বাংলা দ্বিতীয় পত্র ।। ভাবসম্প্রসারণ ।। এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।। সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম শ্রেণি ।।
এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি,
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
পৃথিবীতে বিত্তশালী মানুষের সম্পদের প্রতি তৃষ্ণা দুর্নিবার ও অসীম। তাদের চির অতৃপ্ত এ তৃষ্ণাকে চরিতার্থ করার প্রয়াসে তারা সমাজের খেটে খাওয়া দিনমজুর অনাহারী নিরন্ন মানুষের ন্যূনতম সম্পদটুকু ছিনিয়ে নিতে চায় ৷
বিশাল এ পৃথিবীতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের বসবাস। সকলের অবস্থা ঠিক সমান নয়। কেউ ধনী, কেউ দরিদ্র, কেউ রাজা, আবার কেউ-বা কাঙাল। এ বৈষম্যমূলক অবস্থার জন্য কারো ঘরে একদিকে যেমন ঐশ্বর্যের প্রাচুর্য, আতশবাজির খেলা তেমনি আবার কারো ঘরে অন্ধকারেও দ্বীপ জ্বলে না। তবে মানুষ আশা করে থাকে, যাঁদের প্রচুর সম্পদ আছে, তাঁরা দরিদ্রদের জন্যে কিছু ত্যাগ স্বীকার করবেন। কিন্তু বাস্তবে এর সম্পূর্ণ বিপরীত বিষয় চোখে পড়ে। পৃথিবীতে যারা প্রচুর সম্পদের মালিক, তাদের সম্পদ তৃষ্ণা কোনো দিন পরিতৃপ্ত হয় না। তারা যত পায়, তত চায়। এভাবে তারা নিজেদের আরো বেশি সম্পদশালী করে তোলে। তাদের নির্বিচারে সম্পদ সংগ্রহের ফলে গরিবের সম্পদে হাত পড়ে। পৃথিবীর দুঃখী মানুষেরা তাদের সামান্য পুঁজি নিয়ে জীবনযাপন করে। ধনিকের ঐশ্বর্যের প্রতি তাদের লোভ নেই, রাজার বিলাস-বৈভবের প্রতি তারা উদাসীন। কিন্তু ধনির অপরিসীম ধনতৃষ্ণা ক্রমাগত স্ফীত হতে হতে একদিন গরিবের কুটিরকে স্পর্শ করে। নানা ছলে নানা কৌশলে কিংবা বলপ্রয়োগ করে দরিদ্রের সর্বশেষ সম্বলটুকু ছিনিয়ে এনে ধনিরা নিজেদের সম্পদতৃষ্ণা মেটায়। আর এভাবে পৃথিবীর দরিদ্ররা তাদের সবকিছু হারিয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে হয়ে যায় পথের ভিক্ষুক, অন্নের কাঙাল। কেউ তাদের হিসাব রাখে না, কেউ তাদের খবর রাখে না। অথচ এরা বিত্তবানের নির্মম লোভের শিকার।
শোষণভিত্তিক পুঁজিবাদী এ সমাজব্যবস্থায় পুঁজিপতি বিত্তশালী মানুষ পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে গ্রাস করছে অনাহারী নিপীড়িত দরিদ্র মানুষের ন্যূনতম সম্পদ। বিত্তবানদের এ অতৃপ্ত সর্বগ্রাসী সম্পদলিপ্সাকে সামাজিকভাবে প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা ও সাম্য প্রতিষ্ঠা ।
No comments
Thank you, best of luck