বহিপীর নাটকের ১৩টি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
বহিপীর নাটকের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর / সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
আজাদের বাবা নামকরা পীর ছিলেন। কিন্তু আজাদ লেখাপড়া শিখেছেন। শহরে চাকরি করেন। দীর্ঘদিন পর গ্রামে বেড়াতে আসেন। গ্রামের মুরুব্বি তার কাছে এসে তাকে সালাম করতে যায়। আজাদ সাহেব নিজেই তাকে সালাম করেন, কিন্তু মুরুব্বি এ ঘটনায় নিজেকে পাপী মনে করেন। আরেক জন তার কাছে পানি পড়া নিতে আসে। তাকে আজাদ সাহেব বোঝানোর চেষ্টা করেন।
ক. বহিপীর নাটকের ১ম সংলাপটি কার? ১
খ. বিয়ে হলো তগদিরের কথা – এ কথাটি বুঝিয়ে বলো। ২
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত গ্রামের মানুষগুলোর কার্যক্রমে ‘বহিপীর’ নাটকে প্রতিফলিত সমাজের কোন চিত্রকে ইঙ্গিত করে তা তুলে ধরো। ৩
ঘ. উদ্দীপকের আজাদ চরিত্রটি ‘বহিপীর’ নাটকের বহিপীরের মতো ধর্মব্যবসায়ী নয় – মন্তব্যটি বিচার করো। ৪
১ এর ক নং প্র. উ.
বহিপীর নাটকের ১ম সংলাপটি হাশেমের।
১ এর খ নং প্র. উ.
বিয়ের ব্যাপারটি মানুষের ইচ্ছায় নয় বরং দৈব নির্দেশে হয়। জমিদারপত্নী খোদেজা তাহেরাকে এভাবে বোঝানোর জন্য আলোচ্য উক্তিটি করেছিলেন।
একজন বুড়ো মানুষের সাথে তাহেরার বিয়ে হওয়ায় সে বাড়ি ছেড়ে পালায়। নৌকায় আশ্রয়প্রার্থী তাহেরাকে বোঝানোর জন্য খোদেজা বলে ‘বিয়ে হলো তকদিরের কথা’। এতে মানুষের কোনো হাত নেই। এতে তৎকালীন সময়ে নারীর সবকিছু মাথা পেতে নেওয়ার প্রবণতাই ব্যক্ত হয়েছে।
১ এর গ নং প্র. উ.
উদ্দীপকে বর্ণিত গ্রামের মানুষগুলোর কার্যক্রমে ‘বহিপীর’ নাটকে প্রতিফলিত ধর্মীয় কুসংস্কারে আচ্ছন্ন সমাজের চিত্রকে ইঙ্গিত করে।
‘বহিপীর’ নাটকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ধর্মীয় কুসংস্কারের বিষয়টি চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। ধর্মীয় কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে এবং সওয়াবের আশায় এক শ্রেণির মানুষ বহিপীরের সব কথা মান্য করে চলে। পীরের সেবায় সর্বস্ব ত্যাগ করার মনোবৃত্তি পোষণ করে। তারা পীরকে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী মনে করে। বহিপীরের প্রতি অন্ধভক্তির কারণে তাহেরার মা-বাবা তাকে একজন বুড়ো পীরের কাছে সঁপে দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না।
উদ্দীপকে পীরের প্রতি সীমাহীন অন্ধবিশ্বাসের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। আজাদের বাবা নামকরা পীর হলেও আজাদ শিক্ষিত ও আধুনিক মানুষ। তিনি দীর্ঘদিন পর গ্রামে এলে গ্রামের মুরব্বি তাকে সালাম করতে চান। পীরের ছেলে বলে তাঁকে বিশেষ মর্যাদা দেন। কিন্তু আজাদ সাহেব নিজেই তাঁকে সালাম করেন। এতে মুরব্বি লোকটির মনে অপরাধবোধ বোধ জাগ্রত হয় এবং নিজেকে পাপী মনে করেন। কেউ আবার তার কাছে পানি পড়া নিতে আসে। সুতরাং উদ্দীপক এবং আলোচ্য ‘বহিপীর’ নাটকে উভয় ক্ষেত্রেই আমরা পীরের প্রতি অযৌক্তিক অন্ধভক্তির দিকটি লক্ষ করি।
১ এর ঘ নং প্র. উ.
উদ্দীপকের আজাদ একজন আধুনিক চিন্তাচেতনার মানুষ। পীরের সন্তান হলেও তিনি বহিপীরের মতো ধর্ম পুঁজি করে নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করেননি।
‘বহিপীর’ নাটকে বহিপীর একজন ধর্মব্যবসায়ী পীর। ধর্মকে ব্যবহার করে তিনি হয়েছেন প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক। চাইলে ধনী মুরিদেরা তার কাছে টাকা-পয়সাসহ সর্বস্ব তুলে দেয়। মানুষকে ধোঁকা দিয়ে তিনি নিজের আখের গুছিয়ে নেন।
উদ্দীপকে আজাদ সাহেব ইচ্ছে করলে বাবার মতো পীর হতে পারতেন। কিন্তু তিনি শিক্ষিত আধুনিক মানুষ হিসেবে কুসংস্কারমুক্ত। যে কারণে বাবার বয়সী একজন বৃদ্ধ মুরব্বির সালাম গ্রহণ না করে নিজেই সালাম দিয়েছেন। আজাদ সাহেব সৎ জীবনযাপন করার জন্য একটি চাকরি করেন। তিনি পানি পড়া দিতেও রাজি হননি। ‘বহিপীর’ নাটকের বহিপীরের মতো ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে তিনি পীর হননি বা অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করেননি।
‘বহিপীর’ নাটকে বহিপীর একজন ক‚টবুদ্ধিসম্পন্ন সুযোগসন্ধানী পীর। তাঁর বৈষয়িক জ্ঞান অত্যন্ত প্রখর। বহিপীর প্রকৃতই যদি ধার্মিক হতেন তবে বৃদ্ধ বয়সে একটি কিশোরীকে বিয়ের চিন্তা করতে পারতেন না। আবার পীর হওয়ার কারণেই তাহেরার অমত সত্তে¡ও তার বাবা-মা সওয়াব লাভের আশায় এ বিয়ে সম্পন্ন করেছিল। ধর্ম ব্যবসায়ীরা এভাবেই মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে। অন্যদিকে উদ্দীপকে আজাদ সাহেবের প্রতি গ্রামের মানুষের অন্ধবিশ্বাস রয়েছে। কিন্তু তিনি সে অন্ধবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে বহিপীরের মতো ভণ্ডপীর হননি। বরং তিনি মানুষকে এসব কুসংস্কারের ব্যাপারে বুঝিয়েছেন, সতর্ক করেছেন। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, উদ্দীপকের আজাদ চরিত্রটি ‘বহিপীর’ নাটকের বহিপীরের মতো ধর্ম ব্যবসায়ী নন।
২. মঞ্জুর সাহেবের ভগ্নিপতি মারা যাওয়ার পর ভগিনী মাজেদাকে নিয়ে এসে মানুষ করে। টাকা বাঁচানোর জন্য মাজেদাকে ব্যবসায়ীর দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মঞ্জুর সাহেবের সাহানা স্ত্রী এর প্রতিবাদ করে এবং তা হতে দেয়নি।
ক. সূর্যাস্ত আইন কত সালে প্রণীত হয়? ১
খ. জমিদার হাতেম আলির মনে শান্তি নেই কেন? ২
গ. উদ্দীপকের মঞ্জুর সাহেবের সাথে ‘বহিপীর’ নাটকের হাতেম আলি চরিত্রের বৈসাদৃশ্য তুলে ধরো। ৩
ঘ. মাতৃসুলভ সহানুভূতি থাকলেও উদ্দীপকের সাহানা চরিত্রটি পুরোপুরি ‘বহিপীর’ নাটকের খোদেজা চরিত্র নয়- মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো। ৪
২ নং প্র. উ.
