নতুন সময়ের নায়কেরা
ইদানিং অনেকেই পরামর্শ দিচ্ছেন, যেসব ছাত্র এই বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁদের উচিত দ্রুত একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা। আমার মনে হয় তাঁরা অনেকেই বাস্তবতাটা বুঝতে পারছেন না অথবা জেনে শুনে গোপন করতে চাইছেন কিংবা ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে চাইছেন, পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছেন।
আমার জানা মতে, এই ছাত্ররা অবশ্যই রাজনীতি করে এবং করছে। বিশেষত যারা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে তারা বিদ্যমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে কোনো না কোনোভাবে জড়িত। ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখুন। এই ছাত্রদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, গণপরিষদের ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত। এছাড়াও এখানে ছাত্রলীগ, বামপন্থী ছাত্র সংগঠনসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত অনেক রয়েছে। এদের সাথে সহায়ক শক্তি হিসাবে যেছাত্র শক্তি পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তাঁরা হয়তো অরাজনৈতিক হতে পারে। কিন্তু এই ছাত্র আন্দোলনের নেতৃস্থানীয়রা শুরু থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত। বিশেষ করে এই আন্দোলনের নেতাদের পেছনে যে শক্তিটি মূল কলকাঠি নেড়েছে সেটা অবশ্যই রাজনৈতিক শক্তি।
আমার জানাশোনা ও বোঝা থেকে এটুকু আমি বলতে পারি, এটি কোন অরাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না, কখনোই না। এটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত একটি আন্দোলন ছিল যেটা প্রচলিত রাজনৈতিক কাঠামোকে এড়িয়ে ভিন্ন কোনো কাঠামোকে ব্যবহার করে পরিচালনা করেছে উল্লিখিত রাজনৈতিক দলগুলো। কেননা, প্রচলিত রাজনৈতিক কাঠামোর বেশিরভাগ এর সাথেই সরকার ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সাথে নানা ধরনের সম্পর্কের কারণে বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়া বা আন্দোলনটি কেনা বেচা হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থেকে এই আন্দোলনে অপ্রচলিত কাঠামো ব্যবহার করা হয়েছে। যেকারণে এই আন্দোলনের বা এই আয়োজনের খবর দেশের অতি দলীয় মনোভাবাপন্ন সরকারি সংস্থাগুলোও জানতে পারেনি।
এই আন্দোলন সফল হওয়ার আরও একটি বড়ো কারণ হলো এখানে এমন কোনো নেতা ছিল না, যাকে কেনা যায়। সরকার যখন এদের কিছু নেতাকে এরেস্ট করেছে তখন দেখা গিয়েছে, তারা আসলে আলাদা কোনো সত্ত্বা নয়। ১০ জনকে এরেস্ট করেছে, নতুন ১০ জন বেরিয়ে গেছে, সেই নতুন ১০ জনকে এরেস্ট করার পর আরো ৫০ জন বেরিয়ে গেছে। ফলে এই আন্দোলন সরকার তার নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি কোনোভাবে।
এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, আদালতের একটা রায়কে ঘিরে হুট করে এই আন্দোলন স্ফুলিঙ্গ হয়ে তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এত বড়ো একটি আন্দোলনের পেছনে বড়ো রাজনৈতিক শক্তির সমর্থন, পৃষ্ঠপোষকতা ও পরিকল্পনা ছাড়া হয়েছে এটা যারা ভাবে তারা আসলে বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে চায়। এই আন্দোলন সফল করতে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ঢাকার বাইরে থেকে ডেডিকেটেড ছাত্রশক্তিকে ধীরে ধীরে ঢাকার চারপাশে জমায়েত করা হয়েছে, যেটা সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার নলেজে ছিল না। এছাড়াও সরকার বিরোধী বিভিন্ন ছাত্র ও যুব সংগঠনের যেসমস্ত নেতারা পূর্বে থেকেই এলাকা ছেড়ে ঢাকায় অবস্থান করছিল তারাও এর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছিল। এখানে নেতৃত্বে যাদেরকে ব্যবহার করা হয়েছে তারা মূলত শিবির ও গণপরিষদের ছাত্র সংগঠনের অচিহ্নিত রাজনৈতিক শক্তি। পেছনে বিপুল পরিমাণ শক্তি হিসাবে দাঁড়িয়েছে ছাত্রদলের নিচের দিকের অশনাক্ত রাজনৈতিক শক্তি। ছাত্রীদের নেতৃত্ব দিয়েছে শিবিরের ছাত্রী সংগঠন এবং সমর্থন যুগিয়েছে ছাত্রদলের অচিহ্নিত নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। এখানে এমন লোকেরা ছিল যারা গুলি খেয়েও পুনরায় ফিরে এসেছে। যাদের ভিতরে শহীদি তামান্না ছিল, ফলে মৃত্যুকে তাঁরা ভয় পায়নি। বরং মৃত্যু তাঁদের শক্তিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আগের সব আন্দোলনের থেকে পার্থক্য ছিল এখানেই।
