ads

দ্বাদশ শ্রেণি : বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি থেকে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন-১: ক্রিয়া বলতে কী বোঝো? উদাহরণসহ ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো। 

উত্তর: যে শব্দশ্রেণি দ্বারা কোনো কিছু করা, ঘটা, হওয়া ইত্যাদি বোঝায় তাকে ক্রিয়া বলে।
যেমন—সে হাসছে। বাগানে ফুল ফুটেছে।
এবার বৃষ্টি হবে।
নানা মানদণ্ডে ক্রিয়াকে বিভক্ত করা যায়। যথা—
ক. সমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া দ্বারা বাক্যের ভাবের পরিসমাপ্তি ঘটে। 
যেমন—ছেলেরা বল খেলছে।
খ. অসমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া দ্বারা বাক্যের ভাবের পরিসমাপ্তি ঘটে না। 
যেমন—আমি বাড়ি গিয়ে ভাত খাব।




কর্মপদ সংক্রান্ত ভূমিকা অনুসারে:
ক. অকর্মক ক্রিয়া : বাক্যের অন্তর্গত যে ক্রিয়া কোনো কর্ম গ্রহণ করে না, তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে।
যেমন—সুমন খেলছে।
খ. সকর্মক ক্রিয়া : বাক্যের অন্তর্গত যে ক্রিয়া মাত্র একটি কর্ম গ্রহণ করে, তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন—অনি বাগান থেকে ফুল তুলছে।
গ. দ্বিকর্মক ক্রিয়া : বাক্যের অন্তর্গত যে ক্রিয়া দুটি কর্ম গ্রহণ করে, তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে।
যেমন—মুন্নি মাসুমকে একটি কলম দিয়েছে।
ঘ. প্রযোজক ক্রিয়া : কর্তার যে ক্রিয়া অন্যকে দিয়ে করানো হয়, তাকে প্রযোজক বা নিজন্ত ক্রিয়া বলে।
যেমন—মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।
গঠন বৈশিষ্ট্য অনুসারে :
ক. যৌগিক ক্রিয়া: একটি সমাপিকা ও একটি অসমাপিকা ক্রিয়া যদি একত্রে একটি বিশেষ বা সম্প্রসারিত অর্থ প্রকাশ করে, তবে তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন—ধরে ফেলছে, উঠে পড়ছে, নেমে পড়েছে, খেয়ে ফেলেছে ইত্যাদি।
খ. সংযোগমূলক ক্রিয়া : বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধনাত্মক শব্দের সাথে সমাপিকা ক্রিয়া যোগ করে যে ক্রিয়া গঠিত হয়, তাকে সংযোগমূলক ক্রিয়া বলে। যেমন—নাচ করা, গান গাওয়া, মশা মারা, ছেলে ধরা ইত্যাদি।
স্বীকৃতি অনুসারে :
ক. অস্তিবাচক ক্রিয়া : যে ক্রিয়া দ্বারা অস্তিবাচক বা হ্যাঁ-বোধক অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে অস্তিবাচক ক্রিয়া বলে।
যেমন—সীমা এসেছে।
খ. নেতিবাচক ক্রিয়া : যে ক্রিয়া দ্বারা নেতিবাচক বা না-বোধক অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে নেতিবাচক ক্রিয়া বলে।
যেমন—রিমা আসেনি।

