ads

রাজু স্মারক ভাস্কর্য : আমাদের চেতনা




ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টি. এস. সি. চত্বরে সন্ত্রাস বিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্য- ঢাকার একটি অন্যতম প্রধান ভাস্কর্য নিদর্শন। একনামে রাজু ভাস্কর্য নামেই এটিকে আমরা চিনি। কিন্তু অনেকেরই এর ইতিহাস হয়তো জানা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চাইলে সে জানায়, এটি মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলনের একটি স্মারক। তবে সে রাজু সম্পর্কে কোন কিছু জানে না। এই না জানার জন্য অবশ্য তাকে একক ভাবে দোষ দেয়া যাবে না। আমাদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের তথ্যগুলো ইন্টারনেটে তেমন ভালোভাবে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের ভাস্কর্য সম্পর্কে জানতে চাইলে আপনাকে সন্তুষ্ট করার মতো তথ্য অনলাইনে নেই। আর আমরা এখন সব কিছুই গুগুল দিয়ে খুঁজি। আর অনলাইনেই জানতে চাই সবকিছু। তারপর আবার একটা অনলাইন পোর্টালে রয়েছে এর সম্পর্কে ভুল তথ্য।
সন্ত্রাস বিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্য : 
সন্ত্রাস বিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্যটি ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দৃপ্তকণ্ঠে সম্মিলিত প্রতিবাদের এক অনন্য প্রতীক। এ ভাস্কর্যে বৃত্তাকারে স্থাপিত আটজন নারী-পুরুষ একে অন্যের হাত ধরে হার না মানা প্রতিবাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ পাচ্ছে। এটি ১৬ ফুট দীর্ঘ, ১৪ ফুট প্রশস্ত এবং ১০ ফুট উঁচু। ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী নির্মিত ভাস্কর্যটি ১৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপাচার্য এ.কে. আজাদ চৌধুরী। নির্মানে শ্যামল চৌধুরীর সহযোগী ছিলেন গোপাল পাল। নির্মাণ ও স্থাপনের অর্থায়নে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক আতাউদ্দিন খান (আতা খান) ও মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির সভাপতি লায়ন নজরুল ইসলাম খান বাদল। ভাস্কর্যটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। 
জন্ম ১৯৬৮ সালের ২৯ জুলাই বরিশালের মেহেদীগঞ্জে। তবে বেড়ে উঠেন চট্টগ্রাম ও ঢাকায়। বাবা মোয়াজ্জেম হোসেন। মা খাদিজা বেগম। ১৯৮৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞান পড়তে। যুক্ত হন ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাথে। এ সময় তিনি ৯০’র স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নে যুক্ত থাকার সময় প্রথমে তিনি শহীদুল্লাহ হল কমিটির সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং ওই বছর ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন (১৯৯১)। 

ফিরে দেখা ইতিহাস:
১৯৯২ সালের ১৩ মার্চ, শুক্রবার। একজন শিবিরকর্মীর প্রহৃত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ ছাত্রদের সাথে পুলিশের বচসা হয়। সেখানে রাজু কনুইতে আঘাত প্রাপ্ত হন। তাই বাসায় গিয়ে খাওয়ার কথা থাকলেও বাসায় না গিয়ে চলে যান তার হলের রুমে। শহীদুল্লাহ হলের ১২২ নং কক্ষ। বিকেলে ক্যাম্পাসের দখলদারিত্বের রাজত্ব নিয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের মধ্যে শুরু হয় গোলাগুলি। ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী রাজু ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্য'র ব্যানারে সংগঠিত সন্ত্রাসবিরোধী মিছিলে যোগ দেন। হঠাৎ সন্ত্রাসীরা সেই মিছিলে গুলি বর্ষণ করে। সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া একটা বুলেট রাজুর মাথা ভেদ করে। রাজুর রক্তে রঞ্জিত হয় টি.এস.সি.র সামনের রাজপথ। তাঁর আর জীবন নিয়ে ঘরে ফেরা হয় না। সন্ত্রাসীদের হাত থেকে প্রিয় ক্যাম্পাসকে বাঁচাতে চেয়ে জীবন দিতে হয় তাঁকে। ডাকসুর সংগ্রহশালায় এখনো সংরক্ষিত আছে শহীদ রাজুর রক্তমাখা শার্ট ও ব্যাগ। সেই ব্যাগ, যা গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় স্লোগানরত রাজুর কাঁধে যে ব্যাগ ছিল আর সেই ব্যাগে ছিল নোটখাতায় নিজ হাতে টুকে রাখা জীবনানন্দের কবিতা এবং রং করার ব্রাশ ও হকিয়ার। কবি শামসুর রাহমান “পুরাণের পাখি” কবিতায় এই ঘটনাটি তুলে ধরেন- 
"দিনদুপুরে মানুষ শিকারীরা খুন করেছে তোমাকে।
টপকে-পড়া, ছিটকে-পড়া তোমার রক্তের কন্ঠস্বরে ছিল পৈশাচিকতা হরণকারী গান। ঘাতক নিয়ন্ত্রিত দেশে হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলে তুমি, মধ্যযুগের প্রেতনৃত্য স্তব্ধ করার শুভ শ্লোক উচ্চারিত হয়েছিল তোমার কন্ঠে তোমার হাতে ছিল নরপশুদের রুখে দাঁড়াবার মানবতা-চিহ্নিত প্রগতির পতাকা …"
সেই রাজুসহ সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনের সকল শহীদের স্মরণে নির্মিত হয় সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্য। 




তথ্যঋণ: উইকিপিডিয়া, ডাকসু সংগ্রাহক গোপাল চন্দ্র দাস, নিঃসঙ্গ বায়স'র ব্লগ



No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.