পূর্বের সব বড়ো বড়ো আন্দোলনে দেখা গিয়েছে সরকার নির্বিচারে গুলি করে কিছু মানুষ মেরে ফেলার পর বাকিরা প্রাণভয়ে টিকতে পারেনি। বিগত ২৮ অক্টোবরেও তাই হয়েছে। পূর্বের সেই অভিজ্ঞতার থেকে সরকার এই আন্দোলনও গুলি করে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল। এবং ভুলটা এখানেই হয়েছে সরকারের। কেননা এই আন্দোলনে এমন কিছু শক্তি যুক্ত হয়েছিল যারা গুলিকে ভয় পায় নি, মৃত্যুকে ভয় পায়নি। হতে পারে সেটা ছাত্রশিবিরের শক্তি। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এই আন্দোলনে ছাত্রশিবির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। যারা ছাত্রদলের বিপুল রাজনৈতিক শক্তির আড়ালে মিশে গিয়ে এই আন্দোলনটাকে পরিণতির দিকে নিয়ে আসতে শক্তভাবে হাল ধরে রেখেছিল।
এটা বোঝা খুব কঠিন নয়। এইযে প্রথমে ৯-১০ জন সমন্বয়ক, তারপর তারা আটক হতে শুরু করলে এই সংখ্যা ৫৬ জনে পৌঁছালো, আবার বেশি পরিমাণ আটক হওয়া শুরু হলে এই সংখ্যা যখন দেড় শতাধিক ছাড়িয়ে গেল তখন হারুন সাহেব উপায়হীন হয়ে পড়েছিল। হয়তো এই দেড়শ ধরলে আরো ৩০০ বেরিয়ে যেত। আবার যাদেরকে ধরা হচ্ছিল তারাও অত্যাচারের মুখে গরাদের ভেতরে সরকারের শিখিয়ে দেওয়া স্টেটমেন্ট দিলেও বাইরে এসে আবার পূর্বের অবস্থান ব্যক্ত করেছে। এইযে অত্যাচারের মুখেও টিকে থাকা বাকিদেরকে উজ্জীবিত করেছে, মনোবল বাড়িয়েছে। এই যে মায়েরা নিজেদের ছেলেদেরকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে, যা বাবা প্রয়োজনে শহিদ হয়ে আয়, তবুও এর একটা শেষ দেখে ছাড়, এই মায়েরা কারা? এই মায়েরা কারা, যারা রাস্তায় আন্দোলনরত ছেলের জন্য রান্না করে খাবার এনেছে, পানি, জুস, ড্রাই ফুড সরবরাহ করেছে? এদেরকে কি আপনার অরাজনৈতিক মনে হয়? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো রাজনীতি চলে না বলে আমরা জানি সাধারণত। কিন্তু আমাদের জানার বাইরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন পরিচয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন ছাত্রদের মধ্যে অত্যন্ত সক্রিয় রয়েছে বহুদিন ধরে, এটা হয়তো আমাদের অনেকের জানা নেই বা জানলেও মানতে চাইছি না। এই যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিপুল পরিমাণ ছাত্ররা বেরিয়ে আসলো এদেরকেও নেতৃত্ব দিয়েছে বা বের করে এনেছে ওই ছাত্র শক্তি।
এটা মেনে নিতে হবে যে, যখন আন্দোলনটি জনপ্রিয় হয়েছে তখন এই আন্দোলনে বিএনপি ও জামায়াতসহ সরকার বিরোধী প্রচলিত রাজনৈতিক কাঠামো সামনে এসেছে। তখন সরকারও এটা বুঝতে পেরেছে এবং তারা এই আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করার জন্য নানাভাবে প্রচুর চেষ্টা করেছে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। অন্যদিকে বিএনপি জামায়াতসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন ছিল যে, কোনোভাবেই যেন সরকার এই আন্দোলনে রাজনৈতিক ট্যাগ না লাগাতে পারে। কেননা ছাত্র আন্দোলন হওয়ায় এই আন্দোলনের সাথে যেমন দেশের মধ্যে সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছে, সরকারের ভেতরের অরাজনৈতিক শক্তির সমর্থন পেয়েছে, সংস্কৃতিকর্মী ও বুদ্ধিজীবীরা এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে পেরেছে, বামপন্থী সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এতে জড়িয়ে গেছে এবং পাশাপাশি বিদেশি সমর্থন, বিশেষ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররা এই আন্দোলনে সমর্থন করেছে। এটা ভারতের দিকে তাকালে স্পষ্ট বোঝা যায়। ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যেভাবে এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে তা ছিল অভূতপূর্ব। রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশিত হলে এটা ঘটতো না।
