ads

কীর্তিমানের মৃত্যু নেই

কীর্তিমানের মৃত্যু নেই

# ইংরেজিতে একটি কথা আছে, ” Man is mortal” অর্থাৎ মানুষ মরণশীল। যার জন্ম আছে তার মৃত্যু আছে। এই পৃথিবীতে মানুষ দীর্ঘ সময়ের জন্য আসে না বা বেঁচেও থাকে না। মানবজীবন সংক্ষিপ্ত হলেও পৃথিবীতে মানুষ স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকে তার কীর্তির মধ্যে আর সে কীর্তি মানুষের কর্মসাধনারই ফল। মানব জীবনে কর্মই মূল্যায়নের মানদণ্ড। বয়স বড়ো কথা নয়। কাজের মহিমাই মানুষকে চিরদিন বাঁচিয়ে রাখে। মহৎ কর্ম সাধনের মাধ্যমে সীমিত সময়ের জীবন নিয়েও মানুষ পৃথিবীর বুকে অমর হয়ে থাকতে পারে।

# মহাকালের তুলনায় মানুষের পার্থিব জীবন নিতান্তই ক্ষণস্থায়ী। বেঁচে থাকার প্রবল আকাক্ষা সত্ত্বেও একদিন মানুষের পার্থিব জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। স্বল্পস্থায়ী জীবনে কেউ কেউ মহৎ কর্ম সাধনার মাধ্যমে জগতে অমর হয়ে থাকে। রেখে যাওয়া কর্মের মাধ্যমে যারা জগতে অমরত্ব লাভ করেন তারাই কীর্তিমান। মহৎ-কর্মহীন সাধারণ মানুষের পার্থিব জীবনের পরিসমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে তার নামও হারিয়ে যায় পৃথিবী থেকে । পক্ষান্তরে কীর্তিমানরা তাদের মহৎ আদর্শ ও কর্ম দ্বারা যে গৌরব গাঁথা রচনা করেন তা তাদেরকে তাজমহলের মতাে সমুজ্জ্বল রাখে চিরকাল। তারা তাদের ত্যাগ-তিতীক্ষা, সত্য-নিষ্ঠা, কর্ম-সাধনার স্বীকৃতি স্বরূপ লাভ করেন অগণিত মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালােবাসা। কর্মযােগী মহৎ মানুষের মৃত্যু হয় ঠিকই কিন্তু তাদের কর্ম ও প্রতিভার কখনও মৃত্যু হয় না। কারণ তারা মহৎ কর্মের অধিকারী। মহৎ কর্মের মধ্যেই একজন মানুষ পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকে।

# পৃথিবীতে স্বার্থপর মানুষের পাশাপাশি এমন কিছু মানুষ জন্মগ্রহণ করেন যারা তাদের জীবন সীমায় অনেক বড়ো বড়ো কাজ সমাধা করে যান। মহানবি হযরত মুহম্মদ (সা.), যিশুখ্রিষ্ট, গৌতম বুদ্ধ প্রমুখ মানব মুক্তির ক্ষেত্রে সত্যের সন্ধান দিয়েছেন। এছাড়াও পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছেন যারা মানবতার কল্যাণে নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। তাঁরা তাঁদের অর্জিত জ্ঞান, বিদ্যা, শিক্ষা, আবিষ্কার প্রভৃতির দ্বারা মানুষের অশেষ কল্যাণ সাধন করেছেন। মানুষের জন্য মানুষের কল্যাণকর অবদানই মানুষকে পৃথিবীর বুকে স্মরণীয় করে রাখে। পৃথিবীতে কারাে মৃত্যুর পর যদি কেউ তাকে স্মরণ না করে বা তার অভাব বােধ না করে তবে তার জীবন অর্থহীন। তাই প্রতিটি মানুষের জীবনের লক্ষ্য বা ব্রত হওয়া উচিত নিজ নিজ শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী মানবতার কল্যাণে মহৎ কর্মের মাধ্যমে জীবনকে পরিপূর্ণ করে তােলা। একথা অনস্বীকার্য যে, পৃথিবীর বুকে মানুষের মর্যাদার মাপকাঠি হলাে তার কর্ম । যার কর্ম মানবকল্যাণে উৎসর্গিত হয়েছে মৃত্যুর পরেও পৃথিবীর বুকে তিনি অমরত্ব লাভ করেন তার কর্মের গুণে। যার জীবন ও কর্ম আত্মস্বার্থকে কেন্দ্র করে আবর্তিত, মৃত্যুর পর কেউ তাকে স্মরণ করে না। কারণ তিনি স্বার্থপরের মতাে নিজেই নিজের জীবনকে ভােগ করে গেছেন—পৃথিবীর মানুষের জন্য কল্যাণকর কোনাে মহৎ কর্মের দৃষ্টান্ত রেখে যাননি। তাই মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে স্বার্থমগ্ন মহৎ কর্মহীন মানুষের নাম পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে যায়। মনে রাখা উচিত যে, একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই মানুষ পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়। আত্মস্বার্থে জীবননির্বাহ করা উচিত নয়। কারণ সমাজ ও মানুষের প্রতি রয়েছে আমাদের অসংখ্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। সেই দায়িত্ব পালনে যিনি সার্থক তিনিই জগতে কীর্তিমান। 'His name will be remembered for all ages to come." অর্থাৎ 'কীর্তিমানের নাম চিরদিন স্মরণ করা হবে।

# কীর্তি মানুষের মহৎ কর্মের সঞ্চয় হলো চিরদিন মানুষ তাকে মনে রাখবে। পৃথিবীতে প্রতিনিয়তই অসংখ্য মানুষ আসছে আর যাচ্ছে কিন্তু কোনাে মানুষই অমরণশীল নয়। কিন্তু 'The memory of noble deeds last long after one dies'. অর্থাৎ মৃত্যুর পরেও মহৎ মানুষের কাজের স্মৃতি হয় চিরন্তন।



No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.