ক. সূর্যান্ত আইন প্রণীত হয় ১৭৯৩ সালে।
খ. জমিদারি হারানোর শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে বলে জমিদার হাতেম আলির মনে শান্তি নেই।
খাজনা বাকি পড়ে যাওয়ায় হাতেম আলির জমিদারি হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়। সূর্যাস্ত আইন অনুযায়ী যথাসময়ে খাজনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে জমিদারি নিলামে ওঠে। তখন কর্তৃপক্ষ অন্য কারো কাছে জমিদারি হস্তান্তর করে। জমিদারি বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেও টাকার জোগাড় করতে পারেন না জমিদার হাতেম আলি। এমনি এক পরিস্থিতিতে হাতেম আলি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। জমিদারি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার ভয়ে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাই হাতেম আলির মনে শান্তি নেই।
গ. ‘বহিপীর’ নাটকে হাতেম আলি টাকার বিনিময়ে তাঁর কাছে আশ্রিতার সর্বনাশ করতে রাজি হননি। তার এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য উদ্দীপকের মঞ্জুর সাহেবের চরিত্রের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
খাজনা বাকি পড়ায় হাতেম আলির জমিদারি নিলামে ওঠে। বন্ধুদের কাছে সাহায্য চেয়েও তিনি পাননি। এতে তিনি অত্যন্ত চিন্তিত ও বিমর্ষ হয়ে পড়েন। বহিপীরের কাছে ঘটনাটি খুলে বললে তাহেরাকে তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার শর্তে বহিপীর তাঁকে জমিদারি বাঁচানোর জন্য অর্থ ধার দিতে চান। এতে তাহেরা রাজি হলেও জমিদার রাজি হননি। কারণ নিজেকে তাঁর হৃদয়হীন ও কসাই মনে হতে থাকে। জমিদারি চলে গেলেও তিনি একটি নিষ্পাপ মেয়ের জীবন বিপন্ন করতে চাননি।
উদ্দীপকের মঞ্জুর সাহেবের ভগ্নীপতি মারা গেলে ভগিনী মাজেদাকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। টাকা বাঁচাতে মাজেদাকে তিনি ব্যবসায়ীর দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে দিতে চান। যদিও স্ত্রীর বাধায় তিনি তা করতে পারেননি। মঞ্জুর সাহেব নিজের সুবিধার জন্য ভগিনীর ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে এমন একটি অমানবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু বহিপীর নাটকের জমিদার হাতেম আলি চরম বিপদগ্রস্ত হয়েও আশ্রিতা তাহেরাকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়ে নিজে সুখী হতে চাননি।
ঘ. ‘বহিপীর’ নাটকের খোদেজা চরিত্রে মাতৃসুলভ সহানুভূতি থাকলেও কুসংস্কারাচ্ছন্নতার কারণে তা পূর্ণরূপে বিকশিত হতে পারেনি। কিন্তু উদ্দীপকের মঞ্জুর সাহেবের স্ত্রীর মাঝে তা পূর্ণরূপে বিকাশ লাভ করেছে।
বহিপীর নাটকে জমিদারপত্নী খোদেজা কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও অত্যন্ত ধর্মভীরু। অচেনা মেয়ে তাহেরাকে তিনি আশ্রয় বজরার দিয়েছেন। মেয়েটি দুঃখের কাহিনী শুনে ব্যথিতও হয়েছেন। কিন্তু যখনই শুনেছেন মেয়েটি একজন পীরের পালিয়ে আসা স্ত্রী তখন তাকে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছেন। পীরের বদদোয়া কিংবা অমঙ্গলের চিন্তায় ভীত হয়েছেন।
উদ্দীপকের মঞ্জুর সাহেবের স্ত্রী প্রতিবাদী, সাহসী নারী। যার তার সাথে মাজেদার বিয়ে হবে এটা তিনি মেনে নিতে পারেননি। ব্যবসায়ীর দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে একটা দায়সারা গোছের বিয়ে দিয়ে তিনি মাজেদার জীবনটাকে সংকটাপন্ন করতে চাননি। তাই তিনি সচেতনভাবে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন এবং বিয়েটি বন্ধ করে দিয়েছেন। তার এই সাহসী কর্মকাণ্ডে তার মধ্যে মানবিকতাপূর্ণ ও মহতী হৃদয়ের পরিচয় পাই।
‘বহিপীর’ নাটকে খোদেজা চরিত্রে মাতৃসুলভ সহানুভূতি বিদ্যমান। জমিদারপত্নী খোদেজার কন্যাসন্তান ছিল না। তাই তিনি তাহেরাকে অনেকটা মেয়ের মতোই দেখেছেন। বিপদে ঠাঁই দিয়েছেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাহেরা পানিতে ঝাঁপ দিতে গেলে হাশেম তাহেরাকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেয় সেখানেও তাঁর সম্মতি ছিল। আবার বহিপীরের কর্মকাণ্ডে হাশেম মার্জিত প্রতিবাদ করলে খোদেজা তা বারণ করেছে কিন্তু পুত্রের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেননি। অন্যদিকে মঞ্জুর সাহেবের স্ত্রীর মধ্যেও মাতৃসুলভ সহানুভূতি কাজ করেছে। মাজেদাকে তিনি সতীনের ঘর করতে দিতে চাননি। তিনি নিশ্চিতই বুঝেছিলেন মাজেদা সেখানে শান্তিতে থাকবে না। মাতৃসুলভ সহানুভূতির পাশাপাশি তাঁর মধ্যে ছিল ন্যায়-অন্যায় বোধ। সমুন্নত ছিল বিবেক ও ব্যক্তিত্ববোধ। কিন্তু নাটকের খোদেজা বহিপীরের বদদোয়ার ভয়ে মাতৃস্নেহের বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করতে চেয়েছেন। খোদেজার ইচ্ছা ও ভবিষ্যতের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে ধর্মীয় চিন্তা। তাই উদ্দীপকের মঞ্জুর সাহেবের স্ত্রী চরিত্রটি বহিপীর নাটকের খোদেজা চরিত্র নয়।
৩. সুমির বাবা দিনমজুর। যৌতুকের টাকার অভাবে সুমির বাবা বৃদ্ধ মোড়লের সাথে তার বিয়ে ঠিক করে। সুমি রাজি না হয়ে কর্মের সন্ধানে বেরিয়ে পড়তে গেলে সবাই মিলে তাকে ধরে জোর করে বিয়ে দিতে চায়। তখন রাহুল প্রতিবাদ করে এ বিয়ে ঠেকায়। অবশেষে সে নিজেই বিনা যৌতুকে তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ক. নৌকার সঙ্গে কিসের ধাক্কা লেগেছিল? ১
খ. এমন মেয়েও কারো পেটে জন্মায় জানতাম না- এ কথাটি বুঝিয়ে বলো। ২
গ. উদ্দীপকের সুমি চরিত্রটি ‘বহিপীর’ নাটকের কোন চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ – তা তুলে ধরো। ৩
ঘ. প্রতিবাদের প্রতীক চরিত্র হিসেবে উদ্দীপকের রাহুল ও ‘বহিপীর’ নাটকের হাশেম আলি অভিন্ন – মূল্যায়ন করো। ৪
৩ নং প্র. উ.
ক. নৌকার সঙ্গে বজরার ধাক্কা লেগেছিল।
খ. তাহেরার দুঃসাহস লক্ষ করে ‘বহিপীর’ নাটকে বর্ণিত জমিদারের স্ত্রী খোদেজা তাহেরার উদ্দেশে উক্তিটি করেছেন।
‘বহিপীর’ নাটকে তাহেরাকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে পীরের সাথে বিয়ে দিলে সে ঘর ছেড়ে পালায়। তাহেরা কিছুতেই একজন বুড়ো পীরকে স্বামী হিসেবে মানতে চায় না। পীরের হাত থেকে রক্ষা পেতে সে মরিয়া হয়ে ওঠে, আত্মহত্যার ভয় দেখায়। কিন্তু কোনো মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর স্বামীর ঘর করবে না এটা মেনে নিতে পারছিলেন না জমিদারের স্ত্রী খোদেজা। বিশেষত স্বামী যখন একজন পীর তখন কোনো মেয়ের পক্ষে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া খোদেজার কাছে অকল্পনীয়। তাই খোদেজা এমন উক্তি করেছেন।
গ. অসম বিয়েতে রাজি না হওয়ার দিক থেকে উদ্দীপকের সুমী চরিত্রটি ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরা চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘বহিপীর’ নাটকে তাহেরা এক প্রতিবাদী চরিত্র। কিশোরী তাহেরাকে মা-বাবা তার অমতে একজন বুড়ো পীরের সাথে বিয়ে দিলে সে বাড়ি ছেড়ে পালায়। কারণ একজন অপছন্দের মানুষের সাথে সে সারা জীবন কাটাতে চায় না। নিজের ভবিষ্যৎ ভেবে তাই সে পালাতে বাধ্য হয়।
দরিদ্র দিনমজুরের মেয়ে হলেও উদ্দীপকের সুমি এক স্বাধীনচেতা তরুণী। যৌতুকের টাকার অভাবে তার বাবা তাকে এক বৃদ্ধ মোড়লের সাথে বিয়ে দিতে চায়। সুমির এতে ঘোর আপত্তি থাকায় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য কাজের সন্ধানে বের হওয়ার উদ্যোগ নেয়। ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরাও জোর করে বিয়েতে বাধ্য করায় সে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে।
ঘ. নারীর স্বাধীনতা রক্ষায় উদ্দীপকের রাহুল ও ‘বহিপীর’ নাটকের হাশেম আলি সমরূপ প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করেছে।
‘বহিপীর’ নাটকে জমিদারপুত্র হাশেম আলি অত্যন্ত যুক্তিবাদী, আধুনিক ও মানবিক অনুভূতিসম্পন্ন মানুষ। সে অসহায় তাহেরার সমস্যার প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করে। তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। মেয়েটি আত্মহত্যা করতে গেলে সে রক্ষা করে। সবাই মেয়েটির বিরুদ্ধে গেলেও সে তার পক্ষ তাকে ত্যাগ করেনি। একসময় সে তাহেরাকে নিয়ে অজানার উদ্দেশে রওনা দেয়। বহিপীরের হাত থেকে তাহেরার বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টাকে সে সফল করে তোলে।
উদ্দীপকে সুমির দিনমজুর বাবা বৃদ্ধ মোড়লের সাথে তার বিয়ে ঠিক করে এবং সবাই মিলে জোর করে বিয়ে দিতে চায়। তখন রাহুল প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে এবং এই অসম বিয়ে বন্ধ করে দিতে সমর্থ হয়। পরে মানবিক কারণেই রাহুল বিনা যৌতুকে সুমিকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। সামাজিক কুসংস্কারের শিকার নারীর জীবন রক্ষার চেষ্টা লক্ষ করা যায় রাহুল ও হাশেম আলি উভয়ের কর্মকাণ্ডেই।
‘বহিপীর’ নাটকে হাশেম আলি তাহেরার মানসিক সংকট ও অসহায় অবস্থাকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছিল। সংস্কারমুক্ত হাশেম তার মানবিক বিবেচনা দিয়েই তাহেরাকে বাঁচানোর প্রাণপণ উদ্যোগ নিয়েছিল। নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে ঘটনাপ্রবাহ যখন এগিয়ে চলছিল তখন হাসেম অত্যন্ত সচেতন ভূমিকা পালন করেছে। মায়ের ব্যঙ্গোক্তি, উপহাসকে সে কৌশলে এড়িয়ে গেছে। বহিপীরের ক‚টচালকেও সে দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করেছে। উদ্দীপকের রাহুলও তেমনি সুমিকে সংকট থেকে বাঁচানোর জন্য রুখে দাঁড়িয়েছে। একটি অন্যায় ও অসম বিয়ে সে বন্ধ করে দিয়ে মেয়েটিকে অনিশ্চয়তার হাত থেকে রক্ষা করেছে তাই বলা যায়, প্রতিবাদের প্রতীক চরিত্র হিসেবে উদ্দীপকের রাহুল ও বহিপীর নাটকের হাশেম আলি অভিন্ন।
৪. মা কেঁদে কয়, ‘মঞ্জুলী মোর ওই তো কচি মেয়ে
ওরই সঙ্গে বিয়ে দেবে, বয়সে ওর চেয়ে
পাঁচগুণো সে বড়-
তাকে দেখে বাছা আমার ভয়েই জড়োসড়ো
এমন বিয়ে ঘটতে দেব নাকো।’
বাবা বললে, ‘কান্না তোমার রাখো।
পঞ্চাননকে পাওয়া গেছে অনেক দিনের খোঁজে
জাননা কি মস্ত কুলীন ওযে!
