ads

শিক্ষাক্রম (Curriculum) একটি জাতীয় কর্মসূচি

Curriculum (শিক্ষাক্রম) Syllabus (পাঠ্যসূচি) এবং Textbook (পাঠ্যপুস্তক) তিনটা পৃথক জিনিস। আমরা যেহেতু সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারিনি, অনেক অভিজ্ঞ শিক্ষকই বিষয়গুলো গুলিয়ে ফেলেন। সেখানে সাধারণ মানুষের ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। এই সব বিষয় হল শিক্ষার ভিত্তি। এর পরে যে বিষয়গুলো আসে তা হল Pedagogy (বাংলায় শিক্ষাবিজ্ঞান বা শিক্ষাবিদ্যা বলা হলেও তা সঠিক অর্থ প্রকাশ করে বলে আমার মনে হয় না), Teaching Methodology (শিক্ষাদান পদ্ধতি)। শিক্ষার মাধ্যম ভাষা। তাই Methodology-তে ভাষাশিক্ষাটা বিশেষ গুরুত্ব রাখে। আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ELT (English Language Teaching) এবং CLT (Communicative language teaching) বিষয়ে সকল শিক্ষকেরই কিছু সাধারণ ধারনা থাকা দরকার। এইসব মৌলিক বিষয়গুলোতেই আমাদের ঘাটতি আছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ঠিক নেই, বিভিন্ন স্তরে শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতি প্রশ্নবিদ্ধ। শিক্ষকদেরকে পেশাগতভাবে তৈরি করার কাজটা সেভাবে করা হয়নি। এইরকম একটা অবস্থায় লেখাপড়া বা শিক্ষাদান বিষয়ে মানুষ কেবল ধারনা থেকেই মতামত দেবে, এটা স্বাভাবিক। নতুন কিছু চালু করতে গেলে মানুষ পরিবর্তনকে ভয় পাবে, সেটাও স্বাভাবিক। অভিভাবকদের উদ্বেগকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে। কিন্তু যুক্তিহীন বা উদ্দেশ্যমূলক বিরোধিতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার কিছু নেই।

