ads

তিন ছাগলে হলো মেলা, তোরা কেউ যাসনে ও ছাগলের কাছে।



তিনটে ছাগল মস্ত বড় গোল পাকিয়েছে। গোল তো গোল নয়, বলা যায় মহা তালগোল। এরা এখন যে পরিমাণ হিট, অত হিট আমাদের গান কিংবা সিনেমাও হয় না।
তিনটে ছাগলের মধ্যে প্রথমটার নাম খাসি। দেখতে সে একেবারেই ছাগলের মতো। তার চারটে পা রয়েছে, লম্বা দুটো কান তাকে আলাদা উচ্চতা দান করেছে। সারা দুনিয়ায় এযাবৎ যতো ভাগ্যবান জন্মেছে, তাদের মধ্যে সে অন্যতম। নির্ঘাত কুরবানীর হাত থেকে যেভাবে সে বেঁচে গেলো, ওটা পৃথিবীর যেকোন আজব ঘটনাকে হার মানায়। সৃষ্টিকর্তা সম্ভবত এই ব্যাটাকে ঘৃণা করেন। না হলে কুরবানীর মাধ্যমে একে বেহেস্তে যাবার সুযোগ না দিয়ে পঙ্কিলময় এই দুনিয়ায় রেখে দেবার তো কোনো কারণ দেখি না।
দ্বিতীয় ছাগলের নামের অদ্যাক্ষর "ই"। সে দেখতে হুবহু মানুষের মতো। তার দুটো পা এবং দুটো হাত রয়েছে। তার ভাগ্য, দুনিয়াতেই সে স্বর্গ দেখেছে। কতো দুঃখী মানুষ পথের ধারে বসে থাকে দু পয়সা ভিক্ষার আশায়, তা সে জানে না। দু'মুঠো ভাতের জন্য কতো নারী শরীর বিক্রি করে দেয়, তা সে বোঝে না। অর্ধাহারি অনাহারি থেকে মানুষ ওভার ব্রীজে শুয়ে রাত পার করে, দুই পাবিশিষ্ট এই ছাগলটি তা কোনদিন দেখেনি। সে একাধিক দামি ব্রান্ডের গাড়ি চালায়, পৃথিবীর অন্যতম অভিজাত পাখিসমূহ জড়ো করে সে মিনি চিড়িয়াখানা বানায়, এক জীবন দিনমজুরি করে অজস্র মানুষ যে টাকার মুখ দেখে না, তার চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে সে কোরবানির জন্য খাসি কেনে। সে জানে না যে, সে একটা চোরের পোলা। সে বোঝে না, চুরি করলে লুকিয়ে থাকতে হয়, এবং লুকিয়ে-লুকিয়ে খুব আস্তে-ধীরে এইসব মাল ব্যবহার করতে হয়।

সবচেয়ে বড় ছাগলটির নামের অদ্যাক্ষর "ম"। তার মানুষের মতো দুটি পা রয়েছে। আছে দুটি হাতও। তার দুটি চোখ আছে, তবে অন্ধ। বাইরে থেকে তাকালে একদম তা টের পাওয়া যায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেও সে কানা-বোবা-অন্ধ। না হলে এই জগতের আলো এবং অন্ধকার, ভালো-মন্দ, গরিবের ক্ষুধার কষ্ট সে অনুভব করতে পারতো। সে ভালো কিংবা মন্দের পার্থক্য ধরতে পারতো। এই ছাগলের পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা। পুরোটা বাংলাদেশ গিলে খেলেও তার পেট ভরবে না। কথায় বলে ছাগলে কী না খায়?  তার কোনো বিবেক নাই। তার কোনো ধর্ম নাই। ধর্ম আর বিবেক থাকলে একবার সে ভাবতো, সুখে থাকার জন্য কতো টাকা লাগে? এই ছাগলটা যে পোস্টে কাজ করে, ওখানে থেকে এক/দুটো বাড়ি বানালে, কিংবা ২০/৫০ কোটি টাকা ঘুষ খেলে কেউ তা নিয়ে ভাবতো না। নিজেকে একটু নিয়ন্ত্রণে রাখলে বাংলাদেশের একজন সৎ অফিসার হিসাবে সে গর্ব করতে পারতো, অনেক বুদ্ধিমানেরা যেটা করেছেন, এবং তারা কখনো ধরা পড়েননি। এই ছাগলের জিভটা একটু বেশি লম্বা। নিজে অসৎ হবার কারণে সে একটা অসৎ প্রজন্ম তৈরি করে গেল। আগামী দিনে খারাপ ছাগলের উদাহরণ দিতে গেলে মানুষ "ম" ছাগল আর "ই" ছাগলের নাম বলবে।

বিভিন্ন চেয়ারে বসে এইসব ছাগলেরা দেশের সকল টাকা গিলে ফেললো, আর আপামর জনতা কিংবা ছোট/মাঝারি ব্যবসায়ীরা প্রচণ্ড মানাবেতর জীবন-যাপন করছে। তারা ঋণ চেয়ে ঋণ পাচ্ছে না, তারা প্রণোদনা পাচ্ছে না। পাবে কোত্থেকে? সব তো চলে গেছে ছাগলদের পকেটে। অনুতাপের বিষয়, যেসব হাতিরা এসব ছাগল তৈরি করে, চিরদিন তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। ছাগলগুলো লাফায় আর মরে। উপরতলায় বসে হাতিরা সেইসব অবলোকন করে, আর অট্টহাসি হাসে, পুতুলকে নাচিয়ে আমরা যেমন হাসি।
প্রচণ্ড ক্ষমতাশালীর ক্ষমতা চলে যেতে এক মুহূর্ত সময়ও যে লাগে না, তার কিছু উদাহরণ মাঝে-মধ্যেই আমাদের চোখের সামনে আসে। তাই বলছি, ঘুষ যদি খেতেই হয়, একটু মেপে-চেপে খান। কবর কিংবা চিতায় কোন সম্পদ নিয়ে যাওয়া যায় না, আর মানুষের আয়ু মাত্র ৬০/৭০ বছর। পাকিস্তানে পর্বতের উপত্যকায় বসবাস করা একদল মানুষের কথা তো জানেন, যারা পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘজীবী, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং সুখী মানুষ। তারা প্রাকৃতিক খাবার খায়, যেগুলোতে কোন মসলা থাকে না। তারা প্রাকৃতিক নদীর মিঠা পানি ব্যবহার করে। তাদের উঁচু-উঁচু বিল্ডিং বানাতে হয় না, তাদের ব্যাংকে বস্তার পর বস্তা টাকা থাকতে হয় না। জীবনে সুখী হবার জন্যই যদি এতো আয়োজন, ওইসব মানুষকে ফলো করা উচিত। এটা স্বীকৃত যে, এদের চাইতে সুখি মানুষ পৃথিবীতে আর নেই। জানলে অবাক হবেন, এইসব মানুষের গড় আয়ু ১২০ বছর।
শুনুন, চেয়ারে বসে চেয়ারের অপব্যবহার করছেন? অন্য অনেকেই হয়তো ধরা পড়বে না, কিন্তু যে কোনদিন আপনি ধরা পড়ে যেতে পারেন।


No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.