ads

তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা অনুধাবনমূলক প্রশ্ন-উত্তর



১. ‘আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়’ কথাটি বুঝিয়ে লেখো। 
উত্তর: স্বাধীনতার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য চরণে।
 
স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। পাকিস্তানিরা বাঙালির সেই অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বাঙালি তাই বারবার প্রতিবাদে মুখর হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তা মোকাবেলা করতে গিয়ে বারবার আঘাত করেছে। ফলে বাঙালিকে কেবলই বুকের রক্ত ঝরাতে হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য বাঙালিকে আর কত রক্ত বিসর্জন দিতে হবে- এই প্রশ্ন করেছেন কবি।

২.  সাকিনা বিবির কপাল ভাঙল কেন?
উত্তর: হানাদারদের নির্যাতনের শিকার হয়ে সবকিছু হারানোর কারণে সাকিনা বিবির কপাল ভাঙল।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলার শহর-গ্রামের সর্বত্র পাকিস্তানি হানাদাররা মানুষের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। এর ফলে সহায়-সম্বল-সম্ভ্রম হারায় অনেক নারী। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় উল্লিখিত সাকিনা বিবি তেমনি এক নির্যাতনের শিকার গ্রামীণ নারীর প্রতিনিধিত্ব করছেন। স্বাধীনতার জন্য এমন অসংখ্য নারীকে দুর্ভাগ্য বরণ করতে হয়।

৩. হরিদাসীর সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল কেন?
উত্তর: হরিদাসীর স্বামী শহিদ হওয়ায় তাঁর সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল। 
সনাতন ধর্মের মেয়েদের বিয়ের পর সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেওয়া হয়। স্বামী মারা গেলে তা মুছে ফেলা হয়। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় উল্লিখিত হরিদাসীর স্বামী মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে জীবন দিয়েছেন। এ কারণেই তাঁর সিঁথির সিঁদুর মুছে ফেলা হয়েছে। চরণটির মাধ্যমে স্বাধীনতার জন্য বাংলার মানুষের মহান আত্মত্যাগের কথাই প্রকাশিত হয়েছে।

৪. বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভুর বাস্তুভিটার ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করল একটা কুকুর-কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: পাকিস্তানি হানাদারদের নৃশংস নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল পশুও-এমন চিত্রই প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য চরণটিতে। 

‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলার মানুষের ওপর পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বর অত্যাচারের কথা তুলে ধরা হয়েছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এই অত্যাচারের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছিল। নিচু শ্রেণির প্রাণী হিসেবে পরিচিত কুকুরও সেদিন হানাদারদের হত্যাযজ্ঞ দেখে আর্তনাদ করে উঠেছিল। কবিতায় কুকুরের এই আর্তনাদকে পাকিস্তানিদের হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিবাদ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

৫. সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা- কেন?
উত্তর: নিজেদের অধিকার ফিরে পেতে ও হানাদারদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে সবাই স্বাধীনতার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। 

স্বাধীনতা কেবল একটি বুলিমাত্র নয়। এটি মানুষের জন্মগত অধিকার পাকিস্তানিরা আমাদের এই অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। শুধু তাই নয়, সারা দেশে বিপুল হত্যা ও ধ্বংসের নারকীয় উৎসবে মেতে ওঠে হানাদাররা। সব স্বপ্ন হারিয়ে মানুষের কাছে বেঁচে থাকার জন্য আর মাত্র একটা স্বপ্নই অবশিষ্ট থাকে। তা হলো স্বাধীন স্বদেশে মুক্তভাবে বিচরণ করা। স্বাধীনতার জন্য মানুষের সেই ব্যাকুলতার স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য চরণে।

৬. ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় কবি সগীর আলী, কেষ্ট দাস, মতলব মিয়া, রুস্তম শেখদের কথা বলেছেন কেন?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অবদানের প্রসঙ্গটি বোঝাতে শামসুর রাহমান ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় বিভিন্ন পেশার মানুষের কথা বলেছেন। 

স্বাধীনতার জন্য মানুষের যে ব্যাকুলতা তার চিত্র প্রকাশিত হয়েছে শামসুর রাহমান রচিত ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায়। পরাধীনতার শেকল ভাঙতে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিল সর্বস্তরের মানুষ। তাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই অর্জিত হয়েছে বহু আরাধ্য স্বাধীনতা। কবিতায় বর্ণিত সগির আলী, কেষ্ট দাস, মতলব মিয়া, রুস্তম শেখদের কেউ কৃষক, কেউ জেলে, কেউ মাঝি, কেউ বা রিকশাচালক। আলোচ্য কবিতায় এরা বাংলার সকল শ্রেণি পেশার মানুষের প্রতিনিধি। 

