ads

এইচএসসি, বাংলা, ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ সৃজনশীল, জ্ঞানমূলক ও অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর



বায়ান্নর দিনগুলো ; শেখ মুজিবুর রহমান
লেখক পরিচিতি
নাম শেখ মুজিবুর রহমান। ডাক নাম : খোকা।
উপাধি বঙ্গবন্ধু, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, জাতির জনক।
পিতৃ ও মাতৃ পরিচয় পিতা : শেখ লুৎফর রহমান
মাতা : সায়েরা খাতুন।
জন্ম পরিচয় জন্মতারিখ : ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ
জন্মস্থান : বৃহত্তর ফরিদপুর, বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায়।
শিক্ষাজীবন: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে অধ্যয়ন করেন। 
রাজনৈতিক জীবন: ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৩ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, নির্বাচন পরবর্তী অসহযোগ আন্দোলন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। 
সাহিত্য সাধনা:  অসমাপ্ত আত্মজীবনী।
পুরস্কার : ১৯৭৩ সালে ‘জুলিও কুরি’ পদকে ভূষিত হন। 
ইন্তেকাল:  ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে সপরিবারে শহিদ হন।

গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর 
১. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। 
বর্ণবাদ, বৈষম্য আর নিপীড়নের কারণে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এক সময় ফুঁসে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকার কালো মানুষগুলো। এদের পুরোধা ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। আন্দোলন নস্যাৎ করতে শুরু হয় নির্যাতন। তাঁকে পুরে দেয়া হয় জেলে। সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় তাঁকে। পাথর ভাঙার মতো সীমাহীন পরিশ্রমের কাজ করতে গিয়ে একসময় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু এ সময় এ পাষাণ হৃদয়ের মানুষগুলোর পাশাপাশি কিছু ভালো মনের মানুষও ছিলেন সেখানে যাদের ভালোবাসা, মমত্ববোধ আর সেবায় সিক্ত হয়েছেন তিনি। অবশেষে দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগের পর তাঁর মুক্তি মেলে। 
ক. “বায়ান্নর দিনগুলো” রচনায় বর্ণিত মহিউদ্দিন সাহেব কোন রোগে ভুগছিলেন?
খ. ‘মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে’ লেখক এ কথা বলেছিলেন কেন?
গ. উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে “বায়ান্নর দিনগুলো” রচনায় লেখকের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি তুলে ধর।
ঘ. প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও চেতনাগত ঐক্যই নেলসন ম্যান্ডেলা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একসূত্রে গেঁথেছে- উদ্দীপক ও “বায়ান্নর দিনগুলো” রচনার আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। 
১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. প্লুরিসিস রোগে ভুগছিলেন।

খ. বিশ্বের ইতিহাসে কোনো শাসকই ভাষার জন্য আন্দোলনকারীদের হত্যা করেনি। অথচ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এ কাজ করে অপরিণামদর্শিতার প্রমাণ দিয়েছে। এজন্যই লেখক বলেছিলেন, “মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে।”
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন বার বার ঘোষণা করছিল উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তখন বাঙালিরা প্রতিবাদ করে। ২১শে ফেব্র“য়ারি আন্দোলনের প্রস্তুতি নিলে শাসকগোষ্ঠী ১৪৪ ধারা জারি করে। বাঙালিরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করলে পুলিশ মিছিলে গুলি করে কয়েকজনকে হত্যা করে। ফলে এ আন্দোলন আরো চরম আকার ধারণ করে। সাধারণ জনগণ আন্দোলনে সমর্থন ও যোগদান করে। রাজবন্দিদের মুক্তি চেয়ে স্লোগান দেয়া হয়। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, শ্লোগান দেয়া হয়। অবশেষে শাসকগোষ্ঠী রাজবন্দিদের মুক্তি ও বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। অর্থাৎ, লেখক প্রমাণ করেছেন, মানুষ হত্যা ছিল শাসকগোষ্ঠীর ভুল- যার জন্য তাদের পতন হয়। 

গ. ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র লেখক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শাসকদের শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে বন্দি হন এবং কিছু মানবিক মানুষের সহযোগিতা ও ভালোবাসা পান। যেটি নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘বায়ান্নর দিনগুলো’তে শেখ মুজিবের জেলজীবন ও মুক্তি লাভের স্মৃতি বিবৃত হয়েছে। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী লেখকসহ অনেককে রাজবন্দি হিসেবে জেলে বন্দি করে। এমতাবস্থায় লেখক অনশন করেন। ক্রমশ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন সিভিল সার্জনসহ বেশকিছু আমলা তাকে অনশন ভাঙতে বোঝান এবং মমত্ববোধ ও ভালোবাসা প্রদর্শন করেন। অবশেষে দুই বছর তিনমাস পর তাঁর মুক্তি মেলে।
উদ্দীপকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা নেলসন ম্যান্ডেলার কারাজীবন বর্ণিত হয়েছে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন নস্যাৎ করতে শাসকগোষ্ঠী ম্যান্ডেলাকে জেলে পাঠায় এবং নির্যাতন করে। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে কিছু ভালো মনের মানুষের ভালোবাসা ও সেবা পান। এরপর ২৭ বছর কারাভোগের অবসান ঘটে। শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন, কারাভোগ, বন্দি অবস্থায় সেবা পাওয়া এবং দীর্ঘদিন পর মুক্তির বিষয়গুলো উদ্দীপকের ম্যান্ডেলা এবং ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ এর লেখকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. নেলসন ম্যান্ডেলা ও বঙ্গবন্ধুর আন্দোলনের প্রেক্ষাপট যথাক্রমে বর্ণবৈষম্য ও ভাষার দাবি-এদিক থেকে তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কিন্তু শাসকের শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনের দিক থেকে দু’জনের মধ্যেই ঐক্য পরিলক্ষিত হয়।
ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে আলাদা হয়ে পড়ে। যেহেতু শাসকগোষ্ঠী ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি তাই তারা উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার ঘোষণা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলন চরমে ওঠে। এ সময় শাসক গোষ্ঠী অনেক রাজনীতিবিদকে কারাবন্দি করে। শেখ মুজিবও ছিলেন রাজবন্দিদের অন্যতম। তাঁকে প্রায় সাতাশ-আটাশ মাস কারাভোগ করতে হয়।
উদ্দীপকে নেলসন ম্যান্ডেলার ২৭ বছর কারাভোগের উলে­খ করা হয়েছে। তিনি কারাভোগ করেছেন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন করে। কারাভোগ অবস্থায় তাঁকে পাথর ভাঙার মতো পরিশ্রমী কাজও করতে হয়েছে। কিন্তু তিনি সেখানে অনেকের সেবা, ভালোবাসা ও মমতা পেয়েছেন। এরপর তিনি মুক্তিও পেয়েছেন।
উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বিষয়ভিত্তিক দিক থেকে পার্থক্য থাকলেও কর্মকাণ্ড ও ঘটনার দিক থেকে তাদের মধ্যে সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। দু’জনই শোষকের বিরুদ্ধে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য বন্দি হন। কারা অভ্যন্তরে অনেকের সেবা-সহযোগিতা পান এবং দীর্ঘদিন পর মুক্তি পান।

২. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
রানা প্লাজা ধসের পর ক্ষতিগ্রস্ত কিছু শ্রমিক তাদের ক্ষতিপূরণের জন্য আন্দোলন করে আসছিল। পুলিশ এদের লাঠিপেটা করে কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায়। এর মধ্যে শ্রমিক নেতা সাঈদও ছিল। সাঈদ জেলহাজতেই অনশন করে এবং বাইরে আন্দোলন ক্রমশ প্রকট আকার ধারণ করে। অবশেষে প্রশাসন সাঈদকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
ক. জেলের ভেতর শেখ মুজিবের সঙ্গে কে ছিলেন?
খ. “আপনাদের সাথে আমাদের মনোমালিন্য হয় নাই।”- কাদের সাথে, কেন মনোমালিন্য হয়নি?
গ. উদ্দীপকের সাঈদের সাথে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র কোন চরিত্রটির সাদৃশ্য রয়েছে তা বর্ণনা করো। 
ঘ. ‘দাবি আদায়ে আন্দোলনের বিকল্প নেই’- উদ্দীপক ও ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র আলোকে মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো। ২ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. জেলের ভেতর শেখ মুজিবের সাথে মহিউদ্দিন আহমদ ছিলেন।

খ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমদের সাথে জেল কর্তৃপক্ষের কোনো মনোমালিন্য হয়নি।
ভাষা আন্দোলনের জন্য শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিনকে রাজবন্দি করা হয়। জেলের ভেতর তারা অনশন ধর্মঘট করলে সুপারিনটেনডেন্ট ও ডেপুটি জেলার তাদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন। তখন তারা সুপারিনটেনডেন্ট ও ডেপুটি জেলারকে বলেন, আপনাদের বিরুদ্ধে তো অনশন করছি না। সরকার বিনা অপরাধে বছরের পর বছর আটকে রাখছে, তারই প্রতিবাদ করার জন্য অনশন করছি। সরকারের হুকুমেই আপনাদের চলতে হয়। আপনাদের সাথে তাই আমাদের কোনো মনোমালিন্য নেই।