প্রশ্ন-২ : ক্রিয়া বিশেষণ কাকে বলে? উদাহরণসহ ক্রিয়া বিশেষণের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো।
উত্তর: যে শব্দ বাক্যের ক্রিয়াকে বিশেষিত করে তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন—মৌসুমি দ্রুত হাঁটছে। অনিম জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
গঠনের দিক থেকে ক্রিয়া বিশেষণকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—
১. একপদী ক্রিয়া বিশেষণ: একটি মাত্র পদ দিয়ে যে ক্রিয়া বিশেষণ গঠিত হয়, তাকে একপদী ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন—আস্তে, জোরে, ধীরে, সহজে, সাগ্রহে, সানন্দে ইত্যাদি।
২. বহুপদী ক্রিয়া বিশেষণ: একের অধিক পদ দিয়ে যে ক্রিয়া বিশেষণ গঠিত হয়, তাকে বহুপদী ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন—আস্তে আস্তে, জোরে জোরে, ধীরে ধীরে, ভয়ে ভয়ে, থেমে থেমে ইত্যাদি।
অর্থ ও অন্বয়গতভাবে ক্রিয়া বিশেষণকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—
১. ধরনবাচক ক্রিয়া বিশেষণ: যেভাবে বা যেমনভাবে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তাকে ধরনবাচক ক্রিয়া বিশেষণ বলে।
যেমন—ফাহিম নির্ভয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ডবেগে ঝড়টি রেলক্রসিং অতিক্রম করেছে।
২. কালবাচক ক্রিয়া বিশেষণ : যে সময়টিতে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তাকে কালবাচক ক্রিয়া বিশেষণ বলে।
যেমন—তিনি সকালেই বেরিয়ে গেছেন। সুমি আগামীকাল খুলনা যাবে।
৩. স্থানবাচক ক্রিয়া বিশেষণ : ক্রিয়া সংঘটনের স্থানকে স্থানবাচক ক্রিয়া বিশেষণ বলে।
যেমন—জেলেরা অনেক আগেই নদীতে নেমেছে। তিনি খুব কষ্ট করে গাছে চড়েছেন।
৪. সংযোজক ক্রিয়া বিশেষণ: যে ক্রিয়া বিশেষণ একাধিক বাক্যাংশকে সংযুক্ত করে, তাকে সংযোজক ক্রিয়া বিশেষণ বলে।
যেমন—এখন আমার কোনো কাজ নেই, অবশ্য থাকার কথাও নয়।
৫. না-বাচক ক্রিয়া বিশেষণ : যে ক্রিয়া বিশেষণ বাক্যকে না-বাচক বৈশিষ্ট্য দেয়। যেমন—আমি আর রাগ করব না। তার সাথে আমার কোনো কথা হয়নি।

প্রশ্ন-৩ : আবেগ শব্দ বলতে কী বোঝো? উদাহরণসহ এর শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো। অথবা, আবেগ শব্দ কাকে বলে? উদাহরণসহ বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর : যে শব্দ বাক্যের অন্য শব্দের সাথে সম্পর্ক না রেখে স্বাধীনভাবে ভাব প্রকাশে সহায়তা করে, তাকে আবেগ শব্দ বলে।
যেমন—
আরে, তুমি আবার কখন এলে! 
উঃ, ছেলেটির কী কষ্ট!
অর্থ প্রকাশ অনুসারে আবেগ শব্দকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। নিচে এর শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করা হলো-
১. সিদ্ধান্তসূচক আবেগ শব্দ: যে আবেগ শব্দ দ্বারা অনুমোদন, সম্মতি, সমর্থন ইত্যাদি ভাব প্রকাশ পায়, তাকে সিদ্ধান্তসূচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন—উঁহু, আমার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়!
২. প্রশংসাবাচক আবেগ শব্দ: যে আবেগ শব্দ প্রশংসা ও তারিফের মনোভাব প্রকাশ করে, তাকে প্রশংসাবাচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন—শাবাশ! সামনে এগিয়ে যাও।
৩. বিরক্তিসূচক আবেগ শব্দ : অবজ্ঞা, ঘৃণা, বিরক্তি ইত্যাদি মনোভাব যে আবেগ শব্দ দ্বারা প্রকাশ পায়, তাকে বিরক্তিসূচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন—কী জ্বালা, তোমার যন্ত্রণায় আর বাঁচি না!
৪. ভয় ও যন্ত্রণাবাচক আবেগ শব্দ : যে আবেগ শব্দ দ্বারা আতঙ্ক, যন্ত্রণা, কাতরতা প্রকাশ পায়, তাকে ভয় ও যন্ত্রণাবাচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন—উঃ, কী যন্ত্রণা, আর সইতে পারছি না!
৫. বিস্ময়সূচক আবেগ শব্দ : যে আবেগ শব্দ বিস্ময় ও আশ্চর্য হওয়ার মনোভাব প্রকাশ করে। যেমন—আরে, তুমি আবার কখন এলে!
৬. করুণাসূচক আবেগ শব্দ : করুণা বা সহানুভূতিমূলক মনোভাব প্রকাশ পায় যে আবেগ শব্দে, তাকে করুণাসূচক আবেগ শব্দ। যেমন—আহা! ছেলেটার বাবা-মা কেউ নেই।
৭. সম্বোধনসূচক আবেগ শব্দ : সম্বোধন বা আহ্বান করার ক্ষেত্রে যে আবেগ শব্দ ব্যবহৃত হয়। যেমন—ওহে! কোথায় যাচ্ছ?
৮. আলংকারিক আবেগ শব্দ : যে আবেগ শব্দ বাক্যের অর্থের কোনো রকম পরিবর্তন না ঘটিয়ে কোমলতা, মাধুর্য ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য এবং সংশয়, অনুরোধ, মিনতিসূচক মনোভাব প্রকাশের জন্য অলংকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন—দূর পাগল! এমন কথা কি কেউ বলে?

