ads

‘অপরিচিতা’ গল্পের বিষয়বস্তু ও একটি সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর।


প্রিয় একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী বন্ধুরা,

আমার প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিও। বৈশ্বিক মহামারীর কারণে তোমাদের নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম প্রচণ্ডভাবে ব্যাঘাত ঘটেছে। এমতাবস্থায় এখন তোমরা অনলাইন-অফলাইনে ক্লাসে পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছ, যা অভিনন্দন যোগ্য। এ কাজকে আর একটু সহজ করতে তোমাদের জন্য থাকছে বাংলা প্রথম পত্রের ‘অপরিচিতা’ গল্পের বিষয়বস্তু ও একটি সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর। তোমরা প্রশ্নোত্তরটি যথাযথ অনুসরণ করলে জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্ন কীভাবে স্তরভিত্তিক লিখতে হয়, কীভাবে লিখলে ১০ এ ১০ পাওয়া যায় সে বিষয়টি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। তোমাদের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।

পতিতপাবন মণ্ডল
বিভাগীয় প্রধান (বাংলা)
সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ
সূত্রাপুর, ঢাকা,-১১০০।

‘অপরিচিতা’ গল্পের মূল বিষয়বস্তু:
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ছােটগল্পের প্রাণপুরুষ, সমগ্র বাংলা সাহিত্যের একজন সার্থক স্রষ্টা। “অপরিচিতা” গল্পে অপরিচিতা বিশেষণের আড়ালে যে বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী নারীর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে, তার নাম কল্যাণী। এই গল্পে যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রতিরােধের চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন। এ গল্পে পিতা শম্ভুনাথ সেন এবং কন্যা কল্যাণীর স্বতন্ত্র জীবন দর্শন সমাজে গেড়ে-বসা ঘৃণ্য যৌতুকপ্রথার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ প্রকাশিত হয়ছে। পিতার বলিষ্ঠ প্রতিরােধ এবং কন্যা কল্যাণীর দেশচেতনায় ঋদ্ধ ব্যক্তিত্বের জাগরণ ও তার অভিব্যক্তিতে গল্পটি সার্থক।