গ. উদ্দীপকের সাঈদের সাথে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র শেখ মুজিবের চরিত্রটির সাদৃশ্য রয়েছে।
ভাষা-আন্দোলন শুরু হলে শেখ মুজিবুর রহমান রাজবন্দি হিসেবে আটক হন। এরপর তিনি সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদে অনশন ধর্মঘট করেন, ঢাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হয় এবং কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। এদিকে বঙ্গবন্ধুর অনশন চলতেই থাকে। এরপর মুক্তির আদেশ এলে তিনি অনশন ভঙ্গ করেন।
উদ্দীপকের সাঈদ অধিকার আদায়ে আন্দোলন করে এবং আটক হয়। জেলের ভেতর সে অনশন করে এবং পরবর্তীতে মুক্তি পায়। এসব ঘটনা বায়ান্নর দিনগুলোর শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। 
সুতরাং উদ্দীপকের সাঈদের সাথে বায়ান্নর দিনগুলোর শেখ মুজিবুর রহমানের সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. আন্দোলন করতে গিয়ে আটক এবং পরবর্তীতে আন্দোলন জোরদার হলেই মুক্তি ও দাবি আদায় হয়। উদ্দীপক ও ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ থেকে এ কথা প্রমাণিত হয়েছে।
‘বায়ান্নর দিনগুলো’তে ভাষা-আন্দোলনের ফলে শাসকগোষ্ঠীর ভিত নড়ে ওঠে। এ আন্দোলনকে ঠেকাতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করলে পুলিশ মিছিলে গুলি করলে শহিদ হন বেশক’জন। এছাড়া ও জেলহাজতে শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমদ অনশন করেন। সব মিলিয়ে আন্দোলন জোরদার হয়।
উদ্দীপকের গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণের ন্যায্য দাবি করে। দাবি না মানায় আন্দোলন করলে পুলিশ লাঠিপেটা করে কয়েকজনকে আটক করে। আটককৃতরা জেলে অনশন করে। ফলে আন্দোলন আরো বেগবান হয়। 
উদ্দীপক ও ‘বায়ান্নর দিনগুলো’তে প্রাথমিক আন্দোলনে শাসকের নির্যাতনের শিকার হয় সাধারণ মানুষ ও আন্দোলনকারীরা। অবশেষে আন্দোলন জোরদার হলেই কেবল দাবি আদায় হয়েছে। মুক্তি পেয়েছে বন্দিরা। অতএব, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, দাবি আদায়ে আন্দোলনের বিকল্প নেই।

৩. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী হল উদ্ধারে আন্দোলন করতে গেলে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয়। গোলযোগ চরম আকার ধারণ করলে তরিকুলসহ কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে। পরের দিন ঢাকা থেকে বাগেরহাট জেলে নিয়ে যাওয়া হবে জেনে ইচ্ছে করে গড়িমসি শুরু করে তরিকুল। সে ভাবে রওনা দিতে দেরি হলে যদি পরিচিত কারো সাথে দেখা হয় তবে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জানানো যাবে।
 ক. কবে ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিনকে ফরিদপুরের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়?
খ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিনকে কেন নারায়ণগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়?
গ. উদ্দীপকের তরিকুলের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাদৃশ্য নির্ণয় কর।
ঘ. জেল থেকে স্থানান্তরের খবর শুনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ইচ্ছে করে দেরি করাটা রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচায়ক উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর। 
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৫ ফেব্র“য়ারি ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিনকে ফরিদপুরের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।
খ. সকাল এগারোটায় জাহাজ ধরতে না পারায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিনকে নারায়ণগঞ্জ ঘাট থেকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। 
ঢাকা থেকে ফরিদপুরে জেলখানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে জাহাজে করে গোয়ালন্দ ঘাটে যেতে হয়। একটা জাহাজ ছিল সকাল ১১টায়। অন্যটি রাত ১টায়। সামান্য দেরি হওয়ায় ১১টার জাহাজ ধরতে না পারায় রাত ১টা পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিনকে নারায়ণগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
গ. দাবি আদায়ে পুলিশের হাতে আটকা পড়া এবং ঢাকা জেল থেকে জেলা শহরে স্থানান্তর হওয়ার দিক থেকে তরিকুলের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা-আন্দোলনের সময় ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে ছিলেন। আন্দোলনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে মহিউদ্দিনসহ তাকে ঢাকা থেকে সরিয়ে নেয়ার আদেশ এলে ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা কোথায় যাচ্ছে তা অন্যান্য নেতাকর্মী যেন জানতে পারে সেজন্য তিনি ইচ্ছে করেই গোছগাছ হতে বেশি সময় নিচ্ছিলেন।
উদ্দীপকের তরিকুল হল উদ্ধারের আন্দোলনে পুলিশের হাতে আটক হয় এবং তাকে শেখ মুজিবের মতোই জেলা শহরের জেলে স্থানান্তর করা হয়। তরিকুল ইচ্ছে করেই গোছগাছ হতে বেশি সময় নেয় যাতে করে তার পরিচিত কাউকে তার গন্তব্যস্থানের কথা জানাতে পারে। অতএব, বিষয় দুটির দিক থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সথে তরিকুলের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

ঘ. আকস্মিকভাবে জেল থেকে স্থানান্তরের খবর শুনে তাৎক্ষণিকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সিদ্ধান্ত নেন সময় বেশি নেয়ার যাতে করে পরিচিত কাউকে গন্তব্যস্থলের কথা জানানো যায়। সিদ্ধান্তটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের উপস্থিত-বুদ্ধি ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে।

১৫ ফেব্র“য়ারি শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিনকে ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত এলে বঙ্গবন্ধু ভাবেন তারা কোথায় যাচ্ছে সেটা নেতাকর্মীদের জানানো দরকার। তাই তিনি তাঁর কাপড়চোপড়, বই-খাতা, টাকা-পয়সা ইত্যাদি গোছগাছ করতে বেশি সময় নিলেন। আবার ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে এসেও খানিকটা দেরি করলেন যে পরিচিত কাউকে দেখা যায় কি-না।
উদ্দীপকের তরিকুলকে যখন ঢাকা থেকে বাগেরহাটের জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয় সেও প্রস্তুত হতে ইচ্ছে করে দেরি করছিল যেন পরিচিতি কাউকে জানানো যায় যে, তাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।আমরা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ এবং উদ্দীপকের চরিত্রে একই ধরনের উপস্থিত-বুদ্ধির পরিচয় পাই। যার মধ্যে তাদের উভয়েরই রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় মেলে। 
সুতরাং বলা যায়, জেল থেকে স্থানান্তরের খবর শুনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ইচ্ছে করে দেরি করাটা তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচায়ক।

৪. নিচের উদ্দীপকটি পড়ে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে রাজবন্দি হয় নজরুল। জেলের মধ্যে অনশন করলে তাঁকে প্রথমে অনশন ভাঙানোর জন্য বোঝানো হয়। এরপর নাকের মধ্যে নল ঢুকিয়ে তরল খাবার খাওয়ানো হয়। এভাবে ক্রমশ নাকের ভেতর ঘা হয়ে যায় নজরুলের। তবুও মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত অনশন ভাঙে না। তিনি আস্তে আস্তে অতিশয় দুর্বল হয়ে পড়েন।
ক. অনশনের আগে শেখ মুজিব কী খেয়েছিলেন?
খ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লেবুর রস দিয়ে লবণ পানি খেলেন কেন?
গ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নাকের মধ্যে নল দিয়ে খাওয়ানো উদ্দীপকের আলোকে বর্ণনা করো।
ঘ. কারাবন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিছানা থেকে ওঠার শক্তি হারানোর বিষয়টি উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো। 

৪ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. অনশনের আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পেট পরিষ্কার করার ওষুধ খেয়েছিলেন।

খ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনশনরত অবস্থায় লেবুর রস দিয়ে লবণ পানি খেয়েছিলেন। কারণ এতে কোনো ফুডভ্যালু ছিল না।
অনশনরত অবস্থায় মহিউদ্দিন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। এমতাবস্থায় তাঁদেরকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নাকের ভেতর দিয়ে নল ঢুকিয়ে তরল খাবার খাওয়ানো হয়। তাঁদের নাকের ভেতর ঘা হয়ে যায়। ফলে তাঁরা ফুডভ্যালু নেই এমন খাবার হিসেবে কাগজি লেবুর রস দিয়ে লবণ পানি খেতেন।  

গ. জেলে অনশনরত অবস্থায় জেল-কর্তৃপক্ষ জোর করে নাকের মধ্যে নল দিয়ে তরল খাবার খাওয়ায়। আর এর সাদৃশ্য আমরা উদ্দীপকেও দেখতে পাই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অনশনরত অবস্থায় কারা-কর্তৃপক্ষ নাকের ভেতর নল দিয়ে তরল খাবার খাওয়ায়। কেননা, রাজবন্দিরা যেন মারা না যায়। মরতেও দেবে না আবার মুক্তিও দেবে না। এমতাবস্থায় নাকের মধ্যে ঘা হয়ে যায়। পরে ইচ্ছে করে তিনি লেবুর রস দিয়ে লবণ পানি খান।

উদ্দীপকের নজরুলকে প্রথমে কারা-কর্তৃপক্ষ অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন। অকৃতকার্য হওয়ায় তাকে নাকের মধ্যে নল দিয়ে তরল খাবার খাওয়ানো হয়। অর্থাৎ যে-কোনোভাবে না খাওয়ালে বন্দি মারা যাবে। তাই শেষ পর্যন্ত নল দিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। এদিক থেকে প্রবন্ধ ও উদ্দীপকের মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ঘ. মুক্তির জন্য অনশন করার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শারীরিক অবস্থার দিন দিন অবনতি হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁর অবস্থা এমন হলো যে, তিনি আর বিছানা থেকে উঠতে পারলেন না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালে কারাবন্দি অবস্থায় মুক্তির জন্য অনশন শুরু করেন। তিনি ও মহিউদ্দিন আমরণ অনশন করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁদের অবস্থা নাকাল হয়ে পড়ে। তাঁরা ফুডভ্যালু নেই এমন খাবার যেমন-লেবুর রস দিয়ে লবণ মেশানো পানি খেতেন। তবে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁদের নাকের ভেতর নল দিয়ে তরল খাবার খাওয়ায়। এতে তাঁদের নাকের ভেতর ঘা হয়ে যায় এবং তাঁরা আরো নিস্তেজ হয়ে পড়েন।

উদ্দীপকের নজরুল আন্দোলনে আটক হলে এ অন্যায় আটক থেকে মুক্তি পেতে অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। কারাকর্তৃপক্ষ তাঁকে নাক দিয়ে নল ঢুকিয়ে খাবার পেটে ভরে দেয়। তবুও তার শারীরিক অবস্থা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। তাঁর প্রতিজ্ঞা মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত অনশন ভাঙবেন না।

উদ্দীপক ও ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র কারাবন্দিদের শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতির বিষয়টি একসূত্রে গাঁথা। কেননা, ‘বায়ান্নর দিনগুলো’তে রাজবন্দি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে-পন্থা অবলম্বন করেছিলেন উদ্দীপকের নজরুলও একই পন্থা অবলম্বন করেন। সুতরাং উদ্দীপকের নজরুলের নাকের ভেতরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতোই ঘা হয় এবং শরীর ক্রমশ এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে, বিছানা থেকে ওঠার শক্তিও হারিয়ে ফেলেন।

