ads

ভাবসম্প্রসারণ





⌚ অষ্টম শ্রেণি
⌚ নবম শ্রেণি
⌚ দশম শ্রেণি
⌚ একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য প্রযোজ্য

ভাব-সম্প্রসারণ কী:

কবি-সাহিত্যিকদের লেখায় কখনো কোনো একটি বাক্যে বা কবিতার এক বা একাধিক চরণে গভীর কোনো ভাব নিহিত থাকে। সেই ভাবকে বিস্তারিতভাবে লেখা, বিশ্লেষণ করাকে ভাবসম্প্রসারণ বলে। যে ভাবটি কবিতার চরণে বা বাক্যে প্রচ্ছন্নভাবে থাকে, তাকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করতে হয়। সাধারণত সমাজ বা মানবজীবনের মহৎ কোনো আদর্শ বা বৈশিষ্ট্য, নীতি-নৈতিকতা, প্রেরণামূলক কোনো বিষয় যে পাঠে বা বাক্যে বা চরণে থাকে, তার ভাবসম্প্রসারণ করা হয়। ভাবসম্প্রসারণের ক্ষেত্রে রূপকের আড়ালে বা প্রতীকের ভেতর দিয়ে যে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়, তাকে যুক্তি, উপমা, উদাহরণ ইত্যাদির সাহায্যে বিশ্লেষণ করতে হয়।

ভাবসম্প্রসারণ করার নিয়মাবলি: 


⦿ উদ্ধৃত অংশটুকু মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
⦿ অন্তর্নিহিত ভাবটি বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
⦿ অন্তর্নিহিত ভাবটি কোনো উপমা-রূপকের আড়ালে নিহিত আছে কি না, তা চিন্তা করতে হবে।
⦿  সহজ-সরলভাবে মূল ভাবটিকে ফুটিয়ে তুলতে হবে।
⦿  মূল বক্তব্যকে প্রকাশরূপ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে যুক্তি উপস্থাপন করতে হবে।
⦿  বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
⦿  লেখায় যেন বানান না ভুল হয় তা খেয়াল রাখতে হবে।
⦿  তিন বা চার প্যারায় ভাবসম্প্রসারণ লিখতে হবে। (উদাহরণের জন্য আলাদা প্যারা ব্যবহার করা যেতে পারে)
⦿  অপ্রসঙ্গিক উদাহরণ ব্যবহার করা যাবে না।
⦿  ভাবসম্প্রসারণে কোন শিরোনাম, যেমন মূলভাব, সম্প্রসারিত ভাব, মন্তব্য এগুলো লেখা যাবে না।

প্রয়োজনই উদ্ভাবনের জনক

👉 সমস্ত সৃষ্টির মূল প্রেরণা হচ্ছে চাহিদা বা প্রয়োজন। প্রয়োজন না থাকলে মানুষের ভাবনাও থাকে না; তখন বিনা প্রয়োজনে কোনো কিছু করার আগ্রহও থাকে না। তাই কোনো কিছু উদ্ভাবনের প্রারম্ভে যে বিষয়টি বিবেচ্য তা হচ্ছে প্রয়োজন।

👉 অণু থেকে অট্টালিকা পর্যন্ত, বিশ্বসভ্যতার প্রতিটি সৃষ্টির মূলে রয়েছে প্রয়োজন। জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত; পৃথিবীর সব কাজে খাদ্য, বস্ত্র, অন্ন, বাসস্থান, চিকিৎসা- যা কিছু দৃশ্যমান সবই প্রয়োজনের তাগিদে সৃষ্টি। পৃথিবীর সূচনা থেকেই মানুষ তার প্রয়োজন মেটানো বা অভাব পূরণের নিমিত্তেই বিচিত্র জিনিস উদ্ভাবন শুরু করেছে। তবে মানুষের এ উদ্ভাবন নাটকীয়ভাবে হয়নি। সৃষ্টির আদিলগ্নে মানুষ যখন অসহায় তখনই তার বোধ হয় ‘প্রয়োজন’-এর। উদ্ভাবন শুরু হয় নতুন নতুন জিনিসের। আদিম গুহাবাসী মানুষ শিকারের প্রয়োজনে তীর ধনুক আবিষ্কার করে, কাঁচা মাংস পুড়িয়ে খাওয়ার জন্য আগুন জ্বালাতে শেখে। এমনিভাবে প্রয়োজন ও আবিষ্কারের ধারাবাহিক স্তর পেরিয়ে মানুষ পদার্পণ করেছে আধুনিক সভ্যতায়। অন্ধকার থেকে আলোয় যাওয়ার প্রয়োজন উপলব্ধি করে মানুষ বিদ্যুৎ উদ্ভাবন করেছে। সুষ্ঠু যাতায়াত ব্যবস্থার প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করেছে। শিক্ষার প্রয়োজন উপলব্ধি করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান করেছে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল, ওষুধ ও বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের জন্য এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি ইত্যাদি আবিষ্কৃত হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট, ই-মেইল, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন এবং চাষাবাদের জন্য উন্নত ধরনের আধুনিক কৃষিসরঞ্জাম আবিষ্কার করা হয়েছে। সর্বোপরি বিশ্বের সর্বত্র যে বিশাল কর্মকাণ্ডে মানুষ নিয়োজিত রয়েছে তা কেবল প্রয়োজন সাধনেই নিবেদিত।