সমাজে তো উঠতে হবে
সেটা কি কেউ ভাবো?
ওকে ছাড়লে পাত্র কোথায় পাব!’
ক. ‘বহিপীর’ নাটকের শেষ সংলাপটি কার? ১
খ. হাতেম আলি তাহেরাকে পীরের হাতে দিলেন না কেন? ২
গ. উদ্দীপকে ‘বহিপীর’ নাটকের কোন সামাজিক অসংগতি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উদ্দীপকের মঞ্জুরির বাবা কি তাহেরার বাবার সার্থক প্রতিনিধি? তোমার মতামত দাও। ৪
৪ নং প্র. উ.
ক. ‘বহিপীর নাটকের শেষ সংলাপটি বহিপীরের।
খ. হাতেম আলির মাঝে মানবতাবোধের জাগরণ ঘটায় তিনি তাহেরাকে পীরের হাতে দিলেন না।
পীরসাহেবের বয়স বেশি হওয়ায় তাহেরা তাকে বিয়ে করতে সম্মত ছিল না। এজন্য সে বিয়ের রাতেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় এবং ঘটনাক্রমে হাতেম আলির নৌকায় আশ্রয় নেয়। পীরসাহেব হাতেম আলিকে জমিদারি রক্ষায় টাকা ধার দেওয়ার বিনিময়ে তাহেরাকে চায়। কিন্তু হাতেম আলির মাঝে মানবতাবোধের জাগরণ ঘটে। তিনি তাহেরার সিদ্ধান্তের ওপর নিজের স্বার্থবাদী চেতনা চাপিয়ে দিতে চান না। এজন্য তিনি তাহেরাকে পীরের হাতে তুলে দেননি।
গ. উদ্দীপকে ‘বহিপীর’ নাটকে প্রতিফলিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর মতামত অগ্রাহ্য করার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
আমাদের সমাজে নারীরা অসহায়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কারণে তাদের মতামতের কোনো মূল্য দেয় না কেউ। ‘বহিপীর’ নাটকেও নারীর অবমূল্যায়নের দিকটিই নাট্যকার তুলে ধরেছেন। বিয়েতে তাহেরা রাজি না থাকা সত্তে¡ও তার মতের প্রাধান্য না দিয়ে বহিপীর নামক এক বুড়ো পীরের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়। এতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর অবমূল্যায়নের দিকটির প্রকাশ ঘটে।
উদ্দীপকে নারীর অসহায়ত্বের দিকটিকে প্রধান করে তুলে ধরা হয়েছে। সমাজে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের একাধিপত্য বিদ্যমান, যা মঞ্জুলীর বিয়েতে পরিলক্ষিত হয়। মঞ্জুলীর বিয়ের এই দিকটি ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার বিয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাহেরার বিয়েতে যেমন তার কোনো মতামত নেওয়া হয়নি তেমনি উদ্দীপকের মঞ্জুলীর বিয়েতেও নেয়া হয় না।
ঘ. মেয়ের বিয়েতে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এবং স্বার্থবাদী চেতনার ক্ষেত্রে মিল থাকায় উদ্দীপকের মঞ্জুলীর বাবা তাহেরার বাবার সার্থক প্রতিনিধি।
আমাদের সমাজের অনেকেই স্বার্থবাদী চেতনার নিগঢ়ে আবদ্ধ। তারা স্বার্থের কাছে হেরে গিয়ে নিজের বুদ্ধি-বিবেক বিসর্জন দেয়। সমাজের পুরুষেরা নিজের মতামত প্রতিষ্ঠার জন্য নারীদের মতামতের কোনো তোয়াক্কাই করে না। আর এই মানসিকতা ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার বাবার মাঝে ফুটে উঠেছে। তিনি নিজের স্বার্থচিন্তা নিমগ্ন হয়ে মেয়ের মতামত যাচাই না করে বুড়ো পীরের সাথে বিয়ে ঠিক করেন।
উদ্দীপকে মঞ্জুলীর বাবা নিজের স্বার্থচিন্তায় মগ্ন। স্বার্থের কাছে হেরে গিয়ে সে নিজের বিবেক-বুদ্ধি বিসর্জন দিয়েছে। তার মাঝে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মনোভাব থাকায় সে সংসারে নারীর কোনো মতামতকে গুরুত্ব দেয় না। তাই মঞ্জুলী এবং তার মায়ের অমত থাকা সত্তে¡ও সে নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে অটল থাকে। মূলত স্বার্থবাদী চেতনায় বন্দি থাকার কারণে মঞ্জুলীর বাবার কর্মকাণ্ড ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার বাবার কর্মকাণ্ডের সাথে সাদৃশ্যময় হয়ে উঠেছে।
বহিপীর নাটকে তাহেরার বাবা যেমন স্বার্থবাদী চেতনার কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন, উদ্দীপকের মঞ্জুলীর বাবাও তাই করেছেন। তিনিও কুলীন ঘর দেখে মেয়ের সাথে পাত্রের বয়সের ব্যবধানে কোনো গুরুত্ব দেননি। বিয়েতে মেয়ের মত আছে কি নেই তারও কোনো তোয়াক্কা করেননি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কারণে সংসারে পুরুষের আধিপত্য, অন্যের মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়া এবং নিজের স্বার্থচিন্তায় তাহেরার বাবা এবং মঞ্জুলীর বাবা একইরকম বৈশিষ্ট্যের পরিচয় দিয়েছেন। ফলে তাদের চিন্তা-চেতনা এবং কর্মকাণ্ড একই ধরনের। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের মঞ্জুলীর বাবা তাহেরার বাবার সার্থক প্রতিনিধি।
৫. লালসালু উপন্যাসের ভণ্ডপীর মজিদ কিশোরী জমিলাকে বিয়ে করে মাজারের সেবায় নিয়োজিত করে। কিন্তু জমিলা মজিদের ভণ্ডামির রহস্য বুঝতে পারে। সে মজিদের অবাধ্য হয়ে ওঠে। মজিদের গায়ে থু-থু মারে। স্বামী হিসেবে মজিদকে মেনে নেয়নি। বরং সে মজিদের বিরুদ্ধে আরও প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। মজিদ শুধু বলে, নাফরমানি করিয়ো না।
ক. “কিন্তু আমাদের বজরায় কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না”- উক্তিটি কার? ১
খ. বহিপীর বইয়ের ভাষায় কথা বলেন কেন? ২
গ. উদ্দীপকের মজিদ ও ‘বহিপীর’ নাটকের বহিপীর চরিত্রের সাদৃশ্য দেখাও। ৩
ঘ. উদ্দীপকের জমিলা চরিত্রটি ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরা চরিত্রটিকে পুরোপুরি নির্দেশ করে কি? বিচার করো। ৪
৫ নং প্র. উ.