৫. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

সিরাজগঞ্জ জেলের ভেতর থেকেই হাবিব খবর পেলেন ঢাকায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। এদিকে জেলগেটে ছাত্র-ছাত্রী মিছিল করছে। “গণতন্ত্র মুক্তি পাক” এবং সরকারের পতন এবার হবেই ভেবে হাবিব মনে মনে বলে, এ ভুলের কারণেই শাসকচক্র ক্ষমতাচ্যুত হবে।
ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হার্টের অবস্থা খারাপের জন্য কী হয়?
খ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গোপনে কয়েদিকে দিয়ে কাগজ আনালেন কেন?
গ. উদ্দীপকের গুলি খেয়ে মরার ঘটনাটি ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র সাথে কীভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ?- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে।”কথাটি উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

৫ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হার্টের অবস্থা খারাপের জন্য নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হয় এবং প্যালপিটিশন হয়।

খ. কারাবন্দি অবস্থা এবং তাঁদের অবস্থান জানাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গোপনে কয়েদিকে দিয়ে কাগজ আনালেন।

অনশনের কারণে শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিনের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল; বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা নেই। আর দু’এক দিন পর বোধ হয় মারা যাবেন। এ ভেবে শেখ মুজিব এক কয়েদিকে দিয়ে গোপনে কয়েক টুকরা কাগজ আনালেন তার অবস্থা তার বাবা, তার স্ত্রী, শহিদ সোহরাওয়ার্দী ও ভাসানী সাহেবকে জানানোর জন্য। 

গ. ১৯৫২ সালে ভাষা-আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্রছাত্রী মিছিল বের করলে পুলিশ মিছিলে গুলি করে কয়েকজনকে হত্যা করে। ফলে আন্দোলন আরো চরম আকার ধারণ করে।

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন ঘোষণা করে, ‘উর্দুই হবে সমগ্র পাকিস্তানের মাতৃভাষা’ তখন পূর্ব পাকিস্তানি বাঙালিরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবি করে। এ নিয়ে আন্দোলনের এক পর্যায়ে শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশে মিছিলে গুলি করে কয়েকজনকে হত্যা করা হয়।

উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন চরমে উঠলে সাধারণ মানুষকে দমাতে শাসকগোষ্ঠী তাদের গুলি করে। এতে বেশ কয়েকজন ছাত্র শহিদ হন। ঘটনাটি বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’তেও দেখা যায়। এখানে তিনি বর্ণনা করেছেন, ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল বের করলে পুলিশ কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা করে। সুতরাং উভয় ঘটনা প্রায় একই রকম একথা যথার্থই বলা যায়।

ঘ. কথাটি দ্বারা শাসকের অদূরদর্শিতার কথা বোঝানো হয়েছে। ভাষার জন্য আন্দোলনরত মানুষের ওপর গুলি, ১৪৪ ধারা জারি, সিংহভাগ মানুষের ভাষাকে অবজ্ঞা করা-এসব সিদ্ধান্ত ছিল ভুল। যার ফলে সরকারের পরাজয় ঘটে।

ভাষার জন্য মানুষ হত্যা করা সত্যিই অমানবিক। অথচ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মাতৃভাষা যখন উপেক্ষিত হতে যাচ্ছিল তখন আন্দোলন করে বাঙালিরা। সে আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ১৪৪ ধারা জারি, নির্বিচারে গণহত্যা, গণগ্রেফতার ইত্যাদি কর্মকাণ্ড চালাচ্ছিল। ফলে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে ওঠে।

উদ্দীপকের হাবিব আন্দোলনরত অবস্থায় গুলি করে শাসক কর্তৃক সাধারণ জনগণকে হত্যার কথা শুনে দূরদৃষ্টিতে ভাবলেন সরকারের পরাজয় এবার নিশ্চিত। কেননা, দফায় দফায় সরকার ভুল করছে। সুতরাং সাধারণ জনগণ সরকারের এত বড় অন্যায় মেনে নেবে না।

অতএব দেখা যায় যে, প্রবন্ধের “মানুষের যখন পতন হতে থাকে তখন পদে পদে ভুল করে” কথাটি সত্যে পরিণত হয়েছিল, যেমনটি উদ্দীপকেও ধারণা করা হয়।

৬. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

অং সাং সূচি অনেকদিন কারাভোগ ও অনশনের এক পর্যায়ে মৃতপ্রায় হয়ে গেলেন। জেল-কর্তৃপক্ষ তাঁকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তাঁর সহবন্দি তাকে জুস খাইয়ে অনশন ভাঙান। অন্যদিকে তাঁর দলের বেশক’জন জ্যেষ্ঠ নেতাকে বন্দি ও নির্যাতন করা হচ্ছে। নিরুপায় অং সাং সূচি জেলগেটের বাইরে বেরিয়ে দেখলেন তার বাবা তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন।
ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতে থাকলে একজন কয়েদি কী করল?
খ. “অনেক লোক আছে, কাজ পড়ে থাকবে না”। কথাটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের অং সাং সূচির সহবন্দি ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র কোন চরিত্রকে প্রতিফলিত করে? বর্ণনা দাও।
ঘ. “উদ্দীপকের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বন্দি ও নির্যাতনের মতো ঘটনা প্রবন্ধেও ঘটেছে- বিশ্লেষণ করো। 

৬ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেতে থাকলে একজন কয়েদি তাকে সরিষার তেল মালিশ করে দিচ্ছিলেন।

খ. জেলে অনশনরত অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মৃতপ্রায় হয়ে পড়লে কর্তব্যরত ডাক্তারের এক প্রশ্নের উত্তরে মুজিব এ কথাটি বলেন।
জেলবন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের শারীরিক অবস্থা যখন নিস্তেজ প্রায় তখন ডাক্তার বললেন, ‘এভাবে মৃত্যুবরণ করে কি কোনো লাভ হবে? বাংলাদেশ যে আপনার কাছে অনেক কিছু আশা করে।” ডাক্তারের এ প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেন।
 উদ্দীপকের অং সাং সূচির সহবন্দি ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র মহিউদ্দিনকে প্রতিফলিত করে।

গ. ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ প্রবন্ধে জেলবন্দি হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহিউদ্দিন সহবন্দি হিসেবে থাকেন। তাঁরা দুজনই অনশন করেন এবং মুক্তির শর্তেই কেবল অনশন ভাঙবেন বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের মুক্তির আদেশ আসে। তখন মহিউদ্দিন বঙ্গবন্ধুকে ডাবের পানি খাইয়ে অনশন ভাঙান।

উদ্দীপকে অং সাং সূচি অনশন করে মুমূর্ষুপ্রায়। এমতাবস্থায় তাঁকে মুক্তির আদেশ এলে তিনি অনশন ভাঙতে রাজি হন এবং তাঁর সহবন্দি তাঁকে জুস খাইয়ে অনশন ভাঙান। অং সাং সূচির সহবন্দির এ ঘটনাটি প্রবন্ধের মহিউদ্দিন চরিত্রকে প্রতিফলিত করে।

‘বায়ান্নর দিনগুলো’ প্রবন্ধে মুক্তির প্রাক্কালে শেখ মুজিব জানতে পারেন তাঁর দলের জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীদের আটক করে নির্যাতন করা হয়। 

জেলবন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খবরের কাগজে দেখতে পান তর্কবাগীশ, খান সাহেব, আবুল হোসেনসহ বেশ ক’জন নেতা শাসকগোষ্ঠীর হাতে আটক হয়েছেন। মুক্তির প্রায় প্রাক্কালে এসে জানতে পারেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা- যেমন মওলানা ভাসানী, শামসুল হকসহ আরো অনেককেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ঘ. উদ্দীপকে অং সাং সূচির কারাবন্দির শেষ অবস্থায় তাঁকে যখন মুক্তি দেয়া হবে তখন তাঁর দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক করা হয়। তাছাড়াও তাঁদের ওপর নির্যাতনের মাত্রাও বৃদ্ধি করা হয়।

প্রবন্ধ ও উদ্দীপকে আমরা প্রায় অনুরূপ ঘটনা দেখতে পাই। অর্থাৎ, কনিষ্ঠ নেতাকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক ও নির্যাতন করার বিষয়টি লক্ষণীয়। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের বন্দি ও রাজবন্দিদের নির্যাতনের বিষয়টি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ প্রবন্ধেও লক্ষ করা যায়।

৭. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বিনা বিচারে অনেকদিন জেলবন্দিত্বের পর মুক্তি পেলেন রাজনীতিবিদ সৈয়দ শামসুর রহমান। ফিরে এলেন বাড়িতে। অনেক দিন না দেখে নিজের ছেলেও ভুলে গেছে তাকে। সৈয়দ সাহেব মুক্তি পেলেও সারাদেশে আন্দোলন আরো চরমে ওঠে। গ্রামের হাটবাজারে পর্যন্ত হরতাল ধর্মঘট পালিত হয়।

ক. জনমতের বিরুদ্ধে যেতে কারা ভয় পায়?
খ. “আব্বা রাজবন্দিদের মুক্তি চাই, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”হাসু বাবার গলা জড়িয়ে কেন এ কথা বলেছিল?
গ. ‘অনেক দিন না দেখলে নিজের ছেলেও ভুলে যায়’- উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্য বর্ণনা কর।
ঘ. ছোট ছোট হাটবাজারে পর্যন্ত হরতাল হয়েছে- কথাটি দ্বারা আন্দোলনের তীব্রতা উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

৭নং প্রশ্নের উত্তর
ক. জনমতের বিরুদ্ধে যেতে শাসকেরা ভয় পায়।

খ. একুশে ফেব্র“য়ারি হাসু ও শেখ পরিবার ঢাকায় ছিল বলে এই স্লোগান শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। তাই বাবাকে পেয়েই হাসু স্লোগানটি শুনিয়েছিল।

জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাড়িতে এলে বড় সন্তান শেখ হাসিনা বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিল, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, রাজবন্দিদের মুক্তি চাই। কেননা, একুশে ফেব্রুয়ারি এসব স্লোগান ঢাকার অলিতে-গলিতে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। আর হাসুরা ঢাকায় থাকার ফলে এ স্লোগানের সাথে পরিচয় হয়ে গিয়েছিল। ফলে রাজবন্দিত্ব থেকে মুক্ত হয়ে বাড়িতে এলেই হাসু বাবাকে স্লোগানটি শুনিয়েছিল।