👉প্রয়োজনের শেষ নেই, তাই মানুষের উদ্ভাবনেরও শেষ নেই। প্রয়োজনের তাগিদেই যুগ যুগ ধরে মানুষ এগিয়ে চলছে অসীমের সন্ধানে।

সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত। 

👉 প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেই সুশিক্ষিত হওয়া যায় না। শিক্ষার পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হতে হলে মানুষকে নিজস্ব প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে এবং সুশিক্ষিত হওয়ার জন্য স্বশিক্ষা বা নিজে নিজে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো জ্ঞানশক্তিতে বলীয়ান হওয়া।

👉 শিক্ষা সম্পূর্ণভাবেই অর্জনসাপেক্ষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্জিত শিক্ষার একটা সীমাবদ্ধতা আছে। নির্দিষ্ট ডিগ্রি প্রদানের মধ্যেই তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে জ্ঞানের পূর্ণতা আসে না। জ্ঞানকে আত্মস্থ করার জন্য আত্মপ্রয়াসের কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষার পরিধি বা সীমা বলতে কিছু নেই। তাই নিরন্তর জ্ঞান-অনুশীলন ছাড়া কেউ সুশিক্ষিত হতে পারে না। আমাদের সমাজে এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁদের উচ্চতর ডিগ্রি আছে, কিন্তু দেশ ও জাতির কল্যাণে তাঁরা কিছুই করতে পারেন না। তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চতর ডিগ্রি থাকলেও তাঁরা স্বশিক্ষায় সুশিক্ষিত না হওয়ায় তাঁদের মধ্যে কখনোই মুক্তচিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে না। আবার অনেক স্বশিক্ষিত ব্যক্তি প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছাড়াও দেশ ও জাতি তথা বিশ্বমানবের কল্যাণের জন্য অনেক কিছু করে গেছেন। দৃষ্টান্তস্বরূপÑ সক্রেটিস, অ্যারিস্টটল, প্লেটো, নিউটন, গ্যালিলিও, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম প্রমুখের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। তাঁরা স্বশিক্ষায় সুশিক্ষিত ছিলেন বলেই মরেও অমর হয়ে আছেন। সুশিক্ষিত লোকের মন মুক্তবুদ্ধির আলোকে উদ্ভাসিত হয়। তিনি বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হন। পরিশীলিত রুচিবোধে তিনি হন উদার ও বিনম্র। সব মিলিয়ে সুশিক্ষিত মানুষ নিঃসন্দেহে হন আলোকিত মানুষ। তাই একটি দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নতিকল্পে স্বশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত লোকের কোনো বিকল্প নেই।

👉 প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং বাস্তব জীবন থেকে অর্জিত শিক্ষার মধ্যে ব্যাপক ফারাক আছে। এ দুয়ের মাঝে সমন্বয় ঘটলে পূর্ণাঙ্গভাবে শিক্ষিত হওয়া যায়। সুশিক্ষার জন্য নিজের উদ্যোগের প্রয়োজন হয়। একমাত্র স্বশিক্ষার মাধ্যমেই সুশিক্ষিত হয়ে ওঠা সম্ভব।

দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য।


👉 দুর্জনের স্বভাব-ধর্ম অন্যের ক্ষতি করা। তাই কোনো শিক্ষিত লোক যদি চরিত্রহীন হয়, তবে অবশ্যই তার সঙ্গ পরিহার করা উচিত। কারণ, তার কাছ থেকে উপকার পাওয়ার চেয়ে বরং ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