ক. “কিন্তু আমাদের বজরায় কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না”-উক্তিটি খোদেজার।
খ. বহিপীর তাঁর কথায় ভাবগাম্ভীর্য আনার জন্য বইয়ের ভাষায় কথা বলেন।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বহিপীরের মুরিদ রয়েছে। তারা একেকজন একেক ভাষায় কথা বলে। তাদের সাথে কথা বলার জন্য বহিপীর প্রমিত ভাষাকে বেছে নিয়েছেন। এই প্রমিত ভাষা হলো বইয়ের ভাষা। বহিপীরের মতে এই ভাষা পবিত্র ও ভাবগম্ভীর। বহিপীর ধর্মীয় কথা বলার তাতে ভাবগাম্ভীর্য আনতে চেয়েছেন। তাই তিনি বইয়ের ভাষায় কথা বলেন।
গ. মানুষের কুসংস্কার ও ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে ধর্মব্যবসা করার ক্ষেত্রে উদ্দীপকের মজিদ ও ‘বহিপীর’ নাটকের বহিপীর চরিত্রের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
আমাদের সমাজে পীরপ্রথা জেঁকে বসেছে। গ্রামের অশিক্ষিত সহজ-সরল মানুষের কুসংস্কার ও ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে অনেকেই নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভণ্ডপীরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ‘বহিপীর’ নাটকে বহিপীর চরিত্রটি তেমনই এক ভণ্ড চরিত্র। অত্যন্ত ধূর্ত ও বাস্তবজ্ঞানসম্পন্ন বহিপীর সারা বছর মুরিদদের ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে নিজের স্বার্থ হাসিল করে যান।
উদ্দীপকের মজিদ বহিপীরের মতোই একটি ভণ্ড চরিত্র। মজিদ গ্রামের মানুষের সরল ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে ব্যবসা করেন। তিনি যে ভণ্ডপীর তা তার স্ত্রী জমিলা বুঝতে পেরেছেন। ‘বহিপীর’ নাটকে বহিপীর চরিত্রের মাধ্যমে মজিদের মতোই এমন ভণ্ডপীরদের মুখোশ উন্মোচনের চেষ্টা করা হয়েছে।
ঘ. ঘটনার প্রেক্ষাপটে ভিন্নতা থাকায় উদ্দীপকের জমিলা চরিত্রটি ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরা চরিত্রটিকে পুরোপুরি নির্দেশ করে না।
আমাদের সমাজে নারীরা পুরুষতান্ত্রিকতার শিকার হয়ে অসহায় অবস্থায় থাকে। তাদেরকে পুরুষের সকল নির্দেশ মেনে চলতে হয়। কিন্তু ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরা চরিত্রটি এর ব্যতিক্রম। তাহেরা নিজের মতামত এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঘর ছেড়েছে, তবু অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এই তাহেরা চরিত্রের মাঝে অনমনীয় এবং মানবিক চরিত্রের এক অপূর্ব সম্মিলন ঘটিয়েছেন।
উদ্দীপকের জমিলা একটি অনমনীয় চরিত্র। সে মজিদের ভণ্ডামির রহস্য বুঝতে পেরে এর প্রতিবাদ করেছে। অন্যায়কে চোখের সামনে দেখে সে চুপ করে থাকতে পারে নি। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সংসারে নারীকে নমনীয় করে রাখা হয়। তাদেরকে পুরুষের সকল সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হয়। কিন্তু উদ্দীপকে জমিলা এই প্রথাকে ভেঙে দিয়েছে। সে নিজের স্বামীর ভণ্ডামির প্রতিবাদ করেছে। জমিলার এই অনমনীয়তার দিকটি ‘বহিপীর’ নাটকে তাহেরার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
উদ্দীপকের জমিলা চরিত্রটি প্রতিবাদী চরিত্র হলেও তা ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার সাথে সম্পূর্ণরূপে মেলে না। কেননা জমিলা ভণ্ডপীর মজিদের সংসারে থেকে মজিদের বিরোধিতা করলেও তাহেরা নিজেকে বহিপীরের স্ত্রী হিসেবেই মেনে নেয়নি। তাহেরা বহিপীরের সাথে অত্যন্ত অনমনীয়তা দেখালেও জমিদারের অসহায়ত্বে তার মাঝে মানবিকতা প্রকাশ পায়। কিন্তু উদ্দীপকের জমিলার মধ্যে প্রতিবাদী চেতনা থাকলেও তাহেরার মতো মানবিকতার কোনো দিক ফুটে ওঠেনি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের জমিলা চরিত্রটি তাহেরা চরিত্রকে পুরোপুরি নির্দেশ করেনি।
৬. রেবেকা বেগম, ভাই মজিদ মিয়ার রাইসমিল রক্ষা করার জন্য টাকা দিতে চাইলেন। কিন্তু শর্ত হলো যে, মজিদ মিয়ার মেয়ে নূরজাহানকে রেবেকা বেগমের ছেলে রবিনের সাথে বিয়ে দিতে হবে। রবিন মাদকাসক্ত। নূরজাহান এ বিয়েতে রাজি নয় বলে জানিয়ে দিলে মজিদ মিয়া রেবেকা বেগমের টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানালেন। রেবেকা বেগম এবার বললেন, বিয়ের শর্তে নয়। বোন হিসেবে তিনি টাকা দিতে চান।
ক. বহিপীরের সহকারী কে ছিল? ১
খ. হাতেম আলি চিকিৎসার অজুহাতে শহরে গিয়েছিলেন কেন? ২
গ. উদ্দীপকে মজিদের মাঝে ‘বহিপীর’ নাটকের কোন চরিত্রের মিল রয়েছে তা ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. “বহিপীরের মতোই উদ্দীপকের রেবেকা বেগমের বোধোদয় ঘটেছে”- উক্তিটির যৌক্তিকতা বিচার করো। ৪
৬ নং প্র. উ.
ক. বহিপীরের সহকারী ছিল হকিকুল্লাহ।
খ. হাতেম আলি তার জমিদারি রক্ষায় বন্ধুর কাছে টাকা ধার করার জন্য চিকিৎসার অযুহাতে শহরে গিয়েছিলেন।
হাতেম আলি রেশমপুরের জমিদার। টাকার অভাবে সান্ধ্য আইনে তাঁর জমিদারি হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। জমিদারি রক্ষা করতে হলে তাঁর অনেক টাকার প্রয়োজন ছিল। এজন্যই তিনি শহরে বন্ধুর কাছে টাকা ধার করতে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জমিদারি হারানোর শঙ্কার কথা তিনি তাঁর পরিবারের কাজে গোপন রাখতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি চিকিৎসার অজুহাতে শহরে গিয়েছিলেন।
গ. সংকটাপন্ন হওয়া ও সে অবস্থায় বিবেক সমুন্নত রেখে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিক থেকে। উদ্দীপকের মজিদের সাথে ‘বহিপীর’ নাটকের হাতেম আলি চরিত্রের মিল রয়েছে।
‘বহিপীর’ নাটকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ হাতেম আলির মাঝে স্মিতধী, আত্মনিমগ্ন হাতেম উচ্চ মানবিক চেতনা সম্পন্ন চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন।হাতেম আলি একজন ক্ষয়িষ্ণু জমিদার। মূর্যাস্ত আইনের কারণে তাঁর জমিদারি হারানোর শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল। জমিদারি রক্ষার জন্য অর্থসংকটে ভুগলেও নিজের আত্মসম্মান রক্ষায় তিনি বহিপীরের শর্ত ফিরিয়ে দিয়েছেন।
উদ্দীপকে মজিদ চরিত্রের প্রবল মানবিক চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। মজিদ নিজের রাইসমিল রক্ষার জন্য মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার শর্তে টাকা পেলেও তিনি সে টাকা গ্রহণ না করে সুবিবেচকের পরিচয় দিয়েছেন। ‘বহিপীর’ নাটকের হাতেম আলিও একই ধরনের সমস্যায় পড়েন। তবু তিনি নিজের নৈতিকতা বিসর্জন দেননি।
ঘ. বিনা শর্তে ভাইকে টাকা দিতে চাওয়ায় উদ্দীপকের রেবেকা চরিত্রের মাঝে বহিপীরের মতোই মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
‘বহিপীর’ উপন্যাসে বর্ণিত বহিপীর চরিত্রের মাঝে বাস্তবজ্ঞান ও বিবেকবোধের প্রকাশ ঘটেছে। বহিপীর তাহেরাকে পাওয়ার জন্য নানা রকম চালাকির আশ্রয় নিলেও একসময় তাঁর মধ্যে মানবিকতাবোধ জাগ্রত হয়। ফলে তিনি ভুল পথ থেকে সরে আসেন। এর মাধ্যমে বহিপীরের নৈতিকতাবোধ ও বাস্তবজ্ঞানের প্রকাশ ঘটে।
উদ্দীপকে রেবেকা বেগমের মাঝে বহিপীরের মতোই স্বার্থ হাসিলে ক‚টকৌশল গ্রহণের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তিনি ভাইয়ের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে নিজের মাদকাসক্ত ছেলের সাথে ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। বহিপীরের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা লক্ষণীয়। তিনি হাতেম আলির অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাহেরাকে ফেরত পেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রেবেকা এবং বহিপীর উভয়ই তাদের উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যর্থ হয় এবং নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসেন।
বহিপীর তাহেরাকে পাওয়ার বিনিময়ে হাতেম আলিকে টাকা দিতে চাইলেও একসময় তাঁর বোধোদয় হয় এবং বিনা শর্তে টাকা দিতে চান। উদ্দীপকের রেবেকাও একসময় বিনা শর্তে ভাইকে টাকা দিতে চান। দুজনের ক্ষেত্রেই স্বার্থবাদী মনোভাব পরিহারের প্রবণতাটি লক্ষণীয়। স্বার্থের মোহ মানুষকে অনেক সময় অন্ধ করে দেয়। অনেক সময় মানুষ তার ভুল বুঝতে পারে ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। নাটকের বহিপীর ও উদ্দীপকের রেবেকা উভয়ের ক্ষেত্রেই এ বিষয়টি সত্য। তাই বলা যায়, বহিপীরের মতোই উদ্দীপকের রেবেকা বেগমের বোধোদয় ঘটেছে।
৭. স্তবক-১ : মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য
একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?
স্তবক-২ : বল কি তোমার ক্ষতি
জীবনের অথৈ নদী-
পার হয় তোমাকে ধরে-
দুর্বল মানুষ যদি।
ক. ‘বহিপীর’ নাটকের শেষ সংলাপটি কার? ১
খ. “এমন মেয়েও কারও পেটে জন্মায় জানতাম না”- কথাটি বলার কারণ কী? ২
গ. জমিদারি হারাতে বসা হাতেম আলির কাছে বহিপীরের প্রস্তাব স্তবক-১-এর ‘সহানুভূতি’ শব্দটির রূপক হতে পারে কি? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. তাহেরার প্রতি হাশেমের মনোভাব স্তবক-২- এর আলোকে মূল্যায়ন করো। ৪
৭ নং প্র. উ.