এ গল্পে তিনি প্রথমত নায়ক অনুপমের রূপমাধুর্য ও তার বেড়ে ওঠার বর্ণনা দিয়েছেন। পিতার মৃত্যুর পর অনুপম মায়ের কাছেই মানুষ হয়। পারিবারিক কোনাে বিষয়ে তাকে মাথা ঘামাতে হয়নি। অনুপম ছিল মায়ের অনুগত সন্তান। এ গল্পে সে নিজেকে একজন ভালাে মানুষ ও সৎ পাত্র হিসেবে দাবি করে। তার বন্ধু হরিশ কানপুরে চাকরি করত। ছুটিতে এসে সে-ই প্রথম অনুপমকে বিয়ের কথা বলে। বন্ধুর মুখে বিয়ের কথা শুনে তার মনের বাগিচায় বসন্তের কোকিল ডেকে ওঠে। নিয়মানুসারে বিয়ের কাজ ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হতে থাকে। অনুপমের বিয়ের জন্য কন্যা দেখা হয়। কন্যা (কল্যাণী) ছিল বেশ সুন্দরী ও প্রাণচঞ্চলা। আর কন্যার পিতা শম্ভুনাথ সেন ছিলেন স্পষ্টভাষী ও সুপুরুষ। অন্যদিকে অনুপমের মামা বিয়ের পণের ব্যাপারে কোনাে প্রকার ছাড় দিতে রাজি নন। এখানেই গল্পের কাহিনি জটিলতায় রূপ নেয়। বেশ ঘটা করে বিয়ের কাজ শুরু হলেও এক পর্যায়ে দেনা-পাওনার কারণে সব আনন্দ-আয়ােজন ম্লান হয়ে আসে, বিয়ে ভেঙে যায়। এতে অনুপমের কোনাে দোষ না থাকলেও তাকে ব্যক্তিত্বহীনের মতাে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এ কারণে সে-ই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ সে তার মনােরাজ্যের প্রেয়সীকে পায় না। কিছুক্ষণের মধ্যে যে চিরদিনের হতে পারতো সে রয়ে গেল চির অচেনা। এরপর যদিও পুনরায় তাদের বিয়ে হতে পারত বা ট্রেন ভ্রমণে ইতিবাচক কিছু ঘটতে পারত, কিন্তু কল্যাণী বিয়ে না করার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি। তবু আশা ছাড়েনি অনুপম। কল্যাণীর প্রতি অনুরাগ তার মনে-বাইরে নিত্য জেগে থাকে। অনুপমের মামার বাড়াবাড়ি রকমের লােভ ও পণপ্রথার কারণে অনুপমের হৃদয় ভেঙে যায়, ব্যক্তিত্বে ধস নামে, তাই অনুপমের জীবন ফুলে-ফলে পরিপূর্ণ হতে পারে না। কেননা কল্যাণী চিরকালের জন্য তার কাছে অপরিচিতা থেকে যায়। অনুপম এমএ পাশ করেছে কিন্তু মা আর মামার আদেশ-নির্দেশ না মানার মতাে মানসিক শক্তি তার তৈরি হয়নি। তার বিয়ের ব্যাপারে দেখাশুনা, কথাবার্তা সব তারাই করছেন, অনুপমের কোনাে ভূমিকা নেই। যথাসময়ে সে বরবেশে বিয়ে করতে যায়। সেখানে মামার আচরণে অপমানিত বােধ করে কনের বাবা বরপক্ষকে খাবার খাইয়ে বিদায় করে দেন। কনে অপরিচিতাই রয়ে যায় অনুপমের কাছে। বছর খানেক পর মাকে নিয়ে ট্রেনে তীর্থে যাওয়ার সময় একজন বাঙালি মেয়ের মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠে ‘এখানে জায়গা আছে’ শুনে মুগ্ধ হয়ে গেল । গাড়ি বদলের সময় আবার সেই কণ্ঠের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মাকে নিয়ে কামরায় উঠে যায় অনুপম। সহজ স্বচ্ছন্দ হাসি-খুশি সুন্দর মেয়েটিকে দেখে তার মা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকেন। কানপুরে নেমে যাওয়ার আগে মা তাকে প্রশ্ন করে জানতে পারেন সেই ডাক্তার শম্ভুনাথ সেনের মেয়ে কল্যাণী, যার সঙ্গে অনুপমের বিয়ে হতে গিয়েও হয়নি। কল্যাণী ও শম্ভুনাথ বাবুর কাছে অনুপম বিগত ঘটনার জন্য হাত জোড় করে ক্ষমা চাইল। শম্ভুনাথ সেনের মন নরম হলেও কল্যাণী স্পষ্ট জানিয়ে দিল, সে প্রতিজ্ঞা করেছে যে, বিয়ে করবে না। অনুপম কল্যাণীকে ছাড়েনি, সে কানপুরে চলে এসেছে, কল্যাণীর সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়, এটা ওটা কাজও সে করে দেয়। কল্যাণীর বাবা তাকে ক্ষমা করেছেন। কিন্তু কল্যাণী প্রতিজ্ঞা করেছে সে বিয়ে করবে না। অনুপম চার বছর ধরে কল্যাণীর বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যায়। কারণ ট্রেনের কামরা থেকে শােনা মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠ “এখানে জায়গা আছে” আজও তার হৃদয়ে অম্লান তার হৃদয়ের সবটুকু জুড়ে থাকে সেই সুমধুর ধ্বনি। অপরিচিতার সেই কণ্ঠই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। যদিও কল্যাণী তার কাছে অপরিচিতাই রয়ে গেছে। চিরদিনের সে অনুপমের হয়ে উঠল না, অনুপমের হৃদয় জুড়ে শুধু শূন্যতার মাঝে রংধনুর একটি অস্পষ্ট রেখা জেগে থাকে সেই সুমধুর ধ্বনি ‘জায়গা আছে’। কিন্তু কল্যাণীর হৃদয়ে তার কতটুকু জায়গা হয়েছে তা আসলে সিদ্ধান্তে আসা বেশ কষ্টকর। বিয়ের লগ্ন যখন প্রস্তুত তখন কন্যার লগ্নভ্রষ্ট হওয়ার লৌকিকতাকে অগ্রাহ্য করে শম্ভুনাথ সেনের নির্বিকার অথচ বলিষ্ঠ প্রত্যাখ্যান নতুন এক সময়ের আশু আবির্ভাবকেই সংকেতবহ করে তুলেছে। গল্পের শেষাংশে কল্যাণীর বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের জাগরণের মধ্যে ভবিষ্যতে নবরূপে নারীর আগমনী বার্তা ধ্বনিত হয়েছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর:

