বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আইইএলটিএস
প্রস্তুতি গ্রহণ ও পরীক্ষা দিতে বেছে নিতে পারেন ব্রিটিশ কাউন্সিল
যেকোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ধাপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় গ্রহণ করা প্রতিটি সিদ্ধান্তেরই ব্যক্তিজীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। দেশের অনেক শিক্ষার্থীর স্কুল ও কলেজ পর্যায় থেকেই ইচ্ছা থাকে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের। শিক্ষার্থীরা এ সময় থেকেই মনস্থির করে রাখে দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার।
গবেষণামুখী শিক্ষা, প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা এবং উন্নত জীবনযাত্রার লক্ষ্যে দেশ থেকে প্রতিবছর হাজারো শিক্ষার্থী বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। দেশেও সমান তালে বাড়ছে বিদেশি ডিগ্রির গ্রহণযোগ্যতা। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান হারেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে দেশের শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও জার্মানির মতো দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
২০২৪ ওপেন ডোরস রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ১৭ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ। দেশটিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর বর্তমান সংখ্যা পূর্ববর্তী শিক্ষাবর্ষের (২০২২-২৩) তুলনায় ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর বলা যেতে পারে যুক্তরাজ্যের কথা। ইউনেসকোর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে ৫২ হাজার ৭৯৯ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বিদেশে পড়াশোনা করেছে।
এর মধ্যে ছয় হাজার ৫৮৬ জন যুক্তরাজ্যকে বেছে নিয়েছে, যা দেশটিকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বিতীয় জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত করেছে। জার্মানিও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পছন্দের গন্তব্য। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে মোট ছয় হাজার ৪৩৪ জন শিক্ষার্থী জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়েছে।
উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশে যাওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের কিছু ধাপ পাড়ি দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে এসব ধাপে তাদের নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রমাণ দিতে হয়।
তাই প্রস্তুতি গ্রহণের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের এসব বিষয় মনে রেখে সেভাবে নিজেদের প্রস্তুত করে তোলা উচিত, যা তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের স্বপ্ন সত্যি করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই শিক্ষার্থীদের নিজেদের যে দক্ষতা প্রমাণের প্রয়োজন হয় তা হচ্ছে ভাষাগত দক্ষতা। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে ইংরেজি ভাষার প্রয়োজন হয়।
যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি নয়, তাদের জন্য ইংরেজি ভাষা দক্ষতা যাচাইয়ের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও সবচেয়ে জনপ্রিয় টেস্ট হচ্ছে আইইএলটিএস (ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম)। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা প্রমাণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণত ভাষা দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে আইইএলটিএসের সনদ গ্রহণ করে। উল্লেখ্য, বিশ্বের ১৪০টি দেশের ১০ হাজারের বেশি বিশ্ববিদ্যালয় আইইএলটিএস স্কোরকে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করে। ইংরেজিভাষী দেশগুলোর পাশাপাশি ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আইইএলটিএস স্কোরকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণত ভাষার দক্ষতা যাচাই স্কোরের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি ও ভিসার জন্য নির্বাচন করে। এ ক্ষেত্রে আবার ন্যূনতম স্কোর কত হতে হবে, সেটাও উল্লেখ করে দেওয়া থাকে। তাই বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে শিক্ষার্থীদের ভাষাগত দক্ষতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করছে, তাদের উচিত যত দ্রুত সম্ভব এ নিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করে দেওয়া। যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ ও পরীক্ষা দিয়ে ইংরেজি ভাষা দক্ষতা নিয়ে সনদ অর্জনে দেশে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম সেরা হচ্ছে ব্রিটিশ কাউন্সিল।
