ads

বাঘ বাংলার জাতীয় সম্পদ তাকে রক্ষা করা সকলের কর্তব্য

বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাঘ (Bengal Tiger) / বাংলাদেশের জাতীয় পশুর নাম বাঘ (Bengal Tiger)

ছবি সংগৃহীত: বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাঘ (Bengal Tiger)  

বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাঘ (Bengal Tiger) / বাংলাদেশের জাতীয় পশুর নাম বাঘ (Bengal Tiger) / বাঘ বাংলার জাতীয় সম্পদ তাকে রক্ষা করা সকলের কর্তব্য

ভূমিকা :
রয়েল বেঙ্গল টাইগার তথা বাঘ আমাদের জাতীয় পশু। কিছু প্রাণীকে আমরা বিশেষ মর্যাদা দিয়ে থাকি। জাতীয় প্রাণী মানে আমাদের জাতির পরিচায়ক বা আইকন। বিশ্বের দরবারে আমাদের সম্মানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মতো যে উপকরণগুলো আছে তার মধ্যে বাঘ অন্যতম। এর বাইরেও পরিবেশ ও প্রকৃতির দৃষ্টিকোণ থেকে বাঘের একটি বড় ভূমিকা আছে। পাশাপাশি আমরা যদি ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট বা ইকো ট্যুরিজমের কথা বলি সেই দৃষ্টিকোণ থেকেও বাঘের গুরুত্ব অনেক।
প্রথমেই পরিবেশগত দিকের কথা বলি, বাঘ, যাকে বলা হয় টপ গ্রিডেট অর্থাৎ সে মাংসাশী প্রাণীদের শীর্ষে। তাকে অনেকটা তুলনা করা যায় একটি বাগানের মালীর সঙ্গে। একজন মালী যেমন গাছপালা কেটে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখে, বাঘও তেমনি বনের প্রাণীদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখে। বনের ভারসাম্য বজায় রাখে। বনের ভারসাম্য বজায় রাখার প্রধান উপকরণ হচ্ছে বাঘ। অনেক জায়গায় এমন উদাহরণ আছে, যেখানে টোক গ্রিডেট যখন শেষ হয়ে যায় তখন পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়, বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করে। বনের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার ক্ষেত্রে বাঘের বড় ভূমিকা আছে। বাঘ, অন্যান্য প্রাণী যেমন- হরিণ, শূকর, বানর এগুলোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখে। এই প্রাণীগুলো নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে বনের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে না। তখন দেখা যাবে কোনো একটা নির্দিষ্ট প্রাণী স্বল্প সময়ের জন্য অধিক পরিমাণে বেড়ে যাবে। যেমন হরিণ যদি বনে অনেক বেশি হয়ে যায় তাহলে বনের পূর্ণসৃজন হবে না, হরিণ গাছের চারা খেয়ে ফেলে। বনের যখন পরিসৃজন বন্ধ হয়ে যাবে তখন গাছ এবং গাছের পাতা থাকবে না, তখন হরিণের পরিমাণও কমে যাবে, রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যাবে।

দ্বিতীয়ত, স্থানীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। সুন্দরবনকেন্দ্রিক পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মূল আকর্ষণ বাঘ। এই বনে বাঘ আছে বলেই আমরা দেশি-বিদেশি পর্যটককে আকৃষ্ট করতে পারি। এটাকে যদি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচালনা করতে পারি, তাহলে বৈদেশিক মুদ্রার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে রেভিনিউ আয়ে একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সুন্দরবন ভ্রমণ বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা ভ্রমণের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল। তারপরও দেশি-বিদেশি পর্যটক সুন্দরবন দেখতে চায়। এর কারণ কী? সেখানে নিশ্চয়ই কোনো একটা আকর্ষণ আছে। সেই আকর্ষণের প্রধান উপকরণই হচ্ছে বাঘ। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, সুন্দরবনে গেলে তো বাঘ দেখা যায় না। কোনো বনেই নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যাবে না, ওই বনে গেলে বাঘের দেখা পাওয়া যাবে। কিন্তু বাঘের যে উপস্থিতি সেটাই মূলত মানুষকে আকৃষ্ট করে। যেমন একজন পর্যটক এক জায়গায় গিয়ে অনুভব করছে যে, এখানে বাঘ আছে। এই অনুভূতির মূল্য আছে। বাঘ সরাসরি না দেখলেও সে হয়তো বাঘের পায়ের ছাপ দেখছে, বাঘের ডাক শুনছে। সে ভাবছে, যে কোনো মুহূর্তে আমরা বাঘের মুখোমুখি হয়ে যাব। কম সংখ্যক মানুষই বাঘের মুখোমুখি হয়ে থাকে। এই যে বাঘের উপস্থিতি এ কারণে কিন্তু পর্যটকরা আকৃষ্ট হয়। যখনই আমরা এ রকম পরিবেশবান্ধব পরিবেশ ডেভেলপ করতে পারব তখন সেখানকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে। যেমন আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপালে বাঘ-হাতিকে কেন্দ্র করে পর্যটনশিল্প বিকশিত হয়েছে। সেখানে স্থানীয়রা নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে। তারা হয়তো কটেজ চালাচ্ছে, ট্যুর গাইড হিসেবে কাজ করছে, নৌকা ভাড়া দিচ্ছে- এভাবে তারা বিভিন্নভাবে উপকৃত হচ্ছে।

বাঘ রক্ষায় সরকারি পদক্ষেপ: 
বাঘ রক্ষার্থে আমাদের প্রধান পরিকল্পনা 'টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান'। টাইগার অ্যাকশন প্ল্যানের প্রথম ধাপ শুরু হয়ে দ্বিতীয় ধাপ বর্তমানে চলছে। প্রথম ধাপে কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে কিছু হয়নি। দ্বিতীয় ধাপেও অনেক পরিকল্পনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়েছে এটা বলা যাবে না। এর প্রধান কারণ হলো রাজস্ব খাতে টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ থাকে না। এই কাজগুলো হয় প্রকল্পভিত্তিক। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়ে থাকে। যেমন বাঘশুমারি একটা প্রকল্প। এর আওতায় বাঘশুমারি হলো, কিন্তু দেখা যায় যে, পরবর্তী তিন বছর আর বাঘ শুমারি হলো না। তাহলে এই তিন বছরে বাঘের অবস্থা ও সংখ্যা আমাদের জানা হলো না। প্রকল্পভিত্তিক কাজ হতেই পারে। মৌলিক কিছু কাজের গুরুত্ব বিবেচনা করে রাজস্ব বোর্ড থেকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া উচিত। সুনির্দিষ্ট বিরতিতে বাঘশুমারি এবং স্মার্ট পেট্রল নামে আধুনিক সিস্টেম চালু হয়েছে। এই স্মার্ট পেট্রলে বিভিন্ন খাত থেকে সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু রাজস্ব বোর্ড থেকে সহায়তা করা হচ্ছে না। বিশেষত এ ধরনের মৌলিক কাজগুলো সরকারের রাজস্ব খাত থেকে নিয়মিত বরাদ্দ থাকা উচিত।

কেন কমছে বাঘ: 
আজ থেকে ৬০-৭০ বছর আগেও বাঘের সংখ্যা এখনকার তুলনায় অনেক বেশি ছিল। ঐতিহাসিকভাবে বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ 'চোরা শিকার'। অবৈধভাবে হরিণ এবং বাঘ শিকার হয়েছে প্রচুর। এটাই মূলত বাঘ কমে যাওয়ার প্রধান কারণ। বাঘ যেহেতু বড় প্রাণী সেহেতু তার খাদ্যের প্রয়োজনে বড় প্রাণী প্রয়োজন, তাই দেখা যাচ্ছে অপেক্ষাকৃত বড় বনেও যদি বড় শিকার না থাকে তাহলে বাঘ সেখানে টিকতে পারবে না। বড় প্রাণী বড় জায়গায় থাকে। তাকে রক্ষা করে রাখতে হবে। আমাদের সুন্দরবন ছাড়া অন্যান্য যেসব বন আছে সেগুলো তুলনামূলক ছোট হয়ে গেছে। যার ফলে এসব ছোট বনে বড় কোনো শিকার প্রাণী নেই। এসব জায়গায় বাঘ রক্ষা করা কঠিন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অল্প কিছু বাঘ আছে। তবে তার সঠিক হিসাব আমরা জানি না।

সুন্দরবনকেন্দ্রিক শিল্পায়ন: 
আমরা যদি সুন্দরবনকে টিকিয়ে রাখতে চাই, তাহলে সুন্দরবনের চারপাশের এলাকা, যা সরকার ঘোষিত ইকোলজি ক্রিটিকাল এরিয়া বা ইসিএ বলে পরিচিত; সেই জায়গাগুলোর পার্শ্ববর্তী এলাকায় কোনো কারখানা নির্মাণ অনুচিত বলে মনে করি। কারণ এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব আমরা ঠেকাতে পারব না। আমরা দেখেছি যে, এই বুড়িগঙ্গার দূষিত কালো পানি মেঘনার মোহনা পর্যন্ত চলে যায়। সুন্দরবনের উত্তরের আশপাশেরএলাকাগুলোতে যদি লাগামহীনভাবে শিল্পায়ন হতে থাকে, পাওয়ার প্ল্যান্ট হয়- এর প্রভাব আজ অথবা কাল পড়বেই। কারণ এই ক্ষতির মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। যেমন বুড়িগঙ্গার পানি রাতারাতি নষ্ট হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে জমতে জমতে এর পানি নষ্ট হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে সুন্দরবনকে টিকিয়ে রাখতে হলে এর আশপাশে শিল্পকারখানাকে নিরুৎসাহী করতে হবে।

