ads

শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর:

শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের  অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর:

 

শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের  অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: 
১. অন্নবস্ত্রের প্রাচুর্যের চেয়ে মুক্তি বড়।- কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর : অন্নবস্ত্রের প্রাচুর্য মানুষকে সাময়িক আনন্দ দিলেও মানুষের মনকে মুক্তি দেয় না – এ বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে কথাটি দ্বারা। মানুষের রয়েছে দুটি সত্তা। একটি হলো তার জীবসত্তা আর অপরটি মানবসত্তা। অন্নবস্ত্রের সহায়তায় মানুষ তার জীবসত্তাকে টিকিয়ে রাখে। কিন্তু অন্নবস্ত্রের প্রাচুর্য মানুষের মনকে পূর্ণাঙ্গভাবে সন্তুষ্ট করতে পারে না। মানবসত্তা অর্থাৎ মনুষ্যত্বলোকের মুক্তির মাধ্যমেই মানুষ আÍার অমৃতকে উপলব্ধি করতে পারে। যাঁদের মাঝে মনুষ্যত্ববোধ রয়েছে তাঁরা অন্নবস্ত্রের সহজলভ্যতার চেয়ে মানসিক মুক্তিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

 শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের  অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: 
২. শুধু শিক্ষার ওপর নির্ভর করে মানবজীবনে উন্নতি করার ভাবনা অযৌক্তিক কেন?
উত্তর : শুধু শিক্ষার ওপর নির্ভর করলে জীবনে উন্নতি করতে অনেক বেশি সময় প্রয়োজন বলে এ ভাবনা ভাবা অযৌক্তিক।
মানবজীবনে উন্নতির জন্য একই সাথে দুটি উপায় অবলম্বন করতে হবে। অন্নবস্ত্রের সমস্যার সমাধান করার পাশাপাশি শিক্ষাদীক্ষার মাধ্যমে মনুষ্যত্বের স্বাদ পাওয়ার সাধনা করতে হবে। কেবল শিক্ষাকে অবলম্বন করে প্রাণপণে চেষ্টা করলেও জীবনে সফল হওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে অনেক সময়ের প্রয়োজন। কেননা অন্নবস্ত্রের দুশ্চিন্তায় মনুষ্যত্বের সাধনা পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এ কারণেই শুধু শিক্ষার ওপর নির্ভর করে মানবজীবনে উন্নতি করার ভাবনাটি খুব বেশি ফলপ্রসূ হয় না।

 শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের  অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: 
৩. ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে শিক্ষাকে মইয়ের সাথে তুলনা করা হয়েছে কেন?
উত্তর : শিক্ষা জীবসত্তা ও মানবসত্তার মাঝে সেতুবন্ধ রচনা করে বলে শিক্ষাকে মইয়ের সাথে তুলনা করা হয়েছে। 
‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে মোতাহের হোসেন চৌধুরী মানবজীবনকে একটি দোতলা বাড়ির সাথে তুলনা করেছেন। সেই বাড়ির নিচতলা হলো জীবসত্তা আর ওপরের তলা হলো মানবসত্তা। মানবসত্তার ঘরে উঠে মানুষ সত্যিকার অর্থে উন্নত মানুষে পরিণত হয়। আর মানবসত্তা তথা মনুষ্যত্বলোকের সাথে মানুষকে পরিচয় করিয়ে দেয় শিক্ষা। শিক্ষার সিঁড়ি বেয়েই মানুষের মনুষ্যত্বের সাধনা চলমান থাকে। শিক্ষার এই সহায়ক ভ‚মিকার কারণেই প্রাবন্ধিক শিক্ষাকে মইয়ের সাথে তুলনা করেছেন।

 শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের  অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: 
৪. লেফাফাদুরস্তি আর শিক্ষা এক কথা নয়-কেন? 
উত্তর : লেফাফাদুরস্তি মানুষের বাইরের দিক হলেও শিক্ষা মানুষের ভেতরের দিক। অর্থাৎ উভয়ের অবস্থান পরস্পপরের বিপরীতে। 
লেফাফাদুরস্তি বলতে বাইরের দিক থেকে ত্র“টিহীনতা কিন্তু ভেতরে প্রতারণা বোঝায়। লেফাফাদুরস্ত ব্যক্তিরা বাইরে থেকে আকর্ষণীয় হলেও তাদের ভেতরটা শূন্য। অন্যদিকে যথার্থ শিক্ষিত ব্যক্তি বাইরে থেকে দেখতে যেমনই হন না কেন, অন্তরের শক্তিতে তিনি বলীয়ান। শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য মানুষের আÍিক উন্নয়ন। এ কারণেই ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখক লেফাফাদুরস্তি ও শিক্ষাকে ভিন্ন বলে উলে­খ করেছেন।

 শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের  অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: 
৫. ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখক মানবজীবনকে দোতলা ঘরের সাথে তুলনা করেছেন কেন?
উত্তর : মানবজীবনের দুটি সত্তা সম্পর্কে সহজ ধারণা দেওয়ার লক্ষ্যে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী মানবজীবনকে একটি দোতলা ঘরের সাথে তুলনা করেছেন। 
মানুষের দুটি সত্তা রয়েছে। একটি তার জীবসত্তা আর অন্যটি মানবসত্তা। জীবসত্তাকে টিকিয়ে রাখতে হয় জীবনধারণের জন্য। অন্যদিকে মানবসত্তার পরিচর্যা করা প্রয়োজন জীবনকে উন্নত করার জন্য। জীবসত্তার তুলনায় লেখকের বিবেচনায় তার মানবসত্তা তথা মনুষ্যত্ববোধের তাৎপর্য অনেক বেশি। জীবসত্তার চাহিদাকে তিনি মানবজীবনে প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তা হিসেবে উলে­খ করেছেন। আর এই অবস্থা থেকে ওপরে ওঠার প্রচেষ্টা হিসেবে বলেছেন মনুষ্যত্বের সাধনাকে। মানবজীবনকে তাই তিনি দোতলা একটি ঘরের সাথে তুলনা করে জীবসত্তা ও মানবসত্তার অবস্থান ¯পষ্ট করেছেন। তাঁর বিবেচনায় দোতলা ঘরের নিচতলা হলো জীবসত্তা এবং ওপরের তলা হলো মানবসত্তা।

 শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের  অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: 
৬. প্রাণিত্বের বাঁধন থেকে মুক্তি পাওয়া অত্যন্ত জরুরি কেন? 
উত্তর : মনুষ্যত্বের আহŸান মানুষের মর্মে পৌঁছানোর জন্য প্রাণিত্বের বাঁধন থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ মনুষ্যত্বের অধিকারী হয়। কিন্তু অন্নবস্ত্রের সুব্যবস্থা না থাকলে জীবনের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। পায়ের কাঁটার দিকে বারবার নজর দিতে গেলে হাঁটার আনন্দ উপভোগ করা যায় না। তেমনি অন্নবস্ত্রের সমস্যায় সর্বদা জর্জরিত থাকতে হলে মুক্তির আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব হয় না। তাই মনুষ্যত্বের আহŸানে দ্বিধাহীনভাবে সাড়া দিতে প্রাণিত্বের বাঁধন থেকে মুক্তি অর্থাৎ অন্নবস্ত্রের সমস্যার সমাধান অত্যন্ত জরুরি।

 শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের  অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: 
৭. আত্মার অমৃত উপলব্ধি করা যায় না কেন? 
উত্তর : প্রকৃতিগতভাবেই মানুষ জীবসত্তা থেকে মুক্তি পায় না বলে আত্মার অমৃত উপলব্ধি করা যায় না।
লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী তাঁর ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে মানুষের মাঝে দুটি সত্তার কথা বলেছেন। একটি জীবসত্তা আরেকটি মানবসত্তা বা মনুষ্যত্ব। একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই জীবসত্তা থেকে একজন মানুষ মানবসত্তায় উপনীত হয়। মনুষ্যত্ব অর্জনের জন্য অন্নবস্ত্রের চিন্তা থেকে মুক্তি প্রয়োজন। তাই জীবসত্তা থেকে মুক্তি ছাড়া আÍার অমৃত উপলব্ধি করা যায় না।

 শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের  অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: 
৮. ‘অর্থচিন্তার নিগড়ে সকলে বন্দি’ বলতে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর : আমাদের জগৎ সংসারে সকলেই জীবনটাকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে পার করার চিন্তায় ব্যস্ত, এটি বোঝাতেই লেখক এ কথা বলেছেন। 

পৃথিবীতে সকলেরই চাহিদা অসীম। তাই সহজেই কেউ তৃপ্ত হতে পারে না। এজন্য সকলেই অর্থের পেছনে ছোটে। জীবসত্তার প্রয়োজন মেটাতে অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু শুধু অর্থের পেছনে না ছুটে আমাদের মনুষ্যত্ব অর্জনের জন্য মানবসত্তার চর্চাও করা প্রয়োজন। এজন্য শিক্ষা অর্জনে আগ্রহী হতে হবে। কিন্তু জীবসত্তার প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে মানুষ অর্থচিন্তার শিকল থেকে মুক্ত হতে পারে না। এটি বোঝানোর জন্যই লেখক এ কথা বলেছেন। 

 শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের  অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: 
৯. “কারারুদ্ধ আহারতৃপ্ত মানুষের মূল্য কতটুকু?- এখানে “কারারুদ্ধ” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর : কারারুদ্ধ বলতে চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা, আÍপ্রকাশের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত থাকাকে বোঝানো হয়েছে। 