পাশাপাশি আরও একটি কথা বলা প্রয়োজন, এই আন্দোলনে সোশ্যাল মিডিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। বুঝতে পেরে সরকার যখন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে তখন টেলিগ্রামে বিভিন্ন নামের সিক্রেট গ্রুপ খুলে আন্দোলনের ছবি ভিডিও ও কর্মসূচি ছড়িয়ে দিয়েছে। সেটা বুঝতে পেরে সরকার পুরো ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে। এটা করতে গিয়ে আবার একদিকে দেশের অর্থনীতি অন্যদিকে বিদেশি চাপের মধ্যে পড়েছে প্রবলভাবে। পাশাপাশি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া সেলিব্রেটিরা এই আন্দোলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তাদের অবদানও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে অনস্বীকার্য। পিনাকী ভট্টাচার্য, জুলকারনাইন সায়ের, তাসনিম খলিল, ফাহাম আব্দুস সালাম, ইলিয়াস হোসেন, কনক সরোয়ার প্রমূখ জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া সেলিব্রেটি এই আন্দোলনকে নানাভাবে ব্যাপক সহায়তা করেছে।
আমি খুব অবাক হয়েছি এটা দেখে যে, এই আন্দোলনে প্রজন্ম চত্বর ও শাপলা চত্বর কখন যে এক হয়ে গিয়েছে তারা নিজেরাও বুঝতে পারেনি। আমি ঘুরে ঘুরে দেখেছি বামপন্থীরা পথনাটক করছে বা বিভিন্ন সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করছে, কিন্তু সেখানে সমর্থক হিসাবে দাঁড়িয়ে ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ মাদ্রাসা ছাত্ররা তাদের কর্মকান্ডকে প্রটেক্ট করেছে। হয়তো ওনারা নিজেরাও সেটা বুঝতে পারেননি। সে কারণে বিএনপি জামাতসহ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অত্যন্ত সচেতনভাবে এই আন্দোলনের রাজনৈতিক চরিত্র আড়াল করেছে। এমনকি যখন সরাসরি রাজনৈতিক আন্দোলন তথা এক দফার সরকার পতন আন্দোলন শুরু হয়েছে তখনও এই আন্দোলনে বিএনপি ও জামাতের নেতারা সম্পৃক্ত হয়নি। তারা তাদের পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠনগুলোকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে, নিজেরা নামেনি। এমনকি এখন পর্যন্ত এই ক্রেডিট তারা দাবি করছে না। এটা একটা নজিরবিহীন ঘটনা।
এই ছাত্ররা এর আগে একবার কোটা আন্দোলন করেছে, নো ভ্যাট আন্দোলন করেছে। আবার নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন করেছিল যেস্কুল ছাত্ররা কয়েক বছর আগে তারাই কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। কাজেই এই তিনটি সফল ছাত্র আন্দোলন তাদের চেতনাকে উজ্জীবিত করেছিল।
এই যে সমন্বয়করা জেলে আটকে রয়েছে বা রাজপথে আন্দোলন করছে, তাদের মুখে সুন্দর সুন্দর ভাষায় দাবিগুলো কে তুলে দিয়েছে? একের পর এক নিত্যনতুন কর্মসূচি কে নির্ধারণ করেছে? বাংলাদেশের রাজনীতিতে হরতাল, ধর্মঘট এর মতো প্রচলিত রাজনৈতিক শব্দগুলো পাল্টে দিয়ে বাংলা ব্লকেড, কমপ্লিট শাটডাউন এই শব্দগুলো কারা introduce করেছে। টকশোতে সরকার সমর্থক কিছু ব্যক্তিকে এর সাথে রোডমার্চ, টেইক ব্যাক বাংলাদেশ প্রভৃতি রাজনৈতিক কর্মসূচির সাদৃশ্য খুঁজতে দেখেছি। সেটা যাই হোক, এটাতো পরিষ্কার যে এর পেছনে একটি সংগঠিত ও সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তি কাজ করেছে।
তবে এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি, সরকার প্রধানের অহংকার, দম্ভ অর্থনৈতিক দুরবস্থা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গণতন্ত্রহীনতা, সরকারি জুলুম ও নির্যাতনের দেশের মানুষের মাঝে সরকারবিরোধী যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ছিল তা এই আন্দোলনে বিস্ফোরিত হয়েছে। এই বিস্ফোরণ বিপুল পরিমাণ সাধারণ ছাত্র ও আপামর জনগণকে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত করেছে। যেটা না হলে এই আন্দোলন কখনোই সফল হতো না বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এই বিপুল জনসমর্থন একটি গণ আন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত করেছে। যেটা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সাজানো ইস্পাত ঢালাই প্রশাসনিক কাঠামোকে ধসিয়ে দিয়েছে। এই বিপুল গণসমর্থন না পেলে এই আন্দোলন কোনোভাবেই সফল হতে পারত না। সে কারণে আমি এই আন্দোলনকে অরাজনৈতিক কোনো আন্দোলন বলতে রাজি নই। এটা অবশ্যই রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল। ৭ নভেম্বর যেমন ছিল সিপাহী-জনতার বিপ্লব, এই বিপ্লব ছাত্র-জনতার বিপ্লব।
লেখক:
Mehadi Hassan Palash
Chairman at CHT Research Foundation, Editor at পাক্ষিক পার্বত্যনিউজ and Editor at parbattanews.com
No comments
Thank you, best of luck