ads

যিশুর ভালোবাসার গুণে কাটুক অন্ধকার


বিশ্ব বর্তমানে এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করিতেছে। হিংসা, দ্বেষ, সংঘাত ও স্বার্থপরতার বন্ধ পরিবেশে মানবসমাজ যেন আপন আলোকসঞ্চার ভুলতে বসেছে। এই প্রেক্ষাপটে মহামতি যিশু খ্রিষ্টের ভালোবাসার আদর্শ ও ক্ষমার দৃষ্টান্ত নবজীবনের পথ দেখাতে পারে। দুই সহস্রাধিক বৎসর পূর্বে যিনি এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে মানবজাতির জন্য সত্য, ন্যায়, প্রেম ও ক্ষমার বার্তা নিয়ে এসেছিলেন তার শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা আজ আরো গভীরতর হয়েছে। মহান যিশু মানবজাতির জন্য ছিলেন এক মহাপ্রেমিক ও ক্ষমাশীলতার দৃষ্টান্ত। তার জীবন আমাদের শিক্ষা দেয়-কীভাবে প্রতিকূলতা, দুঃখকষ্ট ও অত্যাচারের মধ্যেও প্রেমের অমৃতধারা বহমান রাখা যায়। যিশুর জীবনের মূলতত্ত্ব হলো ভালোবাসা এবং সেই ভালোবাসাই তার মহত্ত্বের ভিত্তি। আধুনিক কালে, যখন মানবসমাজ বিভক্তির বিষাক্ত ছোবলে জর্জরিত, যিশুর এই প্রেমের শিক্ষাই আমাদের পরিত্রাণের পথ প্রদর্শন করিতে পারে। কারণ মহান যিশু বলেছিলেন, 'তোমরা তোমাদের শত্রুকেও ভালোবাসবে।' এই বাণী শুধু তত্ত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তিনি নিজ জীবন দিয়ে এর সার্থকতা প্রমাণ করেছেন। যখন তাকে ক্রুশে বিদ্ধ করা হয়েছিল, তিনি তাদেরকে ক্ষমা করবার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন- 'পিতঃ, এদেরকে ক্ষমা করো: কেননা এরা জানে না এরা কী করছে!' এই উক্তি তার অসীম ক্ষমাশীলতার প্রতীক।

মহান রুশ লেখক টলস্টয় যিশুর আদর্শ নিয়ে লিখেছেন, 'যিশুর প্রেম ও ক্ষমার শিক্ষাই মানবজাতির প্রকৃত মুক্তির পথ।' আমরা যদি এই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হই, তা হলে ব্যক্তিগত জীবনে যেমন শান্তি আসবে, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে সম্প্রীতির সেতু স্থাপিত হবে। বিশ্বব্যাপী আজ পরিবেশদূষণ, যুদ্ধবিগ্রহ এবং বৈষম্যের করালগ্রাস মানবজাতিকে একটি অন্ধকারময় ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই সময়ে যিশুর শিক্ষা আমাদের পুনরায় আলোয় ফিরিয়ে আনতে পারে। মহাত্মা গান্ধী একবার বলেছিলেন, 'যিশুর জীবনই তার বার্তা। তাঁর জীবন আমাদের শিক্ষা দেয়-কীভাবে প্রেমের শক্তি দিয়ে পৃথিবী পরিবর্তন করা যায়।' প্রকৃতপক্ষে, যিশুর শিক্ষা কেবল ধর্মীয় পরিমণ্ডলে সীমাবদ্ধ না; এটা সর্বজনীন মানবতাবাদে ভাস্বর। তিনি বলেছিলেন, 'যদি তুমি সত্যিকারের সুখ লাভ করতে চাও, তবে অন্যকে সুখী করো।' এই বাণী আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, স্বার্থপরতার বন্ধন হতে মুক্ত হয়ে আমরা কেবল তখনই প্রকৃত মানব হতে পারি, যখন আমরা অন্যের কল্যাণে নিবেদিত হই। সেন্ট টেরেসার কথাই ধরা যাক। তিনি বলেছিলেন, 'আমরা সকলেই ঈশ্বরের হস্তের এক খণ্ড কলম, যার দ্বারা ঈশ্বর ভালোবাসার বার্তা লেখেন।' আমাদের উচিত, এই ভালোবাসার বার্তাকে জীবনের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া। বিশ্ব যখন বিভাজনের দিকে ধাবিত, তখন যিশুর ঐক্যের বাণী আমাদের নবজীবনের দিশা দেখাতে পারে।

খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ভালোবাসা ও সেবার দৃষ্টান্ত সর্বজনবিদিত। কবি কাজী নজরুল ইসলাম যিশুর দারিদ্র্যের মাহাত্ম্য উল্লেখ করে লিখেছেন, 'হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করিয়াছ মহান।' যিশু শিখয়েছেন  দরিদ্র বা বিত্তবান হতে নয়ে, বরং হৃদয়ের বিশুদ্ধতাই মানুষের প্রকৃত পরিচয়। সেই কোনকালে কবি বড়ু চণ্ডীদাস বলেছিলেন- 'সবার উপরে মানুষ সত্য'-কিন্তু আধুনিক বিশ্ব যেন তা ভুলতে বসেছে। হানাহানি আর মতলববাজিতে ভরে গেছে গোটা বিশ্ব। খ্রিষ্টের ক্ষমা এবং মানবপ্রেমের দৃষ্টান্ত বিশ্বের কাছে তুলে ধরার শ্রেষ্ঠ সময় এখন। ভেঙে যাক যত অমানবতার দেওয়াল। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলা যায়- 'ভাঙো বাঁধ ভেঙে দাও, বাঁধ ভেঙে দাও, বাঁধ ভেঙে দাও।/ বন্দী প্রাণ মন হোক উধাও।' যিশুর জন্মতিথি আমাদের অনুপ্রাণিত করুক সকল অমানবতার দেওয়াল ভাঙে ফেলতে। মহান যিশুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিশ্বের মোড়লরা যদি মানবতার চেয়ে আর কোনো কিছুকে বড়ো করে না দেখেন তা হলে আমরা বিশ্বের সংকটগুলো কাটিয়ে উঠতে পারব না। আজকের এই শুভদিনে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের জন্য রইল প্রীতি-শুভেচ্ছা। শুভ হউক বড়োদিন।



No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.