সেই সঙ্গে সুন্দরবনের বাইরেও নিঝুম দ্বীপ পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি ছোট ছোট ম্যানগ্রোভ বন আছে। সময় এসেছে এগুলোকে কানেক্ট করা। নতুন নতুন বন সৃজন করে এদেরকে যুক্ত করলে বাঘ, হরিণ ও অন্যান্য প্রাণীর গতিপথ বাড়বে। বড় প্রাণীদের রক্ষার ক্ষেত্রে এখন এটি একটি বার্নিং ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে জিনগত যে আদান-প্রদান (ফ্রি মিক্সিং) না হয়, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে এদের টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। যদি সুন্দরবনের আশপাশের ছোট ছোট বনের মধ্যে করিডোর তৈরি করা যায় তাহলে বাঘের বিস্তৃতি আরও পূর্বদিকে বাড়ানো সম্ভব। পার্বত্য চট্টগ্রামে কিন্তু অল্প হলেও বাঘ আছে, বিশেষত
কাছালং রিজার্ভ ফরেস্ট, সাঙ্গু ওয়াইলাই সেন্টার- এই দুটি জায়গায় বাঘ আছে। কিন্তু সেখানে সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। সেখানে যদি আমরা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারি, সেখানকার ফরেস্টগুলোর মাঝে যদি ফরেস্ট করিডরের মধ্য দিয়ে সংযোগ তৈরি করতে পারি তাহলে এসব জায়গাতেও বাঘের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব। আমাদের বাঘ তো আছে শুধু সুন্দরবনেই আছে। যদি দ্বিতীয় কোনো জায়গায় বাঘ থাকে তাহলে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে বাঘ সংরক্ষণে তা সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। সাধারণভাবে যদি বলি, কিছু ডিম যদি দুটি ঝুড়িতে থাকে তাহলে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিটা কম আর যদি একটি ঝুড়িতে থাকে তাহলে তা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কিন্তু বেশি থাকে। একই রকমভাবে সুন্দরবন ছাড়াও যদি চট্টগ্রামে বাঘ থাকে তাহলে আমাদের ঐতিহ্যের ধারক বাঘকে টিকিয়ে রাখা সহজ হবে।

বাঘ রক্ষায় পার্শ্ববর্তী দেশ ও আমরা: 
বাংলাদেশের চেয়ে অন্যান্য দেশে, যেমন নেপাল ও ভারতে আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে বাঘ রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ২০১০ সালে রাশিয়ায় যে বাঘ সম্মেলন হয়েছিল, সেখানে যেসব দেশে বুনো বাঘ আছে, এমন ১৩টি দেশের সরকারপ্রধানসহ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। ওই সম্মেলনে ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে একটি টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছিল। এই টার্গেটে নেপাল, ভারত ভালো সফলতা অর্জন করেছে। দ্বিগুণ না হোক বাংলাদেশও কিছুটা সফলতা অর্জন করেছে। বিশ্বব্যাপী বর্তমানে বাঘের যে সংখ্যা, তা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। কারণ গত একশ' বছরে বাঘের সংখ্যা শুধুই কমেছে। গত কয়েক বছরে সর্বপ্রথম বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। যার কৃতিত্ব নেপাল আর ভারতেরই বেশি। তাদের তুলনায় আমরা পিছিয়ে আছি কারণ, আমাদের এখানে বাঘ সংরক্ষণ একটু দেরিতে শুরু হয়েছে। আর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অপ্রতুলতা তো ছিলই।

বাঘ রক্ষায় স্থানীয় জনগণ: 
দশ বছর আগে বাঘ সংরক্ষণকে যেভাবে দেখা হতো, সাধারণ স্থানীয় মানুষের সেই দৃষ্টিভঙ্গিটা পরির্তন হয়েছে। এখন প্রতি বছর উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাঘ দিবস পালিত হয়। বাঘ রক্ষার বিষয়টি বিভিন্ন পত্রিকা ও মিডিয়াগুলো ইতিবাচকভাবে তুলে ধরছে, যার ফলে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে মাঠ পর্যায়ে বাঘ সংরক্ষণে যে উদ্যোগ ও কাজ করা হচ্ছে তা আরও টেকসই করার বিষয়ে জোর দেওয়া উচিত। স্মার্ট পেট্রলকে টিকিয়ে রাখতে হবে। স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্য থেকে ভিলেজ টাইগার রেসকিউ টিম গঠন করা হয়েছে। এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। বন থেকে বাঘ লোকালয়ে বেরিয়ে এলে কীভাবে আবার কৌশলে নিয়ন্ত্রিতভাবে তাদের বনে ফেরত পাঠানো যায়, সেই কাজগুলো হচ্ছে।

সুন্দরবন ও বাঘ: 
বন টিকে থাকার পেছনে বাঘের একটা বড় ভূমিকা আছে। লেখার শুরুতেও বলেছি, সুন্দরবনকেন্দ্রিক পরিবেশবান্ধব ইকো ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে বাঘের গুরুত্ব আছে। বাঘ মাংসাশী প্রাণীদের কাতারে প্রথমেই অবস্থান করে। তার ভূমিকা নিয়ন্ত্রকের। সে অন্য প্রাণীগুলোকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখে। বাঘের আরেকটা ভূমিকা আছে, সে প্রাকৃতিক প্রহরীর কাজ করে। বাঘের ভয়ে মানুষ ঢালাওভাবে সুন্দরবনে ঢুকতে পারে না। যেসব বনে বাঘে নেই সেসব বনে মানুষ ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়ায়। কারণ সেখানে বাঘের ভয় নেই।




আমাদের সংস্কৃতিতে ও পরিচয়ে: 
বাঘ শুধু একটি প্রাণী নয়, এর সঙ্গে জড়িত আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। যে অল্প কয়েকটি উপাদান আমাদের বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দেয় তার মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার অন্যতম। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক পরিচয় বাঘ ও সুন্দরবন। বাংলাদেশে এত বড় একটি ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট আছে এবং সেখানে বাঘ টিকে আছে এটা আমাদের গর্বের বিষয়। আমরা যদি আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য দেখি, সেখানে পরতে পরতে বাঘের উপস্থিতি- বাঘের গল্প, কবিতা পাই, সুন্দরবনের আশপাশে পটের গানের প্রচলন আছে। তার প্রধান উপকরণ বাঘ। সেখানে গানগুলোতে দেখা যায়, মধুর চাক ভাঙতে, মাছ ধরতে গিয়ে কীভাবে বাঘের সঙ্গে দেখা হয়েছে। যার ফলে পরিবেশ প্রকৃতির বাইরেও মানুষের জীবনযাপনের সঙ্গে বাঘের এক প্রকার অতি প্রাকৃত ভূমিকা আছে। মানুষের বিশ্বাসেও বাঘের ভূমিকা রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বলা চলে নেক্সট টু গড। নেক্সট টু গড এ জন্য বলা হয় যে, স্থানীয়ভাবে সুন্দরবনের আশপাশে কিছু জনগোষ্ঠী বনবিবি, গাজী, কালুর পূজা করে। এদের সঙ্গে কিন্তু বাঘও থাকে। সবশেষে বলতে চাই, আমরা যদি উদ্যোগী হই, সচেতন হই, তবেই বাঘ টিকে থাকবে আর বাঘ টিকে থাকলে টিকে থাকবে সুন্দরবন।


কেন বাঘ আমাদের জাতীয় পশু: 
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতাে বাংলাদেশের একটি জাতীয় পশু রয়েছে। এ-পশু হলাে বাঘ। একে বলে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ বন সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার পাওয়া যায়। সুন্দরবনের অবস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল খুলনা-সাতক্ষীরা-বাগেরহাট জেলায়।বাঘ বিড়াল প্রজাতির প্রাণী। বাঘ আকারে ও শক্তিতে অনেক বড়। বাঘের গায়ের রং হলুদ হলুদের মধ্যে কালাে কালাে ডােরাকাটা দাগ থাকে। বাঘ সাধারণত বারাে ফুট লম্বা এবং চার ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। এদের দাঁত খুবই তীক্ষ্ণ ও ধারালাে হয়। পায়ের থাবায় তীক্ষ্ণ ও ধারালাে নখ লুকানাে থাকে। বিড়ালের মতাে প্রয়ােজনে এরা সেই নখ বের করে আক্রমণ করতে পারে। এদের পায়ের তলায় নরম মাংসপিণ্ড আছে। যার ফলে তারা নীরবে চলাফেরা করতে পারে এবং সহজে শিকার ধরতে পারে। এদের গায়ের চামড়া খুবই শক্ত ও ঘন লােমে ঢাকা। বাঘের পেছনের পায়ে জোর খুব বেশি। লাফ দিয়ে এরা অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। বাঘের মাথা গােলাকার ও বেশ বড়। এদের চোখ দুটি উজ্জ্বল এবং রাতের বেলা জ্বলজ্বল করে জ্বলে। বাঘ অন্ধকারে দেখতে পায়।

বাঘ অত্যন্ত হিংস্র প্রাণী। এরা বনে থাকে। এরা খুবই শক্তিশালী ও ভয়ংকর হয়। অনেক বড় বড় প্রাণীকে এরা সহজে শিকার করে। বাঘের শক্তি ও রাজকীয় ভাবভঙ্গি দেখে একে বনের রাজা বলা হয়। বাঘ খুব দ্রুত দৌড়াতে পারে। এরা সাঁতার কাটতে পারে খুব ভালাে। সুন্দরবনের বাঘের সুনাম পুথিবী জুড়ে। এবাঘের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম জুড়ে রাখা হয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বাঘ সাধারণত হরিণ, শূকর, গরু, ছাগল শিকার করে থাকে। শিকার না পেলে এরা অনেক সময় মানুষ শিকার করে। বাঘিনী সাধারণত বছরে দুই থেকে পাঁচটা বাচ্চা দেয়। বাচ্চাদের প্রতি বাঘের মায়া খুব কম। ক্ষুধা পেলে এরা বাচ্চাদের খেয়ে ফেলতে পারে। বাঘিনী বাচ্চা বড় না হওয়া পর্যন্ত লুকিয়ে রাখে।

