ads

স্বাধীনতা এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হল- নির্মলেন্দু গুণ


নির্মলেন্দু গুণ
কবি পরিচিতি:
নির্মলেন্দু গুণ ১৯৪৫ সালে নেত্রকোণা জেলার কাশবন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সুখেন্দু প্রকাশ গুণ চেীধূরী এবং মাতা বীণাপানি গুণ । নির্মেলেন্দু গুণ ১৯৬২ সালে সিকেপি ইনস্টিটিউশন,বারহাট্টা থেকে মাধ্যমিক,১৯৬৪ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেন । ষাটের দশকের সূচনা থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত তিনি কবিতায় ও গদ্যে স্বচ্ছন্দে সৃজনশীল হলেও কবি হিসেবেই তিনি খ্যাত। তাঁর কবিতায় প্রতিবাদী চেতনা, সমকালীন সামাজিক-রাজনৈতিক জীবনের ছবি যেমন প্রখর, কবিতা-নির্মাণে শিল্প-সৌন্দর্যের প্রতিও তিনি সজাগ। নির্মলেন্দু গুণ পেশায় সাংবাদিক। কাব্য সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক,বাংলা একাডেমী পুরস্কার,কবি হাসান হাফিজুর রহমান স্মৃতি স্বর্ণপদক,জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরুস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন । তাঁর উল্লেকযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : প্রেমাংশুর রক্ত চাই,বাংলার মাটি বাংলার জল, চাষাভূষার কাব্য, পঞ্চাশ সহস্র বর্ষ; ছোটগল্প: আপন দলের মানুষ। ছোটদের জন্য লেখা উপন্যাস-কালোমেঘের ভেলা, বাবা যখন ছোট ছিলেন।

একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে : ‘কখন আসবে কবি?’
এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,
এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,
এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না।
তা হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানে
ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হৃদয় মাঠখানি ?
জানি, সেদিনের সব স্মৃতি মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত
কালো হাত। তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ…।
হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,
শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে
লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প।
সেদিন এই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর।
না পার্ক না ফুলের বাগান,-এসবের কিছুই ছিল না,
শুধু একখন্ড অখন্ড আকাশ যেরকম, সেরকম দিগন্ত প্লাবিত
শুধু মাঠ ছিল দুর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়।
আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল
এই ধু ধু মাঠের সবুজে।
কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে
এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,
লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক,
হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,
নিম্ন-দশ্যবিত্ত, করুণ কেরানি, নারী, বৃদ্ধ, ভবঘুরে
আর তোমাদের মতো শিশু পাতা-কুড়ানিরা দল বেঁধে।
এই কবিতা পড়া হবে, তার জন্য কী ব্যাকুল
প্রতীক্ষা মানুষের : ‘কখন আসবে কবি ?’ ‘কখন আসবে কবি?’
শত বছরে শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনমদুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী ?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখনি :
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।
শব্দার্থ ও টীকা :
উন্মত্ত – দারুণ উত্তেজনায় আবেগবিহ্বল, ক্ষিপ্ত;
শোভিত – সজ্জিত,
উদ্যান – বাগান;
উদ্যত – প্রবৃত্ত, প্রস্তুত;
বিমুখ প্রান্তরে – বিরুদ্ধ পরিবেশের মাঠ, প্রতিকূল পরিবেশে;
দিগন্ত প্লাবিত – আকাশ-ছোঁয়া, যে মাঠে দিগন্ত এসে মিশেছে এমন বিশাল;
দুর্বাদলে – সবুজ ঘাসে;
উলঙ্গ কৃষক – খালিগায়ের দরিদ্র গ্রামীণ কৃষক;
কর কেরানি – স্বল্প বেতনে দারিদ্র্যের মধ্যে করুণভাবে জীবন-যাপনকারী সাধারণ চাকুরিজীবী কেরানি;
ভবঘুরে – যাদের কোনো কাজকর্ম নেই, বেকার;
পাতা-কুড়ানিরা – যারা পাতা-কুড়িয়ে জীবন ধারণ করে। দরিদ্র কিশোর-কিশোরীর দল;
পলকে – মুহূর্তের মধ্যে;
দারুণ ঝলকে – প্রচণ্ড ঝলক দিয়ে, প্রচণ্ড আলোর দোলা লাগিয়ে;
গণসূর্যের মঞ্চ – জনগণের নেতা, যাঁর তেজীয়ান দ্যুতি চারদিকে বিচ্ছুরিত হচ্ছিল তিনি যেন এক গণসূর্য। সেই নেতা যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেটা তো গণসূর্যের মঞ্চ। তাছাড়া সেদিন বিকেলে সূর্যের আলোতে ছিল প্রখরতা;
রোধে – বন্ধ করে দেওয়া, বাধা দেওয়া;
সবুজ সবুজময় – সবুজ ঘাসে আবৃত;
প্রাণের সবুজ – প্রাণের সজীবতা ও তারুণ্য;
মাঠের সবুজ – মাঠের সুন্দর সবুজ পরিবেশ;
বজ্রকণ্ঠ – মেঘাচ্ছন্ন আকাশ থেকে বজ্র বা বিদ্যুতের ধ্বনি প্রচণ্ড শক্তিধর শব্দের মতো। এখানে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বরকে বোঝানো হয়েছে;
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা – ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বাংলার মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠনিঃসৃত বক্তব্য শোনার জন্য ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে অপেক্ষা করছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ। তারা ব্যাকুল হয়ে বসেছিল বঙ্গবন্ধুর অপেক্ষায়। রেসকোর্সের মাঠে এসে তিনি কী নির্দেশ দেন, কী আশার বাণী শোনান সে জন্য সেদিন লক্ষ প্রাণ হয়েছিল আকুল। কারণ পাকিস্তানি শাসকরা সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের বিজয়কে নস্যাৎ করার সমস্ত পরিকল্পনার ছক তৈরি করে বসেছিল। ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির বিজয়কে তারা স্বীকার করে নিতে পারেনি। পাকিস্তানি ষড়যন্ত্রকারীদের সামরিক প্রতিভূ ইয়াহিয়া খান ১৯৭১-এর ১লা মার্চ পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত করে দেয়। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে শুরু হয় সমগ্র বাঙালি জাতির ঐক্যবদ্ধ অসহযোগ আন্দোলন। বাংলাদেশ হয়ে ওঠে গণমানুষের আন্দোনে টালমাটাল। ক্ষুদ্ধ দেশের মানুষ। ফেটে পড়ছে তাদের ক্রোধ। তারা তাকিয়ে আছে তারেদ অকৃত্রিম বন্ধু, প্রাণের মানুষ, কোটি মানুষের নেতা শেখ মুজিবের দিকে। সমস্ত দেশের মানুষ যেন এ বিদ্রোহে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সেদিন রেসকোর্সের মাঠে বঙ্গবন্ধুর বত্ব্য শোনার জন্য যারা এসেছিল সেই লক্ষ লক্ষ মানুষের মনে ছিল ব্যাকুলতা, বঙ্গবন্ধু কী বলবেন আজ। প্রত্যেক শ্রোতাই যেন এক একজন বিদ্রোহী। এ বিদ্রোহ ছিল পাকিস্তানি স্বৈরশাসক ও সামরিকতন্ত্রের এবং অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে।
জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে – রমনা রেসকোর্সে সমবেত লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশকে কবি কল্পনা করেছেন জনসমুদ্রের বাগানরূপে। সেই জনসমুদ্রের একদিকে ছিল মঞ্চ, কবির দৃষ্টিতে সেটি যেন সেই জনসমুদ্রের তীর।
এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না- বর্তমানে ঢাকার সোহরাওয়াদী উদ্যানে উত্তরপ্রান্তের একটি অংশ জুড়ে রয়েছে শিশু পার্ক।তখন এ শিশু পার্ক ছিল না, তখন এর নাম ছিল রমনা রেসকোর্স। এর রেসকোর্সের উত্তর প্রান্তে নির্মিত বিরাট প্রশস্ত মঞ্চ থেকে ৭ই মার্চ (১৯৭১) বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসেক ভাষণ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সেই স্মৃতিময় স্থানটির কোনো অস্তিত্ব এখন আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেখানে এখন নানা রং-বেরঙের টুল-বেঞ্চি, খেলনারাজ্য, আর চারদিকে বাগান। কবি মনে করেন, লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের বাণী’ যেখান থেকে উচ্চারিত হয়েছিল সে স্মৃতিময় স্থানটি এভাবেই সুকৌশলে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
কখন আসবে কবি? – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কল্পনা করা হয়েছে কবিরূপে। কারণ তিনি বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার স্বপ্ন ও অনুভূতির রূপকার। তাঁর বাঙালি হৃদয়ের আবেগপ্রবণ প্রকাশকে কবিসুলভই মনে হয়। ১৯৭১ সালের ৫ই এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিউজউইক’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ‘রাজনীতির কবি’ বলে আখ্যায়িত করে লেখা হয়, তিনি ‘লক্ষ লক্ষ মানুষকে আকর্ষণ করতে পারে সমাবেশে এবং আবেগময় বাগ্মিতায় তরঙ্গের পর তরঙ্গে তাদের সম্মোহিত করে রাখতে পারেন। তিনি রাজনীতির কবি’। সুতরাং বঙ্গবন্ধুকে ‘কবি’ অভিধাটি যথার্থভাবেই দিয়েছেন একালের কবি।
কবির বিরুদ্ধে কবি … মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ – কবি এখানে বোঝাতে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর এদেশে অশুভশক্তির যে উত্থান ঘটেছে তাতে সব ইতিবাচক ভাবনা, সৌন্দর্য ও কল্যাণকে যেন সমাহিত করার প্রয়াস চলেছে।

শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প – ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে যে বিকেলটিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনবার জন্য, সে বিকেলটি কবির দৃষ্টিতে ছিল বাংলার মানুষের জন্য শ্রেষ্ঠ বিকেল। কারণ এদিন বিকেলেই তিনি স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন।
শতবছরের শত সংগ্রাম শেষে – প্রকৃতপক্ষে বাংলার স্বাধীনতাসূর্য অস্তমিত হয় পলাশীল প্রান্তরে ১৭৫৭ সালে। ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন হয়-সিপাহী বিপ্লব। ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামে স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবী সূর্য সেনের নেতৃত্বে ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র যুদ্ধ হয় জালালাবাদ পাহাড়ে। অতঃপর পাকিস্তান সৃষ্টির এক বছর পর থেকে শুরু হয় পাকিস্তানি শাসকদের নানা ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। ১৯৪৮ সালের ভাষা সংগ্রাম থেকে ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন, তারপর ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। সুতরাং ইতিহাসের বহু অধ্যায় পার হয়ে, নানা সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি প্রিয় স্বাধীনতা।
অতঃপর কবি এসে মঞ্চে দাঁড়ালেন – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বক্তৃতামঞ্চে এসে দাঁড়ালেন লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনে।
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল/হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার/সকল দুয়ার খোলা, – কবি তাঁর বর্ণনাকে আরও সুন্দর ও অর্থবহ করে তোলার জন্য রবীন্দ্রনাথের ‘দেবতার গ্রাস’ ও বিষ্ণু দে-র ‘ঘোড়সওয়ার’ কবিতার চরণ ব্যবহার করেছেন খুব নৈপুণ্যের সঙ্গে। বাংলার মানুষের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বাধীনতারূপী নৌকার পাল তুলে যখন ডাক দিলেন,তখন জনতার জোয়ারের রাতে সে নৌকায় লাগল উদ্দাম হাওয়া, ছুটে চলল সেই স্বপ্নের বহু আকাঙ্ক্ষিত তরী।
বজ্রকণ্ঠ বাণী – সাহজে উদ্দীপ্ত দ্যুতিময় বঙ্গবন্ধুর বাণী।
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম – ১৯৭১-এর ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু ডাক দেন, এদেশের মুক্তির ডাক দেন তাঁর বক্তব্যের এটাই ছিল মূলকথা। তাঁর এ আহবানে সমগ্র দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং অবশেষে আমরা জয়ী হই।
স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের – ‘স্বাধীনতা শব্দটি এখন অভিধানের একটি নিছক শব্দ নয়। এ শব্দটির উচ্চারণের সঙ্গে আমাদের সংগ্রাম ও মুক্তির প্রসঙ্গ যুক্ত। তাই ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ যখন বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ থেকে ধ্বনিত হলো : এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, তখন ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি পেল নতুন অর্থ ও ব্যঞ্জনা।
পাঠ পরিচিতি :
শিক্ষার্থীদের মনে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতা ও দেশপ্রেমের প্রেরণা জাগ্রত করা কবিতাটির উদ্দেশ্য। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু রমনা রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ লক্ষ মানুষের সম্মুখে বজ্রকণ্ঠে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের নিগড় থেকে বাঙালি জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষনের মধ্যেই সেদিন সুচিত হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান। সেদিন কৃষক-শ্রমিক-মজুর-বুদ্ধিজীবী-শিশু-কিশোর-নারী-পুরুষ-যুবক-বৃদ্ধ সবাই সমবেত হয়েছিল বাঙালির মহান নেতার কথা শোনার জন্য। সবার মনে ছিল আকুলতা। সে আকুলতা ছিল নেতার কাছে স্বপ্নের কথা শোনার জন্য। তাঁর মুখে আশার বাণী শোনার জন্য। রমনার রেসকোর্সে যেখানে সেদিনের মঞ্চ তৈরি হয়েছিল এখন সেখানে তার কোনো চিহ্ন নেই। সে জায়গায় গড়ে উঠেছে শিশুপার্ক। কবি মনে করেন, অনাগত কালের শিশুদের কাছে এই কথাটি জানিয়ে দেওয়া দরকার যে – এখন থেকেই, এই পার্কের মঞ্চ থেকেই, বাঙালির অমর অজর প্রিয় শব্দ ‘স্বাধীনতা’ কথাটি উচ্চারিত হয়েছিল। আপামর জনতার সামনে যিনি সেদিন এসে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি বাঙালির বড় প্রিয় মানুষ, বাঙালির শিকড় থেকে জেগে ওঠা এক বিদ্রোহী নেতা। তিনি কোনো সাধারণ রাজনীতিবিদ নন, তিনি একজন কবি, একজন রাজনীতির কবি। এ দেশের মানুষের ভালোবাসার গড়া এক মানুষ – জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি সেদিন (৭ই মার্চ ১৯৭১) বিকেলের পড়ন্ত রোদে ডাক দিয়েছিলেন 
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাহ স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
অনুশীলনী
কর্ম-অনুশীলন
১.১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণটি সংগ্রহ করে মুখস্থ কর এবং শিক্ষককে শোনাও।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :
১. করুণ কেরানি কাদেরকে বলা হয়েছে ?
ক. আবেগে করুণ
খ. স্বভাবে করুণ
গ. করুণভাবে জীবনযাপনকারী
ঘ. চাকুরিজীবি
২. ‘গণসূর্যের মঞ্চ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
‘লাখ অযুতকে ডাক’ বলতে বোঝানো হয়েছে –
ক. আলোচিত মঞ্চ 
খ. উদ্দীপ্ত মঞ্চ
গ. নেতার মঞ্চ সূর্যের মতো 
ঘ. বিপ্লবী মঞ্চ