গ. কথাটির দ্বারা একজন রাজনীতিবিদ পিতার করুণ আফসোসের কথা বর্ণিত হয়েছে- যার অনুরূপ কথা উদ্দীপকেও উদ্ধৃত হয়েছে।

 ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ প্রবন্ধে একজন রাজনীতিবিদ বাবার অসহায় নির্মম ও বাস্তব আফসোসের আর্তি ফুটে উঠেছে। মজলুম জনগণের অধিকার আদায়ে রাজবন্দি থাকতে হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। আর তাই সাতাশ-আটাশ মাস পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন তিনি। ছেলে কামালের বয়স মাত্র কয়েক মাস। বাবাকে অনেকদিন না দেখে ছেলেও ভুলে গেছে উনি তার কী হন। ‘হাসু আপা তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলে ডাকি’কথাটি দ্বারা তা প্রমাাণিত।

 উদ্দীপকে সৈয়দ শামসুর রহমান একজন রাজনীতিবিদ। তিনি জেলবন্দিত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বাড়িতে এসে বুঝতে পারলেন তার ছোট ছেলেটি তাকে চিনতে পারছে না। তাই প্রশ্নোক্ত সমান কথাটি উদ্দীপকেও এসেছে। সুতরাং বলা যায়, কথাটি উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, গ্রামগঞ্জের ছোট ছোট হাটবাজারেও হরতাল পালিত হচ্ছিল- যার সমরূপ দৃশ্য আমরা উদ্দীপকেও দেখতে পাই।

 ১৯৫২ সালে ঢাকায় মিছিলে গুলি করে সাধারণ মানুষ হত্যার পর ভাষা-আন্দোলন চরমে ওঠে। জনসাধারণ বুঝতে পারে যারা শাসন করছে তারা জনগণের আপনজন নয়। শাসকগোষ্ঠী মাতৃভাষা বাংলাকে মানুষের মুখ থেকে কেড়ে নিতে চায়। খবর বাতাসের সাথে সাথে গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। ছোট ছোট হাটবাজারেও হরতাল ধর্মঘট পালিত হতে থাকে।

 উদ্দীপকের সৈয়দ সাহেব জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বাড়িতে ফেরেন। অথচ তখন আন্দোলন চরমে ওঠে। এমনকি গ্রামের হাটবাজার পর্যন্ত হরতাল ধর্মঘট পালিত হয়। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে শাসকচক্র তাদের মঙ্গল চায় না; বরং শোষণ করতে চায়।

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ১৯৫২ সালের প্রেক্ষাপটভিত্তিক আত্মজীবনীতে দেখা যায়, ভাষা নিয়ে বিতর্কের এক পর্যায়ে তা আন্দোলনে রূপ নেয়। শাসকগোষ্ঠী মিছিলে গুলি চালায় এবং এ খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে মানুষ গ্রামেও হরতাল পালন করে। অনুরূপ ঘটনা আমরা উদ্দীপকেও লক্ষ করি। সুতরাং প্রশ্নোক্ত কথাটি দ্বারা বায়ান্নর ও উদ্দীপকের আন্দোলনের তীব্রতারই প্রমাণ হয়।

৮. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

ভারতের দুর্নীতিবিরোধী মানবাধিকার কর্মী আন্না হাজারে। তিনি সর্বদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনি ও তার দলের কর্মীরা দাবি আদায়ে একটু ব্যতিক্রমধর্মী আন্দোলন করেন। তা হলো অনশন ধর্মঘট। তারা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন ধর্মঘট পালন করেন।

ক. বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কে অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন?

খ. বঙ্গবন্ধু অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন কেন?

গ. উদ্দীপকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার কোন বিষয়টি দৃশ্যমান? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. দাবি আদায়ে ব্যতিক্রমধর্মী পন্থা অবলম্বনে উদ্দীপকের আন্না হাজারে যেন ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করেছেন।- বক্তব্যটির সত্যতা নিরূপণ কর।  

৮ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মহিউদ্দিন সাহেব অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন। 

খ.  বঙ্গবন্ধু কারামুক্তির জন্যই অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন। 
পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে বছরের পর বছর কারাবন্দি করে রেখেছিল, যা বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। তাই বাধ্য হয়েই বঙ্গবন্ধু আমরণ অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন। এতে পাক-সরকার বাধ্য হয়েই তাঁকে মুক্তি দিয়েছিল। মূলত অপশাসনের হাত থেকে মুক্তির জন্যই বঙ্গবন্ধু অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন। 

গ. উদ্দীপকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার দাবি আদায়ে অনশন ধর্মঘট পালনের বিষয়টি দৃশ্যমান।

 সমাজে নানা প্রকার অন্যায়-অবিচার, অত্যাচার বিদ্যমান থাকে। এর বিরুদ্ধে সচেতন মানুষরা বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ জানায়। সে প্রতিবাদ ব্যতিক্রমধর্মী হয়ে ওঠে, যখন কোনো ব্যক্তি তার স্বার্থকে বলি দিয়ে জনমানবের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করে।

 উদ্দীপকে দাবি আদায়ে অনশন ধর্মঘট পালনের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। ভারতের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতা আন্না হাজারে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার। তিনি সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ অনশন ধর্মঘট পালন করেন। অন্যদিকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় পাকিস্তানিদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হন বঙ্গবন্ধু। তাইতো তাঁকে বছরের পর বছর নির্বিচারে কারাবন্দি করে রেখেছিল কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তা নীরবে মেনে নেননি। তিনি জেলে বসেই অনশন ধর্মঘট পালন করে এর বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ জানিয়ে দেন। তাই বলা যায়, ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় অনশন ধর্মঘট পালনের বিষয়টি উদ্দীপকেও দৃশ্যমান।

ঘ. দাবি আদায়ে ব্যতিক্রমী পন্থা অবলম্বনে উদ্দীপকের আন্না হাজারে যেন ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করেছেন।- বক্তব্যটি সত্য।

 সচেতন মানুষরা শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে নানাভাবে প্রতিবাদ গড়ে তোলেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো অনশন ধর্মঘট। এ ধরনের প্রতিবাদে ব্যক্তি তার নিজ স্বার্থকে বলি দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করে। তার এ প্রতিবাদে শাসন-শোষণের ভিত পর্যন্ত কেঁপে ওঠে।

 উদ্দীপকের আন্না হাজারে একজন মানবাধিকারকর্মী। তিনি সর্বদা অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। অন্যায় শাসন প্রতিরোধে তিনি অনশন ধর্মঘট পালন করেন। অন্যদিকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী চেতনা তুলে ধরা হয়েছে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকেই বাঙালি নেতাকর্মী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন। এতে বঙ্গবন্ধুর মতো নেতাকর্মীও দীর্ঘদিন বিনাবিচারে কারাগারে আটক ছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এ অন্যায় শাসন মেনে নেননি। তাইতো তিনি জীবনের মায়া তুচ্ছ করে জেলের মধ্যেই প্রতিবাদস্বরূপ অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন। এতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসনের ভিত পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিল।

 শাসকদের শোষণের জাঁতাকল গুঁড়িয়ে দিতে যুগে যুগে জন্ম নেন বীরসন্তানেরা। যাঁরা তাঁদের স্বীয় স্বার্থ বলি দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে পরের জন্য আত্মনিবেদন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তেমনি একজন মানুষ। আর বঙ্গবন্ধুর দাবি আদায়ের আদর্শ উদ্দীপকের আন্না হাজারের মধ্যে বিদ্যমান। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত বক্তব্যটি যথার্থ।

৯. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

চৌ-এন-লাই চীনের জননন্দিত বিপ্লবী রাজনীতিবিদ ও নব্য চীনের জন্মদাতা। সুদীর্ঘকাল তিনি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই উনিশ শতকের শেষ দিকে এবং বিশ শতকের গোড়ায় চীনের মঞ্চ সম্রাটদের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বেশ কিছু বিপ্লবী আন্দোলন হয়েছিল। সাম্যবাদ ও বিপ্লবে সুগভীর আস্থা, চীনের জাতীয় কর্মসূচি প্রণয়ন ও রাজতন্ত্রের বিরোধিতার জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানায় কীভাবে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন?

খ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তান সরকার মুক্তি দিয়েছিল কেন?

গ. উদ্দীপকে চৌ-এন-লাই ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার কোন চরিত্রের প্রতীক? নির্ণয় কর।

ঘ. “প্রদত্ত উদ্দীপকটি ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার সম্পূর্ণ ভাবার্থের দর্পণ নয়।”-  এ বিষয়ে তোমার মতামত উপস্থাপন কর। 
৯নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানায় ধর্মঘটের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন।

খ. অনশন ধর্মঘটের কারণে বাধ্য হয়ে পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিয়েছিল।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অপশাসনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু জেলখানায় আমরণ অনশন ধর্মঘট পালন করেন। এতে তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া সত্তে¡ও তিনি তাঁর আদর্শ থেকে সরে আসেননি। এভাবে তাঁর মুক্তির আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করে। তখন পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়েই বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিয়েছিল।

গ.  উদ্দীপকের চৌ-এন-লাই ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চরিত্রের প্রতীক।
অন্যায় শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে যুগে যুগে জন্ম নেন জাতির বীরসন্তানরা। যাঁরা তাঁদের স্বীয় মেধা, বুদ্ধি, নেতৃত্ব দিয়ে জাতিকে দেখান মুক্তির পথ। অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার থাকে তাদের প্রতিবাদের অস্ত্র। যার কবলে পড়ে শাসক-শোষকেরা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
উদ্দীপকে চৌ-এন-লাই চীনের বিপ্লবী রাজনীতিবিদ। যিনি সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে নিঃস্বার্থভাবে আত্মনিবেদন করেছেন। অন্যদিকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী চেতনা বর্ণিত হয়েছে। ১৯৪৭-এ পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির ফলে শাসন-শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকে বাঙালিরা। তখন দিশেহারা জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন বাঙালির এই অবিসংবাদিত নেতা। সুতরাং বলা যায়, ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় বঙ্গবন্ধু চরিত্রের প্রতীক হলো উদ্দীপকের চৌ-এন-লাই।