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাঘ সুন্দরবন প্রতিবেশব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী সর্বোচ্চ প্রাণী। ফলে, ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিবেশব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে সুন্দরবনে বাঘের উপস্থিতি অপরিহার্য। সুন্দরবনে বাঘ বেঁচে থাকলে মোটাদাগে আমরা তিন ধরনের প্রতিবেশ সেবা পেতে পারি। প্রথমত, বাঘ থাকলে বনের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে বিধায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব প্রশমনে এই বন অনন্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

দ্বিতীয়ত, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে এই বন প্রাকৃতিক দেয়াল হিসেবে কাজ করে চলেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। তৃতীয়ত, অফুরান মৎস্য ও বনজ সম্পদ প্রদানের মাধ্যমে সুন্দরবন প্রায় ১০ লাখ মানুষের যে জীবন-জীবিকার সংস্থান করে চলেছে, তা অব্যাহত থাকবে। তাই সুন্দরবনের গুরুত্ব শুধু আম্পান কিংবা বুলবুলের সময় অনুধাবন করলে চলবে না, বছরের বাকি সময়ে এর নিবিড় পরিচর্যা করতে হবে।বন্য প্রাণীর অবৈধ ব্যবসাসংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা ট্রাফিকের ২০১৮ সালের একটি রিপোর্ট মতে, ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে চোরা শিকারিরা আমাদের সুন্দরবনে ৩৩টি বাঘ হত্যা করেছে। চলতি বছরে আরও ৩টি বাঘের অপমৃত্যু ঘটেছে। এর মধ্যে দুটি বাঘ চোরা শিকারিদের ফাঁদে আটকে আহত হয়ে পরে মারা যায় বলে জানা গেছে। সেই সঙ্গে নিয়মিত বিরতিতে সুন্দরবনে হরিণ শিকার চলছে।

সুন্দরবনে বাঘ তার তিন-চতুর্থাংশ খাদ্য পায় চিত্রাহরিণ শিকারের মাধ্যমে। বাকিটা জোগান দেয় বুনো শুয়োর। পৃথিবীর অধিকাংশ আবাসে ১০ থেকে ১২ প্রজাতির খাদ্যপ্রাণী থাকলেও আমাদের সুন্দরবনে রয়েছে শুধু চিত্রা হরিণ ও বুনো শুয়োর। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বিশেষ এক শ্রেণির মানুষ সুন্দরবনের চিত্রাহরিণের নিয়মিত খাদক। স্থানীয় সংঘবদ্ধ শিকারিরা এই চিত্রাহরিণ শিকার করে। করোনাকালেও এই চোরা শিকারিদের তৎপরতা থেমে নেই। সেই সঙ্গে হরিণের জন্য পেতে রাখা ফাঁদে আটকে মারা পড়ছে বাঘও। বিষটোপের মাধ্যমে শিকারিরাও সুন্দরবনের বাঘ শিকার করে থাকে। এসব চোরা শিকার অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে সংগঠিত হওয়ায় এগুলোর খুব কমই আমরা জানতে পারি।

হিমালয়ের দেশ নেপাল চার বছর আগেই বাঘ দ্বিগুণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে ফেলেছে। ভারতও দ্বিগুণ করার কাছাকাছি চলে এসেছে। আমাদের বন অধিদপ্তর বাঘ রক্ষায় নানা কার্যক্রম গ্রহণ করছে। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাও বাঘ সংরক্ষণে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। গত ১০ বছরে বাঘ রক্ষায় আমাদেরও কিছু অর্জন রয়েছে। এর মধ্যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাঘের জরিপ করা, রাজস্ব ব্যয়ে স্মার্ট নামে বিশেষ একটি টহল ব্যবস্থা চালু করা এবং বাঘের মোটামুটি একটি স্থিতিশীল অবস্থা ধরে রাখা অন্যতম। এসব অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরবনে চোরা শিকার বন্ধ করতে না পারা আমাদের বড় ব্যর্থতা। বাঘ রক্ষায় নেপাল কিংবা ভারতের পথে হাঁটতে হলে স্মার্ট টহল ব্যবস্থা সত্যিকার অর্থে কার্যকর করতে হবে, না হলে এই চোরা শিকার বন্ধ করা যাবে না।

বাঘকে হিংস্র পশু মনে হলেও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাঘের দরকার রয়েছে। বাঘ তৃণভােজী প্রাণী খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তৃণভােজী প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তারা বনের গাছপালা খেয়ে উজাড় করে।বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ সরকার যে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করেছে তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রাণীসংরক্ষণের প্রতি জনগণের সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। অতএব, প্রয়োজন অবৈধ শিকার বন্ধ করা, প্রাণীদের সুরক্ষা ও সংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংরক্ষণ করা। তবেই আমাদের এই জাতীয় পশুসহ সকল বন্যপ্রাণীকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

বাঘ কেন গুরুত্বপূর্ণ?: 
বাঘ দেখতে যেমন সুন্দর; ঠিক তেমনই ভয়ঙ্কর। বাঘ আসলে বড় বিড়াল জাতের অন্তর্ভুক্ত একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। সিংহ, চিতাবাঘ ও জাগুয়ারের সঙ্গে প্যানথেরা গণের চারটি বিশালাকার সদস্যের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী প্রাণী। বাঘ ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় পশু।যদিও অতীতের তুলনায় বিশ্বে বাঘের সংখ্যা অনেক কমেছে। ইতিহাসের তথ্যমতে, ১০০ বছর আগেও পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যা ছিল এক লাখেরও বেশি। বর্তমানে সে সংখ্যা ৯৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯০০টিতে। তবে বিশ্বব্যাপী সচেতনতায় এখন আবার বাড়ছে বাঘের সংখ্যা।

বাঘ দিবসের তাৎপর্য: 
পৃথিবীতে বাঘকে টিকিয়ে রাখা খুবই জরুরি। এ বিষয়ে হয়তো অনেকেরই জানা নেই। বাঘ টিকিয়ে রাখার প্রতিশ্রুতি নিয়েই প্রতিবছর ২৯ জুলাই পালিত হয় আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস। বাঘ রক্ষার শপথ নিয়ে সারা বিশ্বে পালিত হয় এই দিবসটি। এবারের প্রতিপাদ্য হলো ‘বাঘ বাড়াতে শপথ করি, সুন্দরবন রক্ষা করি’।এই দিবস পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য হল বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা করা এবং বাঘের সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে এর সম্পর্কে থাকা ভুল ধারণা ও ভয় দূর করা। বিশ্বজুড়ে বাঘ বিপন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে রাশিয়ায় প্রথমবারের মতো বাঘ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সম্মেলনে বলা হয়, আগামী ১২ বছরে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণে পরিণত করতে হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশে দেশে বাঘ সংরক্ষণে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হতে শুরু করে। বাংলাদেশেও একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। বন বিভাগের সঙ্গে ওয়াইল্ড টিম এই কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করে থাকে।

বাঘ সম্পর্কিত অজানা সব তথ্য: 
বিড়াল প্রজাতির সবচেয়ে বড় প্রাণী হলো বাঘ। একটি পুরুষ বাঘের ওজন কমপক্ষে ৩০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। যা ৬ জন মানুষের গড় ওজন।বাঘ তার একটি হাত বা পায়ের থাবা দিয়েই মানুষকে মেরে ফেলতে পারে। বিশেষ করে বাঘের সামনের হাতের একটি থাবা কোনো মানুষ বা প্রাণীকে মেরে ফেলা বা হাড় ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

বাঘ প্রকৃতপক্ষে নিশাচর প্রাণী না হলেও রাতেই শিকার ধরা পছন্দ তাদের। এর পেছনের কারণ হলো সংঘাত এড়ানো। বাঘের পছন্দ হলো রাতে তাদের অঞ্চল ঘিরে টহল দেওয়া ও শিকারের খোঁজ করা।বাঘের শাবক বা ছানারা অন্ধ হয়ে জন্মায়। অন্যদিকে তাদের মধ্যে অর্ধেকই মারা যায়। অন্ধ হয়ে জন্মানোর কারণে চলাফেরা করতে অসুবিধা হয় শাবকদের। তারা মা বাঘের ঘ্রাণ অনুসরণ করে পথ চলে।যেহেতু বাঘ শাবকেরা জন্মগতভাবে অন্ধ হয়ে জন্ম নেয়। তাই তাদের অধিকাংশই ক্ষুধা বা ঠান্ডায় মারা যায়। আবার কখনও কখনও মা বাঘ যৌন সঙ্গমের উদ্দেশ্যে উপহার হিসেবে নিজের শাবককেই পুরুষ বাঘকে দিয়ে খাওয়ান। যা খুবই দুঃখজনক!