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
মনে আমার ঝলসে ওঠে
একাত্তরের কথা,
পাখির ডানায় লিখেছিলাম
প্রিয় স্বাধীনতা।
৩. উদ্দীপকে ‘স্বাধীনতা এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতার কোন দিককে প্রতিফলিত করেছে ?
স্বাধীনতার কথা
মুক্তির কথা
iii. আকাঙ্ক্ষার কথা
নিচের কোনটি সঠিক ?
ক. i
খ. ii
গ. iii
ঘ. i ও iii
৪. উদ্দীপকে প্রতিফলিত ভাবনাটি ‘স্বাধীনতা এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতার কোন পংক্তির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ ?
ক. মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ
খ. কবির বিরুদ্ধে কবি
গ. আমাদের স্বাধীতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল
ঘ. সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের

সৃজনশীল প্রশ্ন :
দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ ?
কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।
ক.সব স্মৃতি মুছে দিতে কী উদ্যত ?
খ.‘ঢেকে দেয়া এই হৃদয় মাঠখানি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
গ.উদ্দীপকটি ‘স্বাধীনতা এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হল’ কবিতার কোন দিককে উন্মোচিত করেছে – ব্যাখ্যা কর।
ঘ.উদ্দীপকটি ‘স্বাধীনতা এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হল’ কবিতার সমগ্র ভাবকে ধারণ করেনি – মূল্যায়ন কর।

No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.