ads

তরুণ প্রজন্ম যা ঘৃণা করে

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে প্রায় এক মাস হতে চলল। কিন্তু সেটা এখনো একটা ঘোরের মতো, স্বপ্নের মতো মনে হয়। গণতন্ত্রকে হত্যা করে যে স্বৈরাচার জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছিল এদেশে, রাজনৈতিক দলগুলো তা হটাতে পারেনি, কিন্তু তরুণ ছাত্র-জনতা তাদের উৎখাত করেছে! এটা সম্ভব হয়েছে একটাই কারণে। তা হলো স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও ঘৃণা। ক্ষোভ ও ঘৃণা কেন? ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখন আজকের এই শিক্ষার্থীরা সবাই ছিল শিশু বা কিশোর। তারা শৈশব-কৈশোর থেকেই দেখেছে বা শুনেছে ওই সরকারের নিপীড়ন, নির্যাতন, বাকস্বাধীনতা হরণ, গুম-খুন, হত্যার কথা। ২০১৬ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের 'নো ভ্যাট' আন্দোলন, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন, একই বছর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন, এছাড়াও বিভিন্ন আন্দোলনে সরকার তার পেটোয়া পুলিশ বাহিনী এবং দলীয় ক্যাডার, বিশেষ করে ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনী দিয়ে নির্মম নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে এই ছাত্রসমাজের ওপর। দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল গঠন, বিরোধী মতাদর্শের ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগের ক্যাডারদের পৈশাচিকতা সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। গত ১৫ বছরে ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক ছাত্র চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। ২০১২ সালে পুরান ঢাকায় ছাত্রলীগের পৈশাচিক হত্যার শিকার বিশ্বজিৎ দাস এবং ২০১৯ সালে বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ডের কথা দেশবাসীর মনে আছে। এছাড়া স্বৈরাচারের নিপীড়নের অন্যতম হাতিয়ার ডিজিটাল বা সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টও ছাত্রদের ক্ষোভের অন্যতম কারণ।



সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক হলো এ প্রজন্মের মতপ্রকাশের অন্যতম একটা জনপ্রিয় প্লাটফর্ম। অথচ বিগত সরকার সেটাকে কুক্ষিগত করে রেখেছিল তার শাসনামলে। সর্বশেষ এ বছরের জুলাইয়ের শুরুতে পুনরায় শুরু হয় ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন। শুরুতে এটা ছিল শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলন এবং শাহবাগকেন্দ্রিক। কিন্তু আন্দোলনের একপর্যায়ে শেখ হাসিনা যখন কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে দলবাজ এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে 'রাজাকারের বাচ্চা' কথাটা বলে প্রকারান্তরে আন্দোলনকারীদের কটাক্ষ করেন, তখন তা আন্দোলনে ঘি ঢেলে দেয়, আন্দোলন আরও দানা বেঁধে ওঠে। একই সময় তার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বক্তৃতায় বলেন, ছাত্রদের এই আন্দোলন দমনের জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। এর পরপরই তাদের পেটোয়া বাহিনী পুলিশের পাশাপাশি লেলিয়ে দেওয়া হয় ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনীকে। এরপরের ঘটনা সবাই দেখেছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নিপীড়ন, নির্যাতন, হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। রংপুরে ছাত্র বিক্ষোভে বুক পেতে দেওয়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে কাছ থেকে টার্গেট করে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ, যার ভিডিও ফুটেজ মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। আন্দোলন আরও দানা বেঁধে ওঠে। প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পুরো দেশ, ছাত্রসমাজ। অবশেষে মুগ্ধ, ইয়ামিন, নাফিস, ফারহানসহ অসংখ্য ছাত্রের জীবনের বিনিময়ে বিজয় আসে। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। অবসান হয় দীর্ঘ ১৫ বছরের দুঃশাসনের। জুলাই '২৪-এর এক মাসের রক্তক্ষয়ী বিপ্লবে সাড়ে ৬ শতাধিক ছাত্র-জনতা শহিদ হন। আহতের সংখ্যা ৩৩ হাজার, যাদের বেশিরভাগই চোখে মুখে, হাতে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্ধত্ব ও পঙ্গুত্বের জীবন বরণ করতে যাচ্ছেন। অনেক রক্তের বিনিময়ে এসেছে এই দ্বিতীয় স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতার সব সূর্যসন্তানের প্রতি রইল শ্রদ্ধা ও সালাম। সূত্র: যুগান্তর,  আজাদ খান, 

No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.