ঘ. “প্রদত্ত উদ্দীপকটি ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার সম্পূর্ণ ভাবার্থের দর্পণ নয়।”- এ বিষয়ে আমি একমত।
শাসন-শোষণের জাঁতাকল থেকে মানুষকে বাঁচাতে যুগে যুগে জন্ম নেন বিপ্লবীরা। যাঁরা তাঁদের নিজ মেধা, বুদ্ধি, নেতৃত্ব দিয়ে জাতিকে মুক্তির পথ দেখান। আর সেসব বিপ্লবী যেহেতু রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ তাই তাঁদেরও থাকে প্রিয়জনের প্রতি পিছুটান। কিন্তু তা সত্তে¡ও তাঁরা স্বীয় মেধা বলে স্থান করে নেন ইতিহাসের পাতায়।
উদ্দীপকের চৌ-এন-লাই চীনের বিপ্লবী রাজনীতিবিদ। তিনি সুদীর্ঘকাল সংগ্রাম করেছেন শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে। কথা বলেছেন চীনের শোষিত মানুষের পক্ষে। অন্যদিকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনাতেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনী বর্ণিত হয়েছে, যিনি পাকিস্তানিদের হাত থেকে বাঙালিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন। এছাড়া এ রচনায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিজীবনের কথাও বর্ণিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার পিতার ছিল গভীর স্নেহ-মমতা। তাইতো তিনি জেল গেটে মৃত্যুপথযাত্রী সন্তানকে দেখে চোখের জল সামাল দিতে পারেননি। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর সহধর্মিণীর অকৃত্রিম ভালোবাসার বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। আর বঙ্গবন্ধুর দুই আদরের সন্তান হাসু ও কামালের পিতৃভক্তির বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে এ রচনায়।
‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন, পাকসরকারের অত্যাচার ও বাঙালির প্রতিবাদ এবং বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিজীবনের কথা বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকে শুধু শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটির সাথে আমি একমত পোষণ করি।

১০. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।  

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন বর্ণবাদ-বৈষম্য চরম আকার ধারণ করে শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা, দেশটির কালো মানুষগুলোর অধিকার যখন ক্ষুণœ হতে থাকে তখন তিনি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। এতে শোষকদের দ্বারা তাঁকে নানারকম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও তিনি পিছ-পা হননি; সংগ্রাম করে প্রতিষ্ঠা করেছেন কালো মানুষদের অধিকার।

ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোন কারাগারে বন্দি ছিলেন?

খ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিনাবিচারে কারাবরণ করতে হয়েছিল কেন?

গ. উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার কোন চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “উদ্দীপকে ফুটে ওঠা দিকটি যেন ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার মূল সুর।”- বিশ্লেষণ কর। ১

১০ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর জেলা কারাগারে বন্দি ছিলেন।

খ. পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে শেখ মুজিবুর রহমানকে বিনা বিচারে কারাবরণ করতে হয়েছিল।

 পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সকল প্রকার অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু সর্বদাই সোচ্চার ছিলেন, যা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চোখে তাকে বিষিয়ে তুলেছিল। তাই তো শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে বাঙালিকে এবং বাঙালির এই অবিসংবাদিত নেতাকে কারাবন্দি থাকতে হয়েছিল।




 উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

 সমাজজীবনে শাসন-শোষণ বিদ্যমান থাকে। আর এর বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাম করেন তারাই প্রতিবাদী। জাতির এই বীর সন্তানেরা নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে জাতির স্বার্থে নিজেকে নিবেদন করেন জনগণের কল্যাণে। শোষণ-নির্যাতনের জাঁতাকল থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসেন দৃঢ় মনোবল নিয়ে।

 উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী মহান নেতা। তিনি সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের পক্ষে। দক্ষিণ আফ্রিকার কালো মানুষের পক্ষে সংগ্রাম করতে গিয়ে কারাবরণ করেছেন, সহ্য করেছেন, অত্যাচার, নির্যাতন; কিন্তু তারপরও পিছু হটেননি। অন্যদিকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর কথা বর্ণিত হয়েছে। তিনি সারাজীবন শোষিত মানুষের পক্ষে সংগ্রাম করেছেন। পাকিস্তানিদের অত্যাচারে দিশাহারা বাঙালিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। অতএব বলা যায়, উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।




 “উদ্দীপকে শোষণশাসন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ ফুটে উঠেছে তা যেন ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনারই মূল সুর।”

 সমাজজীবনে অন্যায় শাসন-শোষণ ও বৈষম্য বিদ্যমান। যার জাঁতাকলে কেবল পিষ্ট হয় সাধারণ মানুষ। কিন্তু সবসময় সাধারণ মানুষ তা সহ্য করে না। তাই যুগে যুগে শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সংগ্রামী মানুষ জন্ম নেয়।

 উদ্দীপকে শোষণ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়েছে নেলসন ম্যান্ডেলার কণ্ঠে। দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে তখন তিনি তা মুখ বুজে সহ্য করেননি। সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে গড়ে তুলেছেন প্রতিরোধ, সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেছেন স্বাধিকার চেতনায়। অন্যদিকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনাতেও বাঙালির প্রতিবাদী মানসিকতা তুলে ধরা হয়েছে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরনীতির বিরুদ্ধে বাঙালিরা গড়ে তুলেছে প্রতিরোধ, যুবকেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে মাতৃভাষার মর্যাদা, শাসকগোষ্ঠীর হীন অহমিকা দৃঢ় প্রতিবাদের মাধ্যমে দমিয়ে দিয়েছে । এ সবকিছুর পেছনে ছিল বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ নেতৃত্বগুণ।

 উদ্দীপকে মূলত অত্যাচার-নিপীড়ন বৈষম্যনীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে, যা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার মধ্যেও বিদ্যমান। তাই সঙ্গত কারণেই বলা যায়, উদ্দীপকে ফুটে ওঠা দিকটি ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার মূল সুর।




ক জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

১. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহিউদ্দিন সাহেব কিসের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন?

উত্তর : জেলের ভেতর অনশন ধর্মঘট করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন।

২. জেলের সুপারিনটেনডেন্টের নাম কী?

উত্তর : আমীর হোসেন।

৩. মোখলেসুর রহমান কোন পদে চাকরি করতেন?

উত্তর : ডেপুটি জেলার পদে।

৪. কোন আমলা খুবই লেখাপড়া করতেন?

উত্তর : ডেপুটি জেলার মোখলেসুর রহমান।

৫. ঢাকা থেকে শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিনকে কোন জেলে পাঠানো হয়?

উত্তর : ফরিদপুর জেলে।

৬. সুবেদার কোথাকার ছিল?

উত্তর : সুবেদার ছিলেন একজন বেলুচি ভদ্রলোক।

৭. ‘ইয়ে কেয়াবাত হ্যায়, আপ জেলখানা মে’-এর উত্তরে শেখ মুজিব কী বলেছিলেন?

উত্তর : তিনি বলেছিলেন ‘কিসমত’।

৮. প্রবন্ধে কোন পার্কের কথা উলে­খ আছে?

উত্তর : ভিক্টোরিয়া পার্ক।

৯. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কয়টি চিঠি লিখেছিলেন?

উত্তর : চারটি চিঠি লিখেছিলেন।

১০. বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে কারা ফতোয়া দিতেন?

উত্তর : মওলানা সাহেবরা বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে ফতোয়া দিতেন।

১১. জেলের ভিতর দুজন কী জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন?

উত্তর : অনশন ধর্মঘট পালন করার জন্য।

১২. দুজন আলোচনা করে কী ঠিক করেছিলেন?

উত্তর : যাই হোক না কেন, তারা অনশন ভাঙবেন না।

১৩. মোখলেসুর রহমান সাহেব কোন দায়িত্বে ছিলেন?

উত্তর : রাজবন্দিদের ডেপুটি জেলার।

১৪. সরকার বছরের পর বছর রাজবন্দিদের কীভাবে আটক রাখছে?

উত্তর : বিনা বিচারে আটক রাখছে।

১৫. মোখলেসুর রহমান সাহেব কেমন লোক ছিলেন?

উত্তর : খুবই অমায়িক, ভদ্র ও শিক্ষিত লোক ছিলেন।

১৬. ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় উলে­খকৃত কে খুব লেখাপড়া করতেন?

উত্তর : মোখলেসুর রহমান সাহেব।

১৭. কত তারিখ সকালবেলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল গেটে নিয়ে যাওয়া হলো?

উত্তর : ১৫ ফেব্র“য়ারি সকালবেলা।

১৮. বঙ্গবন্ধুর মালপত্র, কাপড়-চোপড় ও বিছানা নিয়ে কে হাজির হয়েছিল?

উত্তর : জমাদার সাহেব।

১৯. কী চাপা থাকে না?

উত্তর : খবর চাপা থাকে না।

২০. ঢাকা জেল থেকে বঙ্গবন্ধুকে কোন জেলে পাঠানো হয়েছিল?

উত্তর : ফরিদপুর জেলে পাঠানো হয়েছিল।

২১. দিনের বেলায় কয়টায় নারায়ণগঞ্জ থেকে জাহাজ ছাড়ে?

উত্তর : বেলা এগারোটায়।

২২. কে রওনা দিতে দেরি করছিলেন?

উত্তর : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

২৩. দেরি করতে করতে বঙ্গবন্ধু কয়টা বাজিয়ে দিলেন?

উত্তর : দশটা বাজিয়ে দিলেন।

২৪. আর্মড পুলিশের সুবেদার পাকিস্তান হওয়ার সময় কোথায় ছিলেন?

উত্তর : গোপালগঞ্জে ছিলেন।

২৫. কে বঙ্গবন্ধুকে খুবই ভালোবাসতেন এবং শ্রদ্ধা করতেন?

উত্তর : আর্মড পুলিশের সুবেদার সাহেব।

২৬. আর্মড পুলিশের সুবেদার সাহেব বঙ্গবন্ধুকে কার বিপক্ষে কাজ করতে দেখেছেন?

উত্তর : পাকিস্তানের বিপক্ষে।

২৭. বঙ্গবন্ধুদের নারায়ণগঞ্জের কোথায় নিয়ে যাওয়া হলো?

উত্তর : নারায়ণগঞ্জের থানায়।

২৮. নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধু কাকে খবর দিতে বললেন?