১. নিচের উদ্দীপকটি পড়ে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। ১০
গৌরী ও সঞ্জয় অনেক দিন ধরে একই অফিসে চাকরি করছে কিন্তু সহকর্মীরা জানে না দুজনার অন্তরে গভীর ক্ষত। গৌরীকে নিজে পছন্দ করে বিয়ে করতে চেয়েছিল সঞ্জয়। বছর পাঁচেক আগে লােক খাওয়ানাে নিয়ে বিয়ে ভেঙেছে তাদের । পিতৃহীন সঞ্জয় কাকার আশ্রয়ে মানুষ তাই তার দোষ জেনেও প্রতিবাদ করতে পারেনি। একদিন গৌরীর কাছে নিজের অসহায় অবস্থার কথা তুলে ধরে সঞ্জয়। বলে, তার জন্য সে সারা জীবন অপেক্ষা করবে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গৌরী বলে, “কী দরকার, এই তাে বেশ আছি!”

ক. কোন কথা স্মরণ করে অনুপমের মামা ও মা ‘একযােগে বিস্তর হাসিলেন’? ১
খ. “মেয়ের চেয়ে মেয়ের বাপের খবরটাই তাহার কাছে গুরুতর”- উক্তিটি বুঝিয়ে লেখো। ২
গ. উদ্দীপকের সঞ্জয় ‘অপরিচিতা' গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে? বুঝিয়ে দাও। ৩
ঘ. এই তাে বেশ আছি! “গৌরীর এই উক্তিতে ‘অপরিচিতা’ গল্পের পরিণতি প্রতিফলিত হয়েছে’– উক্তিটি মূল্যায়ন করাে। ৪

১. নং প্রশ্নের উত্তর:
ক. কোন কথা স্মরণ করে অনুপমের মামা ও মা ‘একযােগে বিস্তর হাসিলেন?
উত্তর: গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে বিস্তর লােকের আদর-আপ্যায়ন করে তাদের বিদায় দিতে কনেপক্ষকে যে নাকাল হতে হবে সে কথা স্মরণ করে অনুপমের মামা ও মা ‘একযােগে বিস্তর হাসলেন।

খ. “মেয়ের চেয়ে মেয়ের বাপের খবরটাই তাহার কাছে গুরুতর” – উক্তিটি বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর: “মেয়ের চেয়ে মেয়ের বাপের খবরটাই তাহার কাছে গুরুতর”- উক্তিটিতে অনুপমের মামার হিসেবি, অনুসন্ধিৎসু ও লোভী মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেছে। যা মূলত ঘৃণ্য যৌতুক প্রথার কারণেই সৃষ্ট।
অনুপমের সংসারে তার মামাই সর্বেসর্বা। তিনি কখনাে ঠকতে রাজি নন। অনুপমের বিয়ের ক্ষেত্রে তার মতামতই সর্বশেষ কথা। অনুপমের অনুরােধে হরিশ মামার কাছে কল্যাণীর কথা উপস্থাপন করে। তবে মামা মেয়ের চেয়ে তার বাবার খরবটাই বেশি জানতে চান, সেটাই তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যাবতীয় দাবি বা চাহিদা তাে তাকেই মেটাতে হবে। তাই বলা যায় “মেয়ের চেয়ে মেয়ের বাপের খবরটাই তাহার কাছে গুরুতর”- উক্তিটি দ্বারা অনুপমের মামার হিসেবি, অনুসন্ধিৎসু, লোভী মানসিকতাকে তুলে ধরা হয়েছে।

