ads

ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল



ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই বিদ্যালয়টি পুরান ঢাকার সদরঘাট এ অবস্থিত। বাংলাদেশ তথা অখন্ড ভারতের অবিভক্ত বাংলার প্রথম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল। বিদ্যালয়টি ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জুলাই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।

তৎকালীন উপমহাদেশের একমাত্র ইংলিশ স্কুল ও বর্তমান বাংলাদেশের শিক্ষা বিস্তারের অন্যতম সূতিকাগার ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল। দেশের ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপীঠের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গৌরব বিস্ময়কর। ১৮৩৫ সালের ১৫ জুলাই বাংলাদেশ তথা অখণ্ড ভারতের প্রথম সরকারি স্কুল হিসেবে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৮৮ বছরে পা রাখা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান ঢাকার সদরঘাটে ১ নম্বর লয়াল স্ট্রিটে।

এই বাংলার প্রথম সরকারি স্কুল ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ঢাকা কলেজ, ঢাকা কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার এই ধারাবাহিকতার সূচনায় ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটানোর মহান ব্রত নিয়ে স্কুলটির প্রতিষ্ঠা। কিন্তু পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী স্কুলটিকে তার মূল ভবন থেকে সরিয়ে সেই ভবনটিকে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান করে। ফলে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সূচনালগ্ন থেকেই দেশ ও বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিবর্গের বিদ্যাপীঠ হিসেবে বিদ্যালয়টি স্বমহিমায় উজ্জ্বল। বর্তমানে বিদ্যালয়টি একক প্রশাসনাধীন দুটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান। প্রভাতি ও দিবা শিফট মিলে একজন প্রধান শিক্ষক, দু জন সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ৫০ জন দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত আছেন। শিক্ষার্থী সংখ্যা মোট ২২১৬ জন।

বিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্নসহ পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম যেমন- ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, বিতর্ক ও কুইজ প্রতিযোগিতা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদ্যাপন এ ছাড়াও নানা ধরনের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড। স্কাউটস, বিএনসিসি, ও রেডক্রিসেন্টস দল বিদ্যালয়ের সব কর্মকাণ্ডে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে ঢাকা জেলার কালেক্টর মি. স্কিনার স্কুল গভনিং বডির সভাপতি ও জেলা সার্জন ডা. জেমস টেইলর স্কুল সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং মি. রিজ নামক একজন দক্ষ ইংরেজ শিক্ষককে স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। প্রথমে এর নাম দেয়া হয়েছিল ঢাকা ইংলিশ সেমিনারি।

১৮৪১ সালে এ সেমিনারি থেকে ঢাকা কলেজের জন্ম হয়। তখন স্কুল শাখাটির নাম রাখা হয় ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল এবং কলেজের অধ্যক্ষের তত্ত্বাবধানে বিদ্যালয়টি ১৯০৮ সালের জুন পর্যন্ত পরিচালিত হয়। ১৯০৮ সালের জুলাইয়ে এই বিদ্যালয়টি বিদ্যালয় পরিদর্শকের তত্ত্বাবধানে নেয়া হয়। তখন থেকেই বিদ্যালয়টি জিলা স্কুলের মর্যাদা পেয়ে আসছে। কিন্তু বিদ্যালয়টির নাম ‘ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল’ রয়ে যায়।


১৮৭২ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয়দের দ্বারাই এই স্কুলটি পরিচালিত হয়। ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন বাবু কৈলাস চন্দ্র ঘোষ। পরে বাবু রায়সাহেব রত্ন মণি গুপ্তের (১৮৮৮-১৮৯৬) পরিচালনাধীনে এ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা পরপর আট বছর বাংলা, বিহার ও আসাম প্রদেশের মধ্যে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রথম স্থান অধিকার করার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

শিক্ষাবিস্তারে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের অবদান অতুলনীয়। বাংলা বিহার উড়িষ্যা ও আসাম নিয়ে গঠিত প্রেসিডেন্সি বেঙ্গলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৯ বারের এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ৮ বার প্রথম হয় ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল। পাকিস্তান আমলে সিএসপি ও ইপিসিএস অফিসারদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন এই স্কুলের ছাত্র। ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীকালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মৌলিক প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন।

দেশবরেণ্য এসব স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বের মধ্যে রয়েছেন ঢাকার নবাব আব্দুল গণি, উদ্ভিদবিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, পদার্থ বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা, অমর কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিশিষ্ট কবি ও কথাসাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসু, শহিদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বাঙালি উপাচার্য ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম চলচ্চিত্রকার হীরালাল সেন, সব্যসাচী কথাসাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক, বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত, বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হোসেন তওফিক ইমাম প্রমুখ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক মতিঝিলে তাদের নিজস্ব ভবনে চলে যাওয়ার পরও ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ভবন ও জায়গা বিদ্যালয়কে ফিরিয়ে দেয়া হয়নি।