👉 মানুষ্যত্ববিরোধী কৃপ্রবৃত্তিগুলো দুর্জন লোকের নিত্যসঙ্গী। এই ধরনের ব্যক্তির নৈতিক চরিত্র দুর্বল। সমাজ, দেশ বা জাতি কেউ এদের দ্বারা উপকৃত হয় না। এরা সমাজের কলঙ্ক। এরা আত্মকেন্দ্রিক, লোভী এবং স্বার্থপর। কোনো কোনো দুর্জন লোক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয় বটে, কিন্তু বাস্তবে হয় না জ্ঞানী। তাদের শিক্ষার সার্টিফিকেট একটি কাগজ ছাড়া অন্য কিছু নয়। সার্টিফিকেট-সর্বস্ব শিক্ষা এদের চরিত্র ও মানসিকতায় কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। এরা শিক্ষিত হয়ে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। চাতুরি ও ছলনায় আরও ক‚টকৈৗশলী হয়ে এরা সহজ-সরল মানুষকে প্রতারিত করে। এদের সাহচর্যে সততার অপমৃত্যু ঘটে। মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ তার চরিত্র। মানুষের এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখে অপরাপর বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটানো আবশ্যক। তেমনি, বিদ্বান হওয়াও একটি গুণ। বিদ্যা অর্জনের মাধ্যমে মানুষ যথার্থ মানুষ হয়ে ওঠে। বিদ্বানের সংস্পর্শে এলে জ্ঞানের আলোয় মন আলোকিত হয়। কিন্তু বিদ্বান ব্যক্তি যদি চরিত্রহীন হয়, তবে তার বিদ্যার কোনো মূল্য থাকে না। সে তার বিদ্যাকে অন্যায় কাজে লাগায়। এরা নিজের স্বার্থ বা অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য যেকোনো কৌশলের আশ্রয় নিতে পারে। চরিত্রহীন বিদ্বান ব্যক্তির কাছ থেকে বিদ্যা লাভ করে জীবনে কোনো কল্যাণ সাধন করা যায় না। তাই দুর্জন যদি বিদ্বানও হয়, তবু তার সান্নিধ্য ও সংশ্রব ত্যাগ করাই মঙ্গলজনক।

👉 বিদ্যা অমূল্য ধন। কিন্তু এ ধন অর্জনকারী ব্যক্তি চরিত্রহীন হলে তা অসৎ উদ্দেশ্যে কাজে লাগাতে পারে। তাই তার সঙ্গ পরিত্যাগ করাই শ্রেয়।

যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। 

👉মানবসভ্যতা বিকাশে নারী ও পুরুষের সমান অবদান রয়েছে। নারী ও পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই গড়ে উঠেছে আমাদের সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতি। নারী ও পুরুষ তাই সমান মর্যাদার অধিকারী।

👉 কেবল পুরুষ কিংবা কেবল নারী থাকলে এ পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব টিকে থাকত না। অনেকে ভুল ধারণা  পোষণ করেন যে, ভাবেন পুরুষ নারীর চেয়ে শক্তিশালী, সভ্যতার বিকাশে কেবল পুরুষের অবদান রয়েছে। কিন্তু নারীর অবদান পুরুষের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। সভ্যতার আদিতে কৃষিকাজ আবিষ্কার করেছে নারী। পুরুষ বাইরের কাজ করলে ঘরের কাজ করেছে নারী। বর্তমানে নারী-পুরুষ উভয়েই ঘরে-বাইরে সমান তালে কাজ করে যাচ্ছে। মানবসভ্যতা বিকাশে নারী ও পুরুষের সমান অবদান রয়েছে। নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই গড়ে উঠেছে আমাদের সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতি। সৃষ্টিকর্তা নারী ও পুরুষকে সৃষ্টি করেছেন একে অপরের পরিপূরক হিসেবে। তাই নারী ও পুরুষ চিরকালের সার্থক সঙ্গী। একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। সৃষ্টির আদিমকাল থেকে নারী পুরুষকে জুগিয়েছে প্রেরণা, শক্তি ও সাহস। আর পুরুষ বীরের মতো সব কাজে অর্জন করেছে সাফল্য। আজ পর্যন্ত বিশ্বে যত অভিযান সংঘটিত হয়েছে, তার অন্তরালে নারীর ভ‚মিকাই মুখ্য। সংগত কারণেই নারী ও পুরুষের কার্যক্ষেত্রে ভিন্নতা আছে। তবুও নারী যেমন পুরুষের ওপর নির্ভরশীল, পুরুষও তেমনি নারীর মুখাপেক্ষী। নারীকে বাদ দিয়ে পুরুষের জীবন অস¤প‚র্ণ, অর্থহীন। নারী ও পুরুষের মিলনের মধ্যেই রয়েছে জগতের সমস্ত কল্যাণ। উভয়ের দানে পুষ্ট হয়েছে আমাদের পৃথিবী। তবুও নারীদের আমরা পুরুষের সমান মর্যাদা দিতে চাই না। আমরা ভুলে যাই যে, নারী ও পুরুষ একই বৃন্তের দুটি ফুল। একটি ছাড়া আরেকটি অচল। নারীর অবদান ও মর্যাদাকে অস্বীকার করা অন্যায়। আমাদের উচিত নারীকে  পুরুষের সমান মর্যাদা দেওয়া এবং এক সঙ্গে কাজ করা। এভাবেই দেশ ও জাতির প্রকৃত উন্নয়ন সাধিত হবে।

