ads

বই পড়া কেন প্রয়োজন



একসময় ট্রেনে-বাসে চলতে-ফিরতে মানুষের হাতে বই দেখা যেত। গল্প, কবিতা, উপন্যাস ইত্যাদি বই। আর এখন বইয়ের বদলে থাকে মোবাইল তথা স্মার্টফোন। চার, ছয়, আট ইঞ্চির স্ক্রিনে সবার চোখ আটকে থাকে। এই মোবাইল ফোন বর্তমানে অবসর সময় কাটানোর বিরাট এক জিনিস। এই পরিবর্তন আমাদের জন্য মঙ্গলের না অমঙ্গলের, তা নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে। আমাদের পাঠাভ্যাস কমে যাওয়া কিংবা বইবিমুখ হওয়ার ফলে আমরা আগের মতো ভালো নেই।

এখানে বলা প্রয়োজন, অতিমাত্রায় মোবাইল ফোন ব্যবহারকে বিজ্ঞান কীভাবে দেখছে? বিজ্ঞান বলছে, মোবাইল বা স্মার্টফোনে রেডিয়েশন থাকে। সারাক্ষণ মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে সেই রেডিয়েশন মানুষের মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতির কারণ। তাছাড়া, ফোনের স্ক্রিনের আলোকরশ্মি চোখের দৃষ্টিশক্তিরও ক্ষতি করে। মাত্রাতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারে যে ক্ষতি, সেটা শিশুদের বেলায় আরো মারাত্মক। কথাটি অন্যভাবে বললে শারীরিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধির পরিপক্বতা লাভের সময়ে শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন দেওয়াই উচিত নয়।

যাহোক, বই আমরা আগের মতো পড়ি না। এখন বই পড়ি পরীক্ষা পাশের জন্য। অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গেই বলতে হয় যে, বই আমাদের বড় বন্ধ,ু সেটা এখন পুথিগত কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবতা হলো, বইয়ের আমাদের কাছে তেমন কদর নেই। এর পরেও আশার কথা, ফেব্রুয়ারি এলে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে অমর একুশে বইমেলার আয়োজন হয়। মাসব্যাপী এই মেলা আমাদের বইপ্রেমী হয়ে উঠতে অনুপ্রাণিত করে। আমরা বইমেলায় যাই। নতুন বই দেখি, কিনি। তবে বই সেভাবে পড়ি কি?

আমরা যারা নিয়মিত বই পড়ি, তারা এর উপকারিতা সম্পর্কে জানি। বইপাঠ আমাদের কল্পনাশক্তি বাড়ায়। অন্যদিকে যারা নিয়মিত বই পড়েন না, তাদের কল্পনাশক্তি সেভাবে থাকে না। কোনো কোনো বিজ্ঞ এভাবে বলেন, বইবিমুখ একজন মানুষ জীবিত থেকেই মৃততে পরিণত হন। তার ইতিবাচক চিন্তা করার ক্ষমতা লোপ পায়। সবকিছুতেই তিনি নেতিবাচকতা খোঁজেন। আর একটি ভালো বই মানুষকে পরিপূর্ণ মানসিক প্রশান্তি দেয়। বই ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়লেও আপনার উপকার ছাড়া অপকার হবে না।

তবে এমন চিত্র এখন দেখা যায় যে, অনেকে ছাপা বইয়ের পরিবর্তে ইলেকট্রনিক বুক বা ই-বুক পড়ে থাকেন। এতে করে যেটা হয়, উপকার ও অপকার দুই-ই হওয়ার সুযোগ থাকে। ই-বুক পাঠ যেটুকু মানসিক প্রশান্তি আপনাকে দেয়, তা সেই ডিভাইস তথা স্মার্টফোন, ট্যাবের রেডিয়েশনের ক্ষতির মুখে আপনাকে ফেলে। সত্যি কথা কি, মলাট উলটে কাগজের বই হাতে নিয়ে পড়ার যে তৃপ্তি, সেটা ই-বুক থেকে আশা করা যায় না। তথাপি ছাপা বই পড়তে চাইলেও সব ক্ষেত্রে তা পারা যায় না। কিছুদিন আগে আমার একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের কাছে একটি সাবজেক্টের ওপরে কোন বইটা কিনব, তার নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন ইন্টারনেট থেকে পড়তে। তিনি আরো বলেন, বই কি আর এখন কিনতে হয়?

মোটাদাগে বললে, বই পড়ার অভ্যাস আমাদের গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশে আমরা বই পড়ি না। আমাদের সময় কাটে স্মার্টফোনে সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউটিউব ব্রাউজ করে। যদিও এ কথা আমি বলছি না যে, মোবাইল ফোন আমাদের লাগবে না। এটা আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিস। কিন্তু এই টেকনোলজিক্যাল গেজেট যারা আবিষ্কার করে থাকে, সেই প্রযুক্তিসমৃদ্ধ দেশ চীন, জাপান, কোরিয়া, ফিনল্যান্ড ইত্যাদি দেশে লোকজন বই পড়ে। এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও বই পড়ার মানুষের অভ্যাস আছে। তেমনি আমাদের দেশেও বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।


No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.