গৃহপালিত বিড়ালরা যেখানে পানি দেখলেই ছুটে পালায়; সেখানে বাঘ পানিতে সাঁতার কাটতে ও জলকেলি করতে পছন্দ করে। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাঁতার কাটতে পছন্দ করে। জানা যায়, প্রাপ্তবয়স্ক বাঘ একদিনে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত সাঁতার কাটতে পারে। পানিতে খেলার ফাঁকে বাঘ শাবক ও নারী বাঘকেও হত্যা করে অনেক পুরুষ বাঘ।বাঘের আয়ু ২০-২৫ বছরের মধ্যে। তবে বেশিরভাগ বাঘই ২০ বছর বয়সের আগে মারা যায়। বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক বাঘটির বয়স ছিল ২৫ বছর। যার নাম ছিল ফ্ল্যাভেল। ফ্লোরিডার টাম্পার চিড়িয়াখানার থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল।
বাঘ বড় প্রজাতির অন্যান্য বিড়ালের সঙ্গেও সঙ্গম করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি পুরুষ বাঘ নারী সিংহের সঙ্গে সঙ্গম করে; তাহলে সংকর জন্মগ্রহণকারী প্রাণী টিগন নামে পরিচিত।টিগন প্রজাতি বৃহত্তম বিড়াল প্রজাতি এবং লিগারের চেয়েও বড় হতে পারে। যা পুরুষ সিংহ এবং স্ত্রী বাঘের মিশ্রণ। একটি লিগারের উচ্চতা চারটি পায়ে এবং দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় প্রায় ৬ ফুট লম্বা হয়।
বাঘের লালা অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে বিবেচিত। বাঘের লালায় থাকে অ্যান্টিসেপটিক সালাইভা। সম্ভবত এটিই বাঘের একটি ভালো বৈশিষ্ট্য। যদি বাঘের শরীরের কোথাও ক্ষত হয়; তখন তারা চেঁটে চেঁটে স্থানটি জীবণুমুক্ত করে।প্রাণীজগতের দ্রুততম রানার না হলেও বাঘের শক্তিশালী পা আছে। যা দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌঁড়াতে পারে এই বিস্ময়কর প্রাণী।বাঘের শরীরের ডোরাকাটা দাগ কারও সঙ্গে কারও মিল নেই। অনেকটা আমাদের আঙুলের ছাপের মতো। ঠিক বাঘের শরীরের ডোরাকাটা দাগগুলোই তাদের পরিচয় বহন করে। এই দাগগুলো তাদের পশমের নিচে চামড়াতেও দেখতে পাবেন। বাঘ খুব কমই গর্জন করে। অন্যদিকে নিজ প্রজাতিকেই খেয়ে থাকে এই হিংস্র প্রাণী। যার শিকার হয় নারী ও শাবক বাঘ।অদ্ভূত এক তথ্য হলো, বাঘের মূত্র থেকে যে গন্ধ বের হয়, তা না-কি বাটার পপকর্নের মতো। তাই বনাঞ্চলে এই ঘ্রাণ পেলে বুঝবেন সেখানে বাঘ আছে।বাঘ অন্যান্য প্রাণী শিকারের সময় তাদের সঙ্গে লড়াই করতে পছন্দ করে। শরীরে ডোরাকাটা দাগ থাকার কারণে তারা ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিব্যি লুকিয়ে থেকে আক্রমণ করে শিকারকে।
বাঘকে নির্জন প্রাণী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তারা অবসর সময়ে হাঁটতে বা তার পরের খাবার খুঁজতে থাকে।বাঘ সাধারণত বুনো শুকনো, হরিণ, ভালুক, পাখি, গণ্ডার, কুমির, মহিষ ও চিতা বাঘও খেতে পছন্দ করে। এমনকি তারা মাছও খায়! বাঘ অন্যান্য প্রাণীর ডাক অনুকরণ করতে পারে। অন্য প্রাণীদের ডাক নকল করার মাধ্যমে বাঘ অতিরিক্ত সুবিধা গ্রহণ করে। বাঘরা অন্যান্য প্রাণীদের ডাক অনুকরণ করে নিরীহ প্রাণীদের ফাঁদে ফেলে এবং আক্রমণ করে।যদিও বাঘ মানুষকে শিকার হিসেবে দেখে না। যদি না কোনো মানুষ তাদের প্রতি আক্রমনাত্মক না হয়। যদি কখনো বাঘের সম্মুখে পড়েন, তবে অবশ্যই সামনে পা না বাড়িয়ে পিছনে পা দিয়ে হেঁটে যাবেন।


কেন রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিশ্বসেরা ?: 
যে কারণে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিশ্বসেরা ২৯ জুলাই আজ বিশ্ব বাঘ দিবস- এবার বাঘ দিবসের প্রতিপাদ্য- Save Big Cats from Extinction. বাংলাদেশে দিবসটির গুরুত্ব সুন্দরবনকে ঘিরে। কারণ, সুন্দরবনেই রয়েছে বাংলাদেশের অহংকার- জাতীয় প্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিখ্যাত এবং বাঘের প্রজাতি হিসেবে বিশ্বসেরা। ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় যে সুদর্শন বাঘ দেখা যায় তা পৃথিবীব্যাপী রয়েল বেঙ্গল টাইগার নামে পরিচিত। বেঙ্গল টাইগারের মতো সুন্দর ও ক্ষীপ্রগতির বাঘ পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। হলদে ডোরাকাটা রং এই বাঘকে অন্যসব প্রজাতির বাঘ থেকে করেছে আলাদা ও অনন্য। দুঃখজনক হলেও সত্যি, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা নানা অঘটনে পড়ে প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে। ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্টপিটার্সবার্গ শহরে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম বিশ্ব বাঘ সম্মেলন। এই সম্মেলনে ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এখনো বাঘ টিকে আছে এমন ১৩টি দেশে ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বাঘ টিকে থাকা ১৩টি দেশ হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও রাশিয়া। এই দিবসটির প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে বাঘ সংরক্ষণের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করা এবং বাঘ সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তোলা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস। বলা হয়, পৃথিবীতে যত বাঘ আছে, তার প্রায় অর্ধেক হচ্ছে বেঙ্গল টাইগার। আর আকারের দিক থেকে সবচেয়ে বড় হচ্ছে সাইবেরিয়ান বাঘ। সাইবেরিয়ান বাঘ আকারে প্রায় ১০.৭৫ ফুট (৩.৩ মিটার) লম্বা হয়ে থাকে। এদের ওজন প্রায় ৩০০ কেজির মতো। অপরদিকে বেঙ্গল টাইগার আকারে প্রায় ৭-৯ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। এদের ওজন হয় প্রায় ১৫০-২২৭ কেজি। বন্য অবস্থায় একটি বাঘ সাধারণত ৮ থেকে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। ১৮ মাস বয়সের আগে সাধারণত বাঘ শিকার করতে পারে না। বাঘ সম্পর্কে আরেকটি মজার তথ্য হলো- এদের গর্জন প্রায় ৩ কিলোমিটার দূর থেকেও শুনতে পাওয়া যায়। শিকারি হিসেবে বাঘ একটি অসাধারণ প্রাণী। এরা নিশাচর এবং খুবই শক্তিশালী শিকারি। বাঘ সাধারণত ছদ্মবেশে শিকার করে। এদের চামড়ার রং এবং গঠন ছদ্মবেশ ধারনে যথেষ্ট সহায়ক।

বাংলাদেশের জাতীয় পশুর রাজকীয় উপাখ্যান: 
বাংলাদেশের মানচিত্র খুলে খুলনা বিভাগের দক্ষিণে নজর দিলে আমাদের চোখে পড়বে এক বিস্তৃত রাজ্যের চিহ্ন। পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপে অবস্থিত এই রাজ্যটি একটি বিশাল ম্যানগ্রোভ বন। এই রাজ্যে প্রায় ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর নিবাস রয়েছে। এখানকার জলে বিচরণ করছে নোনা পানির কুমির, গুইসাপ, সামুদ্রিক মাছ, কচ্ছপ, নানা রকম সাপসহ বহু সরীসৃপ, উভচর এবং জলচর প্রাণী। ডাঙায় নজর দিলে দেখা দেবে চিত্রা হরিণের মায়াবী সৌন্দর্য। আকাশে উড়ে চলা হরেকরকম পাখি, গাছে শাখায় দাপট দেখানো বানর কিংবা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দরীর শ্বাসমূল, গেওয়া, গরান এবং কেওড়া- এই সবকিছুই যেন সুন্দরবনের ‘প্রায় পরিপূর্ণ’ চিত্রাঙ্কন করে।

কিন্তু প্রায় ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এই রাজ্যের রাজার কথা না বললে এ বনের গল্প একদমই পূর্ণতা পায় না। পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে পরিচিত রাজ্যটির নাম ‘সুন্দরবন’। আর সেই সুন্দরবনকে অন্যান্য হাজার বন থেকে অনন্য করে তুলেছে এক বাঘ। সুন্দরবনের অতন্দ্র প্রহরী এবং এর অলঙ্কার হিসেবে পরিচিত সেই বাঘ হচ্ছে বাংলাদেশ এবং ভারতের জাতীয় পশু– রয়েল বেঙ্গল টাইগার।

বেঙ্গল টাইগার পরিচিতি: 
ভারতীয় উপমহাদেশে যত ধরনের বাঘের দেখা মেলে, তাদের মধ্যে আকারে বৃহত্তম, ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন এবং হিংস্রতায় অনন্য এই রয়েল বেঙ্গল টাইগার। শুধু উপমহাদেশ নয়, সারাবিশ্বের বাঘ পরিবারের সিংহভাগ সদস্য বেঙ্গল টাইগার গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এ বাঘের ঐতিহ্য একে উপমহাদেশীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাই এটি ভারত এবং বাংলাদেশের জাতীয় পশুর সম্মাননা পেয়েছে। বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলে এদের নাম Panthera tigris tigris.
রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের নিবাস বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং ভুটানের বনাঞ্চলে। ধারণা করা হয়, চীন এবং মায়ানমারেও অল্পসংখ্যক রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বসবাস রয়েছে। বাঘশুমারি-২০১৯ এর হিসাবমতে, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জনসংখ্যা ভারতে ২,৯৬৭, বাংলাদেশে ৪৪০, নেপালে ২৩৫ এবং ভুটানে ১০০। ঘনবর্ষণ বনাঞ্চল (রেইনফরেস্ট), অরণ্যের জলাভূমি ও লম্বা ঘাসযুক্ত তৃণভূমির দিকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণ লক্ষ করা যায়।