ক. ‘বহিপীর’ নাটকের শেষ সংলাপটি বহিপীরের।
খ. তাহেরার দুঃসাহস লক্ষ করে ‘বহিপীর’ নাটকে বর্ণিত জমিদারের স্ত্রী খোদেজা তাহেরার উদ্দেশে উক্তিটি করেছেন।
‘বহিপীর’ নাটকে তাহেরাকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে পীরের সাথে বিয়ে দিলে সে ঘর ছেড়ে পালায়। তাহেরা কিছুতেই একজন বুড়ো পীরকে স্বামী হিসেবে মানতে চায় না। পীরের হাত থেকে রক্ষা পেতে সে মরিয়া হয়ে ওঠে, আত্মহত্যার ভয় দেখায়। কিন্তু কোনো মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর স্বামীর ঘর করবে না এটা মেনে নিতে পারছিলেন না জমিদারের স্ত্রী খোদেজা। বিশেষত স্বামী যখন একজন পীর তখন কোনো মেয়ের পক্ষে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া খোদেজার কাছে অকল্পনীয়। তাই খোদেজা এমন উক্তি করেছেন।
গ. জমিদারি হারাতে বসা হাতেম আলির কাছে বহিপীরের প্রস্তাব স্তবক-১-এর ‘সহানুভূতি’ শব্দটির রূপক হতে পারে না। কারণ বহিপীরের প্রস্তাবটি ছিল উদ্দেশ্যমূলক।
‘বহিপীর’ নাটকে বহিপীর একটি ধর্মব্যবসায়ী সুযোগসন্ধানী চরিত্র। ধর্মকেই তিনি জীবনজীবিকার অবলম্বন বানিয়েছেন। এই পীর তাঁর এক মুরিদের কিশোরী মেয়ে তাহেরাকে বিয়ে করেন। তাহেরা তাঁর হাত থেকে বাঁচার জন্য বাড়ি ছেড়ে পালায়। ঘটনাক্রমে তাহেরা জমিদার হাতেম আলির বজরায় আশ্রয় নেয়। সেখানে বহিপীর জমিদারের অসহায়ত্বের সুযোগ গ্রহণ করে। জমিদারকে তাঁর জমিদারি বাঁচানোর টাকা ধার দিতে চান তাহেরাকে ফেরত পাওয়ার বিনিময়ে।
উদ্দীপকে মানুষের সাথে মানুষের মানবিক আচরণের কথা বলা হয়েছে। মনুষ্যত্বের ধর্মই হচ্ছে মানুষের কল্যাণে কাজ করা। একটি জীবন যেন আরেকটি জীবনের জন্য সহযোগী হয়ে উঠতে পারে। মানুষের দুঃখ যেন আর একটি মানুষ ভাগ করে নিতে পারে। মানুষের প্রতি মানুষের সহানুভূতি হতে হবে শর্তহীন। তা হতে হবে কেবলই মানবিক বিবেচনা থেকে। কিন্তু ‘বহিপীর’ নাটকে হাতেম আলির প্রতি পীর সাহেবের দেখানো সহানুভূতি আসলে ছিল তাহেরাকে পাওয়ার জন্য কৌশলমাত্র। স্বার্থসিদ্ধির ভাবনা জড়িত থাকায় জমিদারি হারাতে বসা হাতেম আলির কাছে বহিপীরের প্রস্তাব ‘সহানুভূতি’ শব্দটির রূপক হতে পারে না।
ঘ. স্তবক-২ -এর মনোভাব তাহেরার প্রতি হাশেমের সহযোগিতামূলক মনোভাবেরই প্রতিচ্ছবি।
‘বহিপীর’ নাটকের বর্ণিত হাশেম একটি প্রতিবাদী চরিত্র যুবক। সে শিক্ষিত ও সংস্কারমুক্ত। তাহেরার সমস্যা বুঝে হাশেম তাকে সাহায্য করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে। বৃদ্ধ ও কপট বহিপীরের হাত থেকে তাহেরাকে বাঁচানোর জন্য নিজেই তাকে বিয়ে করতে চেয়েছে। মায়ের কাছে তাহেরার পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেছে। বহিপীরের ক‚টচাল থেকে তাহেরাকে রক্ষার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থেকেছে।
স্তবক-২ -এ জীবনের এক চরম সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে। সমাজের দুর্বল মানুষেরা যদি একজন সবল মানুষকে আশ্রয় করে কোনো সুবিধা বা কল্যাণ লাভ করে তবে তাতে তো দোষের কিছু নেই। জীবনের অথৈ নদীতে অসহায় মানুষ যাতে ডুবে না মরে সেজন্য শক্তিমান মানুষের উচিত তার পাশে দাঁড়ানো। তার জন্য সাহায্যের হাত প্রসারিত করা। এতে তো কোনো ক্ষতি নেই বরং এটি তার কর্তব্য। ‘বহিপীর নাটকের বর্ণিত হাশেম অসহায় তাহেরার পাশে এভাবেই দাঁড়িয়েছে।
উদ্দীপকের হাশেমের মাঝে মানবিকতাবোধ পুরোপুরি বিদ্যমান। তার মানসিকতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা অনুসরণযোগ্য। কারো বিপদাপন্ন অবস্থাকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা কাপুরুষতা। তাই সে জীবনসংকটে নিপতিত তাহেরার জীবন বাঁচিয়েছে। তাহেরার জীবন যাতে ব্যর্থ হয়ে না যায়, সে জন্য তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিয়েছে। হাশেমের সাহসী ও প্রতিবাদী ভূমিকার কারণে একটি অসহায় মেয়ে শেষ পর্যন্ত স্বপ্নময় জীবনের সন্ধান পায়। তাই বলা যায়, তাহেরার প্রতি হাশেমের মনোভাব এবং স্তবক-২ -এর মনোভাব এক ও অভিন্ন।
৮. মীনার বয়স পনেরো। তার বিয়ের জন্য বাবা পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ধনাঢ্য পাত্র ঠিক করেছে। এ বিয়েতে মীনার মত নেই। কিন্তু বাবার সামনে প্রতিবাদ করার মতো শক্তি নেই তার, সে শুধু কাঁদে।
ক. হাতেম আলির জমিদারি কোথায় ছিল? ১
খ. পীরসাহেবকে বহিপীর বলার কারণ কী? ২
গ. উদ্দীপকের মীনার সাথে ‘বহিপীর’ নাটকের কোন চরিত্রে সাদৃশ্য আছে? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. মীনা তাহেরাকে প্রতিনিধিত্ব করছে।-বিশ্লেষণ করো। ৪
৮ নং প্র. উ.
ক. হাতেম আলির জমিদারি ছিল রেশমপুরে।
খ. পীরসাহেব বইয়ের ভাষা তথা সাধু ভাষায় কথা বলেন বলে তাঁকে বহিপীর বলা হয়।
আমাদের দেশে পীর প্রথার প্রচলন থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ পীরের ভক্ত হয়। কিন্তু দেশের সব অঞ্চলের মানুষের ভাষা এক নয়। ‘বহিপীর’ নাটকে বর্ণিত পীরসাহেব এজন্য সব অঞ্চলের মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের সুবিধার্থে বইয়ের ভাষায় কথা বলেন। আর এই বইয়ের ভাষায় কথা বলার কারণেই তাঁকে বহিপীর বলা হয়।
গ. উদ্দীপকের মীনার সাথে ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার সাদৃশ্য রয়েছে। উভয়ের বাবা তাদের অমতে জোরপূর্বক বিয়ের ব্যবস্থা করেছিল।
‘বহিপীর’ নাটকে তাহেরাকে তার বাবা বৃদ্ধ জোরপূর্বক বহিপীরের সাথে বিয়ে দিয়েছিল। কেবল পীরকে খুশি করার জন্যই নিষ্পাপ কিশোরী মেয়ে তাহেরাকে তার অমতেই বিয়ে দেওয়া হয়। তাহেরার বাবা পীরভক্ত ও ধর্মান্ধ হওয়ার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
উদ্দীপকের মীনার বয়স পনেরো হলেও তার বাবা একজন ধনাঢ্য পাত্রের সাথে তার বিয়ে ঠিক করে। এটি একটি অসম বিয়ে তাই মীনার এতে মত নেই। প্রতিবাদ করার সাহস না থাকায় সে শুধু বসে বসে কাঁদছিল। ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার মতো উদ্দীপকের মীনাকেও তার বাবা তার অমতে বিয়ে দিতে চায়। এদিক থেকেই উভয়ের মাঝে সাদৃশ্য বিদ্যমান।
ঘ. নারীর অসহায়ত্বের দিক দিয়ে উদ্দীপকের মীনা ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরাকে প্রতিনিধিত্ব করছে।
‘বহিপীর’ নাটক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর এক অসাধারণ সৃষ্টি। লেখক ধর্মের নামে কথিত পীরের ভণ্ডামির পাশাপাশি অসহায় নারীর করুণ আর্তি প্রকাশ করেছেন। একটি মেয়ে কার সাথে ঘর করবে সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে যদি তার মতামতের কোনো মূল্যই না থাকে তবে তা সভ্য সমাজের কাজ হতে পারে না। কারণ এতে তার জীবনটাই অর্থহীন হয়ে পড়ে। নাটকের তাহেরা এমন অসঙ্গতিরই শিকার।
উদ্দীপকে বর্ণিত মীনার বাবা পঞ্চাশোর্ধ্ব ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর সাথে তার বিয়ে ঠিক করে। তারা বাবা তার মেয়ের ভালো লাগা মন্দ লাগার দিকে না তাকিয়ে অর্থ বিত্তকেই প্রাধান্য দিয়েছে। মীনার চোখের পানিতে অবিবেচক বাবার মন গলেনি। হৃদয়হীন মানুষের মতো সে নিজ মেয়ের অমতেই তার বিয়ে ঠিক করেছে।
‘বহিপীর’ নাটকে তাহেরাকে তার অমতে জোর করে বিয়ে দেয় তার বাবা ও সৎ মা। অন্যদিকে উদ্দীপকের মীনাকেও তার বাবা বিয়ে দিতে যায় তার মতামত না নিয়েই। নারী একসময় এমনভাবে অবহেলিত ছিল। তাদের মতামতের কোনো মূল্য ছিল না। ফলে ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তাদের ওপর অনেক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হতো। নারীর এই অসহায় অবস্থা বিবেচনায় মীনা তাহেরাকে প্রতিনিধিত্ব করছে।
৯. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী প্রমা। তার যেমন বুদ্ধি তেমনই সাহস। একদিন রাতের বেলা শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরি থেকে ফেরার সময় তিনজন বখাটে ছেলে তার পথ আটকায়। সে মোটেও ভয় পায় না। বিপদ বুঝে প্রমা মোবাইলে শাহবাগ থানায় ডায়াল করে ঐ ছেলেদের সাথে হাসিমুখে কথা বলতে থাকে। কথার ছলে সে পুলিশকে তাদের অবস্থান জানিয়ে দিলে দ্রুত পুলিশ এসে সেখানে পৌঁছে। তাদের একজন পালিয়ে গেলেও বাকি দুজন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। লোকজন বলাবলি করতে থাকে ‘মেয়েটির সাহস আছে বটে’।
ক. বজরা কোন ঘাটে থেমেছিল? ১
খ. হাতেম আলির মন বিষণ কেন? ২
গ. প্রমার সাথে তাহেরার সাহসিকতার তুলনা করো। ৩
ঘ. প্রমার সামাজিক বাস্তবতা- ‘বহিপীর’ নাটকের আলোকে মূল্যায়ন করো। ৪
৯ নং প্র. উ.
