ads

বাংলা দ্বিতীয় পত্র ।। ভাবসম্প্রসারণ ।। বাংলার ইতিহাস এ দেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম শ্রেণি



বাংলার ইতিহাস এ দেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।

ভাবসম্প্রসারণ :
স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা প্রতিটি জাতির মধ্যেই প্রবল। স্বাধীনতার প্রবল আকাঙ্ক্ষার কারণে পরাধীন জাতিগুলো যে রক্তস্রোত বইয়ে দিয়েছে তাতেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভেসে গেছে শাসক ও শোসকদের অশুভ শক্তিবলয়। বিশ্বের মধ্যে রক্তদানের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবের ইতিহাস অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ইতিহাস। বাঙালি জাতি কারও অধীনতা কোনোদিন মেনে নেয়নি। অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির অবস্থান চিরকালই ছিল বজ্র কঠিন। তাই এখানে বারবার বিদ্রোহের আগুন জ্বলেছে। তবুও বাঙালি হার মানেনি। কারণ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের 'সাবাশ বাংলাদেশ' কবিতার ভাষায়- 'সাবাশ বাংলাদেশ! এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়/জ্বলেপুড়ে মরে ছারখার/তবু মাথা নোয়াবার নয়।' ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের জাঁতাকলে প্রায় ২০০ বছর ধরে নিষ্পেষিত হয়েছে এ জাতি। ১৯৪৭-এ সেই জাঁতাকল থেকে এ উপমহাদেশের মানুষ মুক্তি পেলেও বাঙালির মুক্তি মেলেনি। এ বন্ধন বাঙালি মেনেও নেয়নি। ১৯৫২ সালের রক্তঝরা ভাষা-আন্দোলনের মধ্যদিয়ে বাঙালি ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় মুক্তি-সংগ্রামের দিকে। ১৯৫৮ ও ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানি সামরিক শাসক বাংলার দামাল ছেলেদের ওপর গুলি চালায়। গুলি করে ১৯৬৯-এর গণঅভু্যত্থানেও। বারবার বাঙালির বুকের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। তবুও তাদের স্বাধীনতার দাবিকে ঠেকাতে ব্যর্থ হয় পাকিস্তানি জান্তা-বাহিনী। তাই তারা ১৯৭১-এ বাঙালির ওপর চূড়ান্ত আঘাত হানে। তখন বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তি-সংগ্রামে। লক্ষ লক্ষ মানুষের বুকের রক্তে বাংলার মাটি লাল হয়। অবশেষে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ যা ২০২১ সালে আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপিত হয়।

বাংলাদেশ আজ স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি দেশ। আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন এই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ও জাতিসত্তার প্রতিষ্ঠার পেছনে আছে রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। এ ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে এবং দেশের উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।

ভাবসম্প্রসারণ : 
লোভ মানুষের পরম শত্রম্ন। লোভ মানুষকে অন্ধ করে; তার বিবেক বিসর্জন দিয়ে তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।

লোভের বশবর্তী হয়েই মানুষ জীবনের সর্বনাশ ডেকে আনে। মানুষ নিজের ভোগের জন্য যখন কোনো কিছু পাওয়ার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করে তাকে লোভ বলে। তখন যা নিজের নয়, যা পাওয়ার অধিকার তার নেই, তা পাওয়ার জন্য মানুষ লোভী হয়ে ওঠে। সে তার ইচ্ছাকে সার্থক করে তুলতে চায়। লোভের মোহে সে সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ সব বিসর্জন দেয়। তার ন্যায়-অন্যায় বোধ লোপ পায়। সে পাপের পথে ধাবিত হয়। লোভ টলস্টয়ের 'সাড়ে তিন হাত জমি' গল্পের পাখোম শয়তানের কুপ্ররোচনায় ১০০ বিঘা জমি পাওয়ার আশায় দৌড়াতে দৌড়াতে একপর্যায়ে মৃতু্যবরণ করে। আবার কেউ কেউ নিজের স্বার্থের জন্য অন্যের সর্বনাশ করে থাকে। গত কয়েক বছর আগে সামাজিক গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের্ যাবের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা টাকার লোভে পড়ে সাতজন মানুষকে হত্যা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে দিয়েছিল। ফলে এটা জানাজানির পর বিভাগীয় তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় অপরাধীদের শাস্তি দেওয় হয়।

লোভ মানুষকে পশুতে পরিণত করে। ডেকে আনে মৃতু্যর মতো ভয়াবহ পরিণাম। তাই জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তোলার জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধের মাধ্যমে লোভ বর্জন করা উচিত।

জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান।

ভাবসম্প্রসারণ : সৃষ্টির অন্যান্য প্রাণীর থেকে মানুষকে আলাদা করেছে তার বিবেক বা জ্ঞান, যা অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে নেই। কিন্তু যার মধ্যে জ্ঞান তথা মনুষ্যত্ববোধ নেই, তাহলে সে হবে পশুর সমতুল্য।

মানুষ হচ্ছে 'আশরাফুল মাখলুকাত' অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই জ্ঞান বা বিবেক সুপ্ত অবস্থায় থাকে। অনুশীলনের মাধ্যমে তাকে জাগিয়ে তুলতে হয়। জ্ঞান মানুষকে যোগ্যতা দান করে। নানা বিদ্যায় পারদর্শী করে তোলে। জ্ঞানের আলোকেই মানুষের জীবন বিকশিত হয়ে ওঠে। তাই মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব লাভের জন্য জ্ঞানের সহায়তা অপরিহার্য। অন্য প্রাণীর সঙ্গে মানুষের পার্থক্য এখানেই। জ্ঞানবান মানুষ কখনো খারাপ কাজ করতে পারে না। তার বিবেক তাকে খারাপ আচরণ করতে বাধা দেয়। অবন্যদিকে জ্ঞানহীন মানুষ পশুর মতো নির্বোধ। পশুর যেমন জ্ঞান নেই। সে ন্যায়-অন্যায় বোঝে না। আপন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে না। অজ্ঞান ব্যক্তিরও তেমনি কোনো বিবেক নেই। জ্ঞানের অভাবে তারা আধুনিক জীবনের সম্পূর্ণ স্বাদ উপভোগ করতে পারে না। তাদের জীবনের সঙ্গে পশুর জীবনের কোনো পার্থক্য নেই। তাই একজন দার্শনিক বলেছেন, Every man has five sense. Common-sense is none of them. But without it a man rurns into a nonsense.  অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষের পাঁচটা ইন্দ্রিয় রয়েছে। বিবেক সেগুলো থেকে আলাদা। কিন্তু এটা ছাড়া একজন মানুষ বিবেকহীন হয়ে যায়। তখন সে যে কোনো খারাপ কাজ করতে দ্বিধা করে না।

জ্ঞানই মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্যের সীমারেখা টেনে দেয়। জ্ঞানের দ্বারাই মানুষ জীবনের আলোর পথে আসার সুযোগ পায়। তাই মানুষকে সব সময় জ্ঞানসাধনায় নিয়োজিত থাকা দরকার।



7 comments:

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.