বাঘের বাহ্যিক বর্ণনা: 
রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখতে কেমন? প্রত্যক্ষদর্শীদের উত্তর, অসম্ভব সুন্দর। সাহিত্যের পাতার ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ কথাটির বাস্তবিক অর্থ বুঝতে হলে আপনাকে রয়েল বেঙ্গলকে কাছ থেকে দেখতে হবে। মোটা পা, মজবুত দাঁত ও চোয়াল এবং সমস্ত দেহ জুড়ে রঙের বাহারি নকশাখচিত রয়েল বেঙ্গল টাইগার একটি স্তন্যপায়ী এবং মাংসাশী প্রাণী। এদের গায়ের রঙ পেটের দিকে হলুদ থেকে হালকা কমলা রঙের হয়। পায়ের ভেতরের দিকে সাদা রঙ দেখা যায়। গায়ের কমলা রঙের উপর লম্বালম্বি কালো, ধূসর বা বাদামি ডোরাকাটা দাগ দেখা যায়। লেজের দিকে এ দাগ গোলাকৃতির হয়ে যায়। জেনেটিক মিউটেশনের কারণে বেঙ্গল টাইগারের এক বিশেষ এবং দুর্লভ জাত হোয়াইট বেঙ্গলের দেখা মেলে, যাদের গায়ের রঙ সাদা হয়। রয়েল বেঙ্গলের চোখের রঙ হলদে হলেও হোয়াইট বেঙ্গলের রঙ হয় নীলচে।
অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, পৃথিবীর প্রতিটি বেঙ্গল টাইগারের গায়ের ডোরাকাটা দাগের ধরন একে অপরের থেকে আলাদা। অর্থাৎ, দুটো বাঘের ডোরাকাটা দাগ কখনই এক হবে না। অনেকটা মানুষের চেহারা বা আঙুলের ছাপের মতো। যদিও যমজদের ক্ষেত্রে চেহারা এক হতে পারে, তবে বাঘদের গায়ের দাগ এক হবে না। মূলত, এ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বাঘ গণনা করা হয়। একটি বাঘ গড়ে ১০-১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে। পুরুষ বাঘের ওজন গড়ে ২২৫ কেজি এবং বাঘিনীদের গড় ওজন ১৩৫ কেজি। এদের দেহের দৈর্ঘ্য প্রায় নয় ফুট। এদের দাঁত খুব শক্ত হয়। আকারে প্রায় ১০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এই দাঁতের কামড় থেকে শিকার সহজে বের হতে পারে না।

শিকার এবং ভোজনবিলাস: 
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শক্তিমত্তার উপযুক্ত পরিচয় মেলে শিকারের সময়। মাংসাশী প্রাণী হওয়ার কারণে বাঘ মাঝারি থেকে বড় আকারের বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী শিকার করে খায়। গাউর, ভারতীয় মোষ, সাম্বার হরিণ, চিত্রা হরিণ, বুনো শূকরসহ বিভিন্ন প্রাণী এদের ভোজনবিলাসিতার তালিকাভুক্ত। তবে এ তালিকা দেখে বাঘ শুধু বড় প্রাণী সাবাড় করে, তা ভেবে বিভ্রান্ত হবেন না। এরা খরগোশ, সজারুর মতো আকারে ছোট প্রাণীও ভক্ষণ করে। বনাঞ্চল ধ্বংসের ফলে খাবার ঘাটতি দেখা দিলে এরা বনের পার্শ্ববর্তী মানুষের বসতিতেও আক্রমণ করে। এরা একেবারে ৬০ কেজি পর্যন্ত খাদ্যগ্রহণ করতে পারে, তবে সচরাচর অল্প অল্প করে খেতে ভালোবাসে। তারা সাধারণত মানুষজনের সামনে পড়তে চায় না। কিন্তু কিছু কিছু বাঘের মানুষখেকো হয়ে ওঠার প্রমাণও পাওয়া গেছে। মানুষখেকো বাঘেরা অসুস্থ থাকে এবং স্বাভাবিকভাবে শিকার করতে অক্ষম হয়। আবার লোকালয়ের পাশে বাস করা বাঘরাও মানুষ আক্রমণ করতে পারে।
এদের একটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, লম্বা দূরত্ব পর্যন্ত শিকারকে তাড়া করতে না পারা। এজন্য এরা ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে। অনেকটা সামরিক কায়দায় ঘাপটি মেরে থাকা বাঘ সময় এবং সুযোগ বুঝে শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ঘাড় মটকে দেয়। ক্ষেত্রবিশেষে এরা ঘাড়ে কামড় বসাতে না পারলে শক্তিশালী থাবার মাধ্যমে শিকারকে বধ করে থাকে; এরপর শিকারকে টেনে তার ডেরায় নিয়ে যায় এবং সেখানেই সারে ভোজনপর্ব। মাঝে মাঝে এরা শিকার মুখে নিয়ে নদী পর্যন্ত পাড়ি দেয়।

বাঘের স্বভাব: 
বাঘ মানেই হিংস্র ও বন্য প্রাণী। শিকারি প্রকৃতির প্রাণী হওয়ার কারণে বাঘ অন্যান্য প্রাণীর প্রতি মোটেও বন্ধুসুলভ নয়, একথা নিশ্চিত বলা যায়। এরা একাকী থাকতে এবং শিকার করতে পছন্দ করে। তবে শীতকালে এদের ৩/৪ জনকে একসাথে দলবদ্ধ হয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। দৌড় এবং সাঁতারে সমান পারদর্শিতা দেখায় এরা, দিনের বেলায় ছায়াঘেরা এলাকায় বিশ্রাম করে এবং সন্ধ্যা অথবা ভোরের হালকা আলোয় শিকার করতে পছন্দ করে। এদের মাঝে মাঝে অতি গরমে জলের মধ্যে ডুব দিয়ে বিশ্রাম করতেও দেখা গেছে। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর। ধারণা করা হয়, এরা কারো চেহারা একবার দেখলে আর ভোলে না। স্মৃতিশক্তি মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে বেশি বলে দাবি করেন বিজ্ঞানীরা।

খাদ্যসংকট দেখা না দিলে নিজের এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও হানা দেয় না এরা। নিজের সীমানা চিহ্নিত করার জন্য বাঘেদের তো কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার উপায় নেই। তাই তারা একটি অদ্ভুত কাজ করে। সীমান্তবর্তী অঞ্চলের গাছগাছালি এবং পাথরে মূত্র এবং কস্তুরীর মিশ্রণ ছড়িয়ে রাখে এবং অন্যান্য বাঘ এই মিশ্রণ দেখে সীমান্ত চিনে রাখে, অতঃপর অনধিকার প্রবেশ থেকে বিরত থাকে। তবে এত হিসেবের পরও কখনও কখনও দুই বা ততোধিক বাঘের মধ্যে লড়াই বেঁধে যায়। লড়াইকালে এরা গর্জন করে না, গলা থেকে শুধু হালকা শিসের মতো আওয়াজ বের হয়।

বংশবিস্তার: 
একাকী থাকতে পছন্দ করা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের একমাত্র সামাজিক কর্মকাণ্ড হিসেবে ধরা যায় প্রজননক্রিয়া এবং সন্তান পরিচর্যাকে। অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মতো এদের প্রজননের কোনো নির্দিষ্ট ঋতু নেই। একটি বাঘিনী বছরের ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যবর্তী সময়ে শাবকের জন্ম দেয়। একটি বাঘিনী একসাথে এক থেকে চারটি শাবকের জন্ম দিতে পারে। একটি পুরুষ বাঘ ৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়ে ওঠে। স্ত্রী বাঘের ক্ষেত্রে প্রজননক্ষম হওয়ার বয়স তিন বছর হয়ে থাকে। বাঘিনীর গর্ভকাল প্রায় ১০৪ দিনের মতো হয়। কিছু ক্ষেত্রে এরা ৯৮তম দিন বা এর আগে শাবক জন্ম দেয়। আবার ১১০ দিনের পরেও জন্ম দিতে দেখা গেছে।

বাঘ শাবক জন্মের পর প্রথম তিন থেকে ছ’মাস দুধপান করে জীবনধারণ করে। জন্মের ১০ দিনের মাথায় এদের চোখ ফোটে। মোট জন্ম নেওয়া শাবকের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিভিন্ন কারণে মারা যায়। বেঁচে থাকা পাঁচমাস বয়সী শাবককে মা বাঘ শিকারজীবনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। মোটামুটি দু’ বছর বয়সী বাঘ নিজের শিকার নিজে করতে শিখে যায় এবং একাকী জীবনযাপন শুরু করে।
এবার রয়েল বেঙ্গল টাইগার সম্পর্কিত কিছু মজার তথ্য একনজরে দেখে নেওয়া যাক-
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের লালা জীবাণুনাশক এবং পচননিরোধক গুণসম্পন্ন। এ কারণে এরা দেহের কোথাও আঘাত পেলে সেখানে জিহ্বা দিয়ে লালা মালিশ করে দেয়। এই লালা রক্তপাত বন্ধ করতেও উপকারী। এদের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৬০ কিলোমিটার। বাঘের গর্জন প্রায় ৩ কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যায়। বাঘ জাতীয় প্রাণীদের মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দাঁতের আকার বৃহত্তম। এদের কানের পেছনে সাদা ফোঁটা দেখা যায়। এর ফলে বাঘের মাথার পেছনেও এক জোড়া চোখ আছে বলে ভুল হয়। বাঘের সামনের পা পেছনের পায়ের চেয়ে দৈর্ঘ্যে ছোট। এর ফলে এই বাঘ প্রায় ২০-৩০ ফুট লম্বা লাফ দিতে পারে। দৌড়ানোর সময় বেঙ্গল টাইগার খুব দ্রুত দিক পরিবর্তন করতে পারে। এ বৈশিষ্ট্যের পেছনে লেজের ভূমিকা মুখ্য। বাঘের তাড়া করা প্রাণীদের মধ্যে সফলভাবে শিকারে পরিণত হওয়ার হার ১৫ শতাংশ। বাঘের ডোরাকাটা দাগ এদের চামড়ার উপরেও আছে। তাই দীর্ঘ লোম ফেলে দিলেও দাগ মুছে যায় না। রয়েল বেঙ্গল টাইগার পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী, যাদের এই বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এসব বৈশিষ্ট্য রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে পৃথিবীর অন্যান্য বাঘ থেকে আলাদা করেছে।