ক. বজরা ডেমরা ঘাটে থেমেছিল।
খ. জমিদারি হারানোর শঙ্কায় হাতেম আলির মন বিষণ্ন।
সান্ধ্য আইনের কারণে হাতেম আলি তার জমিদারি হারাতে বসেছেন। জমিদারি রক্ষার জন্য তিনি অসুস্থতার অজুহাতে শহরে বন্ধুর কাছে টাকা ধার করতে আসেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। ফলে পরদিন হাতেম আলির জমিদারি নিলামে উঠবে টাকা পরিশোধ করতে না পারায়। আর এই শঙ্কাতেই হাতেম আলির মন বিষণ্ন।
গ. প্রতিবাদী চেতনা ধারণ ও সাহসিকতার দিক থেকে উদ্দীপকের প্রমার সাথে ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরায় তুলনা করা যায়।
‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরাকে তার বাবা ও সৎমা জোর করে বিয়ে দিলেও তাহেরা তা মেনে নেয়নি। প্রতিবাদস্বরূপ সে ঘর ছেড়ে পালায়। পালিয়ে সে কোথায় যাবে সে ভাবনা না ভেবেই সে এই দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত নেয়। বৃদ্ধ পীরের দাসী হয়ে সে থাকতে চায়নি। সে মনে করেছে ওই জীবনে তার কোনো মর্যাদা নেই। তাই ভাগ্যে যাই ঘটুক সে অজানার উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
উদ্দীপকের প্রমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী। রাতের বেলা বখাটেরা তার পথ আটকালেও সে ভীতসন্ত্রস্ত হয়নি। যার বিপদের কথা সে শাহবাগ থানাকে কৌশলে জানিয়ে দেয়। পুলিশ বখাটেদের গ্রেফতার করে। বুদ্ধিমত্তার জোরে সে বখাটেদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে। ‘বহিপীর’ নাটকে বর্ণিত তাহেরাও এমন সাহসের পরিচয় দিয়েছে, বুদ্ধিমত্তাও দেখিয়েছে। তাই বলা যায়, প্রমা ও তাহেরা দুজনেই সাহসী তরুণী। যারা ভয়কে জয় করতে পেরেছে।
ঘ. সময় ও প্রেক্ষিত বিবেচনায় উদ্দীপকের প্রমার সামাজিক বাস্তবতা এবং ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার সামাজিক বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন।
যে সামাজিক বাস্তবতায় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ‘বহিপীর’ নাটক রচনা করেছেন সেই বাস্তবতায় নাটকের প্রতিটি ঘটনা ও কাহিনীবিন্যাস অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেই সমাজে ধর্মীয় কুসংস্কার ছিল ব্যাপক মাত্রায়। তখন ভণ্ডপীরদের দৌরাত্ম্য ছিল বেশি। পুরুষশাসিত সমাজে অবদমিত ছিল নারীর অধিকার। সমাজে সামন্তবাদী প্রথা চালু ছিল।
উদ্দীপকের প্রমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী। রাতের বেলা শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরি থেকে ফেরার সময় তিন বখাটে তার পথ আটকায়। বিপদ বুঝে সে কৌশলে পুলিশকে জানিয়ে দেয়। পুলিশ এসে বখাটেদের গ্রেফতার করে। উদ্দীপকের ঘটনাটি আধুনিক বাস্তবতার উদাহরণ হলেও ‘বহিপীর’ নাটকের বাস্তবতা ভিন্নতর।
উদ্দীপকের প্রমার হাতের মুঠোয় আধুনিক প্রযুক্তি। সমাজে নারী স্বাধীনতার বিষয়টি উদ্দীপকে লক্ষণীয়। প্রমার এই সামাজিক বাস্তবতার ফলে সে সহজেই বখাটেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পেরেছে।
অন্যদিকে তাহেরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছিল না। তার কাছে ছিল না আধুনিক প্রযুক্তিও। প্রাথমিকভাবে তাই ধর্মীয় কুসংস্কারের বলি হতে হয়েছিল তাকে। নারী হওয়ায় তার অনুভূতির প্রতি কেউ সম্মান জানায়নি। পীরের বদদোয়া লাগার ভয়ে সহায়তা করতে সাহস পায়নি। আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক হাশেম আলি তাকে সাহায্য না করলে হয়তো তার জীবনটা অনিশ্চয়তার আবরণেই ঢেকে যেত। তাই বলা যায়, প্রমার বাস্তবতা তাহেরার বাস্তবতার চেয়ে ভিন্ন।
১০. রাহেলার বয়স তেরো। দিনমজুর বাবা যৌতুকের টাকার অভাবে পিতার বয়সী এক লোকের সাথে বিয়ে ঠিক করে। তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিয়ে ভেঙে দেয় রাহেলা। গার্মেন্টে চাকরি করে বাবার কষ্ট নিবারণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয় সে।
ক. ‘বহিপীর’ নাটকের শেষে সংলাপটি কার? ১
খ. একবার ঝুট কথা বললে উপায় নেই কেন? ২
গ. উদ্দীপকে ‘বহিপীর’ নাটকের যে দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উদ্দীপকের রাহেলা এবং ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরা সর্বক্ষেত্রে এক রকম নয়- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। ৪
১০ নং প্র. উ.
ক. ‘বহিপীর’ নাটকের শেষে সংলাপটি বহিপীরের।
খ. একবার ঝুট কথা বললে তাকে ঢাকতে আরো অসংখ্য মিথ্যে কথা বলতে হয় বিধায় মিথ্যা একবার বললে আর উপায় নেই।
জমিদার হাতেম আলি মিথ্যা কথা বলে শহরে এসেছেন। তাঁর অসুস্থতা না থাকলেও তিনি অসুস্থতার ভান করে শহরে ডাক্তার দেখাবেন বলে এসেছেন। কিন্তু তিনি যে উদ্দেশ্যে এসেছেন তা ব্যর্থ হয়ে এখন সত্য প্রকাশ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এজন্য এই মিথ্যা রক্ষা করতে আরো মিথ্যা বলতে হয়। তাই জমিদার বলেছেন একবার ঝুট কথা বললে আর উপায় নেই।
গ. অন্যায়ের বিরুদ্ধে ‘বহিপীর’ নাটকে বর্ণিত তাহেরার প্রতিবাদের দিকটি উদ্দীপকের রাহেলার মাঝে প্রতিফলিত হয়েছে।
‘বহিপীর’ নাটকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র তাহেরা। কুসংস্কারাচ্ছন্ন বাবা ও সৎমা তাকে জোরপূর্বক বৃদ্ধ পীরের সাথে বিয়ে দেয়। তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া এই ঘটনা সে মেনে নেয়নি। উপায়ান্তর না দেখে সে ছোট এক চাচাতো ভাইকে সাথে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীকালে জমিদারের বজরায় অবস্থানকালেও সে ছিল অনমনীয়। পানিতে ঝাঁপ দিয়ে মরবে তবু বহিপীরের ঘর সে করবে না, এটিই ছিল তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
উদ্দীপকের কিশোরী রাহেলার বিয়ে ঠিক করা হয় পিতার বয়সী এক লোকের সাথে। বাবা যৌতুক দিতে পারবে না বলেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়। রাহেলা এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানায় এবং বিয়ে ভেঙে দেয়। বাবার দরিদ্র দশা দূর করতে সে গার্মেন্টে চাকরি করার উদ্যোগ নেয়। রাহেলার এই ভূমিকা ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া বিয়ের বিরুদ্ধে তাহেরার প্রতিবাদের দিকটিই উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ. অবস্থানগত কারণে উদ্দীপকের রাহেলা এবং ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরা সর্বক্ষেত্রে এক রকম নয়।
‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া হয় বৃদ্ধ বহিপীরের সাথে। তাহেরা মনে করেছে, এই পীরের সাথে ঘর করলে তার জীবনটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাই সে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীকালে সে কোথায় থাকবে, কী করবে ইত্যাদি কোনো কিছু না ভেবেই ঘর ছাড়ে।
উদ্দীপকের রাহেলার বিয়ে ঠিক হয় বাবার বয়সী এক মানুষের সাথে। রাহেলা এর তীব্র প্রতিবাদ করে বিয়ে ভেঙে দেয়। সেই সাথে সংসারের দারিদ্র্য দূর করার জন্য নিজের পায়ে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার এমন উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব ছিল না।
‘বহিপীর’ নাটকের বাবা ও সৎমায়ের কাছে তাহেরা ছিল অনেকটা বোঝার মতো। বাবা ও সৎমা তাদের পীরকে খুশি করার জন্য তাহেরাকে পীরের হাতে তুলে দেয়। যে ঘটনার সাথে একজন সুযোগসন্ধানী ধূর্তপীর জড়িয়ে গেছে সেখানে তাহেরা উপায়হীন হয়ে পড়ে। নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করলেও তেমন লাভ হতো না। তাই পারিবারিক সমাধানের বিষয়টি তার কাছে মূল্যহীন হয়ে যায়। অন্যদিকে উদ্দীপকের রাহেলা ছিল অনেকটা স্বাধীন। সে নিজের মত প্রকাশের সুযোগ পেয়েছে। প্রতিবাদ করতে পেরেছে। জয়ীও হয়েছে। সেই সাথে পরিবারের সমস্যা দূরীকরণে আত্মপ্রত্যয়ী হয়েছে। উভয়েই প্রতিবাদী চরিত্র হলেও উদ্দীপকের রাহেলা এবং ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরা সর্বক্ষেত্রে এক রকম নয়।
১১. উচ্চশিক্ষিত শৈলী বিয়ের পর শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত হয়। এতে তার স্বামী সামান্য অনীহা প্রকাশ করেন। হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় শৈলীর স্বামী পঙ্গু হয়ে পড়লে শৈলীকে সংসারের হাল ধরতে হয়। এবার শৈলীর স্বামী উপলব্ধি করেন, সুখী ও সুন্দর সমাজ গঠনে নারীর স্বনির্ভরতা আবশ্যক।
ক. ‘বহিপীর’ নাটকে ডেমরাঘাট থেকে উদ্ধার করা মেয়েটির নাম কী? ১
খ. ‘এমন মেয়েও পেটে কারো জন্মায় জানতাম না’- এ কথাটি বুঝিয়ে বলো। ২
গ. উদ্দীপকের শৈলী আর ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরা চরিত্রের বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. “শৈলীর চেতনা প্রগতিশীল কিন্তু তাহেরার জীবনযাত্রা ছিল অনিশ্চিত”- কথাটির যথার্থতা মূল্যায়ন করো। ৪
১১ নং প্র. উ.