👉সমাজের স্বার্থে, রাষ্ট্রের উন্নয়নের স্বার্থে নারীদের সমাজের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে তারা আমাদের সব কাজে উন্নয়নের সহযাত্রী হয়ে অগ্রসর হতে পারে। নারী-পুরুষ উভয়ের সম্মিলিত প্রয়াসেই গড়ে ওঠে সমাজ, সমাজের রূপরেখা, রাষ্ট্রের কাঠামো এবং রাষ্ট্রের উন্নয়ন। এই পৃথিবীর উন্নতির পিছনে নারী ও পুরুষের ভ‚মিকা সমান। তাই নারীকেও পুরুষের সমান মর্যাদার আসনে বসাতে হবে। তবেই দেশ উন্নতি-সমৃদ্ধির চরম শিখরে পৌঁছে যাবে।


স্বার্থমগ্ন যে জন বিমুখ বৃহৎ জগৎ হতে,
সে কখনো শেখেনি বাঁচিতে


#সকলের সঙ্গে মিলেমিশে জীবন ধারণ এবং সুখে-দুঃখে একে অপরের পাশে এসে দাঁড়ানোর মধ্যেই জীবনের যথার্থ সার্থকতা নিহিত। মানুষের সামনে রয়েছে দুটি জগৎ। একটি তার স্বার্থের ক্ষুদ্র পৃথিবী, অন্যটি সমগ্র মানব সমাজকে নিয়ে তার বৃহৎ বিশ্ব। এ দুই পৃথিবীর দোলাচলে মানুষের মন কেবলি স্বার্থের অভিমুখী হয়ে পড়ে। কিন্তু জীবনের ক্ষুদ্র স্বার্থপরতার মধ্যে বেঁচে থাকার কোন সার্থকতা নেই। 


# মানুষের বাঁচার অর্থ শুধু তার শারীরিক অস্তিত্ব রক্ষা নয়। তার যথার্থ পরিচয় মনুষ্যত্বের বিকাশের মধ্যে। মানুষ যতই দেশ ও দশের জন্য আপন স্বার্থকে বিসর্জন দেয় ততই সে অন্যের হৃদয়ে অধিকার লাভ করে। একমাত্র এ পথেই মানুষের জীবন গৌরবান্বিত হয়ে উঠতে পারে। একক আত্মপ্রীতির যে জগৎ, মানুষ সেখানে অতি ক্ষুদ্র। মহাজীবনের সমগ্রতা থেকে বিচ্যুত হয়ে, সে তখন এক ভগ্নাংশ মাত্র। মানুষ যদি শুধু তার নিজের জন্য বাঁচত, যদি নিজের স্বার্থই তার কাছে একমাত্র সত্য হতো তবে পৃথিবীর আজকের সভ্যতা গড়ে উঠত না। পৃথিবীর সভ্যতার মূলে আছে সংখ্যাতীত মানুষের আত্মত্যাগ এবং কর্মপ্রচেষ্টা। মানুষ শুধু নিজের জন্য বাঁচে না, অনেকের জন্য তাকে বাঁচতে হয়। এই বৃহৎ জগৎ এর মধ্যেই তার বাঁচার সার্থকতা। মানুষ যতই স্বার্থ ত্যাগ করে, ততই সে অপরের মধ্যে নিজের সত্তাকে প্রতিষ্ঠা করে তুলতে পারে। অন্যের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মধ্যেই জীবন গৌরবান্বিত হয়ে ওঠে এবং বেঁচে থাকার সার্থকতা মণ্ডিত হয়। মানুষ সামাজিক জীব। সে কখনোই একা বাস করতে পারে না। সকলকে নিয়েই তার জীবন। কারণ মানুষ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। মানুষের যথার্থ পরিচয় সবার মধ্যে সবার সঙ্গে বাঁচার মধ্যে। পরোপকারের মাধ্যমেই মানুষ আনন্দ লাভ করে। আর তখন সমাজ জীবন হয়ে ওঠে সুন্দর। কিন্তু সমাজের এক শ্রেণীর হীনমন্য মানুষ বাস করে যারা পরোপকারের চেয়ে নিজের স্বার্থের ব্যাপারে বেশি তৎপর। তারা নিজের স্বার্থকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে এবং পরের কল্যাণ সাধনের ব্যাপারে বিমুখ। স্বার্থমগ্ন মনুষ্যত্বের পরিপন্থী। স্বার্থপর ব্যক্তিগত জীবন থেকে স্বেচ্ছানির্বাসিত। পৃথিবীর ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, মঙ্গল-অমঙ্গল তার হৃদয় স্পর্শ করে না। মানুষ যদি মানুষের উপকারে না আসে তবে তার জীবন ব্যর্থ। সে-জন্যে সত্যিকারের ভালো মানুষ বলতে তাকে বোঝায়, যে নিজের স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে পরোপকারে নিয়োজিত থাকে। সে জানে স্বার্থসুখ সত্যিকারের সুখ নয়। জানে, পরের কারণে মরণেও সুখ। নিঃস্বার্থ মন নিয়ে পরের জন্য জীবন উৎসর্গ করে। সীমাহীন ভালবাসায় তার বুক ভরে ওঠে। সেই মহৎ মানুষ নিজের জন্য নয়, সে বিশ্ব মানবের জন্য নিবেদিত।


