ads

আমার দাদা একটা চোর।

ছবি: সংগৃহীত

আমার দাদা একটা চোর। বৃদ্ধ বয়সে কেউ চুরি করে! করে না নিশ্চয়ই। কিন্তু আমার দাদা চুরি করেন। সবসময় না, চুরি করেন মাসের শেষ সাপ্তাহের দিনগুলোতে।
আমার আব্বু সহ চাচারা মিলে চার ভাই। সবাই আলাদা সংসার করে, আলাদা খায়। দাদি মারা গিয়েছেন গত পৌষ মাসে। দাদির মৃত্যুর পর দাদা থাকতেন ছোট চাচ্চুর সাথে। গতো দু'মাস আগে ছোট চাচ্চু বিয়ে করেন। দাদার খাওয়ার হিসাব বন্টন করে দেওয়া হয়েছে মাসের চার সাপ্তাহ চার জনের ঘরে

আমার আম্মু হিংসুটে, মেজু কাকিমা চুপচাপ, সেজু কাকিমা হাই টেম্পারেচার, ছোট কাকিমা বকবক ঝগড়াটে জানোয়ার মহিলা। মাসের শেষ সাপ্তাহে দাদার খাওয়ার তারিখ আসে ছোট চাচ্ছুর ঘরে। ওতে ছোটকাকিমা বিরক্ত, এতো খাই খাই করে কেনো এই বুড়ো মানুষটা! মরে না কেনো? মরলেও তো বাঁচি। বক বক করবে। দাদা উপোস থাকে, ছোট কাকিমা খাবার দেয়না ঠিকঠাক দাদুকে।

কিছুক্ষণ আগে দাদা এসেছিলো আমার ঘরে। অমন শুকনো একখান মুখ। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে গলার সুর খুব নরম করে দাদা বললো, দাদুভাই তুই ভাত খাইচিস? আমি তো খেয়েছি, তুমি খেয়েছো দাদু? দাদা চোখজোড়া হাতের আড়াল করে মুচলো একবার । মৃধু হাসলো। অমন শুকনো শীতল হাসি, এই হাসির একটা নাম আছে ক্ষুধা, দাদার ঐ ক্ষুধার হাসি দেখে আমার কান্না পেলো খুব। হাতাকাঁটা গেঞ্জি তুলে পেট দেখালো দাদা, পেটে গামছা বেঁধেছে। দাদা আমায় বললো, দাদুভাই তোর মা না থাকলে চুপিচুপি রান্নাঘরে গিয়ে দেখে আয়তো পাতিলে ভাত আছে কি না। ভাত নেই। আমার খাওয়া শেষে বাকি যে টুকুন ভাত ছিল পাতিলে ঐ টুকুন ভাত মা বাটিতে তুলে কুকুরের সামনে দিয়ে গোসল করতে গিয়েছে।

মা গোসল শেষ করে এসে চিৎকার চেচামেচি শুরু করেছে কারণ মায়ের বাটিটা চুরি হয়েছে। অত বড় একটা বাটি কোথায় পাবে মা, আগামীকাল কিসে তুলে ভাত দিবে কুকুরকে। আমি জানি মায়ের বাটিটা কে চুরি করেছে। দাদা। দাদা কুকুরের খাওয়া অর্ধেক ভাত সহ ঐবাটি চুরি করেছে আমি দেখেছি, আমার চোখ সাক্ষী।

আমি এখন মা'কে গিয়ে বলবো, মা আমার দাদা একটা চোর।বেহায়া চোর, ভাত চোর।


লেখা: আরিফ হুসাইন

No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.