বাঘের বিপন্ন অবস্থা
ছোটবেলা মুরুব্বিদের মুখে শোনা বাঘের গল্পে প্রায়ই বাঘকে ‘মামা’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়। এই বাঘ মামার গল্প শুনতে শুনতে আমরা কল্পনায় ডোরাকাটা হালুম হালুম ডাকা বাঘের চিত্র আঁকতে থাকি। দেশের জাতীয় পশু হিসেবে পরিচিত এই বাঘকে বাংলার গৌরব এবং তেজোদীপ্ততার প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়। এই বাঘ মামা’র চিহ্ন বুকে নিয়ে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে ক্রিকেট দলসহ আরো নানা ক্রীড়া সংগঠন। কিন্তু বাঘ মামারা আর ভালো নেই। যে বাঘ মামার গল্প শুনে শিশুরা বেড়ে ওঠে, সেই দিন বুঝি গেল। কিন্তু কেন ভালো নেই বাঘ মামা? কী তার দুঃখ? বাঘের দুঃখ হচ্ছে মানুষ। মানুষ দুই কারণে সুন্দরবনের অলংকার রয়েল বেঙ্গল টাইগার শিকার করে আসছে।

প্রথমত, প্রাচীনকাল থেকে হিংস্র বন্যপ্রাণী শিকার করাকে গৌরবের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ভয়ংকর ধারণা এবং গৌরবের আশায় শিকারীরা বহু আগে থেকে রয়েল বেঙ্গল শিকারের নেশায় পড়েছে। দ্বিতীয়ত, বাঘের চামড়া, দাঁত, লোম, কঙ্কাল প্রভৃতিকে বহু রোগের মহৌষধ হিসেবে প্রচার করে চড়া দামে কালোবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া বন ধ্বংস করে বসতি স্থাপনের সময় বাঘের আস্তানার দেখা পেলে মানুষ বাঘ হত্যা করছে। গত শতাব্দীতে এভাবেই ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় ৯৭ শতাংশ বাঘ হারিয়ে গেছে। বর্তমানে যে অল্পসংখ্যক বাঘ বেঁচে আছে, তারাও দ্রুত হারে হ্রাস পাচ্ছে। আবার জলবায়ু বদলের কারণে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে। ফলে বাঘের আবাসস্থল হারিয়ে যাচ্ছে। এজন্য বাঘ মামারা আর ভালো নেই। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো কয়েক দশক পর রয়েল বেঙ্গল টাইগারের নাম ডাইনোসরের পাশে জাদুঘরে শোভা পাবে।

বাঘ বাঁচাও

১৯৭০ সালে ভারতে রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে রক্ষা করার জন্য বেশ কিছু প্রকল্প চালু করা হয়। ১৯৭২ সালে ভারতীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সরকার রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে সংরক্ষণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে। পরিবেশবাদী সংস্থা IUCN রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বিপন্ন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। তাছাড়া নেপালেও বাঘ রক্ষার্থে নানা আইন প্রণিত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও বাঘ রক্ষায় ‘টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান’ হাতে নেওয়া হয়েছে। এর প্রকল্পের আওতায় বাঘশুমারির মাধ্যমে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণের পর এদের রক্ষায় নির্দিষ্ট এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
এছাড়া স্মার্ট পেট্রল নামক একটি আধুনিক ব্যবস্থা চালু হয়েছে, যার মাধ্যমে বাঘের এলাকা নজরদারি করা হচ্ছে। তবে নির্দিষ্ট এবং পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় প্রকল্পগুলো অনেকাংশেই ব্যর্থ হচ্ছে। তাই বাঘের সংখ্যা কমেই যাচ্ছে। বেশ কিছু অভয়ারণ্য নির্মাণ করা হলেও সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না। স্থানীয়দের মধ্যে বাঘ শিকার আইন সম্পর্কে সচেতনতা না থাকায় অহরহ বাঘ নিধন চলছে।
আন্তর্জাতিক বাঘ সম্মেলনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে একটু আগে আলোচ্য অব্যবস্থাপনাসহ অপরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে বারবার বাঘ রক্ষা প্রকল্প ব্যর্থ হচ্ছে। এই বিষয়ে অতিদ্রুত কার্যকরী কিছু না করা হলে বাঘদের আর রক্ষা করা সম্ভব হবে না। জাতীয় পশুর করুণ পরিণতি আমাদের জাতীয় ব্যর্থতায় রূপান্তরিত হবে। সুন্দরবন বাংলাদেশের জাতীয় বন। এ বন রক্ষার পেছনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বড় ভূমিকা পালন করছে। যদি বাঘ না থাকে, তাহলে বনও একসময় হারিয়ে যাবে। প্রকৃতির আশ্চর্য, অনন্য এবং সুন্দরবনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার ফের বাংলার বনে দাপটের সাথে রাজত্ব করুক, সেই প্রত্যাশায় আছে বাংলাদেশ।

রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গায়ের রং
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গায়ে উজ্জ্বল হলুদ থেকে হালকা কমলা রঙ্গের লোম থাকে।এদের গায়ে যে ডোরাকাটা থাকে তা হয় উজ্জ্বল কালো কিংবা গাঢ় খয়েরি। পেটের দিকের লোমের রং সাদা। লেজের অংশ হয় কালো রং এর। এই কালো রং এর উপর রিং আকৃতির সাদা দাগ থাকে যা তাদের লেজকে সৌর্ন্দয মন্ডিত করে তোলে।
এছাড়াও সাদা রং এর বেঙ্গল টাইগার দেখা যায়। এগুলো বন্যপরিবেশে দেখা যায় না। তবে রির্জাভ এরিয়া কিংবা চিড়িয়াখানায় এদের উপস্থিতি রয়েছে যদিও সংখ্যা খুবই কম। ধারনা করা হয় জেনেটিক মিউটেশনের কারনে এদের গায়ের রং পরিবর্তিত হয়েছে। সাদা বাঘের গায়ের লোমের রং সাদার উপর বাদামী রঙ্গের ডোরাকাটা রয়েছে।এছাড়াও কালো বর্ণের বাঘের চাড়মা চোরাকারবারীদের নিকট হতে উদ্ধার করা হলেও বাস্তাবে কালো বর্ণের বাঘের উপস্থিতির কোন রেকর্ড নেই। একসময় ভারতের উড়িষ্যা, বিহার, আসাম এবং মধ্য প্রদেশের রেওয়া এলাকায় সাদা বাঘের উপস্থিতি লক্ষ করা গেলেও বর্তমানে এইসব অঞ্চলে সাদা বাঘ আর দেখা যায় না।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর আকার আকৃতি: 
ভারতের বেঙ্গল টাইগারদের শরীর লম্বায় ৬-৬.৫ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং লেজের দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে তিনফুটের মতো হয়ে থাকে। সবছেয়ে লম্বা বাঘের রেকর্ড রয়েছে ১২.২ ফুট পর্যন্ত। প্রাপ্ত বয়স্ক পুরষ বেঙ্গল টাইগার স্ত্রী বেঙ্গল টাইগারের ছেয়ে আকার ও ওজনে বেশী হয়। পুরষ বাঘের ওজন গড়ে ২২৭ থেকে ২৩০ পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং স্ত্রী বাঘের ওজন গড়ে ১১৬-১৬৪ কেজি পর্যন্ত।
তবে বাংলাদেশের সুন্দরবনে পাওয়া রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ওজন তুলনামূলক ভাবে ভারতে পাওয়া বেঙ্গল টাইগারের ছেয়ে কম হয়। আবার বন্য পরিবেশে বেঙ্গল টাইগার আকারে সবছেয়ে বড় হয়। তবে খাঁচায় সাইবেরিয়ান বাঘগুলো আকারে বেঙ্গল টাইগারের ছেয়েও বড় হয়।ভারতের চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্কের একটি পুরুষ বাঘ পাওয়া গেছে যার ওজন ছিলো ২৭০ কেজি বা ৬০০ পাউন্ডের মতো। যা এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা বাঘদের ওজনের মধ্যে সবছেয়ে বেশী।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার কোথায় বাস করে: 
রয়েল বেঙ্গল টাইগার ভারতীয় উপমহাদেশের এন্ডোমিক বা স্থানীয় প্রানী। বন্য পরিবেশে এগুলো শুধুমাত্র ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভুটানেই পাওয়া যায়। ভারতীয় উপমহাদেশের যেসব অঞ্চলে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাস করে তার তথ্য নিছে দেওয়া হলো।

বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলে বেঙ্গল টাইগার পাওয়া যায়: 
বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে পাওয়া যায়। যদিও একসময় বাংলাদেশের মধুপুর, গাজীপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বেঙ্গল টাইগারের দেখা পাওয়া যেতো বর্তমান এইসব অঞ্চলে কোন বাঘের সন্ধান পাওয়া যায় না। সেই হিসেবে বাংলাদেশের সুন্দরবনেই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের একমাত্র আবাস্থল।সুন্দরবনের প্রায় ৫,৭৭০ বর্গকিমি এলাকা জুড়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের বাস। ২০০৪ সালের এক জরিপে সুন্দরবনে প্রায় ৪০০-৪২০টি বেঙ্গল টাইগারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

২০১৫ সালে পুনরায় জরিপ করা হলে দেখা যায় সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে গিয়ে দাঁড়ায় ১০৬টিতে। তদপ্রেক্ষিতে সুন্দরবনে বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ সরকার নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যারফলে সর্বশেষ জরিপে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১১৪টিতে। অর্থাৎ সর্বশেষ জরিপ অনুযায়অ বাংলাদেশে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ১১৪টি।
বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে রক্ষা করার জন্য ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সংরক্ষন ও গড়ে তোলার পাশাপাশি এইসব অঞ্চলে চিত্রা হরিনের আবাসস্থল গড়ে তুলেছে।এছাড়াও সম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক কঠোর ভাবে বনদস্যু ও চোরাকারবারী দমন এবং সুন্দরবনের আশেপাশের গ্রামের মানুষকে সচেতন করায় সুন্দরবন অংশে বাঘের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে বলে ধারনা করা হয়।বাংলাদেশ বনবিভাগের তথ্যানুযায়ী ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ১৭ বছর সময়ে স্বাভাবিক বয়স জনিত কারনে মারা গেছে ১০টি, বনের আশেপাশের জেলে ও মৌয়ালিরা পিটিয়ে মেরেছে ১৪টি, প্রাকৃতিক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ০১টি এবং চোরাকারবারীরা হত্যা করেছে ২৫টি। অর্থ্যাৎ ১৭ বছরে ৫০টি বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবন হতে মারা গেছে।

রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বৈশিষ্ট:
বেঙ্গল টাইগার তার কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারনে অন্য সবার থেকে আলাদা। বেঙ্গল বাঘের ১১টি অনন্য বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলো যেগুলো হয়তো আপনার অজানা।

০১. বেঙ্গল টাইগার একাকী থাকতে পছন্দ করে:
বেঙ্গল টাইগার তার নিজের এলাকায় একাকী থাকতেই পছন্দ করে। শুধুমাত্র মিলনের সময় স্ত্রী ও পুরষ বাঘ একত্রিত হয়। এছাড়া এদের মাঝে সামাজিক ও পারিরিক বন্ধন থাকে না। অনেক সময় তিন চারটি বাঘকে একসাথে দেখা গেলেও বাস্তবে এগুলো মা বাঘের তরুন সন্তান যারাও কয়দিন পরে আলাদা হয়ে যাবে। সাধারনত বাঘের বাচ্চা দুই বছর পর্যন্ত মায়েল সাথে থাকে এরপর তারা আলাদা হয়ে যায়।

০২. বেঙ্গল টাইগার নিশাচর প্রানী:
রয়েল বেঙ্গর টাইগার নিশাচর প্রানী এরা রাতে চলাফেরা করে এবং দিনের বেলা বেশীরভাগ সময়ই ঘুমিয়ে বা অলস ভাবে সময় কাটায়। খাবারের সন্ধানে বাঘ এক রাতে প্রায় ২০ মাইল এলাকা পর্যন্ত হাঁটতে পারে।
০৩. বেঙ্গল টাইগার বনের সবছেয়ে শক্তিশালী প্রানী:
বিড়াল প্রজাতির প্রানীদের মধ্যে বেঙ্গল টাইগার সবছেয়ে বেশী শক্তিশালী। এরা এদের ওজনের ছেয়েও বড় প্রানীকে শিকার করতে পারে এবং শিকার করার পর তাকে টেনেও নিয়ে যেতে পারে। আবার বাঘ শিকারকে তাড়া করে প্রায় একমাইল পর্যন্ত যেতে পারে।
০৪. বেঙ্গল টাইগার দক্ষ শিকারী:
বাঘ অনেক শক্তিশালী প্রানী। তাই শিকার ধরার ক্ষেত্রে এদের লক্ষ বস্তু খুব কম সমই ব্যার্থ হয়। শিকার ধরার পর এরা প্রথমে যে ঝাঁকুনি দেয় তাতে শিকার প্রানীটির মেরুদন্ডের কর্ড ভেঙ্গে যায় কিংবা গলায় কামড় দিয়ে ধরে যা থেকে শিকার প্রানীটি আর ছাড়া পায় না।খাবারের জন্য এরা বড় প্রানী হলে সপ্তাহে এক বা দুইবার শিকার করে ছোট আকারের প্রানী হলে প্রতিদিনই শিকার করে।
০৫. বেঙ্গল টাইগারদের নিজস্ব ভৌগলিক এলাকা আছে:
বন্য পরিবেশে বেঙ্গল বাঘদের নিজস্ব একটা ভৌগলিক এলাকা আছে। এই এলাকাটা খাদ্য প্রাপ্ততার উপর নির্ভর করে আকারে ছোট বড় হয়। একটি বাঘ খাবারের উদ্দেশ্যে এক রাতে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা ভ্রমন করতে পারে।
০৬. স্ত্রী বাঘিনী নিজে বাসা পছন্দ করে:
স্ত্রী বাঘিনী সবসময় নিজের পছন্দ মতো বাসা নির্বাচন করে। কারন স্ত্রী বাঘ সন্তানের নিরাপত্তার জন্য একটি সুন্দর ও নিরাপদ বাসা খোজে। বেশীরভাগ সময় তাদের বাসা হয় নদীর পাড়ে কিংবা জোয়ারের সময় যে পর্যন্ত পানি উঠে তার আসে পাশে। এর কারন হচ্ছে পানির কাছাকাছি থাকলে গরমে বাচ্চাদের অসুবিধা না হয়।
০৭. বেঙ্গল টাইগার গাছে উঠতে পারে:
বড় আকারের বিড়াল প্রজাতিগুলো মধ্যে Leopard তুখোড় গাছ আরোহী সেই হিসেব বেঙ্গল টাইগার তেমন গাছে উঠতে পারে না। তবে বিড়ালের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে এরাও অল্প বিস্তার গাছে উঠতে পারে। শিকার ধরার জন্য কিংবা মানুষের আক্রমনে এরা অনেক সময় এরা গাছে উঠে যদিও Leopard এর মতো এরা অতোটা পরিপক্ক না।
০৮. বেঙ্গল টাইগার দারুন সাঁতারু:
ম্যানগ্রোভ বনের বৈশিষ্ট হচ্চে জোয়ারের সময় এইসব বনে পানি উঠে। যেহেতু ম্যানগ্রোভে বনে বেঙ্গল বাঘ থাকে সেহেতু ঐ পরিবেশে টিকে থাকার জন্য এরা পানিতে সাতার কাটার বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে। এরা পানিতে দ্রুত সাতার কাটতে পারে এবং পানি থেকেও শিকার করতে পারে। পানিতে শিকার করার সময় এদের মুখ থেকে শিকার ছুটে পড়ে না।
০৯. বেঙ্গল টাইগারের স্বতন্ত্র ডোরাকাটা দাগ:
বেঙ্গল টাইগার স্ট্রাইপেট প্রানী যাদের শরীরে ডোরাকাটা দাগ রয়েছে। এই ডোরাকাটা দাগগুলো তাদের বড় ঘাসের মধ্যে আড়াল করতে সাহায্য করে যার ফলে এরা সহজেই শিকারের একেবারে কাছে চলে আসতে পারে। এছাড়া প্রতিটা বেঙ্গল টাইগারের গায়ের ডোরাকাটা দাগ স্বতন্ত্র। একটির সাথে অন্যটি কোনদিন মিলে না। অনেকটা মানুষের আঙ্গুলের চাপের মতো।
১০. বাঘের পশম ঝরে যায়:
জন্মের পরে সদ্যজাত বাঘের বাচ্ছাগুলোর গায়ে এক ধরনের পরু পশমের আবরণ থাকে তা তিন থেকে পাঁচ মাস বয়সে এসে সম্পূর্ন ঝরে যায় এবং নতুন রূপে নতুন পশমে আবৃত হয়ে যায়।
১১. মা বাঘ বাচ্চা বাঘের মল খায়:
জন্মের পর মা বাঘ তার বাচ্চাদের জিব দিয়ে অনবরত চাঁটতে থাকে যাতে করে তাদের রক্ত প্রবাহ ঠিক থাকে এবং মল ত্যাগ করতে উদ্দীপ্ত হয়। মা বাঘ অনেক সময় বাচ্চা বাঘদের মল খেয়ে ফেলে যাতে করে শত্রু প্রানীরা বাচ্চাদের মলের গন্ধে বাচ্চাদের কাছে চলে আসতে পারে।
বাঘ ও সিংহের মিলনে কি হয়:
একটি স্ত্রী বাঘ এবং একটি পুরুষ সিংহের মাঝে ক্রসব্রিডে জন্ম নেওয়া বাঘকে লাইগার বলে। এরা আকারে এদের পিতামাতার চেয়ে অনেক বড় হয়। একটি পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ লাইগার ১৬০০ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন করতে পারে যা অন্য সব বাঘের ছেয়েও আকারে ‍বৃহৎ।
আবার বেঙ্গল টাইগার এবং সাইবেরিয়ান টাইগারের ক্রসব্রীড হয় যে বাঘের জন্ম হয় প্রাপ্ত বয়স্কে এসে তারা তাদের পিতামাতার চেয়েও আকারে বড় হয়।

রয়েল বেঙ্গল টাইগারের খাদ্যাভ্যাস:
রয়েল বেঙ্গল টাইগার মাংশাসী প্রানী। তাই এরা মাংস ব্যাতীত কিছুই খায় না। তবে খাবারের অভাবে এরা মাঝে মাঝে পাখি ও কুমিরের ডিমও খেয়ে থাকে। বেঙ্গল টাইগারের খাবারের মূল উপাদান মাংস এবং প্রাপ্ত বয়স্ক পুরষ বেঙ্গল টাইগারের প্রতিদিন প্রায় ২০কেজির মতো মাংসের প্রয়োজন হয়। অপরদিকে স্ত্রী টাইগারদের প্রতিদিন প্রায় ৭-৮কেজি মাংসের প্রয়োজন হয়। তবে বাচ্ছা প্রসবের পর স্ত্রী বাঘের খাবারের পরিমান স্বাভাবিকের ছেয়ে ৫০% বেশী হয়ে যায়। বেঙ্গল টাইগার একবারে ৪০ কেজি পর্যন্ত মাংস খেতে পারে। আর এই চাহিদা মিটানোর জন্যে এরা বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রানী শিকার করে। তবে শিকারের ক্ষেত্রে এদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের তৃনভোজী প্রানীরা।

বেঙ্গল টাইগারের খাবারের তালিকায় বড় আকারের প্রানীদের মধ্যে রয়েছে বনগরু (ভারতীয় বাইসন), সম্বর হরিণ, টাকিন (এক ধরনের বড় আকারের ছাগল), হিমালয়ী সেরো (এক ধরনের বনছাগল), জলহস্তী, নীলগাই, বন্যমহিষ, টাপির, হাতি, গন্ডার ইত্যাদি। তবে এই ধরনের প্রানীগুলোর মাঝে বনগরু ও সাম্বার বাঘের সবছেয়ে প্রিয় খাবার। এই শিকারগুলো সাধারনত আত্নরক্ষা করতে অতোটা পারদর্শী না বলে বাঘ সহজেই এদের কাবু করতে পারে। তবে বাঘ বেশীর ভাগ সময় আকারে বড় এবং শক্তিশালী এমন ধরনের প্রানীকে শিকার করা থেকে বিরত থাকে। কারন শিকার করার পর এদের টেনে নিয়ে যাওয়া বাঘের পক্ষে কষ্টকর হয়ে যায়। তবে সুযোগ ফেলে এরা বড় আকারের তৃনভোজী প্রানীদের বাছুরকে শিকার করে এবং খাদ্য সংকট থাকলে প্রাপ্ত বয়স্কদেরও শিকার করে। তবে বাঘ সাধারনত ভারতীয় গন্ডার এবং হাতিকে আক্রমন করে না যদিও এদের উপর বাঘের আক্রমনের রেকর্ড আছে।