উত্তর : শামসুজ্জোহা সাহেবকে খবর দিতে বললেন।

২৯. ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় উলে­খকৃত কার বাড়ি সকলেই চেনে?

উত্তর : খান সাহেব ওসমান আলী সাহেবের বাড়ি।

৩০. ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডের উপরে নতুন কী হয়েছে?

উত্তর : একটা হোটেল হয়েছে।

৩১. কতজন কর্মী নিয়ে জোহা সাহেব বসেছিলেন?

উত্তর : আট-দশজন কর্মী নিয়ে।

৩২. কাদের ত্যাগ ও তিতিক্ষার কথা কোনো রাজনৈতিক কর্মী ভুলতে পারে না?

উত্তর : নারায়ণগঞ্জের কর্মীদের।

৩৩. কোন তারিখে নারায়ণগঞ্জে পূর্ণ হরতাল হয়?

উত্তর : ২১ শে ফেব্র“য়ারি।

৩৪. কাকে বিশ্বাসের ব্যাপারে নেতারা বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করলেন?

উত্তর : মহিউদ্দিন সাহেবকে।

৩৫. মানুষকে কী দিয়ে জয় করা যায়?

উত্তর : ব্যবহার, ভালোবাসা ও প্রীতি দিয়ে।

৩৬. মানুষকে কী দিয়ে জয় করা যায় না?

উত্তর : অত্যাচার, জুলুম ও ঘৃণা দিয়ে।

৩৭. নারায়ণগঞ্জের সহকর্মীরা কতক্ষণ অপেক্ষা করল?

উত্তর : জাহাজ না ছাড়া পর্যন্ত।

৩৮. নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে এসে জাহাজ কোন ঘাটে ভিড়ল?

উত্তর : গোয়ালন্দ ঘাটে ভিড়ল।

৩৯. বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহযাত্রীরা কখন ফরিদপুর পৌঁছলেন?

উত্তর : রাত চারটায় ফরিদপুর পৌঁছলেন।

৪০. বঙ্গবন্ধু কাকে তাঁর নাম বললেন?

উত্তর : চায়ের দোকানের মালিককে।

৪১. ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের কর্মীর নাম কী ছিল?

উত্তর : মহিউদ্দিন।

৪২. ১৯৪৬ সালের ইলেকশনে বঙ্গবন্ধু ফরিদপুরে কী ছিলেন?

উত্তর : ওয়ার্কার ইনচার্জ ছিলেন।

৪৩. ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ কর্মী মহির সাথে আলাপ করতে কে নিষেধ করেছিল?

উত্তর : আইবি’র লোক নিষেধ করেছিল।

৪৪. বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দি তাড়াতাড়ি ওষুধ খেলেন কেন?

উত্তর : পেট পরিষ্কার করার জন্য।

৪৫. অনশন শুরু করার কতদিন পর বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো?

উত্তর : দু’দিন পর।

৪৬. মহিউদ্দিন সাহেব যে-রোগে ভুগছিলেন সেটা কী?

উত্তর : প্লুরিসিস।

৪৭. কত দিন পরে নাক দিয়ে জোর করে খাওয়াতে শুরু করল?

উত্তর : চারদিন পরে।

৪৮. বঙ্গবন্ধুর নাকে কী ছিল?

উত্তর : একটা ব্যারাম ছিল।

৪৯. অনশন শুরু করার কত দিন পরে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দি বিছানা থেকে ওঠার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন?

উত্তর : পাঁচ-ছয় দিন পরে।

৫০. ২১শে ফেব্র“য়ারি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দি কীভাবে দিন কাটালেন?

উত্তর : উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে।

৫১. ছাত্রছাত্রীরা শোভাযাত্রা করে জেল গেটে এসে কী দিচ্ছিল?

উত্তর : বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিল।

৫২. ১৪৪ ধারা দিলেই কী হয়?

উত্তর : গোলমাল হয়।

৫৩. ছাত্রছাত্রী এক জায়গায় হয়ে কী করে?

উত্তর : স্লোগান দেয়।

৫৪. মাতৃভাষা আন্দোলনে কোন জাতি রক্ত দিয়েছে?

উত্তর : বাঙালি জাতি রক্ত দিয়েছে।

৫৫. ২১শে ফেব্র“য়ারি কোথায় গুলি হয়েছিল?

উত্তর : ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের এরিয়ার ভিতরে।

৫৬. মানুষের পতন যখন আসে তখন কী হয়?

উত্তর : পদে পদে ভুল হতে থাকে।

৫৭. উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলে কার মতো নেতাও বাধা না পেয়ে ফিরে যেতে পারেননি?

উত্তর : কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মতো নেতা।

৫৮. কার জনসমর্থন কোনোদিন বাংলাদেশে ছিল না?

উত্তর : খাজা নাজিমউদ্দিনের।

৫৯. কার বাড়ির ভিতরে ঢুকে ভীষণ মারপিট করা হয়েছে?

উত্তর : ওসমান আলী সাহেবের।

৬০. কোথায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি হয়েছে?

উত্তর : সমস্ত ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে।

৬১. বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দিকে সিভিল সার্জন সাহেব দিনের মধ্যে কতবার দেখতে আসতেন?

উত্তর : পাঁচ-সাতবার দেখতে আসতেন।

৬২. বঙ্গবন্ধু তাঁর লেখা চিঠি চারখানা ফরিদপুরে কার কাছে পৌঁছে দিতে বলেছিলেন?

উত্তর : এক আত্মীয়ের কাছে।

৬৩. বঙ্গবন্ধুর চোখের সামনে কাদের চেহারা ভাসছিল?

উত্তর : তাঁর বাবা-মা ও ভাই-বোনদের চেহারা ভাসছিল।

৬৪. কার দুনিয়ায় কেউ নেই?

উত্তর : বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী রেণুর।

৬৫. কার ফরিদপুরে কেউ নেই?

উত্তর : বঙ্গবন্ধুর সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেবের।

৬৬. মহিউদ্দিন সাহেবের বাড়ি কোথায়?

উত্তর : বরিশালে।

৬৭. কী মারফত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির অর্ডার এসেছিল?

উত্তর : রেডিওগ্রাম মারফত।

৬৮. জেলে কে বঙ্গবন্ধুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন?

উত্তর : মহিউদ্দিন সাহেব।

৬৯. বঙ্গবন্ধুকে কে ডাবের পানি খাইয়ে অনশন ভঙ্গ করান?

উত্তর : বঙ্গবন্ধুর সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেব।

৭০. কে জেলে আসার পূর্বদিন পর্যন্ত মুসলিম লীগের বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন?

উত্তর : বঙ্গবন্ধুর সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেব।

৭১. রাজনীতিতে কী দেখা গেছে?

উত্তর : রাজনীতিতে দেখা গেছে একই দলের লোকের মধ্যে মতবিরোধ হলে দুশমনি বেশি হয়।

৭২. ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনা অনুসারে কার সহ্যশক্তি খুব বেশি?

উত্তর : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পিতার।

৭৩. বঙ্গবন্ধুকে কীভাবে ফরিদপুর জেল গেটে নিয়ে যাওয়া হলো?

উত্তর : স্ট্রেচারে করে।

৭৪. জেল থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু কার বাড়িতে উঠলেন?

উত্তর : আলাউদ্দিন খান সাহেবের বাড়িতে।

৭৫. বঙ্গবন্ধুকে দেখতে কে রাস্তায় চলে এসেছিলেন?

উত্তর : বঙ্গবন্ধুর এক ফুফু।

৭৬. বঙ্গবন্ধুর ফুফুবাড়ি কোন গ্রামে?

উত্তর : নূরপুর গ্রামে।

৭৭. বঙ্গবন্ধুর বড় বোনের বাড়ি কোথায়?

উত্তর : মাদারীপুরের দত্তপাড়ায়।

৭৮. বঙ্গবন্ধুর মুক্তির খবর পেয়ে কোন ঘাটে কর্মীরা বসেছিল?

উত্তর : সিন্ধিয়াঘাটে।

৭৯. বঙ্গবন্ধুর ভাই খবর পেয়ে কোত্থেকে রওনা হলেন?

উত্তর : খুলনা থেকে।

৮০. বঙ্গবন্ধু মুক্তি পাওয়ার কত দিন পর বাড়ি পৌঁছেছিলেন?

উত্তর : পাঁচদিন পর।

৮১. বঙ্গবন্ধুর গলা ধরে তার জ্যেষ্ঠ কন্যা হাসু বা হাসিনা প্রথমেই কী বলল?

উত্তর : “আব্বা, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, রাজবন্দিদের মুক্তি চাই।”

৮২. বঙ্গবন্ধুর পরিবার ২১শে ফেব্র“য়ারিতে কোথায় ছিল?

উত্তর : ঢাকায়।

৮৩. কে বঙ্গবন্ধুকে দেখার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন?

উত্তর : বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী।

৮৪. বঙ্গবন্ধুকে দেখতে সহকর্মীরা কোন কোন জায়গা থেকে এসেছিল?

উত্তর : গোপালগঞ্জ, খুলনা ও বরিশাল থেকে।

৮৫. কে মাঝে মাঝে খেলা ফেলে এসে বঙ্গবন্ধুকে ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকে?

উত্তর : বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা হাসু বা হাসিনা।

৮৬. বঙ্গবন্ধু যখন জেলে যান তখন তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র কামালের বয়স কত ছিল?

উত্তর : মাত্র কয়েক মাস।

৮৭. কে বঙ্গবন্ধুর গলা ধরে পড়ে রইল?

উত্তর : বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র কামাল।

৮৮. বঙ্গবন্ধুর মতে কয়শ’ বছর পরে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম?

উত্তর : দুইশ’ বছর পরে।

৮৯. কবে থেকে গ্রামের লোকজন বুঝতে আরম্ভ করেছে যে, যারা শাসন করছে তারা জনগণের আপনজন নয়?

উত্তর : ১৯৫২ সাল থেকে।




খ অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর

১. শেখ মুজিবুর রহমান অনশন ধর্মঘট করার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?