ক. ‘বহিপীর’ নাটকে ডেমরাঘাট থেকে উদ্ধার করা মেয়েটির নাম তাহেরা।
খ. তাহেরার দুঃসাহস লক্ষ করে ‘বহিপীর’ নাটকে বর্ণিত জমিদারের স্ত্রী খোদেজা তাহেরার উদ্দেশে উক্তিটি করেছেন।
‘বহিপীর’ নাটকে তাহেরাকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে পীরের সাথে বিয়ে দিলে সে ঘর ছেড়ে পালায়। তাহেরা কিছুতেই একজন বুড়ো পীরকে স্বামী হিসেবে মানতে চায় না। পীরের হাত থেকে রক্ষা পেতে সে মরিয়া হয়ে ওঠে, আত্মহত্যার ভয় দেখায়। কিন্তু কোনো মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর স্বামীর ঘর করবে না এটা মেনে নিতে পারছিলেন না জমিদারের স্ত্রী খোদেজা। বিশেষত স্বামী যখন একজন পীর তখন কোনো মেয়ের পক্ষে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া খোদেজার কাছে অকল্পনীয়। তাই খোদেজা এমন উক্তি করেছেন।
গ. সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থানগত দিক থেকে উদ্দীপকের শৈলী আর ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার মধ্যে বৈসাদৃশ্য বিদ্যামান।
‘বহিপীর’ নাটকে তাহেরা নারী অধিকার ও জাগরণের প্রতীক। তাহেরা শিক্ষিত না হলেও বুদ্ধিমতী ও স্পষ্টবাদী। সে সবসময় তার নিজস্বতা ও ব্যক্তিত্বকে অক্ষুণ্ন রাখতে চেষ্টা করেছে। তবে সে কোনো কর্মসংস্থান বা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেনি। সেই সামাজিক বাস্তবতায় হয়তো সেটি সম্ভব ছিল না। হাশেমের হাত ধরেই শেষ পর্যন্ত সে তার জীবনের পূর্ণতা খুঁজে পেয়েছিল।
উদ্দীপকে শৈলী উচ্চশিক্ষিত। সে বিয়ের পর শিক্ষকতা শুরু করে। স্বামী পঙ্গু হয়ে গেলে সে-ই সংসারের হাল ধরে। একজন আত্মনির্ভরশীল নারী হিসেবে শৈলী নিজেকে গড়ে তোলে। কিন্তু নাটকের তাহেরার বাস্তবতার সেটি সম্ভব ছিল না।
ঘ. জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য উদ্দীপকের শৈলী সচেষ্ট ও আত্মনির্ভরশীল হলেও ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার ক্ষেত্রে সেটি দেখা যায় না।
‘বহিপীর’ নাটকে তাহেরা এক সাহসী নারী। তার ভেতর আবেগ, অনুভূতি, মর্যাদাবোধ ছিল। কিন্তু সে বাস্তববাদী ছিল না। কারণ সে কোনো কিছু না ভেবেই বহিপীরের হাত থেকে রক্ষা পেতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাকে নির্ভর করতে হয়েছে মানুষের সহানুভূতি ও মানবিকতার ওপর।
উদ্দীপকের শৈলী যথেষ্ট বাস্তববাদী একজন নারী। বিয়ের পর তাই শিক্ষকতার চাকরিকে বেছে নিয়েছে। স্বামী দুর্ঘটনায় পঙ্গু হলে সে সংসারে দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। শৈলীর এই জীবনধর্মী ও বাস্তব পদক্ষেপে তার স্বামীও বুঝতে পেরেছে সুখী সুন্দর সমাজের জন্য নারীর একটি মজবুত অবস্থান দরকার। ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরা কারও মনে এমন পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়নি।
‘বহিপীর’ নাটকে হাশেম যদি তাহেরার পাশে না দাঁড়াতো তাহলে তাহেরার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ত। ঘর ছেড়ে পালানোর সময় তাহেরার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। প্রকৃতপক্ষে তাহেরার বাস্তবতায় সেটি সম্ভবও ছিল না। তবে তাহেরার জীবনের যেকোনো সুনির্দিষ্ট ভিত্তি ছিল না সেটি নিশ্চিত করেই বলা যায়। সে অনেকটা ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু উদ্দীপকের শৈলী পরিশ্রম ও দক্ষতার মাধ্যমে নিজের ভাগ্যকে গড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। তার রয়েছে নিজস্ব পরিকল্পনা। স্বামীর জীবনে বড় একটি দুর্ঘটনার পরও সে হেরে যায়নি। বরং এগিয়ে চলছে সাহসিকতার সাথে। তাই বলা যায়, শৈলীর চেতনা প্রগতিশীল কিন্তু তাহেরার জীবনযাত্রা ছিল অনিশ্চিত- উক্তিটি যথার্থ।
১২. চৌধুরী সাহেবের ছেলে মেধাতালিকায় স্থান না পেলেও চৌধুরী সাহেব তাকে ঐ স্কুলেই পড়াতে চান। তিনি প্রধান শিক্ষক কিবরিয়া সাহেবকে মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখান। পারিবারিক অনটনের কথা মাথায় এলেও অন্য একটি মেধাবী ছেলেকে বঞ্চিত করতে কিবরিয়া সাহেবের মন সায় দেয় না। তিনি চৌধুরী সাহেবের প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দেন। চৌধুরী সাহেব এতে অত্যন্ত অপমানিত বোধ করেন এবং কিবরিয়া সাহেবকে দেখে নেবেন বলে হুমকি দিয়ে যান।
ক. বহিপীর নাটকের রচয়িতা কে? ১
খ. তাহেরা উঁকি দিয়ে পীরসাহেবকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় কেন? ২
গ. ‘বহিপীর’ নাটকের হাতেম আলির সাথে উদ্দীপকের কিবরিয়া সাহেবকে কোন দিক থেকে মেলানো যায়? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. “মানুষের সততা ‘বহিপীর’ নাটকের বহিপীর এবং উদ্দীপকের চৌধুরী সাহেবের মনে ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে”- উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ করো। ৪
১২ নং প্র. উ.