# স্বার্থসর্বস্ব মানুষের স্থান এ পৃথিবীতে নেই। কারণ তারা নিজের স্বার্থের চিন্তায় বিভোর থেকে জগত সংসারের কথা ভুলে যায়। তাই এসব আত্মকেন্দ্রিক মানুষ সমাজের বোঝা, দেশ ও জাতির কলঙ্ক। বাঁচার মত বাঁচতে শিখেনি বলে এরা মৃতের সমতুল্য। পরিশেষে আমরা আরো বলতে পারি যে, পরার্থে জীবন উৎসর্গ করাই তো জীবনের চরম তৃপ্তি। নিজের দুঃখকে তুচ্ছ মনে করে অপরের কল্যাণে নিজকে নিয়োজিত করতে পারলেই জীবন সুখময় ও আনন্দময় হয়ে ওঠে।


দুর্নীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপস্বরূপ।


👉 সমাজে বসবাস করতে হলে মানুষ সমাজ ও রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ও সুশৃঙ্খল কতকগুলো নিয়মনীতি মেনে চলে ও চলতে হয়। কিন্তু মানুষ যখন স্বেচ্ছাচারিতার প্রকাশ ঘটিয়ে অন্যায়ভাবে প্রচলিত নিয়মনীতি ও আইনকানুন লঙ্ঘন করে দুর্নীতির আশ্রয় নেয় জাতীয় জীবনে তখন নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।

👉দুর্নীতি জাতীয় ও অর্থনৈতিক জীবনে এক দুষ্ট রাহু। দুরারোগ্য ব্যাধির মতোই তা সমাজের সকল শ্রেণি ও পেশার লোককে গ্রাস করে। দুর্নীতির প্রভাবে ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে অধঃপতন নেমে আসে। দুর্নীতির ফলে একদিকে যেমন রাষ্ট্রীয় সকল নিয়মনীতিতে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা তেমনি সমাজজীবনেও অবক্ষয়ের চিত্র প্রকট হয়ে ওঠে। দুর্নীতির ফলে প্রশাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। সমাজে দেখা দেয় খুন-রাহাজানি, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মারামারিসহ নানা অপকর্ম। একজন দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি কখনোই সুস্থ স্বাভাবিক চিন্তা করতে পারে না। সে দেশ ও দশের মঙ্গলের কথা না ভেবে স্বার্থচিন্তায় মগ্ন হয়। তখন তার কাছে মানবিক মূল্যবোধ গৌণ হয়ে ওঠে। বিবেক, সততা তার কাছে হয় লাঞ্ছিত, অপমানিত। সে বেছে নেয় অন্যায় ও অসত্যের পথ। এভাবে দেশ ও সমাজ ক্রমেই ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। তাই দুর্নীতিকে জাতীয় জীবনে অভিশাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

👉 দুর্নীতির কারণে একটি জাতির মহত্তম অর্জনও বিফলে যেতে পারে। দুর্নীতির গ্রাসে কেবল অতীত ও বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাও অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যায়। এই সামাজিক অভিশাপকে সমূলে উৎপাটনের জন্য সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।









No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.