উত্তর : বিনাবিচারে রাজনীতিবিদদের জেলে আটকে রাখার প্রতিবাদস্বরূপ শেখ মুজিবুর রহমান অনশন ধর্মঘট করার সিদ্ধান্ত নিলেন।

ভাষা-আন্দোলনে বহু নেতা-কর্মী আটক হয়েছিলেন। তার মধ্যে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রায় সাতাশ-আটাশ মাস তাঁকে বিনাবিচারে জেলবন্দি করে রাখা হয়। প্রতিবাদস্বরূপ তিনি ও মহিউদ্দিন সাহেব অনশন শুরু করেন। হয় মুক্তি না হয় মৃত্যু। এ ছিল তাঁদের চিন্তা। অবশেষে তাঁরা অনশন শুরু করলেন।

২. “ইয়ে ক্যায়া বাথ হ্যায়, আপ জেলখানা মে’ কে, কেন বলেছিলেন?

উত্তর : সুবেদার বেলুচি ভদ্রলোক বঙ্গবন্ধুকে আগে থেকে চিনতেন বলে একথা বলেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকা থেকে ফরিদপুর জেলে নেয়ার সময় আর্মড পুলিশের সুবেদার তাকে চিনে ফেলেন। কেননা, পাকিস্তান হওয়ার সময় সুবেদার গোপালগঞ্জে ছিলেন। তিনি ছিলেন বেলুচি ভদ্রলোক। শেখ মুজিবকে বেশ ভালোবাসতেন ও শ্রদ্ধা করতেন। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তিনি তাঁকে প্রশ্নটি করেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উত্তর দেন “কিসমত”। এরপর তাঁদের ঘোড়ার গাড়িতে তুলে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাটে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়।

৩. ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ নেয়ার পথে শেখ মুজিব গাড়িতে উঠতে-নামতে দেরি করছিলেন কেন?

উত্তর : শেখ মুজিবুর রহমান এজন্য দেরি করছিলেন যে, যদি কোনো পরিচিত লোককে দেখা যায় তবে তাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জানাবেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহিউদ্দিন সাহেবকে ঢাকা জেলখানা থেকে ফরিদপুর নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সকাল এগারোটায় নারায়ণগঞ্জ থেকে লঞ্চে উঠতে হবে। তাই আমলারা তাড়াতাড়ি করছিল। অথচ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বই, খাতা, ব্যাগ ইত্যাদি গোছাতে এবং ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামতে ও ট্যাক্সিতে উঠতে দেরি করছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন যদি পরিচিত কোনো লোক পাওয়া যায় তবে তার কাছে সব খবরাখবর পাঠানো যাবে।

৪. “দুঃখ আমার নেই”-শেখ মুজিব কেন একথা বললেন?

উত্তর : অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে মরতে বঙ্গবন্ধুর কোনো দুঃখ নেই বলে তিনি প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতিটি করেছেন।

ঢাকা থেকে ফরিদপুর নেয়ার সময় নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাটে যখন জাহাজে উঠলেন তখন আওয়ামী নেতাকর্মী শেখ মুজিবের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পূর্বে তিনি সহকর্মীদের উদ্দেশ করে বললেন, “জীবনে আর নাও দেখা হতে পারে।” এরপর সকলের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে বলেন, “মরতে তো একদিন হবেই যদি অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে মরতে পারি তবে সে মৃত্যু হতে আমার কোনো দুঃখ নেই।”

৫. বঙ্গবন্ধুকে নাকের ভেতর নল দিয়ে খাবার খাওয়ানো হচ্ছিল কেন?

উত্তর : অনশনরত মুজিব যেন মারা না যায় সেজন্য তাঁকে নাকের ভেতর নল দিয়ে তরল খাবার খাওয়ানো হচ্ছিল।

অনশন করার পূর্বে শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিন সাহেব ওষুধ খেয়ে পেট পরিষ্কার করে নিলেন। এরপর অনশন শুরুর দুদিনের মাথায় তাদেরকে হাসপাতালে নিতে হয়। চারদিন চলে গেলে অবস্থা আরো নাজুক হয় এবং দুজনই মুমূর্ষু হয়েপড়েন। ফলে কোনো উপায়ান্তর না দেখে চিকিৎসকরা নাকের মধ্যে নল ঢুকিয়ে তরল খাবার খাইয়েছিলেন। এজন্য বঙ্গবন্ধুর নাকের ভেতর ঘা হয়ে গিয়েছিল।

৬. বঙ্গবন্ধু ও তার সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেব অনশন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?

উত্তর : ক্ষমতাসীন সরকারের অন্যায় ও নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেব অনশন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিলেন।

বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেব ছিলেন রাজবন্দি। সরকারের স্বৈরাচারী শাসন, জুলুম ও অন্যায় কাজের প্রতিবাদে তাঁদের বন্দি হতে হয়েছে। অথচ সরকার তাঁদের বছরের পর বছর বিনাবিচারে আটক রাখছে। সরকারের এমন অন্যায় ও নির্যাতনমূলক কাজের প্রতিবাদ করার জন্যই তাঁরা অনশন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিলেন।

৭. জেলের কর্তা-ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দির বলার কিছু নেই কেন?

উত্তর : জেলের কর্তা-ব্যক্তিরা অমায়িক, ভদ্র, শিক্ষিত এবং কর্তব্যকর্মে নিষ্ঠাবান ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দি সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে অনশন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিলে জেলা সুপারিনটেনডেন্ট এবং রাজবন্দিদের ডেপুটি জেলার তাঁদেরকে এ সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসার অনুরোধ করেন। জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁদের বলার কিছু নেই। জেলের কর্তা-ব্যক্তিদের সাথে তাদের কখনো মনোমালিন্য হয়নি। বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর বন্ধু উভয়ে জানেন, সরকারের হুকুমেই জেলের কর্তা-ব্যক্তিদের চলতে হয়। তাছাড়া তাদের অমায়িক, ভদ্র ও শিক্ষিত আচরণও বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দিকে।

৮. বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দিকে অন্য জেলে পাঠানোর কারণ কী?

উত্তর : ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দিকে অন্য জেলে পাঠায়।

ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেবকে বছরের পর বছর বিনাবিচারে আটক রেখেছে। সরকারের এ অত্যাচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ও তার সহবন্দি অনশন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেন। রাজধানী শহর ঢাকার কেন্দ্রীয় জেলের এমন একটি ব্যাপার মুহূর্তে সারা শহরে ছড়িয়ে পড়লে জন-অসন্তোষ বৃদ্ধি পেত। জন-অসন্তোষ ও বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে সরকার তাই ঢাকার বাইরের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের জেলে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দিকে পাঠায়।

৯. ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুর জেলে রওনা হতে বঙ্গবন্ধু দেরি করলেন কেন?

উত্তর : নারায়ণগঞ্জের সকাল বেলার জাহাজে ওঠা বাতিল করে তাঁদের ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুর জেলে গমনের বিষয়টি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জানানোর প্রয়োজনে।

কর্তৃপক্ষ বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেবকে আকস্মিক ও অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুর জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধু জেল থেকে রওনা করতে দেরি করতে লাগলেন। কেননা নারায়ণগঞ্জ থেকে বেলা ১১টার জাহাজে ওঠা এড়াতে পারলে রাত ১টায় পরবর্তী জাহাজ। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর কাছে তাঁর ঢাকা থেকে ফরিদপুর বদলি হওয়ার খবরটি পৌঁছে দিতে পারবেন।

১০. আর্মড পুলিশের সুবেদার বঙ্গবন্ধুকে খুবই ভালোবাসত এবং শ্রদ্ধা করত কেন?

উত্তর : পাকিস্তান আন্দোলন ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য আর্মড পুলিশের সুবেদার বঙ্গবন্ধুকে খুবই ভালোবাসত এবং শ্রদ্ধা করত।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলনের একজন প্রথম সারির কর্মী। আর্মড পুলিশের সুবেদার একজন বেলুচি ভদ্রলোক। পাকিস্তান রাষট্র প্রতিষ্ঠাকালীন তিনি গোপালগঞ্জে ছিলেন। গোপালগঞ্জকে পাকিস্তানভুক্ত করতে মুসলিম লীগের একজন প্রথম সারির কর্মী ও তরুণ নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য আর্মড পুলিশের সুবেদার বঙ্গবন্ধুকে খুবই ভালোবাসত এবং শ্রদ্ধা করত।

১১. বঙ্গবন্ধু ট্যাক্সিওয়ালাকে বেশি জোরে চালাতে নিষেধ করার মূল কারণ কী?

উত্তর : মূলত পথিমধ্যে চেনাজানা কোনো লোকের সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার প্রত্যাশায় বঙ্গবন্ধু ট্যাক্সিওয়ালাকে জোরে চালাতে নিষেধ করলেন।

বঙ্গবন্ধু চাইছিলেন কোনো প্রকারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে তাঁর ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুর জেলে আকস্মিক বদলি এবং তাঁদের অনশন ধর্মঘটের খবরটি পৌঁছে দিতে। ঢাকা জেল থেকে ভিক্টোরিয়া পার্ক পর্যন্ত এসেও সে কাজটি তিনি করতে পারেননি। আশা ছিল রাস্তায় কোনো চেনাজানা লোককে পেলে তিনি খবরটি পৌঁছে দিতে সমর্থ হবেন। এ কারণে রাস্তায় তিনি এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিলেন। কিন্তু ট্যাক্সিওয়ালা বড় বেশি জোরে চালাচ্ছিল। সে কারণে বঙ্গবন্ধু কৌশল করে ট্যাক্সিওয়ালাকে বললেন, “ বেশি জোরে চালাবেন না, কারণ বাবার কালের জীবনটা যেন রাস্তায় না যায়।”

১২. বঙ্গবন্ধু রাতে হোটেলে খেতে গেলেন কেন?

উত্তর : নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে রাজনৈতিক আলাপের প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু রাতে হোটেলে খেতে গেলেন।

বঙ্গবন্ধুর খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জের শামসুজ্জোহা সাহেব, বজলুর রহমান, আলমাস আলীসহ অনেকেই থানায় এসেছিলেন। কিন্তু তাদের থানায় বেশিক্ষণ অবস্থান করতে দেয়া হয়নি। এমতাবস্থায় বঙ্গবন্ধু আশু-রাজনৈতিক আলাপ ও কর্মকৌশল ঠিক করতে নারায়ণগঞ্জের নেতৃবৃন্দকে রাতে কোনো হোটেলে দেখা করতে বললেন। পরিকল্পনা অনুসারে বঙ্গবন্ধু রাতে হোটেলে খেতে গেলেন।

১৩. নানা নির্যাতন, নিপীড়ন এমনকি মরণেও কেন বঙ্গবন্ধুর দুঃখ নেই?