ক. বহিপীর নাটকের রচয়িতা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ।
খ. যে পীরের সাথে বিয়ে দেওয়ায় তাহেরা পালিয়ে এসেছে তাকেই বজরায় দেখতে পেয়ে আতকে স্তব্ধ হয়ে যায়।
তাহেরা একটি কম বয়সী বালিকা। কিন্তু তার পিতা জোর করে তার সাথে এক বুড়ো পীরের বিয়ে দেয়। এই বিয়ে তাহেরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। তাই বিয়ের রাত্রেই পালিয়ে যায়। ঘটনাক্রমে সে জমিদার হাতেম আলির আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখানে ঐ পীরসাহেবও ঝড়ের কবলে পড়ে আশ্রয় নেন। তাহেরা উঁকি দিয়ে বজরার আরেক কামরায় তাঁকে দেখেই স্তব্ধ হয়ে যায়।
গ. ‘বহিপীর’ নাটকে জমিদার হাতেম আলি এবং উদ্দীপকের কিবরিয়া সাহেব সততা প্রদর্শনের দিক থেকে তুলণীয়।
‘বহিপীর’ নাটকে বর্ণিত হাতেম আলি এক ক্ষহিষ্ণু জমিদার। খাজনা বাকি পড়ায় তাঁর জমিদারি নিলামে উঠেছে। ধূর্ত বহিপীর হাতেম আলির এই অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাহরোকে তার হাতে তুলে দেওয়ার শর্তে টাকা কর্জ দিতে চায়। জমিদার পরিবারকে বাঁচাতে তাহেরা এই শর্তে রাজি হলেও হাতেম আলির ভেতরে মনুষ্যত্ববোধ জেগে ওঠে। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন তাঁর জমিদারি চলে গেলেও তিনি অন্যায় শর্তে একটি অসহায় মেয়েকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দেবেন না। তাই বহিপীরকে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, তিনি ওই শর্তে কর্জ নেবেন না।
উদ্দীপকে বর্ণিত প্রধান শিক্ষক কিবরিয়া সাহেব টাকার লোভে অন্যায় ও অমানবিক কাজ করতে রাজি হননি। একটি মেধাবী ছাত্রকে বঞ্চিত করে চৌধুরী সাহেবের কথামতো অর্থের লোভে তার সন্তানকে ভর্তি করা অনৈতিক বিবেচনা ভেবেছেন। ফলে তিনি অন্যায় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। চৌধুরী সাহেবের হুমকি সত্তে¡ও তিনি সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন। ‘বহিপীর’ নাটকেও আমরা লক্ষ করি সুযোগসন্ধানী বহিপীরের প্রস্তাব জমিদার হাতেম আলি প্রত্যাখ্যান করেছেন। নিজের জীবনের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জেনেও সততা, মানবিকতা ও নীতি আদর্শকে বড় করে দেখেছেন।
ঘ. মানুষের সততা ‘বহিপীর’ নাটকের ধূর্ত অর্থলোভী বহিপীরের মাঝে মানবিকতা সৃষ্টি করলেও উদ্দীপকের চৌধুরী সাহেবকে প্রতিহিংসাপরায়ণ করেছে।
‘বহিপীর’ নাটকে স্বার্থান্বেষী বহিপীর তাঁর মুরিদদের ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে ধর্মব্যবসা পরিচালনা করেন। এভাবে তিনি প্রচুর অর্থবিত্তের মালিকও হয়েছেন। অন্ধভক্ত মুরিদ সওয়াব লাভের আশায় তার কিশোরী কন্যাকে বহিপীরের হাতে তুলে দেয়। পীরের হাত থেকে বাঁচার জন্য কিশোরী তাহেরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাক্রমে জমিদার হাতেম আলির বজরায় তাদের সাক্ষাৎ ঘটে। তাহেরাকে পাওয়ার জন্য বহিপীর মরিয়া হয়ে ওঠেন। জমিদারি বাঁচাতে হাতেম আলিকে টাকা কর্জ দেওয়ার প্রস্তাব করেন বহিপীর। বিনিময়ে তাহেরাকে তাঁর হাতে তুলে দিতে বলেন। এক পর্যায়ে তাহেরা রাজি হলেও জমিদার টাকা নিতে রাজি হননি। একটি অসহায় মেয়ের জীবন নষ্ট করতে চাননি। এ ঘটনার বহিপীরের মাঝেও নৈতিকতা জেগে ওঠে।
উদ্দীপকের চৌধুরী সাহেব ছেলের যোগ্যতা না থাকা সত্তে¡ও স্কুলে ভর্তির করার জন্য প্রধান শিক্ষক কিবরিয়া সাহেবকে মোট টাকার প্রলোভন দেখান। কিন্তু প্রধান শিক্ষক অন্য একজন মেধাবী ছাত্রকে বঞ্চিত করতে রাজি হননি। এতে চৌধুরী সাহেব ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। প্রধান শিক্ষকের মতো চৌধুরীর সাহেবের মনে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলেনি বরং তিনি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছেন।
‘বহিপীর’ নাটকে জমিদার হাতেম আলীর সততার দৃষ্টান্ত দেখে ধূর্ত ও সুযোগসন্ধানী বহিপীরের মাঝেও মানবিক চেতনা জাগ্রত হয়। বহিপীর পরে কোনো শর্ত ছাড়াই হাতেম আলীর জমিদারি রক্ষা করার জন্য তার পাশে দাঁড়ান। তাহেরাকে জোর করে পাওয়ার মনোবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসেন। অন্যদিকে উদ্দীপকে প্রধান শিক্ষক কিবরিয়া চৌধুরী সাহেবের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তাঁর মনে এই সততা ও নৈতিকতার কোনোই প্রভাব পড়েনি। উল্টো প্রধান শিক্ষককে তিনি ভয়ভীতি দেখান। তাই বলা যায়, মানুষের সততা ‘বহিপীর’ নাটকের বহিপীর এবং উদ্দীপকের চৌধুরী সাহেবের মনে ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
১৩. সকলে বলে মনোয়ার হাজি একজন কামেল লোক। তার কাছে পানি পড়া নিলে যেকোনো রোগ ভালো হয়ে যায়। স্থানীয় চাষি গণি মিয়া বুকের ব্যথা সারানোর জন্য হাজি সাহেবের কাছে যেতে চাইলে তার কলেজপড়–য়া ছেলে এর জন্য ডাক্তার দেখানোই ভালো বলে মন্তব্য করে। গণি মিয়া ছেলেকে ধমক দিয়ে বলে, চুপ কর বেয়াদব, উনি কামেল পীর। ওনার গজব পড়লে ধ্বংস হয়ে যাবি।
ক. আপনার তো বুড়োর সাথে বিয়ে হয়নি – তাহেরা এ কথা কাকে বলেছিল? ১
খ. খোদেজা তাহেরাকে পীরসাহেবের কাছে ফিরিয়ে দিতে চান কেন? ২
গ. উদ্দীপকের গণি মিয়ার মানসিকতার সাথে ‘বহিপীর’ নাটকের কোন চরিত্রের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উদ্দীপকে ‘বহিপীর’ নাটকের মূলভাবের প্রতিফলন ঘটেছে কি? তোমার মন্তব্য প্রতিষ্ঠা করো। ৪
১৩ নং প্র. উ.
ক. আপনার তো বুড়োর সাথে বিয়ে হয়নি-তাহেরা এ কথা খোদেজাকে বলেছিল।
খ. পীরসাহেবের বদদোয়ার ভয়ে খোদেজা তাহেরাকে ফিরিয়ে দিতে চান।
বৃদ্ধ পীরের সাথে বিয়েতে মত না থাকায় তাহেরা পালিয়ে এসেছিল। বহিপীর তাকে খুঁজতে এসে হাতেম আলির বজরায় পেয়ে যায়। পীরের দোয়া পাওয়ার জন্য মানুষ অনেক কিছুই করে। খোদেজাও পীরের দোয়া পেতে চেয়েছিলেন। তিনি মনে করেছিলেন বহিপীর বদদোয়া দিলে সংসারে ক্ষতি হবে। তাই পীরের বদদোয়া থেকে রক্ষা পেতে তিনি তাহেরাকে ফিরিয়ে দিতে চান।
গ. অন্ধবিশ্বাস পোষণের দিক থেকে উদ্দীপকের গণি মিয়ার মানসিকতার সাথে ‘বহিপীর’ নাটকের খোদেজা চরিত্রের মিল রয়েছে।
‘বহিপীর’ নাটকে একজন সর্বগ্রাসী স্বার্থপর পীরের চরিত্র চিত্রণ করা হয়েছে। ধর্মীয় কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করেন। জমিদারপত্নী খোদেজা তেমনি পীরের অন্ধভক্ত। ধর্মভীরু খোদেজা একটি অচেনা অসহায় মেয়েকে আশ্রয় দেন। যখনই জেনেছেন মেয়েটি পীরের পালিয়ে আসা স্ত্রী, তখন তিনি তাকে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছেন। বিয়েটিকে অন্যায় মনে করলেও পীরের অভিশাপের ভয়ে ভীত থেকেছেন।
উদ্দীপকের গণি মিয়া একজন চাষি। বুকে ব্যথা সারানোর জন্য সে কথিত কামেল পীর মনোয়ার হাজির কাছে যেতে চায় পানি পড়া আনার জন্য। তার বিশ্বাস পানি পড়া খেলে সে ভালো হয়ে যাবে। কলেজপড়–য়া শিক্ষিত ছেলে এর প্রতিবাদ করলে গণি মিয়া রেগে যায় এবং পুত্রকে গালমন্দ করে। ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয়ও দেখায়। অসুখে বিসুখে ডাক্তারের কাছে যাওয়াই সচেতন মানুষের কাজ। কিন্তু ধর্মীয় কুসংস্কার গণি মিয়াকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাই গণি মিয়ার এই ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসের সাথে বহিপীর নাটকের খোদেজা চরিত্রের মিল রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে ‘বহিপীর’ নাটকের মূলভাবের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি। কারণ নাটকে সবশেষে সত্যই জয়যুক্ত হলেও উদ্দীপকে তা লক্ষ করা যায় না।
‘বহিপীর’ নাটকে শক্তিমান লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ধর্মের মুখোশধারী একজন পীরের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেছেন। পীরসাহেব সারা বছর মুরিদদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ান। তাদের কাছ থেকে অর্থ-সম্পদ সংগ্রহ করেন। বৃদ্ধ বয়সে তিনি একজন অন্ধভক্ত মুরিদের কিশোরী কন্যাকে বিয়ে করেন। প্রতিবাদী কিশোরী এই অন্যায় সিদ্ধান্ত না মেনে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। নানা ক‚টকৌশলে তাহেরাকে ফিরে পেতে চান বহিপীর। তাহেরার প্রতিবাদী ভূমিকা ও হাশেমের চারিত্রিক দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত তাহেরা মুক্তি পায়।
উদ্দীপকে ধর্মীয় কুসংস্কারের দিকটি আলোচিত হয়েছে। সেখানে গণি মিয়া তার চিরাচরিত ধর্মীয় কুসংস্কার অনুযায়ী বুকের ব্যথার উপশমের জন্য কথিত কামেল পীরের নিকট পানি পড়া আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার কলেজপড়–য়া শিক্ষিত ছেলে এর প্রতিবাদ করে। কিন্তু গণি মিয়ার বদ্ধমূল বিশ্বাস যে, এতে ছেলে পীরের বদদোয়ায় ধ্বংসের সম্মুখীন হতে পারে।
‘বহিপীর’ নাটকে ধর্মীয় গোঁড়ামি, ধর্মকে পুঁজি করে অর্থবিত্তের মালিক হওয়া, সত্য ও মানবাধিকারের পক্ষে জোরালো ও শক্ত অবস্থান, মানবিকতার জয় ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে। পাশাপাশি তৎকালীন সমাজের জমিদারি প্রথা পীরের উদ্দেশে সর্বস্ব নিবেদন করাসহ বহুবিধ বিষয় আলোচিত হয়েছে। অন্যদিকে উদ্দীপকে কেবল ধর্মীয় কুসংস্কার ও এর প্রতিবাদের বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে। এখানে সত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা নেই। তাই উদ্দীপকে ‘বহিপীর’ নাটকের মূলভাবের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি।
thank you soooooooooo much
ReplyDeleteধন্যবাদ
ReplyDeleteভাই আমার বহু নির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর লাগবে বহিপীর নাটকের
ReplyDeletehttps://www.eedubd.com/2023/06/blog-post_16.html
Deletehttps://www.eedubd.com/2023/06/blog-post_16.html
Delete‘বহিপীর’ নাটকের ২০৮টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর
নর
ReplyDelete