ads

কেন বিটরুট খাওয়া উচিত?

ছবি: সংগৃহীত
বিটরুট যেন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের ‘জিপ ফাইল’। এতে পাবেন ম্যাঙ্গানিজ, ফোলেট, রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২) ও পটাশিয়াম, যা হাড় ও পেশিকে রাখে সুস্থ–সবল। এ ছাড়া এতে আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, জিংক, আয়োডিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি। ফাইবার বা আঁশ ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট তো আছেই। এত কিছুর কারণেই বিটরুটকে বলা হয় ‘সুপারফুড’। 

বিটরুট হলো সবজি জাতীয় খাবার।  এ বিটরুট নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস থাকা জরুরি। কেননা বেগুনি রঙের এ সবজিতে লুকিয়ে রয়েছে নানা উপকারী গুণ, এমনই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। 

ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রাচীন গ্রিক ও রোমানরা বিভিন্ন রোগের হাত থেকে নিস্তার পেতে নিয়ম করে বিট খেতেন। কেন জানেন? কারণ বিটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন সি।


পুষ্টিগুণ পেতে বিট রুট সালাদ করে খেতে পারেন। কিংবা শরবত করেও খাওয়া যায় এটি। পুষ্টিবিদদের মতে, বিটের তৈরি শরবত পটাসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি সিক্সের বিশাল ভাণ্ডার।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এই রস দারুণ কাজ করে। এছাড়া যাদের কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে, হাড়ে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি রয়েছে তাদের নিয়মিতই বিটরুটের রস খাওয়া প্রয়োজন।

এতে রয়েছে ভিটামিন এ ও ক্যারোটিন। তাই চোখ ও রেটিনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে বিটরুট।

বিটে বিটেইন ও ট্রিপটোফোন উপাদান মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। যারা ডিপ্রেশন বা দুশ্চিন্তায় ভোগেন তারা ডায়েট লিস্টে বিটের রস নিশ্চিন্তে রাখতে পারেন।

বিটরুটে আয়রন থাকে, যা রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে। এতে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ হয় এবং শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ উন্নত হয়।

বিটরুটে ফোলেট থাকে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়তা করে।  

নিয়মিত বিটরুট খাওয়ার অভ্যাস শরীরের কোষকে ক্ষতিকর মুক্ত রেডিকেল থেকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।

বিটরুট শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ উন্নত করে এবং কর্মক্ষমতা বাড়ায়। একে ‘ন্যাচারাল এনার্জি বুস্টার’ বলা হয়, কারণ এটি দীর্ঘক্ষণ কাজ করার ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

বিটরুটে ফোলেট থাকে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়তা করে এবং মানসিক চাপ কমায়। এটি মুড বুস্টার হিসেবেও কাজ করতে পারে।

মোটকথা বিটরুট খেলে অনেক উপকার। এর মধ্যে ছয়টি বিশেষ উপকারিতার কথা জেনে রাখুন। 

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
বিটরুটে পাবেন নাইট্রেট। এই নাইট্রেট আমাদের দেহে ঢুকে পরিণত হয় নাইট্রিক অক্সাইডে। জানেন নিশ্চয়ই, রক্তচাপ ঠিক রাখতে এর ভূমিকা দারুণ। নাইট্রিক অক্সাইডের প্রভাবে আমাদের রক্তনালি ঠিকঠাক থাকে। ফলে সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক দুই ধরনের রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে। বিটরুট শরীরের রক্তপ্রবাহ আরও ভালো করে। ফলে আমাদের হৃৎপিণ্ড হয় শক্তিশালী এবং হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি যায় কমে।

ওজন কমায়
১০০ গ্রাম সেদ্ধ বিটে পাবেন ৪৪ ক্যালরি, ১ দশমিক ৭ গ্রাম প্রোটিন, ০ দশমিক ২ গ্রাম ফ্যাট ও ২ গ্রাম ফাইবার। সেদ্ধ বিটরুট খেলে পাবেন প্রচুর পুষ্টি, কিন্তু এতে ক্যালরি থাকবে কম। অর্থাৎ পুষ্টি ঠিকঠাকমতো পাবেন আর ওজনও বাড়বে না।

শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়
যাঁরা অ্যাথলেট বা নিয়মিত খেলাধুলা ও ব্যায়াম করেন, তাঁরা বিটরুটের জুস খেতে পারেন নিয়মিত। অ্যাথলেটদের প্রচুর শক্তির দরকার। বিটে থাকা নাইট্রেট শরীরের কোষে শক্তি উৎপাদক মাইটোকন্ড্রিয়ার কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। আর এতে শারীরিক কর্মক্ষমতাও বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিটের জুস শরীরের সহনশীলতা ও কার্ডিওরেসপিরেটরি (শ্বাসপ্রশ্বাসে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস উভয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত) কর্মক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া ব্যায়ামের সময় শরীরে অক্সিজেন ব্যবহারের যে প্রক্রিয়া, তা আরও গতিশীল করে।



ছবি: পেক্সেলস বিটরুট অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহরোধী গুণে ভরপুর 

প্রদাহ কমায়: 
বেশির ভাগ রোগবালাইয়ের মূল কারণ প্রদাহ। শরীরের রোজকার নানা ছোটখাটো সমস্যা সেরে না উঠলে মারাত্মক প্রদাহের রূপ ধারণ করে। আর বিটরুট অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহরোধী গুণে ভরপুর। বিটের দারুণ গাঢ় রঙের নেপথ্যে আছে ‘বিটালেইন’ নামের রঞ্জক উপাদানটি। নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ বিটালেইনে থাকে প্রদাহরোধী উপাদান। ফলে প্রদাহ থেকে দূর থাকতে চাইলে বিটরুট খান।

অন্ত্র সুস্থ ও সবল রাখে: 
ভালো হজম ও সুস্থ লিভারের জন্য দরকার ফাইবার বা আঁশ। যা বিটরুটে পাবেন প্রচুর পরিমাণে। বিটরুট শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ ধুয়েমুছে সাফ করে দেয়। যার ফলে আপনি থাকবেন নীরোগ। আমাদের শরীরে সুগার বা শর্করার মাত্রা কমবেশি হলে কী সমস্যা হতে পারে, তা তো সবার জানা আছে। বিটরুটের রস রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য যা জরুরি দরকার। রোজকার জীবনে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় আমাদের, তাই প্রচুর শক্তিও দরকার। বিটরুট খেলে শরীরে সারা দিন শক্তি স্থিতিশীল থাকে।

মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে: 
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্ক দুর্বল হতে থাকে। বিটরুট মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়। ফলে বেড়ে যায় স্মৃতিশক্তি। অর্থাৎ বিটরুট মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতেও দারুণ কার্যকর।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বিট খাওয়ার অভ্যাস শরীরে ক্যানসার প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে। তবে যাদের নিম্ন রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, গলব্লাডারে পাথর কিংবা অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের এই রস গ্রহণ না করাই ভালো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।






No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.