ads

ইউনিক আইডি ফরম পূরণ করার নিয়ম:

ইউনিক আইডি বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা। তাই ইউনিক আইডি ফরম পূরণ করার নিয়ম জানা জরুরী। মূলত শিক্ষার্থীদের তথ্যের ডিজিটাল ডেটবেজ (Digital Database) তৈরির লক্ষ্যেই এমন পরিকল্পনা। ধারণা করা হচ্ছে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিক আইডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ আইডি কার্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে একটি আলাদা বা Unique রোল নম্বর দেওয়া হবে। যা বাংলাদেশের অন্য কোন শিক্ষার্থীর সাথে মিলবে না। এ ইউনিক নম্বরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই বিভিন্ন ক্লাসে তাদের ভর্তি ও পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করতে পারবে।

এখন যেমন সরকারি সকল কাজের জন্য দেশের নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি লাগে, ঠিক তেমনই শিক্ষার্থীদের যেকোন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে হলে ইউনিক আইডির ফটোকপি লাগবে। তাই এ কথা বলাই যায় যে ভবিষ্যতে এই কার্ডের যথেষ্ট গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে।

ইউনিক আইডি কী?
ইউনিক আইডি একটি ডিজিটাল পদ্ধতিতে তৈরি ID Card, যেখানে শিক্ষার্থীদের সকল তথ্য ডেটাবেজ আকারে সংরক্ষিত থাকবে। মূলত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মৌলিক ও শিক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এক জায়গায় রাখার জন্য ইউনিক আইডি তৈরি করা হচ্ছে। এ কার্ডে বিশেষ একটি রোল নম্বর দেয়া থাকবে যা শিক্ষার্থীকে তার সমস্ত শিক্ষাজীবন বহন করতে হবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা এখন যেমন প্রতি ক্লাসে নতুন নতুন রোল নম্বর পায়, ইউনিক আইডি পাওয়ার পরে এটি আর থাকবে না। তখন তাকে ১০, ১২ বা ১৭ ডিজিটের এমন একটি রোল নম্বর দেয়া হবে, যা সে প্রত্যেক ক্লাসে সমস্ত পরীক্ষায় ব্যবহার করবে।বাংলাদেশের নাগরিকদের জাতীয়তার প্রমাণস্বরূপ তাদের যেমন একটি জাতীয় পরিচয়পত্র বা NID দেওয়া হয়, ইউনিক আইডিও অনেকটা ঠিক তেমনই একটি পরিচয়পত্র। বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ পরিচয়পত্রটি শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে। এটিও দেখতে অনেকটা জাতীয় পরিচয়পত্র বা NID কার্ডের মতই। 

ইউনিক আইডি কেন গুরত্বপূর্ণ?
একজন শিক্ষার্থীর সমস্ত প্রকার সেবা এই আইডির মাধ্যমে দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে বই নেয়া থেকে শুরু করে ফল প্রকাশ, রেজিস্ট্রেশন, বৃত্তি, উপবৃত্তির অর্থ নেয়াসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা। আর যখন শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তখন নির্বাচন কমিশন সচিবালয় তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে এই ইউনিক আইডিই জাতীয় পরিচয়পত্রে রূপান্তর করবে।’ শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীরা কোন স্কুলে পড়ছে, সে শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ল কি না? চাকরি পেল কি না ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য এই আইডির মধ্যে সংরক্ষিত থাকবে। প্রতি বছরই প্রথম থেকে নবম শ্রেণির লাখো শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়। কিন্তু অনেক সময় মোট সক্রিয় শিক্ষার্থী কত এ বিষয়ে সঠিক তথ্য না থাকায় চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণ বই ছাপানো হয়। ফলে সরকারে আর্থিক ক্ষতি হয়। কিন্তু যখন ইউনিক আইডি তৈরি হবে, তখন কোনো ডুপ্লিকেট শিক্ষার্থী থাকবে না। কারণ তখন শিক্ষার্থীর সঠিক পরিসংখ্যান সরকারের হাতে থাকবে।’ 

ইউনিক আইডি পেতে যা লাগবে: 
সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড অবশ্যই সাদা হতে হবে। এছাড়াও ছবিতে শিক্ষার্থীর দুই কান ও দুই চোখ স্পষ্ট দেখা যেতে হবে। ছবির পিছনে শিক্ষার্থীর পূর্ণ নাম লিখতে হবে। 
শিক্ষার্থীর জন্মসনদের অনলাইন কপি (কিভাবে পাবে, নিচে বর্ণনা করা হয়েছে)।
শিক্ষার্থীর পূর্বের (৫ম বা ৮ম) শ্রেণীর পরীক্ষার অনলাইন মার্কশীট (যদি থাকে)।
  • শিক্ষার্থীর পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্রর ফটোকপি।
  • পিতা-মাতা মৃত হলে বর্তমান অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
  • শিক্ষার্থী প্রতিবন্ধী প্রতিবন্ধী কার্ডের ফটোকপি।
  • রক্তের গ্রুপ সংক্রান্ত সনদের ফটোকপি।
  • মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম হলে তার সনদের ফটোকপি।
ইউনিক আইডি ফরম পূরণ করার নিয়ম: 
ইউনিক আইডির ফরম পূরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। তাই শিক্ষার্থীরা আইডি সংগ্রহের জন্য অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করে ফরমটি পূরণ কবে। ইউনিক আইডি করবো কিভাবে তা নিচে ধারাবাহিকতার সাথে উল্লেখ করা হল। 