৭. ‘যার পদভারে একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হতে চলেছে’- কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: চরণটির মাধ্যমে তরুণ মুক্তিযোদ্ধার সাফল্যের কথা বলা হয়েছে। 

পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতাকে রুখে দিতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে লাখো জনতা। তাদের প্রবল দৃঢ়তায় হানাদারদের পতন ঘনিয়ে আসে। স্বাধীনতার সূর্য আরও নিকটবর্তী হয়। একটি দেশের স্বাধীনতাপ্রাপ্তির অর্থ হচ্ছে পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন একটি ভূখণ্ডের নামের অন্তর্ভুক্তি। ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে সাথে নতুন একটি পৃথিবীরই যেন জন্ম হবে। আর সেই নতুন দিনের কারিগর অর্থাৎ মুক্তিসেনাদের বীরত্বের কথাই ফুটে উঠেছে আলোচ্য চরণটিতে।

৮. তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা- কবির এই দৃঢ়তার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: স্বাধীনতার জন্য সর্বস্তরের মানুষের আত্মত্যাগ ও আকুলতা দেখেই কবি এতটা দৃঢ়ভাবে স্বাধীনতার আগমনের সম্ভাবনার কথা বলতে পেরেছেন। 

স্বাধীনতার জন্য বাঙালি তাদের সবকিছু বিসর্জন দিয়েছে। অসংখ্য মানুষ তার স্বজন ও সম্বল হারিয়েছে। অসংখ্য নারী তার সম্ভ্রম হারিয়েছে। হানাদারদের মোকাবেলা করতে গিয়ে জীবন দিয়েছে অগণিত মানুষ। হানাদারদের শত অত্যাচার নিপীড়নের মাঝেও মানুষ মুক্তির লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়নি। তরুণ যুবক থেকে শুরু করে থুত্থুরে বৃদ্ধ পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ হয়ে থেকেছে। মানুষের মাঝে স্বাধীনতার জন্য এমন মানসিকতা লক্ষ করেই কবি দৃঢ়তার সাথে উচ্চারণ করেছেনÑ তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা।

৮.  জলপাই রঙের ট্যাংককে কবি দানব বলেছেন কেন?
উত্তর : শহরে জলপাই রঙের ট্যাংক কামানের গোলার শব্দে চিৎকার করতে করতে এসেছিল বলে একে দানব বলা হয়েছে। 

‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর যে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিল তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তারা নির্বিচারে ছাত্র, যুবক, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বহু মানুষকে হত্যা করে। রাস্তায় নামায় জলপাই রঙের ট্যাংক। ছাত্রাবাস, বস্তি ট্যাংকের কামানের গোলায় ধ্বংস করে দেয়। জলপাই রঙের ট্যাংকের ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করে কবি তাই তাকে দানব বলেছেন।

৯. শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এলো কেন?
উত্তর: স্বাধীনতাকামী বাঙালির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাংক এসেছিল। 

এদেশের মানুষের ওপর হানাদার বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়ন চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তারা বাঙালিদের দমন করতে নিরীহ মানুষের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। অসংখ্য মানুষকে তারা নির্বিচারে হত্যা করে। তারা হত্যাযজ্ঞ চালানোর উদ্দেশ্যেই শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাংক নামায়। 

১০. যার ফুসফুস এখন ‘পোকার দখলে’ এখানে পোকার দখলে বলতে কোন বিষয়টি নির্দেশ করা হয়েছে?
উত্তর: আলোচ্য চরণটির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দেওয়া একজন দরিদ্র মানুষের দুর্ভাগ্যের স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে। 

স্বাধীনতার সংগ্রামে আত্মত্যাগ করে বাংলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় বর্ণিত রুস্তম শেখ তাঁদেরই একজন প্রতিনিধি। ঢাকার দরিদ্র রিকশাচালক রুস্তম শেখ মুক্তিযুদ্ধের সময় শহিদ হন। তার বর্তমান অবস্থা বোঝানোর জন্য বলা হয়েছে, তার ফুসফুস এখন পোকার দখলে।

১১. পাকিস্তানিরা কেন ছাত্রাবাস উজাড় করে দিয়েছিল?
উত্তর: স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্ররা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। তাই পাকহানাদার বাহিনী ছাত্রাবাস উজাড় করে দিয়েছিল। 
পাকিস্তানিদের স্বৈরশাসন বাঙালি মেনে নেয়নি। তাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এ দেশের জনগণ রুখে দাঁড়ায়। সর্বপ্রথম ছাত্ররাই সোচ্চার এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তাদের ধ্বংস করার জন্য তাই হানাদার বাহিনী ছাত্রাবাস আক্রমণ করে।




No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.