ads

তিন দিনব্যাপী “তীর প্রেজেন্টস- সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১৩তম বিজ্ঞান উৎসব-২০২২ এর পর্দা নামল”


শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সিটি গ্রুপের (‘তীর’) সহযোগিতায় সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের ‘গ্রেগরিয়ান সাইন্স ক্লাব’- এর উদ্যোগে অনুষ্ঠতি ‘SGHSC 13th Science Festival-2022’ ২৫শে জুন শনিবার সমাপ্ত হলো।


এবারের বিজ্ঞানমেলার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো- ‘‘বিজ্ঞানমনস্ক মানবজাতি, রুখবে ভবিষ্যৎ অতিমারি”। মেলার ইভেন্ট সমূহের মধ্যে ছিলো অলিম্পিয়াড, দুটি ক্যাটাগরির সাইন্স প্রজেক্ট ডিসপ্লে­ যথা- ফিজিক্যাল এবং আইটি, বিজ্ঞান ভিত্তিক ওয়াল ম্যাগাজিন কম্পিটিশন এবং বিরতী সময়ে সাইন্স ফিকশন মুভি প্রদর্শন। প্রতিটি ইভেন্টের জন্য স্পট রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা ছিলো।

বিজ্ঞানমেলায় অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে ৫টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছিলো। তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির জন্য কিডস গ্রুপ, পঞ্চম-ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য জুনিয়র গ্রুপ, সপ্তম-অষ্টম শ্রেণির জন্য ইন্টারমিডিয়েট গ্রুপ, নবম-দশম শ্রেণির জন্য সিনিয়র গ্রুপ এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য কলেজ গ্রুপ নির্ধারণ করা হয়েছিলো।



বিজ্ঞানমেলার প্রথম অংশে ১৮ই জুন, ২০২২ শনিবার অনুষ্ঠিত হয় অলিম্পিয়াড ডে। ঐ দিন সকাল থেকে জেনারেল সাইন্স, ম্যাথ, ফিজিক্স, ক্যামেস্ট্রি, বায়োলজি, এস্ট্রোনমি ও আইটি অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়।


পরবর্তীতে ২৩শে জুন বৃহস্পতিবার বিজ্ঞান মেলার প্রজেক্ট প্রদর্শনী শুরু হয়। ঐ দিন বিকেল ৩ টায় মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান, বিজ্ঞান অনুষদের প্রাক্তন ডীন ও IQAC এর পরিচালক ড. মো: কামরুল আলম খান। উদ্‌বোধনী অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ব্রাদার ড. লিও জেমস্ পেরেরা সিএসসি


মেলায় ১৭৫ টি বিজ্ঞান প্রজেক্ট প্রদর্শিত হওয়ার পাশাপাশি প্রায় ৩৫টি দেয়াল পত্রিকা প্রদর্শিত হয়। এতে নটরডেম কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রিভারভিউ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, ঢাকা সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুলসহ বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। আয়োজক কমিটি বিভিন্ন ইভেন্টে ৩৭১টি পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছিল। প্রজেক্টগুলো মূল্যায়ন করেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০জন সম্মানিত শিক্ষক যাঁদের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা রয়েছে। ২৫শে জুন শনিবার পুরস্কার-বিতরণী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মেলার সমাপ্তি ঘটে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অফ ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ-এর রেজিস্টার গ্রেগরিয়ান অধ্যাপক ড. ইফফাত কায়েস চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিটি গ্রুপের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের এক্সেকিউটিভ ডিরেক্টর জনাব জাফর উদ্দিন সিদ্দিকি ও  মুনীর হাসান,  সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।





সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে গ্রেগরিয়ান বিজ্ঞান ক্লাবের মডারেটর সুখন চন্দ্র দে স্যার বিজ্ঞানমেলার সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেন। তিনি বলেন গ্রেগরিয়ান বিজ্ঞানমেলা পঞ্চাশের দশক থেকে শুরু হয় এবং ১৯৬৬ সালে সাইন্স ক্লাব গঠিত হয়। আমরা বিগত প্রায় ১৩ বছর ধরে এ ধরনের বিজ্ঞানমেলা আয়োজন করে আসছি এবং শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলার জন্য আমাদের এই প্রচেষ্টা। 