গ. উদ্দীপকের সঞ্জয় ‘অপরিচিতা' গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে? বুঝিয়ে দাও। ৩

উত্তর: উদ্দীপকের সঞ্জয় ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের প্রতিনিধিত্ব করে। ‘অপরিচিতা' গল্পে অনুপমের মধ্যে উদ্দীপকের সঞ্জয়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। দুজনকেই ব্যক্তিত্বহীনের মতাে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এই ব্যক্তিত্বহীনতার দিক থেকেই তারা সাদৃশ্যপূর্ণ।
মানুষ যতই সুশ্রী ও শিক্ষিত হােক না কেন, সে যদি বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী না হয় তবে তার কোনাে মূল্য নেই। কারণ মানুষের আসল মর্যাদা তার ব্যক্তিত্বের মাঝেই নিহিত। বাবার মৃত্যুর পর অনুপমের মামা তাদের পরিবারের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন। বিয়ের আসরে কনের গয়না পরীক্ষার মাধ্যমে অনুপমের মামা যে হীন মানসিকতার পরিচয় দেন অনুপম তার কোনাে প্রতিবাদ করে না। সে ব্যক্তিত্বহীনের মতাে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। মামা যা বলে তাই সে মেনে নেয়। মামার গর্হিত কাজকে মেনে নেওয়ার মধ্যে তার পৌরুষহীন বলিষ্ঠহীনতার পরিচয়। বিয়ে ভেঙে গেলেও অনুপম নীরব ভূমিকা পালন করে।
উদ্দীপকের সঞ্জয়ের কাকা খাবার নিয়ে ঝামেলা করে সঞ্জয়ের বিয়ে ভেঙে দিলেও সে নীরব থাকে। সঞ্জয় কাকার দোষ জেনেও কোনাে প্রতিবাদ করে না, গল্পের অনুপমের মতাে সঞ্জয় ব্যক্তিত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। সৎসাহসের অভাবে অনুপমের ন্যায় সঞ্জয় গৌরীকে আপন করে নিতে পারে না। ব্যক্তিত্বের অভাবের কারণেই অনুপম কল্যাণী সঞ্জয় আর গৌরীকে আপন করে নিতে পারেনি। এভাবেই সঞ্জয় গল্পের অনুপমের প্রতিনিধি হয়ে ওঠে। তাই বলা যায়, ব্যক্তিত্বহীনতা উদ্দীপকের সঞ্জয়কে গল্পের অনুপমের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করে তুলেছে। উভয়ের জীবনের ব্যর্থতার জন্য তাদের এ বৈশিষ্ট্যই দায়ী। এখানেই তারা একে অপরের প্রতিনিধি।