প্রশ্ন-৪: যোজক কাকে বলে? যোজক কত প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলোচনা করো। 

উত্তর: যে শব্দ একটি বাক্যাংশের সাথে অন্য একটি বাক্যাংশ অথবা বাক্যস্থিত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য একটি শব্দের সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন ঘটায়, তাকে যোজন বলে। যেমন—বাসার কবিতা পড়বে আর বুলবুল গাইবে গান। মগটা ভালো করে ধর নইলে পানি পড়ে যাবে। অর্থ এবং সংযোজনের ধরন ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যোজন পাঁচ প্রকার। যথা— ১. সাধারণ যোজক : যে যোজক দ্বারা একাধিক শব্দ, বাক্য বা বাক্যাংশকে সংযুক্ত করা যায়, তাকে সাধারণ যোজক বলে। যেমন—সে ঢাকা যাবে এবং চিড়িয়াখানা দেখবে।
২. বৈকল্পিক যোজক : যে যোজক দ্বারা একাধিক শব্দ, বাক্য বা বাক্যাংশের মধ্যে বিকল্প নির্দেশ করা হয়, তাকে বৈকল্পিক যোজক বলে। যেমন—শরীর ভালো হলে তুমি কাজ করবে নতুবা বসে থাকবে।
৩. বিরোধমূলক যোজক : যে যোজক দ্বারা দুটি বাক্যের সংযোগ ঘটিয়ে দ্বিতীয়টি দ্বারা প্রথমটির সংশোধন বা বিরোধ নির্দেশ করা হয়, তাকে বিরোধমূলক যোজক বলে। যেমন—তোমাকে টাকা দিতে চাইলাম কিন্তু নিলে না।
৪. কারণবাচক যোজক : যে যোজক দ্বারা একটি বাক্যের কারণ হিসেবে অপর একটি বাক্যের সংযোগ ঘটানো হয়, তাকে কারণবাচক যোজক বলে। যেমন—তুমি বাইরে যাবে না কারণ সেখানে এখন কারফিউ চলছে।
৫. সাপেক্ষ যোজক : পরস্পর নির্ভরশীল যে যোজকগুলো একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হয়, তাকে সাপেক্ষ যোজক বলে। যেমন—যদি পরিশ্রম করো, তবে ফল পাবে।

প্রশ্ন-৫: অনুসর্গ বলতে কী বোঝো? উদাহরণসহ অনুসর্গের প্রকারভেদ আলোচনা করো।

উত্তর : যে শব্দ কখনো স্বাধীনরূপে, আবার কখনো শব্দবিভক্তির ন্যায় বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে তার অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে, তাকে অনুসর্গ বলে। যেমন—তোমাকে দিয়ে আর এ কাজ হবে না। ব্যুত্পত্তিগতভাবে অনুসর্গ দুই প্রকার—বিশেষ্য অনুসর্গ ও ক্রিয়া অনুসর্গ।
বিশেষ্য অনুসর্গ : ক্রিয়া ছাড়া অন্যান্য শব্দ থেকে যে অনুসর্গগুলো এসেছে। যেমন—এখন ওদের মাথার উপরে কোনো ছাদ নেই।

বিশেষ্য অনুসর্গ তিন ধরনের—
ক. সংস্কৃত অনুসর্গ : যে বিশেষ্য অনুসর্গ সংস্কৃতি থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে, তাদের সংস্কৃত অনুসর্গ বলে। যেমন—অপেক্ষা, উপরে।
খ. বিবর্তিত অনুসর্গ : যে বিশেষ্য অনুসর্গ সংস্কৃতি থেকে কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে। যেমন—আগে, বই ইত্যাদি।
গ. ফারসি অনুসর্গ : যে বিশেষ্য অনুসর্গ ফারসি থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে। যেমন—দরুন, বদলে।
ক্রিয়া অনুসর্গ : ক্রিয়া থেকে যেসব অনুসর্গ উত্পন্ন হয়, তাদের ক্রিয়া অনুসর্গ বলে। যেমন: তোমরা সবাই মন দিয়ে লেখাপড়া করো।





No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.