বেঙ্গল টাইগারের সবছেয়ে পছন্দের ও প্রিয় খাবারের তালিকায় রয়েছে মাঝারি আকারের তৃনভোজী প্রাণীগুলো। এদের মধ্যে রয়েছে প্যারা হরিন, চিতল হরিন, ছাগল, গরুর বাছুর, বন্য শূকর, মহিষের বাছুর, ল্যাঙ্গুর, নীলগাই ইত্যাদি। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক বেঙ্গল টাইগার বছরে প্রায় ৫০টির মতো হরিন শিকার করে থাকে এবং সপ্তাহে প্রায় একটি করে হরিন শিকার করে। কোন বাঘ যদি সপ্তাহে একটি করেও হরিন শিকার করতে পারে তাহলে সেই বাঘের খাদ্যঘাটতি হয় না। একটি বাঘ বছরে প্রায় ৩০০০ কেজি শিকার করে থাকে।
এছাড়াও খাদ্য সংকটে বেঙ্গল টাইগার কিছু কিছু ছোট আকারের প্রানীও শিকার করে থাকে। যেমন- ময়ূর, রেসাস বানর, খরগোশ, কুমিরের ডিম, বাজপাখি, সজারু ইত্যাদি। তবে সচারচর বাঘ এই ধরনের প্রানীদের শিকার করে না। কারন আকারে ছোট হওয়ায় এইগুলো বাঘের খাবারের চাহিদার খুব বেশী পূরণ করতে পারে না।
বেঙ্গল টাইগার সচারচর অন্যান্য শিকারী প্রানী বা মাংসাশী প্রানীদের শিকার করে না, তবে আত্মরক্ষা কিংবা খাবারের সংকটে এরা শিকারী প্রানীদেরও শিকার করে এদের মাংস খায়। এই তালিকায় রয়েছে- এশিয়াটিক সিংহ, হাতির বাচ্চা, গন্ডারের বাছুর, ভারতীয় নেকড়ে, এশিয়ান কালো ভালুক, স্লথ ভালুক, বন্য কুকুর, লিওপার্ড, শেয়াল, মাছ, কুমির ইত্যাদি। যদিও এইগুলো বাঘের খাবারের অংশ না। বাংলাদেশের সুন্দর বনের বাঘের পেটে একবার একটি কিং কোবরা এবং একটি ভারতীয় কোবরা পাওয়া গেছে। সেই হিসেবে বাঘ সাপও খায়।

বেঙ্গল টাইগারদের শিকার করার পদ্ধতি:
বিড়াল জাতীয় প্রানীরা শিকার খোজার জন্য তাদের ঘ্রান শক্তিকে কাজে লাগায় কিন্তু বেঙ্গল টাইগার এইক্ষেত্রে একটু আলাদা। এরা শিকার খোজার জন্য এদের দৃষ্টি শক্তি এবং শ্রবণশক্তিকে কাজে লাগায়। শিকার দেখলেই এরা শিকারের পিছনে দৌড় দেয় না। বাঘ তার সময়ের বেশীরভাগই ব্যয় করে শিকার খোজার কাজে। তবে এরা রাত্রী বেলা শিকার করতে বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। পছন্দের শিকার দেখলে এরা শিকারের চোখের আড়ালে হামাগুড়ি দিয়ে যতোটুকু সম্ভব শিকারের একেবারে কাছে চলে আসে। যখনি এরা শিকারকে নিজের সম্পূর্ন আয়ত্বে আনতে পারে তখনি এরা শিকারের উপর দৌড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সচারচর বাঘ শিকারের পিছন থেকে কিংবা পাশ থেকে আক্রমন করে এবং সকল শক্তি দিয়ে শিকারের ঘাড়ের প্রধান রক্তনালীতে কিংবা গলায় কামড় দিয়ে শিকারকে মাটিতে শুয়ে ফেলে। যতোক্ষন শিকার মারা না যায় ততোক্ষন এরা শিকারের গলা হতে কামড় সরায় না। এরপর শিকার করা প্রানীকে টেনে পছন্দের নিরিবিলী যায়গায় নিয়ে যায় এবং লম্বা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে খায়।
রয়েল বেঙ্গল টাইগার কি মানুষ খায়?
প্রায় সময় পত্রিকার পাতায় দেখা যায় রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আক্রমনে মৌয়ালিদের জীবননাশ হতে। এতে হয়তো আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে বেঙ্গল টাইগার কি মানুষ খায়?
বাস্তবতা হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের খাবার তালিকায় মানুষ নেই। তারপরেও মাঝে মাঝে বাঘ মানুষকে আক্রমন করে হত্যা করে এবং মানুষের মাংস খায়। তাই এদেরকে অনেকে নরখাদকও বলে। বাস্তবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মানুষের উপর আক্রমনের ঘটনা প্রতি হাজারে মাত্র দশটি। মানুষের উপর আক্রমনের এই দশটির মধ্যে ০৬ টি আক্রমন ঘটে অসুস্থ বা বৃদ্ধ বাঘ দ্বারা যারা শিকার করতে পারে না তাই খাদ্য সংকটে মানুষের উপস্থিতি পেলে এরা মানুষের উপর আক্রমন করে বসে। বাকি চার ভাগ হচ্ছে অনিচ্ছাকৃত আক্রমন। যখন মানুষ বাঘের বসতিতে প্রবেশ করে তখন বাঘ তার এলাকায় মানুষের উপস্থিতি নিরাপদ মনে করে না আর তাই নিজেদের এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখতেই রয়েল বেঙ্গল টাইগার মানুষের উপর আক্রমন করে। এছাড়াও মাঝে মাঝে বন্য পরিবেশে খাবারের সংকট দেখা দিলে বেঙ্গল টাইগার বনের নিকটবর্তী লোকালয়ে চলে এসে গৃহপালিত গরু কিংবা ছাগলের উপর আক্রমন করে। এইসময় মানুষ কর্তৃক বাঁধাপ্রাপ্ত হলে এরা মানুষের উপর আক্রমন করে বসে।
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের প্রজনন:
বাঘের কোন নির্দিষ্ট প্রজনন ঋতু নেই। পুরষ বাঘ সাধারনত ৪-৫ বছর বয়সে এবং স্ত্রী বাঘ ৩-৪ বছর বয়সে প্রজননের জন্য উপযোগী হয়। স্ত্রী রয়েল বেঙ্গল টাইগার ৩-৯ সপ্তাহ পর পর হিট সাইকেলে আসে। হিট সাইকেলের সময় থাকে ৩-৬দিন পর্যন্ত। বাঘের গর্ভকালীন সময় প্রায় ৯৩-১১২ দিন। বাচ্চা প্রসবের সময় ঘনিয়ে এলে স্ত্রী বাঘ একটি নিরাপদ বাসা ‍খোজার জন্য বেশী সময় ব্যায় করে। নিরাপদ কোন যায়গা ফেলে সেইখানে স্ত্রী বাঘ বাচ্চা প্রসব করে। স্ত্রী বাঘ একসাথে দুই থেকে সাতটি পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব করতে পারে। তবে গড়ে তিনটি করে প্রসব করে। জন্মের পর বাঘের বাচ্চাদের ওজন হয় সাধারনত এক থেকে দেড় কেজী পর্যন্ত। বাঘের বাচ্চা অন্ধ হয়ে জন্মায় এবং জন্মের প্রায় সাত থেকে বার দিন পরে এদের চোখ খোলে। তবে পরিপূর্ন ভাবে দেখতে আরো দুই এক সপ্তাহ সময় লাগে।
জন্মের প্রায় দুই থেকে তিন সপ্তাহ পরে বাচ্চা বাঘদের দুধ দাঁত উঠতে শুরু করে এবং ৮-১০ সপ্তাহ বয়সের পর থেকে দুধ দাঁত স্থায়ী দাঁত দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। বাচ্চা জন্মের পর স্ত্রী বাঘ তার দিনের প্রায় ৭০% সময় ব্যায় করে সদ্যজাত বাচ্চাদের যত্ন এবং দুধ খাওয়ানোর পিছনে। বাচ্চাগুলো বড় হওয়ার সাথে সাথে দুধ খাওয়ার পরিমানও কমতে শুরু করে। দুই মাস বয়স পর থেকেই বাচ্চা বাঘগুলো শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করে। তবে প্রয় ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ খায়। দুই তিন মাস বয়স পর থেকেই বাঘের বাচ্চাগুলো শিকার ধরার কাজে মা বাঘকে অনুসরন করে। বাচ্চা বাঘের বয়স যখন ৫-৬ মাস তখন তারা শিকার ধরার কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ শুরু করে। প্রায় দুই বছর পর্যন্ত বাচ্চা বাঘগুলো মায়ের সাথে থাকে। এরপর এরা স্বাধীন ভাবে থাকার জন্য আলাদা একটি অঞ্চল নির্বাচন করে এবং মায়ের এলাকা ছেড়ে চলে যায়। বাচ্চা জন্ম থেকে শুরু করে ছেড়ে যাওয়া পর্যন্ত এই দুই থেকে আড়াই বছর সময় স্ত্রী বাঘ হিট সাইকেলে আসে না। বাচ্চাগুলো চলে যাওয়ার পরে স্ত্রী বাঘ পুনরায় হিট সাইকেলে আসে।



No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.