সিটি গ্রুপের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের এক্সেকিউটিভ ডিরেক্টর জনাব জাফর উদ্দিন সিদ্দিকি তাঁর মূল্যবান মতামত তুলে ধরেন। তিনি বলেন ‘আমি এখানে আসার আগে সবার কয়েকটি প্রজেক্ট দেখলাম। শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে উচ্ছ্বাস দেখে আমি অভিভূত। আজ বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় দিন। আজ পদ্মানদীর বুকে যে সেতু চালু হলো তাও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষদের অবদান। সবাই হয়তো বিজ্ঞানী হয় না। কিন্তু বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ সবাই হতে পারে।’ 




বিশেষ অতিথি হিসেবে সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি ও প্রথম আলো প্রতিনিধি জনাব মুনীর হাসান সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। ‘তিনি ১,২,৩ বলে সবার নাম জানতে চান এবং বলেন যা কিছু ভালো তার সাথে প্রথম আলো। আর তোমরা, শিক্ষার্থীরা ভালো বলেই তোমাদের সাথে প্রথম আলো। তিনি পদ্মা সেতু তৈরির জন্য সকলকে হাত তালি দিয়ে অভিনন্দন জানাতে বলেন। তিনি বলেন আমাদেরকে সববিষয়ই জানতে হবে, সবচেয়ে বড়ো কথা আমাদেরকে মানুষ হতে হবে। আমরা ২০৪১ সাল নাগাদ বিশ্বমানের উন্নত দেশের কাতারে যেতে চাই। তোমাদের এমন কিছু করতে হবে যেটা একলাফে বাংলাদেশকে উন্নতির কাতারে নিয়ে যাবে। গত ২ বছরে আমরা মানুষের সাথে কথা বলতে পারিনি তাই অনেক পিছিয়ে গিয়েছি। তাই তোমাদের নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে, নিজেকে তৈরি করতে হবে এবং বাংলাদেশের জয় ছিনিয়ে আনতে হবে।’ 





অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গ্রেগরিয়ান অধ্যাপক ড. ইফফাত কায়েস চৌধুরী বলেন, ‘আজ থেকে ৪২ বছর আগে এই দিনে আমি এই স্কুল থেকে পাশ করে গিয়েছি তাই এটা আমার কাছে একটি বিশেষ দিন। একসময় আমরাও সাইন্স ফেয়ার করেছি। গত এক সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমেলায় অংশগ্রহণ, তাদের উৎসাহ তাদের অনেকদূর নিয়ে যাবে। এছাড়াও  স্মৃতিচারণে তিনি তাঁর স্কুল জীবনের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন। যা উপস্থিত ছাত্রদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। তিনি বলেন ‘সত্যিই আজ আমি ভাগ্যবান, কারণ অংহকার ও ভালোবাসার স্কুলে আমি অতিথি।’ 




সমাপনী বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ব্রাদার ডক্টর লিও জেমস্ পেরেরা সিএসসি। তিনি বলেন, ‘কয়েকটি বিষয় আমরা স্মরণ করছি। প্রথমত, সেন্ট গ্রেগরীর ছাত্ররা জেতার জন্যই জন্মগ্রহণ করেছে। কিন্তু জিততে হলে তাদের পরিশ্রম করতে হবে। আমরা সবাই হয়তো বিজ্ঞানী হতে পারবো না, কিন্তু যদি যৌক্তিক কাজ করি তবে উইনার হতে পারবো। দ্বিতীয়ত, সেন্ট গ্রেগরীর ছেলেদের স্বপ্ন থাকতে হবে। তারা চাকরির পেছনে ছুটবে না, তারা চাকরি দিবে।’ যারা পুরস্কার পাবে না, তাদের জন্য হাত তালি দিয়ে তাদের অভিনন্দন জানাতে বলেন। কারণ যারা পুরস্কার পাচ্ছে না তাদের জন্যই পুরস্কার প্রাপ্তরা জয়ী হতে পেরেছে। এরপর সাইন্স ফেয়ার উপলক্ষ্যে প্রকাশিত ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করা হয় এবং পুরস্কার প্রাপ্তদের মাঝে প্রধান অতিথি ও অধ্যক্ষ মহোদয় ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।