দুটি মডিউলে আইইএলটিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়—আইইএলটিএস একাডেমিক মডিউল ও আইইএলটিএস জেনারেল মডিউল। তবে উচ্চশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে আইইএলটিএস একাডেমিক মডিউল পরীক্ষা দিতে হয়। এবং চারটি ক্ষেত্রে আইইএলটিএস পরীক্ষায় দক্ষতা যাচাই করা হয়। এগুলো হচ্ছে স্পিকিং, লিসেনিং, রাইটিং ও রিডিং। এসব ক্ষেত্রে মূল্যায়নের ভিত্তিতে আইইএলটিএস স্কোর প্রদান করা হয়।
ব্রিটিশ কাউন্সিলে আইইএলটিএস : আইইএলটিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে দেশে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। আইইএলটিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী যে কেউ ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে আইইএলটিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। আইইএলটিএস পরীক্ষাকে আরো স্বচ্ছন্দ করতে সুবিধাজনক নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল, যা আইইএলটিএসে অংশগ্রহণকারীদের পরীক্ষা প্রস্তুতি ও যাত্রাকে আরো সহজ ও ফলপ্রসূ করবে।
ব্রিটিশ কাউন্সিলে ‘অন কম্পিউটার’ আইইএলটিএস পরীক্ষা দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীরা চিরাচরিত শ্রেণিকক্ষের বাইরে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা কক্ষে বসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। ‘আইইএলটিএস অন কম্পিউটার’-এ পরীক্ষার্থীরা উপভোগ করবে এক নতুন অভিজ্ঞতা। এর মাধ্যমে উত্তর টাইপ করা শুধু দ্রুতই হবে না, পাশাপাশি প্রুফ রিড ও এডিট করাও সহজ হবে, ফলে রাইটিং হবে আরো পরিমার্জিত।
আইইএলটিএসের রিডিং অংশ অনেকের জন্যই চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। পছন্দমতো ফন্ট সাইজ ও টেক্সট থেকে সরাসরি কপি ও পেস্ট করার সুযোগের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীরা এখন রিডিং প্রক্রিয়া আরো সহজ ও চাপমুক্ত করে তুলতে পারবে। ব্রিটিশ কাউন্সিলের আইইএলটিএস সেন্টারগুলোতে ভিড় থাকে কম, যে কারণে পরীক্ষাও দেওয়া যায় ঝামেলামুক্তভাবে। আর পরীক্ষার সময় নিয়েও খুব একটা ঝামেলায় পড়তে হয় না; কেননা পরীক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ব্রিটিশ কাউন্সিল পরীক্ষার স্লটসংখ্যা বাড়িয়েছে, আর ফলও প্রকাশ করছে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে। এ ছাড়া ব্রিটিশ কাউন্সিলে আইইএলটিএস পরীক্ষার্থীরা পাবে ওয়ান স্কিল রিটেকের সুবিধা, যার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী প্রথম চেষ্টায় অনাকাঙ্ক্ষিত ফল পেলে আবার সেই বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে। এই সুবিধাটি শুধু কম্পিউটারের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করা আইইএলটিএস পরীক্ষার্থীরা পাবে।
সম্প্রতি ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে কম্পিউটারভিত্তিক আইইএলটিএস পরীক্ষা দিয়েছেন তানভীর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না আইইএলটিএস পরীক্ষার অভিজ্ঞতা এত সহজ হবে। পরীক্ষা শুরুর মুহূর্ত থেকেই মনে হচ্ছিল, পরীক্ষার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনা করেই সেন্টারটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে।’
পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আর্থিক অসুবিধা লাঘবে বিনা ইন্টারেস্টে ইনস্টলমেন্টে পেমেন্ট করার সুবিধা নিয়ে এসেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। পরীক্ষার্থীরা এখন ব্রিটিশ কাউন্সিলের ইএমআই অপশনের মাধ্যমে পরীক্ষার ফি পরিশোধ করতে পারবে।
রেডি প্রিমিয়াম সুবিধা : ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে আইইএলটিএস পরীক্ষা বুকিং করলে দ্রুত তারিখ পাওয়া যাবে শুধু তা-ই নয়, পাশাপাশি সুযোগ থাকবে সঠিক প্রস্তুতির জন্য বিনা খরচে প্রিমিয়াম টুলস ব্যবহার করার। ব্রিটিশ কাউন্সিলের আইইএলটিএস রেডি প্রিমিয়ামে থাকবে ৪০টি পূর্ণাঙ্গ প্র্যাকটিস টেস্ট (২৫টি একাডেমিক ও ১৫টি জেনারেল) এবং সঠিক পরামর্শ ও নির্দেশনা পেতে লাইভ ও রেকর্ডেড লেসন। সঙ্গে প্র্যাকটিস কোয়েশ্চেনের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীরা ঝালাই করে নিতে পারবে তাদের রিডিং, রাইটিং ও লিসেনিংয়ের দক্ষতা। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এই টুলগুলো সব মোবাইলেই ব্যবহার করা যাবে।
দেশে আইইএলটিএস পরীক্ষার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে নিজেদের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে এসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। ব্রিটিশ কাউন্সিলে আইইএলটিএস পরীক্ষা অগ্রিম বুকিং করলে পরীক্ষার্থীরা সুবিধাজনক স্লট নিশ্চিতের পাশাপাশি আইইএলটিএস রেডি প্রিমিয়ামের মতো মূল্যবান রিসোর্স ব্যবহারের সুযোগ পাবে। তাই উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ভবিষ্যৎ সাফল্যের জন্য সঠিক ও সুবিধাজনক উপায়ে আইইএলটিএস দিতে আগ্রহীরা যোগাযোগ করতে পারবে ব্রিটিশ কাউন্সিলে।
No comments
Thank you, best of luck