শিক্ষা খাতে ১৩ চ্যালেঞ্জ
বিগত সরকারের সময়ে শিক্ষার গুণগত মান কতটা নিম্নমুখী হয়েছে, তা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। শুক্রবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিক্ষা খাতে ১৩টি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-প্রাক-প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ না করা, প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া, মাধ্যমিক শিক্ষায় অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষার্থী ভর্তি, ভর্তির ক্ষেত্রে ধনী- গরিবের ব্যবধান এবং মাদ্রাসা শিক্ষার মান চাকরির বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়া। এছাড়া শিক্ষা খাতের অন্যান্য চ্যালেঞ্জ হলো-শিক্ষক সংকট, উচ্চশিক্ষায় সরকারি কলেজে একই শিক্ষক দিয়ে উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা দেওয়া, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও গবেষণা পরিচালনার জন্য শিক্ষক- শিক্ষার্থী অনুপাত সন্তোষজনক না হওয়া। জানা গেছে, এসব বিষয় চিহ্নিত করে প্রথমবারের মতো অ্যাকশন প্ল্যানের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। শিগগির এটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, জাতীয় বাজেটে বছর বছর শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া ছাড়াও অবকাঠামো ও কৌশলগত প্রক্রিয়াতেও ছিল বড় ধরনের উদাসীনতা। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আলাদা কোনো অবকাঠামো না থাকা, বিদ্যালয়ের অপার্যপ্ততায় দূরত্বের কারণে সন্তানদের শিক্ষাগ্রহণে পাঠাতে অভিভাবকের অনীহার পরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ার মতো বিষয়গুলো ক্রমান্বয়ে প্রকট হয়েছে। ফলে প্রাথমিকে ভর্তির হার শতভাগ হলেও ঝরে পড়ার হার এখনো প্রায় ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। যারা এখনো স্কুলে পড়ছে, তারাও পরিপূর্ণ শিক্ষা লাভ করছে না। এভাবে প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোরও চিত্র প্রায় একই দেখা যাচ্ছে। মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব যেমন আছে, রয়েছে শিক্ষকেরও অভাব।
মনে রাখতে হবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত শিক্ষার মানোন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। এজন্য শুধু অর্থ বরাদ্দ দিলেই চলবে না, বরাদ্দকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়া বিদ্যালয় পরিচালনায় অভিভাবকরা সম্পৃক্ত হন না, যা মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের অন্তরায়। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অভিভাবকরাও যাতে সম্পৃক্ত হন, সে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে দেখা যায়, এর মান চাকরির বাজারের সঙ্গে খুব বেশি প্রাসঙ্গিক নয়। সেক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নিলে অন্তরায় দূর হয়, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণ শিক্ষার্থী ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের শিখন ও ফলের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে, তা দূর করতেও নিতে হবে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ। শিক্ষা খাতে শৃঙ্খলা ও মানোন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।
No comments
Thank you, best of luck