উত্তর : অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নানা নির্যাতন, নিপীড়ন এমনকি মরণেও বঙ্গবন্ধুর দুঃখ নেই বলে তিনি নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জানান। রাত ১টার সময় বঙ্গবন্ধু নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সকলের কাছ থেকে বিদায় নেন। এ সময় তিনি বলেন, জীবনে আর দেখা না হতেও পারে। তাই সকলে যেন তাকে ক্ষমা করে দেয়। এরপর তিনি আরও বলেন, একদিন মরতেই হবে, তাই তার কোনো দুঃখ নেই। কেননা, অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে মরার মধ্যে শান্তি আছে। তাই অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নানা নির্যাতন, নিপীড়ন, এমনকি মরণেও বঙ্গবন্ধুর দুঃখ নেই।

১৪. বঙ্গবন্ধু তাঁর ফরিদপুর জেলে আসার কথা কীভাবে ফরিদপুরের সহকর্মীদের কাছে পৌঁছালেন?

উত্তর : মহিউদ্দিন ওরফে মহি নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মীর মারফত বঙ্গবন্ধু তাঁর ফরিদপুর জেলে আসার কথা ফরিদপুরের সহকর্মীদের কাছে পৌঁছালেন।

সকালে নাশতা করতে বাইরের এক চায়ের দোকানে গিয়েও বঙ্গবন্ধু ফরিদপুরের পরিচিত কাউকে দেখতে পেলেন না। জেলের দিকে ফেরার সময় ফরিদপুরের ১৯৪৬ সালের ইলেকশনের সময় বঙ্গবন্ধু মুসলিম লীগের ওয়ার্কার ইনচার্জ ছিলেন, সে সময়কার মহিউদ্দিন ওরফে মহি নামের এক কর্মীকে সাইকেলযোগে কোথাও যেতে দেখলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে নাম ধরে ডাকলেন। আইবি’র নিষেধ অগ্রাহ্য করে বঙ্গবন্ধু বর্তমান আওয়ামী লীগ কর্মী মহির মারফত তার ফরিদপুর জেলে আগমন এবং অনশনের কথা ফরিদপুরের সহকর্মীদের কাছে পৌঁছালেন।

১৫. বঙ্গবন্ধু আর তাঁর সহবন্দিকে জেল কর্তৃপক্ষ কীভাবে খাওয়াচ্ছিল?

উত্তর : বঙ্গবন্ধু আর তাঁর সহবন্দিকে জেল কর্তৃপক্ষ নাকের ভিতর নল দিয়ে জোর করে খাইয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু আর তাঁর সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেব দুজনের শরীর খারাপ হওয়ায় জেল-কর্তৃপক্ষ অনশন শুরুর চারদিন পর নাক দিয়ে জোর করে খাওয়াতে শুরু করল। নাকের ভিতর নল ঢুকিয়ে তা পেটের মধ্যে পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। তারপর নলের মুখে একটা কাপের মতো লাগিয়ে দেয়। তাতে একটা ছিদ্র থাকে। সেই কাপের মধ্যে দুধের মতো পাতলা করে খাবার ঢেলে দেয়।

১৬. জেল কর্তৃপক্ষ হ্যান্ডকাফ পরানোর লোকজন নিয়ে আসে কেন?

উত্তর : জেল কর্তৃপক্ষের নাকের ভিতর নল দিয়ে জোর করে খাওয়ানোতে আপত্তি জানালে তারা হ্যান্ডকাফ পরানোর লোকজন নিয়ে আসে।

আগে থেকেই মহিউদ্দিন সাহেব প্লুরিসিস রোগে ভুগছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নাকেও একটা ব্যারাম ছিল। দু’তিনবার নল লাগানোর পরেই নাকে ঘা হয়ে গিয়েছিল। রক্ত আসত আর যন্ত্রণা হতো। এমতাবস্থায় তাঁরা দুজন নল দিয়ে খাবার গ্রহণে আপত্তি জানালে জেল কর্তৃপক্ষ হ্যান্ডকাফ পরানোর লোকজন নিয়ে আসে, বাধা দিলে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে জোর করে খাওয়াবে বলে।

১৭. বঙ্গবন্ধু একজন কয়েদিকে দিয়ে গোপনে কেন কয়েক টুকরা কাগজ আনলেন?

উত্তর : চিঠি লেখার জন্য বঙ্গবন্ধু একজন কয়েদিকে দিয়ে গোপনে কয়েক টুকরা কাগজ আনলেন।

অতিশয় দুর্বলতার কারণে বঙ্গবন্ধু বিছানা থেকে ওঠার শক্তি হারিয়ে ফেলছিলেন। হার্টে ভীষণ প্যালপিটিশন হচ্ছিল। নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছিল, দুহাত কাঁপছিল, তিনি ভাবলেন আর বেশিদিন আয়ু নেই। এমতাবস্থায় একান্ত প্রিয়জন পিতা-মাতা, স্ত্রী এবং রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে চিঠি মারফত কিছু লেখার জন্য একজন কয়েদি মারফত গোপনে কয়েক টুকরা কাগজ আনালেন।

১৮. ২১শে ফেব্র“য়ারি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দিদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে কাটানোর কারণ কী?

উত্তর : নূরুল আমীন সরকারের ১৪৪ ধারা জারির কারণে ২১শে ফেব্র“য়ারি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দি উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছেন যে, ১৪৪ ধারা জারি করলেই গোলমাল হয়, জারি না করলে গোলমাল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। জেলখানার বন্দি জীবনে বঙ্গবন্ধু বা তাঁর সহবন্দি বাইরের কোনো খবরই পাচ্ছিলেন না। ঢাকা থেকে অনেক দূরের শহর ফরিদপুরেও হরতাল এবং নানা স্লোগান সহকারে ছাত্রছাত্রীদের শোভাযাত্রা জেল গেটে আসছিল। এতে করে ঢাকার পরিস্থিতি চিন্তা করে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহবন্দি ২১শে ফেব্র“য়ারি উৎকণ্ঠায় কাটালেন।

১৯. বঙ্গবন্ধু ২১শে ফেব্র“য়ারিতে ছাত্রজনতার মিছিলে গুলি করাকে মুসলিম লীগ সরকারে বড় অপরিণামদর্শিতার কাজ বললেন কেন?

উত্তর : বঙ্গবন্ধু ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি করাকে মুসলিম লীগ সরকারের বড় অপরিণামদর্শিতার কাজ বললেন। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখের ভাষা হলো বাংলা। সে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে অস্বীকার করায় পাকিস্তানি শাসকবর্গের প্রতি এদেশবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। দেশবাসীর নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদকে অস্ত্রের মুখে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা যে বিরাট মূর্খতা ও আত্মঘাতীমূলক কাজ, সে বিষয়ে ইঙ্গিত করে বঙ্গবন্ধু বললেন, মুসলিম লীগ সরকার কত বড় অপরিণামদর্শিতার কাজ করল। কেননা, জোর করে কোনো জাতির অনুভূতি, চেতনা ও জাগরণকে দাবিয়ে রাখা যায় না।

২০. ১৯৫২ সালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারের দমন-পীড়নের চিত্র তুলে ধর।

উত্তর : ১৯৫২ সালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার দমন-পীড়ন চালাতে গিয়ে সমস্ত ঢাকায় ও নারায়ণগঞ্জে এক ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিল।

ক্ষমতাসীন সরকার আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা মওলানা আবদুুর রশিদ তর্কবাগীশ এমএলএ, খয়রাত হোসেন এমএলএ, খান সাহেব ওসমান আলী এমএলএ এবং মোহাম্মদ আবুল হোসেন ও খন্দকার মোশতাক আহমদসহ শত শত ছাত্র ও কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল। দু-একদিন পরে বেশ কয়েকজন প্রফেসর, মওলানা ভাসানী, শামসুল হক সাহেব ও বহু আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার করে। নারায়ণগঞ্জে খান সাহেব ওসমান আলীর বাড়ির ভিতরে ঢুকে লোকজনকে ভীষণ মারপিট করে। বৃদ্ধ খান সাহেব ও তাঁর ছেলেমেয়েদের ওপর অকথ্য অত্যাচার চালায়।

২১. অনশনে মৃত্যু সম্পর্কে সিভিল সার্জনের জিজ্ঞাসার জবাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : বঙ্গবন্ধু দেশ ও জাতির জন্য তাঁর মৃত্যুতেও দুঃখ নেই বলে জানান।

অনশনে বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে যান। এমতাবস্থায় সিভিল সার্জন বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, এভাবে মৃত্যুবরণ করে কি কোনো লাভ হবে? বাংলাদেশ যে আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করে। সিভিল সার্জনের প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু বলেন, “অনেক লোক আছে। কাজ পড়ে থাকবে না। দেশকে ও দেশের মানুষকে ভালোবাসি, তাদের জন্য। জীবন দিতে পারলাম, এই শান্তি।”

২২. ব্যাখ্যা কর- “হাসু আপা, হাসু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি?”

উত্তর : বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র কামাল তার বড় বোন হাসু বা হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন।এ কথায় দীর্ঘদিন না দেখা জন্মাদাতা পিতার অচেনা হয়ে যাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।

বঙ্গবন্ধু যখন কারাবন্দি হিসেবে জেলে যান তখন কামাল কয়েক মাসের শিশুমাত্র। দীর্ঘ সাতাশ-আটাশ মাস কারাজীবন শেষে বঙ্গবন্ধু বাড়ি ফিরলে কন্যা হাসু তাঁকে চিনলেও পুত্র কামালের কাছে তিনি অপরিচিতজন। একদিন দুই ভাই-বোন খেলার সময় হাসু কিছুক্ষণ পরপর খেলা রেখে বঙ্গবন্ধুর কাছে এসে ‘আব্বা’ বলে ডাকছিল। কামাল তৃষ্ণার্ত নয়নে চেয়ে দেখছিল। একপর্যায়ে কামাল তার বড় বোনকে উদ্দেশ করে বলল, “হাসু আপা, হাসু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি?” এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু পরবর্তীতে দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলেছিলেন, নিজের ছেলেও অনেকদিন না দেখলে ভুলে যায়।

5 comments:

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.