ঘ. এই তাে বেশ আছি! “গৌরীর এই উক্তিতে ‘অপরিচিতা’ গল্পের পরিণতি প্রতিফলিত হয়েছে’– উক্তিটি মূল্যায়ন করাে। ৪
উত্তর: এই তাে বেশ আছি! “গৌরীর এই উক্তিতে ‘অপরিচিতা’ গল্পের পরিণতি প্রতিফলিত হয়েছে’– উক্তিটি যথার্থ। কারণ আত্মমর্যাদা সচেতন নারীর যে রূপ কল্যাণীর মাঝে ফুটে উঠেছে তারই প্রতিফলন দেখা যায় উদ্দীপকের গৌরীর মাঝে ।
মানুষের স্বপ্ন একবার ভেঙে গেলে সেটা পুনরায় দেখতে সে দ্বিধান্বিত হয়। তার ওপর যদি আত্মমর্যাদা আঘাত আসে তবে সেটাকে সে কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। “অপরিচিতা” গল্পে অপরিচিতা বিশেষণের আড়ালে যে বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী নারীর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে, তার নাম কল্যাণী। অর্থাৎ অপরিচিতা' গল্পের কল্যাণী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারী। অনুপমের সাথে বিয়ে ভেঙে গেলে সে পিতার যৌক্তিক মতামতকে সম্মান জানিয়েছে। পরবর্তীতে সে দেশসেবার ব্রত গ্রহণ করেছে। নারী জাগরণের পথপ্রদর্শক হয়ে কল্যাণী দেশের জন্য কাজ করে চলেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে যে চিরদিনের হতে পারতো সে রয়ে গেল চির অচেনা। এরপর যদিও পুনরায় অনুপম-কল্যাণীর বিয়ে হতে পারত বা ট্রেন ভ্রমণে ইতিবাচক কিছু ঘটতে পারত, কিন্তু কল্যাণী বিয়ে না করার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি। তবু আশা ছাড়েনি অনুপম। কল্যাণীর প্রতি অনুরাগ তার মনে-বাইরে নিত্য জেগে থাকে। অনুপমের মামার বাড়াবাড়ি রকমের লােভ ও পণপ্রথার কারণে অনুপম-কল্যাণীর হৃদয় ভেঙে যায়। তাই তাদের জীবন ফুলে-ফলে পরিপূর্ণ হতে পারে না। এক পর্যায়ে কল্যাণী ও শম্ভুনাথ বাবুর কাছে অনুপম বিগত ঘটনার জন্য হাত জোড় করে ক্ষমা চায়। অনুপমের অনুরােধ, মিনতি ও কান্নায় শম্ভুনাথ সেনের মন নরম হলেও কল্যাণী স্পষ্ট জানিয়ে দিল, সে প্রতিজ্ঞা করেছে যে, বিয়ে করবে না।

উদ্দীপকের গৌরী ও সঞ্জয় একসময় প্রণয়ের বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। তবে একপর্যায়ে সঞ্জয়ের কাকার বিরূপ আচরণে বিয়ে ভেঙে যায় তাদের। এতে পরবর্তীতে সঞ্জয় গৌরীর জন্য সারাজীবন অপেক্ষার কথা বললেও মন গলে না গৌরীর। কল্যাণীর মতাে গৌরীর জীবনদর্শনে পরিবর্তন এসেছে। সংস্কৃতির ক্ষুদ্র গণ্ডি ছাড়িয়ে তারা দেশ ও মানবতার সেবায় এগিয়ে গেছে। উদ্দীপকের গৌরী এবং গল্পের কল্যাণী উভয় চরিত্রের মাধ্যমে সমাজে নারী জাগরণের বিষয়টি উঠে এসেছে। নারীও যে স্বতন্ত্র সত্তার অধিকারী হতে পারে, পারে পুরুষের উপর নির্ভর না করে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে। সেই সাথে হতে পারে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং পুরুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এ বিষয়টি অত্যন্ত অনুপমভাবে ভাষা রূপ দিয়েছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কল্যাণীর বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের জাগরণের মধ্যে ভবিষ্যতে নবরূপে নারীর আগমনী বার্তা ধ্বনিত হয়। কল্যাণী যেমন অনুপমের শত অনুরােধেও বিয়েতে রাজি হয়নি, তেমনি গৌরী সঞ্জয়ের কথার উত্তরে বলেছে ‘এই তাে বেশ আছি। আত্মমর্যাদাবােধে উদ্বুদ্ধ নারীর যে রপ গল্পের পরিণতিতে লেখক তুলে ধরেছেন তারই দেখা পাই আমরা উদ্দীপকে গৌরীর মাঝে। গৌরীর উক্তিতে চারিত্রিক দৃঢ়তার প্রকাশ রয়েছে আর এর মধ্যেই অপরিচিতা' গল্পের পরিণতি প্রতিফলিত হয়েছে।

তাই বলা যায়, এই তাে বেশ আছি! “গৌরীর এই উক্তিতে ‘অপরিচিতা’ গল্পের পরিণতি প্রতিফলিত হয়েছে’– উক্তিটি যথার্থ। কারণ কল্যাণী ও গেীরী উভয়ই আত্মমর্যাদা সচেতন নারীর প্রতিরূপ। যারা নব-নারীর প্রতিরূপ। যার মধ্যে ‘অপরিচিতা’ গল্পের পরিণতি প্রতিফলিত হয়েছে।

No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.