রতিচ্ছবি নয় মন্তব্যটি সত্য।
No comments
Thank you, best of luck