শিক্ষা মানুষকে মুক্তি দেয়। কারাগারে বসে প্রচুর অন্নবস্ত্র পেলেও মানুষ মুক্তির স্বাদ পেতে চায়। শিক্ষা তেমনি অন্নচিন্তার মধ্যে থেকেও মনের মুক্তি দেয়। শিক্ষার মাধ্যমে চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা ও আÍপ্রকাশের স্বাধীনতা পাওয়া যায়। কিন্তু যারা ধন-স¤পদের মাঝে থেকেও এই শিক্ষা থেকে দূরে থাকে তাদের অবস্থা কারারুদ্ধ আহারতৃপ্ত মানুষের মতোই। প্রশ্নে কারারুদ্ধ বলতে এ দিকটিই বোঝানো হয়েছে। 

 শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের  অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: 
১০. মানবজীবনে শিক্ষা সোনা ফলাতে পারে না কেন?
উত্তর : অর্থচিন্তা থেকে মুক্তি না পেলে শিক্ষা মানবজীবনে সোনা ফলাতে পারে না। 

শিক্ষা মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ ঘটায়। কিন্তু জীবনসত্তার প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে মানুষ শিক্ষার প্রকৃত মর্মার্থ অনুধাবনে ব্যর্থ হয়। জীবসত্তার প্রয়োজনে মানুষ সবসময় অর্থচিন্তার নিগড়ে বন্দি থাকে। এই অর্থ সাধনাই যে জীবন সাধনা নয়, এ কথাটি অনুধাবনে ব্যর্থ হলে শিক্ষা মানবজীবনে সোনা ফলাতে পারে না।

 শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের  অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: 
১১. শিক্ষার আসল কাজ কী? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : শিক্ষার আসল কাজ হলো মূল্যবোধ সৃষ্টি। জ্ঞান পরিবেশন করা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য নয়। শিক্ষার মূল কাজ হলো মানুষকে মনুষ্যত্বলোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। অন্নবস্ত্রের সমস্যা সমাধান হলেই মানবজীবনের প্রকৃত উন্নয়ন হয় না। এ জন্য প্রয়োজন চিন্তা, বুদ্ধি ও আÍপ্রকাশের স্বাধীনতা। শিক্ষার মাধ্যমেই আমরা এ স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি। মূল্যবোধের জাগরণ ঘটিয়ে শিক্ষা আমাদের সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। আর এটিই শিক্ষার আসল কাজ।

 শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের  অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: 
১২. ‘অপ্রয়োজনের দিকই তার শ্রেষ্ঠ দিক’Ñ কথাটি বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর : শিক্ষার মাহাÍ্যরে কথা বোঝানো হয়েছে উক্তিটির মাধ্যমে। মোতাহের হোসেন চৌধুরী ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে মানবজীবনের উন্নয়নে শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। অন্নবস্ত্রের সমস্যা সমাধানে শিক্ষার যেমন ভ‚মিকা আছে, তেমনি মানবিক মূল্যবোধ গঠনেও শিক্ষার ভূমিকা  আবশ্যকীয়। প্রাবন্ধিক শিক্ষার প্রথম ভ‚মিকাটিকে বলেছেন প্রয়োজনের আর দ্বিতীয়টিকে অপ্রয়োজনের। শিক্ষার অপ্রয়োজনের এই দিকটি মানুষকে জীবন উপভোগ করতে শেখায়, মনুষ্যত্বলোকের সাথে মানুষের মিলন ঘটিয়ে দেয়। এটি ছাড়া প্রকৃত মানুষ হওয়ার কোনো উপায় নেই। লেখক তাই শিক্ষার অপ্রয়োজনের দিকটিকেই শ্রেষ্ঠ দিক বলেছেন।

 শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের  অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: 
১৩. শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের রচয়িতার মতে অর্থচিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি কেন?

উত্তর : মানবজীবনে শিক্ষার সুফল লাভের জন্য অর্থচিন্তা থেকে মুক্তি লাভ করা জরুরি। ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে মোতাহের হোসেন চৌধুরী মানবজীবনের উন্নয়নের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁর মতে, অধিকাংশ মানুষই অর্থচিন্তা অর্থাৎ অন্নচিন্তায় নিমগ্ন। এর ফলে তাদের  জীবনের ওপরের তলা অর্থাৎ মনুষ্যত্বের ঘরটির দশা নিতান্তই শোচনীয়। কিন্তু অর্থ সাধনা জীবন সাধনা নয়, এটি মানুষকে বুঝতে হবে। তা না হলে শিক্ষা-দীক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান কোনো কাজেই আসবে না। মানুষের মাঝে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানোর জন্য অর্থচিন্তা থেকে মানুষের মুক্তি অত্যন্ত জরুরি।



No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.