এতদিন হয়নি বলে এখন হবে না, এটা কোনো যুক্তি নয়। শিক্ষাক্রম একটা জাতীয় ডকুমেন্ট। জাতীয় প্রতিষ্ঠান ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)’ এ বিষয়ে একক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ। শিক্ষাক্রম তৈরি এবং এর পরিমার্জন, পরিবর্ধন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সর্বশেষ শিক্ষাক্রম গৃহীত হয় ২০১২ সালে। এনসিটিবি তার প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে সেই শিক্ষাক্রমের কার্যকারিতার উপর অসংখ্য জরিপ ও গবেষণা পরিচালনা করেছে। শিক্ষার বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও শিখন চাহিদা নিরূপনের জন্য ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চারটি বড় গবেষণা পরিচালনা করা হয়। নানা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে অবশেষে ২০২১ সালে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা, ২০২১’ নামে একটি চূড়ান্ত ডকুমেন্ট প্রস্তুত করা হয়। অংশীজন ও জনসাধারণের মতামত প্রদানের জন্য এটি বছরাধিককাল ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত ছিল। এটির ভিত্তিতেই বর্তমান শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রম উন্নয়নের ক্ষেত্রে পাঁচটি ভিত্তিকে বিবেচনা করা হয়েছে। সেগুলো হলো :
• দার্শনিক ভিত্তি (Philosophical foundation)
• মনোবৈজ্ঞানিক ভিত্তি (Psychological foundation)
• ঐতিহাসিক ভিত্তি (Historic foundation)
• জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকার (Global and national priorities) এবং
• প্রমাণনির্ভর ভিত্তি (Evidence based Foundation)
আর এই শিক্ষাক্রমের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আমাদের জাতীয় চাহিদার সাথে সাথে আন্তর্জাতিক সংস্থায় প্রতিশ্রুতির কথা মাথায় রেখে। জাতিসংঘের মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গৌল অর্জনে আমাদের সাফল্য সর্বমহলে স্বীকৃত। এখন আমরা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গৌল অর্জনের পথে যাত্রা করেছি। এই গৌলের সাথে আমাদের জাতীয় লক্ষ ভিশন ২০৪১ স্মার্ট বাংলাদেশ একীভূত। SDG 4 নামে পরিচিত এই লক্ষমাত্রা সম্পর্কে আমাদের সম্যক ধারনা থাকা প্রয়োজন।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (SDG) ৪ : সকলের জন্য একীভূত ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি
লক্ষমাত্রাসমুহ:
৪.১ ২০৩০ সালের মধ্যে সকল ছেলে ও মেয়ে যাতে প্রাসঙ্গিক, কার্যকর ও ফলপ্রসূ অবৈতনিক, সমতাভিত্তিক ও গুণগত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করতে পারে তা নিশ্চিত করা
৪.২ ২০৩০ সালের মধ্যে সকল ছেলে ও মেয়ে যাতে প্রাথমিক শিক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাসহ শৈশবের একেবারে গোড়া থেকে মানসম্মত বিকাশ ও পরিচর্যার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে তার নিশ্চয়তা বিধান করা
৪.৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভের সুযোগসহ সাশ্রয়ী ও মানসম্মত কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও উচ্চশিক্ষায় সকল নারী ও পুরুষের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা
৪.৪ চাকুরী ও শোভন কর্মে সুযোগলাভ এবং উদ্যোক্তা হবার জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক দক্ষতাসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক দক্ষতাসম্পন্ন যুবক ও প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানো
৪.৫ অরক্ষিত (সংকটাপন্ন) জনগোষ্ঠীসহ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী, নৃ-জনগোষ্ঠী ও অরক্ষিত পরিস্থিতির মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সকল পর্যায়ে সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং শিক্ষায় নারী-পুরুষের বৈষম্যের অবসান ঘটানো
৪.৬ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যুবসমাজের সবাই এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে সাক্ষরতা ও গণন-দক্ষতা অর্জনে সফলকাম হয় তা নিশ্চিত করা
৪.৭ অপরাপর বিষয়ের পাশাপাশি, টেকসই উন্নয়ন ও টেকসই জীবনধারার জন্য শিক্ষা, মানবাধিকার, নারী-পুরুষ সমতা, শান্তি ও অহিংসামূলক সংস্কৃতির বিকাশ, বিশ্বনাগরিকত্ব এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও টেকসই উন্নয়নে সংস্কৃতির অবদান সম্পর্কিত উপলব্ধি অর্জনের মাধ্যমে সকল শিক্ষার্থী যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে পারে তা নিশ্চিত করা
৪.ক শিশু, প্রতিবন্ধিতা ও জেন্ডার সংবেদনশীল শিক্ষা সুবিধার নির্মাণ ও মানোন্নয়ন এবং সকলের জন্য নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ, একীভূত ও কার্যকর শিক্ষা পরিবেশ প্রদান করা
৪.খ উন্নত দেশ ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কারিগরি, প্রকৌশল ও বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মসূচিসহ উচ্চশিক্ষায় ভর্তির জন্য উন্নয়নশীল দেশ, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ, উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে প্রদেয় বৃত্তির সংখ্যা বৈশ্বিকভাবে ২০২০ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানো
৪.গ শিক্ষক প্রশিক্ষণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ, উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা
শিখন চাহিদা নিরূপনের ক্ষেত্রে ধারনাগত মতামতের চেয়ে প্রমাণনির্ভর ভিত্তিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথাগতভাবে আমরা অনেকেই ধারণা করি ভাবগম্ভীর জ্ঞানী শিক্ষক হলেই শিক্ষার্থীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্বান হয়ে যাবে। মুখস্থবিদ্যাকে জ্ঞানের একমাত্র সূচক মনে করি আমরা। অংশগ্রহণমূলক ও আনন্দদায়ক পাঠদানের ধারণা বহিঃবিশ্বে অনেক প্রাচীন হলেও আমাদের কাছে তা নতুন। নতুন এই চ্যালেঞ্জ আমাদের নিতে হবে।
কেউ কেউ বলছেন কেন এত তাড়াহুড়া। শিক্ষক নিয়োগ, তাদের প্রশিক্ষণ, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ইত্যাদি শিক্ষাদানের সকল শর্ত পূরণ করেই তো এই পথে যাওয়া যেত। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সকল শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। এ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু সব আয়োজন সমাপ্ত করেই নতুন শিক্ষাক্রমের পথে যাত্রা করতে হবে সেটা ভুল। শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তকের পার্থক্য সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারনা না থাকায় এই ভ্রান্তিগুলো ঘটছে। শিক্ষাক্রম গবেষণালব্ধ একটি ডকুমেন্ট যার ভিত্তি প্রমাণ। এটা অবশ্যই চলমান থাকবে। শিক্ষাক্রমের গাইডলাইন অনুসারে পাঠ্যসূচি সাজানোর প্রক্রিয়া চলছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। এখানে বিষয়ভিত্তিক বস্তুনিষ্ঠ মতামতকে গ্রহণ করার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা আছে। সেটাকে আরও কার্যকর করতে হবে। তৃতীয় বিষয়টা হল পাঠ্যপুস্তক। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ আসলে পাঠ্যপুস্তক দেখে এবং সেখান থেকেই তাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জানায়। এই জায়গায় আমাদের দুর্বলতা রয়েছে। সমালোচনায় আমরা যতটা পটু, কাজের ক্ষেত্রে আমাদের দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। সত্যি কথা বলতে কী, শিক্ষাক্রমের নির্দেশনা অনুসারে বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপযোগী পাঠ্যপুস্তক তৈরির জন্য যথেষ্ঠ যোগ্য জনবল আমাদের নেই। খুব কম শিক্ষকেরই পাঠ্যপুস্তক রচনার উপর বিশেষায়িত জ্ঞান আছে। যাদের জ্ঞান আছে তাদের সকলের স্কলাস্টিক যোগ্যতা এক পর্যায়ের নয়। যাদের সব যোগ্যতা আছে তারা এত কম সম্মানীতে কাজ করবেন কেন, সেটাও একটা প্রশ্ন। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হলে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও বড় বিনিয়োগ লাগবে। কিন্তু সেটা না হওয়া পর্যন্ত বসে থাকা যাবে না।
কেন বসে থাকা যাবে না? কেন তাড়াহুড়া? কারণ হল, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট নামক একটি প্রাকৃতিক সুবিধা। একটি রাষ্ট্রের জনগোষ্ঠির বয়স স্তরের বিভিন্ন অনুপাতে যখন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠির সংখ্যা সর্বোচ্চ বৃদ্ধি হয় তখন তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বাড়তি সুযোগ সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে এখন পনেরো বছরের নিচে জনসংখ্যা ২৯% শতাংশ আর ৬৫ বছরের উপরে জনসংখ্যা ৫%, বাকি ৬৬% জনসংখ্যা কর্মক্ষম। ২০০৭ সালে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ২০৪০ পর্যন্ত এটা চলবে। এরপরে বয়স্ক এবং নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এই সুযোগ কাজে লাগালে আমাদের উন্নতি ভীষণ গতি পাবে আর ব্যর্থ হলে আমরা রাষ্ট্র হিসেবে দীর্ঘমেয়াদে রুগ্ন হয়ে পড়তে পারি। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠিকে যথাযথ শিক্ষিত করার কোনো বিকল্প আমাদের কাছে নেই। তাই এই পথে যত প্রকারের চ্যালেঞ্জ আছে আমাদের তা গ্রহণ করতে হবে। মৌলবাদি বা অন্যান্য পশ্চাৎপদ চিন্তাধারাকে আসকারা দেওয়া হবে আত্মঘাতী। এই প্রেক্ষিতে নতুন শিক্ষাক্রমের যাত্রা একটি জাতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি। এটা কোনো দলের বা নির্দিষ্ট সরকারের কর্মসূচি নয়। এর সাথে জাতির ভবিষ্যত জড়িত। বিষয়টা সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে। যারা এর দায়িত্বে আছেন তাদেরকে যথাসম্ভব ইনক্লুসিভ হতে হবে। যারা শিক্ষাক্রম নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদেরকে অনুরোধ করব প্রথমত শিক্ষাক্রমকে জানুন। এনসিটিবির ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা, ২০২১’ ডাউনলোড করুন। এটা পড়ুন। পাঠ্যপুস্তকগুলো পড়ুন। পেডাগজি, টিচিং মেথডলজি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারনা নিন। তারপর একাডেমিক পরিসরে আপনার মতামত প্রদান করুন। সেই সব মতামতকে নথিভুক্ত করুন। ঢালাও কথা বলা, সন্দেহমূলক অবস্থান থেকে পর্যালোচনা করা পরিহার করুন। মতামত দেওয়ার সময় অনাবশ্যক আবেগ সৃষ্টি করবেন না। আপনার অনিয়ন্ত্রিত আবেগ অভিভাবকের মনে অনর্থক উদ্বেগের সৃষ্টি করবে। আমাদেরকে ব্যক্তি হিসেবে, প্রতিষ্ঠান হিসেবে এবং জাতি হিসেবে ম্যাচিউর হতে হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের যাত্রায় সমগ্র জাতিকে একত্রিত করার মাধ্যমে আমরা সেই ম্যাচিউরিটির প্রমাণ রাখতে পারি।


1 comment:

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.