১. মৌলিক তথ্য প্রদান: 
তোমার জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি অনুরণ করে মৌলিক তথ্য যেমন- নাম, জন্ম নিবন্ধন নম্বর, জন্মস্থান ধর্ম ও অন্যান্য তথ্যসমূহ লিখতে হবে। যদি অনলাইন জন্ম নিবন্ধন না থাকে তাহলে অবশ্যই নির্দিষ্ট কার্যালয় থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধন করে নিতে হবে। জন্ম নিবন্ধনে তোমার দেয়া তথ্য অবশ্যই সরকারি অনলাইন জন্ম নিবন্ধন পোর্টালে থাকতে হবে। 

২. পিতা-মাতার তথ্য প্রদান:  
ইউনিক আইডির ফরমে তোমার পিতা-মাতার পরিচয়ও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মা-বাবার নাম বাংলায় এবং ইংরেজিতে, NID নম্বর, জন্ম নিবন্ধনের নম্বর, মোবাইল নম্বর ও পেশা সঠিকভাবে লিখতে হবে। তবে এ তথ্যগুলো তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রে দেওয়া তথ্যের আলোকে লিখতে হবে। 

৩. বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা:  
যথাযথ সতর্কতা অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকনা ফরমে লিখতে হবে। এক্ষেত্রে বিভাগ, জেলা, উপজেলা/থানা, সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা ইত্যাদি সব তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। স্থায়ী ঠিকানার ক্ষেত্রে পিতা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রে দেয়া ঠিকানার আলোকে লিখতে হবে। তবে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা একই হলে “স্থায়ী ঠিকানা” অংশটি পূরণ করতে হবে না।

৪. শিক্ষার্থীর অধ্যয়ন সম্পর্কিত তথ্য: 
এই অংশে শিক্ষার্থীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, বিভাগ, জেলা ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে। বর্তমানে কোন শ্রেণিতে অধ্যয়নরত, উক্ত শ্রেণির রোল ও শাখা লিখতে হবে। শিক্ষার্থী বাংলা ভার্সন নাকি ইংরেজি ভার্সনে অধ্যয়নরত তা উল্লেখ করতে হবে। এছাড়াও শিক্ষার্থী যদি মেধাবৃত্তি বা উপবৃত্তিপ্রাপ্ত হয়ে থাকে, তা লিখতে হবে। 
যেহেতু এখন শুধুমাত্র মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি প্রদান করা হবে, সুতরাং তোমার ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সকল পরীক্ষার তথ্য দিতে হবে। এ অংশে কোন শ্রেণিতে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়েছো, সেখানে রোল কত ছিল, পাশের বছর এবং জিপিএ উল্লেখ করতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি ডাউনলোড: 
ইউনিক আইডি পেতে আবেদনের জন্য তোমাকে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থীই সমস্যার সমস্যার সম্মুখীন হয়। কারণ যাদের জন্ম নিবন্ধন হাতে লেখা, তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। তাহলে তুমি তোমার জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি কোথায় পাবে?  দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। তোমার জন্ম নিবন্ধনে লেখা নম্বরটি দিয়ে তুমি খুব সহজেই অনলাইন কপি বের করতে পারবে। এটির জন্য প্রথমে সরকারের Birth and Death Verification ওয়েবসাইটে যাও। এর নিচে দেয়া ছবির মত দেখতে পাবে। Birth Registration Number এর ঘরে তোমার জন্ম নিবন্ধনে দেয়া ১৭ ডিজিটের নম্বরটি নির্ভুলভাবে  লেখো। 




জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি: 
এরপরে Date of Birth অংশে গিয়ে প্রথমে জন্মের বছর, মাস এবং দিন ধারাবাহিকতা (YYYY-MM-dd) অনুসরণ করে জন্ম তারিখ লিখ। এটি লেখা হলে নিচে একটি ক্যাপচা কোড দেখতে পাবে। এই কোডটি যোগ করে তার যোগফল লিখে Search বাটনে ক্লিক করলে তোমার জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি দেখতে পাবে। 

কীভাবে ভুল সংশোধন করা হবে? 
ইউনিক আইডির তথ্য ভুল হলে তা সংশোধনের সুযোগ থাকলেও এটি জটিল একটি প্রক্রিয়া। শিক্ষার্থী এবং বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে ইউনিক আইডির বেশির ভাগ তথ্য নেয়া হবে। সেখানে যদি কোনো ভুল থাকে তাহলে কর্তৃপক্ষের কিছুই করার থাকবে না। তাই সংশোধন করতে হলে আগে জন্মনিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র ঠিক করতে হবে।’ 

No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.