উল্লেখ্য গত শনিবার উৎসব আয়োজন সম্পর্কে সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ব্রাদার ডক্টর লিও জেমস পেরেরা সিএসসি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা সিলেবাসমুখী। সিলেবাসের বাইরে তাদের জানার আগ্রহ কম। অভিভাবকেরাও শুধু ভালো ফলাফল প্রত্যাশা করে থাকেন। এই বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে ক্লাস পর্যায়ে। শিক্ষার্থীদের সিলেবাসের বাইরে জানার আগ্রহ তৈরি করতে হবে। আমরা পড়াশোনার পাশাপাশি এসব বিষয়ে যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করি। বিজ্ঞান ক্লাবসহ অন্যান্য কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের ভিন্ন দক্ষতা অর্জন করানোর চেষ্টা করি, যেন শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি জীবনে বৈচিত্র্য আনতে পারে।’ অর্জিত শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগিয়ে মানবজাতির কল্যাণ সাধন করতে পারে। অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘উৎসবে পুরান ঢাকার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হয়, যেন তাদের মধ্যেও বিজ্ঞানমনস্কতা ছড়িয়ে পড়ে। করোনা অতিমারি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি বিজ্ঞানের কারণে। তাই শিক্ষার্থীদেরও সেই বিজ্ঞানের চেতনা জাগ্রত করতে চাই। যেন ভবিষ্যতে আবার অতিমারি এলে, তারা বিজ্ঞানের মাধ্যমেই মোকাবিলা করতে পারে, এখন থেকেই যেন সেই ভাবনা শুরু হয়।’ 




প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, অধ্যক্ষ মহোদয় উদ্‌বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন-  তোমরা হয়তো সবাই বিজ্ঞানী হবে না, কিন্তু তোমাদের সবার দায়িত্ব হবে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হওয়া।’ সেই সাথে বিজ্ঞানের আকিষ্কার যেন হয় মানব-কল্যাণমূলক সেই আহ্বানও জানান। তিনি আরো বলেন- ‘আমাদের সমাজে অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষ আছে, কিন্তু মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষের অভাব রয়েছে। তাই তিনি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানী-গুণী হবার পাশাপাশি মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হবার আহবান জানিয়ে বলেন- ‘আবেগিক নয়, যৌক্তিক মানুষ হবে তোমরা।

উদ্‌বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ ব্রাদার লিওনার্ড চন্দন রোজারিও সিএসসি বলেছিলেন, ‘আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের নতুন কিছু করার সূচনা হবে বিজ্ঞানমেলার মধ্য দিয়ে। তারা ভবিষ্যতে তাদের বৃহৎ ক্ষেত্রে এই বিজ্ঞানমেলা থেকে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগাতে পারবে।’ তিনি আরো বলেন- ‘বিজ্ঞান উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্যপুস্তকের সীমা পেরিয়ে বাস্তব জগতে অর্জিত জ্ঞানের ব্যবহার উপলব্ধি করতে পারে। তারা তাদের সুপ্ত প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ পাবে।



উদ্‌বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. মো. কামরুল আলম খান তাঁর বক্তব্যে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উদ্যোগ দেখে তিনি অভিভূত, পুলকিত। তিনি এই বিদ্যালয়ের অতীত গৌরবোজ্জ্বল ফলাফলের কথা তুলে ধরেন এবং বলেন আমরা যখন অতিমারি পার করছি তখন ইনোভেশন ও বিজ্ঞান চর্চার প্রয়োজনীয়তার কথা আরো পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করতে পেরিছি।’ এরপর তিনি আইনস্টাইনের পাশাপাশি আমাদের দেশের বিজ্ঞানী সত্যেন বোসের বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসার কথা তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরে বিজ্ঞান ও  বিজ্ঞানের উপকরণকে ভালোবাসতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান করেন। 














3 comments:

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.