নতুন শিক্ষাক্রম ও নিয়ন্ত্রণহীন কিন্ডারগার্টেন
নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে শিক্ষাক্রম। কমানো হচ্ছে বই ও পরীক্ষার বোঝা। গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে শিখনকালীন মূল্যায়নের। নতুন এই শিক্ষাক্রমকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকেই। তবে ফের একই প্রশ্ন নতুন সিদ্ধান্ত মানবে তো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো? বর্তমানে দেশব্যাপী রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজস্ব সিলেবাসে পড়াশোনা হয়। পাঠ্যসূচিও থাকে প্রতিষ্ঠানের পছন্দ অনুযায়ী। ২০২৩ সাল থেকে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রমের কার্যক্রম। আর ধাপে ধাপে শুরু হবে পরের বছর থেকে। কিন্ডারগার্টেনে সরকার প্রণীতি শিক্ষাক্রম অনুসরণ করা হবে কিনা- এ নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানকে আগেও নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি স্কুলের প্রতিষ্ঠান প্রধান বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম ভালো সিদ্ধান্ত। তবে শিক্ষার্থীদের অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা করার জন্য কিছু বিষয় যুক্ত করা প্রয়োজন। আমরা এখনো পূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারিনি। তিনি বলেন, আমরা অপেক্ষা করবো অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কি সিদ্ধান্ত নেয়। বরাবরই আইনের তোয়াক্কা করে না কিন্ডারগার্টেনগুলো। রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় ১০ থেকে ১২টি বিষয়। এমনকি প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা শিখছে কম্পিউটার, সায়েন্স, জেনারেল নলেজের মতো বিষয়।
এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেকটা বাধ্য হয়েই সন্তানদের পড়ান অভিভাবকরা। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বল্পতার কারণেও কিন্ডারগার্টেনে পাঠান অনেক অভিভাবক। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাড়তি বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে আদায় করছে বাড়তি অর্থ। অধিকাংশেরই নেই অনুমোদন। এসব প্রতিষ্ঠান পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করে থাকে ভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে। রাজধানীর আদাবরের রেইনবো স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্লে ক্লাসের শিক্ষার্থীকে পড়তে হয় আটটি বই। সে বইগুলো আবার দেয়া হয় স্কুল থেকে। বইয়ের অর্থের পাশাপাশি ভর্তির সময় রাখা হয় দুই জোড়া পোশাক ও ২০ সেট খাতার দাম। এই প্রতিষ্ঠানের একজন অভিভাবক বলেন, বাচ্চাকে পড়াতে বাধ্য। এখানে ভর্তির সময় দিতে হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। আর প্রতি মাসে বেতন ১২শ’ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির নেই কোনো অনুমোদন। প্রধান শিক্ষক মো. শিহাবুল হক বলেন, বইয়ের সংখ্যা আট হলেও আমরা বাচ্চাদের কোনো প্রেসার দেই না। সহজভাবে আনন্দমুখর পরিবেশে তাদের শিক্ষা দেয়া হয়। আর আমরা একাই শুধু এই বই পড়াই না সকলেই পড়ায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন এই বিষয়ে বলেন, আমার শিগগিরই অনুমোদনের জন্য আবেদন করবো। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে জানানো হয়, এসব কিন্ডারগার্টেন তাদের আওতাধীন নয়।
আর ফিও নির্ধারণ করে না ডিপিই। সরকার ২০১১ সালে এসব প্রতিষ্ঠান নীতিমালার আওতায় আনার উদ্যোগ হাতে নেয়। তবে ৩০২টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আওতায় আসার পরই ভেস্তে যায় সে পরিকল্পনা। বড় পরিসরে পরিবর্তন আসছে শিক্ষাব্যবস্থায়। কিন্তু এসব অনুমোদনহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কারণে বহু শিক্ষার্থী থাকবেন এই সুবিধার বাইরে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রমের সুবিধা পেতে নীতিমালার আওতায় আনাও জরুরি এসব প্রতিষ্ঠানকে। নতুন শিক্ষা বছরে কীভাবে চলবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। এই বিষয়ে কিন্ডারগার্টেনগুলোর এক শিক্ষক নেতা বলেন, আমাদের শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আকর্ষণ করে শিক্ষার্থী আনতে হয়। আবার প্রতিষ্ঠান পরিচালনাসহ শিক্ষকদেরও বেতন দিতে হয় মাসিক বেতন থেকে। আমরা সরকার অনুমোদিত বিষয় যদি শুধু পড়াই অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থী পাবো না। কারণ অভিভাবকদের মধ্যে সন্তান পিছিয়ে পড়ার একটা ভয় সব সময়ই থাকে। এখন এসব কারণে হয়তো আমরা নতুন শিক্ষাক্রম আসার পরও আমরা কিছু বিষয় চালু রাখার চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, প্রথমত সরকার আমাদের দেখানো নীতিতে এক জায়গায় মিলিত হয়েছে। আমরা প্রথম শ্রেণির আগে দুই বছর পড়াতাম, নতুন কারিকুলামেও দুই বছর রাখা হয়েছে। আর আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তের সন্তানরা পড়েন। আমরা যদি একটু আপডেট বিষয় না পড়াই তবে কেন আমাদের প্রতিষ্ঠানে পড়বে? তবে আমরাও বাড়তি বইয়ের চাপে বিশ্বাসী নই। তিনি আরও বলেন, আমরা তো চাই সরকারের সঙ্গে একীভূত হতে। ২০১১ সালে উদ্যোগ নেয়ার পর হাজার হাজার ফাইল আটকা আছে, আমাদের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। আমাদের যদি অনুমোদনের আওতায় আনা হয় তাহলে আমরাও সরকারের বেঁধে দেয়া নিয়মে চলবো। আমরাও তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করতে চাই। আমাদের অনুমোদনের ব্যবস্থা করলে আমরাও নিয়ম যথাযথভাবে পালন করবো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, ডিপিই মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মুহিবুর রহমান বলেন, আমরা এই বিষয়টি শিগগিরই আলোচনা করবো। সেই সঙ্গে একটা সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করবো।
ডেস্ক নিউজ।।
No comments
Thank you, best of luck