উপমহাদেশের প্রথম বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল। এ অঞ্চলের পশ্চাৎপদ জনগণকে পাশ্চাত্য ভাষা ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় করানোর জন্য স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে এ স্কুলের ছাত্রদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানসহ স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে স্বাধীনতা অর্জনে অবদান রেখেছেন।

অতীতের গৌরবময় ইতিহাস ও বর্তমান পরিণতির কথা বিবেচনা করে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের আগের জায়গা ও স্থাপনাগুলো ফিরিয়ে দিয়ে শিক্ষাবিস্তারে অতীতের মতো স্কুলটির অবদান রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন স্কুলটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

ঢাকা কলেজের স্কুল ভারতবর্ষের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী ও গৌরবদীপ্ত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সূচনালগ্ন থেকে বহু দেশবরেণ্য ও বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের বিদ্যাপীঠ হিসেবে অত্র বিদ্যালয়টি সমহিমায় সমুজ্জ্বল।


ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮৩৫ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, ১৮৩৬ সালে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল এবং পাটনা কলেজিয়েট স্কুলের গোড়াপত্তন করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে ঢাকা জেলার কালেক্টর মিঃ স্কিনার স্কুল গভনিং বডির সভাপতি ও জেলা সার্জন ডাঃ জেমস টেইলর স্কুল সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং মিঃ রিজ নামক একজন দক্ষ ইংরেজ শিক্ষককে স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা

প্রথমে এর নাম দেয়া হয়েছিল ঢাকা ইংলিশ সেমিনারী। ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দে এ সেমিনারী থেকে ঢাকা কলেজ-এর জন্ম হয়। তখন স্কুল শাখাটির নাম রাখা হয় ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল এবং কলেজের অধ্যক্ষের তত্ত্বাবধানে বিদ্যালয়টি ১৯০৮ সালের জুন পর্যন্ত পরিচালিত হয়। ১৯০৮ সনের জুলাই মাসে এই বিদ্যালয়টি বিদ্যালয় পরিদর্শকের তত্ত্বাবধানে নেয়া হয়। তখন থেকেই বিদ্যালয়টি জিলা স্কুলের মর্যাদা পেয়ে আসছে। কিন্তু বিদ্যালয়টির নাম "ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল" রয়ে যায়।

১৮৭২ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয়দের দ্বারাই এই স্কুলটি পরিচালিত হয়। ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম প্রধান শিক্ষকের পদ অর্জনের গৌরব লাভ করেন বাবু কৈলাস চন্দ্র ঘোষ। পরে বাবু রায়সাহেব রত্ন মণি গুপ্তের (১৮৮৮-১৮৯৬) পরিচালনাধীনে এ বিদ্যালয়ের ছাত্রগণ পরপর আট বছর বাংলা, বিহার ও আসাম প্রদেশের মধ্যে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রথম স্থান অধিকার করার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

সাবেক ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন
আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, পদার্থবিদ ও জীববিজ্ঞানী
মেঘনাদ সাহা, পদার্থবিজ্ঞানে থার্মাল আয়নাইজেসন তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা।
দীনেশ গুপ্ত, বিপ্লবী
জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, সাবেক সভাপতি(বাংলা একাডেমী)
সৈয়দ শামসুল হক, সব্যসাচী লেখক
শিবলী সাদিক, চলচ্চিত্র পরিচালক
মতিউর রহমান (বীর শ্রেষ্ঠ), বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যাংলার
মুনীর চৌধুরী, ভাষাবিদ, ও শহীদ বুদ্ধিজীবী।
আলমগীর কবির,
রামপ্রসাদ চন্দ,
নাজির আহাম্মেদ,
কাজী আব্দুল ওয়াদুদ,
খাজা আব্দুল গনি, ঢাকার জমিদার।
ব্রজসুন্দর মিত্র
খান আতাউর রহমান, চলচ্চিত্র পরিচালক
সতীশ চন্দ্র রায়
বুদ্ধদেব বসু, সাহিত্যিক
আব্দুল হালিম
মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশের বিচারপতি)
শাহ মোয়াজ্জেম, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ।
সাঈদ আহমদ, বাংলাদেশী নাট্যব্যক্তিত্ব।
বুলবুল আহমেদ, অভিনেতা।
মুস্তফা মনোয়ার,চিত্রশিল্পী
রমেশচন্দ্র মজুমদার, সাবেক উপাচার্য (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
শহীদুল জহির

ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আরিফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ২০২১ কে সামনে রেখে বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, এখানে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদান, অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম, ডাটাবেস সংরক্ষণ ও শিক্ষাব্যবস্থাপনার সকল কাজ বিদ্যালয়ের সফটওয়ারে করা হয়। ফলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের শিক্ষাসংক্রান্ত সকল খবরা খবর তাৎক্ষণিক পেয়ে থাকেন।’

বিদ্যালয়টি স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানমনষ্ক নাগরিক গঠনে তথ্যপ্রযুক্তিতে আরো এগিয়ে যাক; এই কামনা করেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক।


No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.