ads

আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলি




শিক্ষকতা নিঃসন্দেহে মহান পেশা। একজন ছাত্রকে কেবল শিক্ষিতই নয়, বরং ভালো মানুষ করে তােলার গুরু দায়িত্বটাও থাকে শিক্ষকরে ওপরেই। তাই একজন শিক্ষককে হতে হয় অনেক বেশি সচেতন, অনেক বেশি ধৈর্যশীল। একজন আদর্শ শিক্ষক হতে হলে বিশেষ কিছু গুণের অধিকারী হতে হবে।

আমরা যারা শিক্ষকতাকে নিজের জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছি তাদের উদ্দেশ্যে আমার এ লেখা। আমরা সবাই শিক্ষক। কিন্তু আদর্শ শিক্ষক হয়তো সবাই আমরা হতে পারি না। শতকরা হিসেবে বড়জোর ১% থেকে ৫% হয় আদর্শ শিক্ষক। কিন্তু কেন? এবার চলুন দেখে নেওয়া যাক আদর্শ শিক্ষকের বৈশিষ্ট্যসমূহ কী কী?

১. শিক্ষক যখন তার লেকচার উপস্থাপন করার জন্য বাের্ডের সামনে যাবেন তখন তিনি যে বিষয়ের যে অধ্যায় পড়াচ্ছেন সাথে সাথে তাঁর বিষয়ের নাম, পঠিতব্য বিষয় বাের্ডে প্রথমত লিখে দিবেন।

২. বক্তব্য উপস্থাপনের পূর্বে দেখতে হবে ক্লাসের পরিবেশটা পাঠদানের জন্য কতটা সহায়ক। ক্লাসে পর্যাপ্ত আলাে ও বাতাসের ব্যবস্থা আছে কিনা শিক্ষক তা খেয়াল করবেন। তারপর শিক্ষকের সামনে বসা ছাত্র / ছাত্রীরা সঠিক পদ্ধতিতে বসছে কিনা তা খেয়াল করবেন। কারণ বসার পদ্ধতিটির সাথে পাঠদান জড়িত।

৩. তাদের সাথে আমার আই কন্ট্রাক্ট ঠিকমত হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, আমরা যতােই ভালাে লেকচার প্রদান করিনা কেন আমার সাথে যদি তার আই কন্ট্রাক্ট সঠিকভাবে না হয় তাহলে সে আমার বক্তব্য সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারবেনা।

৪. বক্তব্যকে সঠিকভাবে হৃদয়ঙ্গম করানের জন্য উদাহরণের কোনাে বিকল্প নেই। উদাহরণকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ১. কল্পনা, ২. অবাস্তব ও ৩. বাস্তব। যেমন ধরুন, আপনি বললেন কলা পুষ্টিকর খাদ্য।

বলার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের মাঝে কল্পনার সৃষ্টি হবে। তারপর বোর্ডে কলার ছবি অঙ্কন করলে শিক্ষার্থী ভালােভাবে বুঝতে পারবে এটা অবাস্তব। তারপর ক্লাসে যদি একটা কলা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রদর্শন করা হয় তাহলে তারা আরও ভালােভাবে বুঝতে পারবে এটা বাস্তব উদাহরণ।

৪. শিক্ষকের অঙ্গভঙ্গির সাথে তার লেকচারের মান জড়িত। ঠিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে বিষয়টিকে সঠিকভাবে তুলে ধরা সহজ হয়।


৫. অধীত বিষয় জটিল করে না করে সহজবােধ্য ভাষায় বােধগম্য উদাহরণের সাহায্যে বক্তব্য উপস্থাপন করা উত্তম। শিক্ষার্থীরা সহজে বক্তব্যকে সঠিকভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারছে কিনা মাঝে মাঝে তাদের প্রশ্ন করে তা যাচােই করা যেতে পারে। প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে তাদের ধমক না দিয়ে নিজেই উত্তর দিয়ে অথবা এটা এভাবে নয় এভাবে হবে বললে শিক্ষার্থীরা আত্মবিশ্বাসী হবে। সেই সাথে পারঙ্গম শিক্ষার্থীদের সাহায্য নিয়ে সে প্রশ্নের উত্তর বের করা যেতে পারে।

৬. শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন শ্রেণিকক্ষে যারা বসে আছে তাদেরও নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ও চিন্তার জগৎ রয়েছে। প্রশংসা তাকে অনুপ্রাণিত করবে। তাকে অবশ্যেই প্রশ্ন করার সুযােগ দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের হতাশ করে এরূপ আচরণ কখনােই করা উচিত নয়।

৭. ছাত্রকে আত্মবিশ্বাঙ্গী রূপে গড়ে তুলতে হবে। তাকে কখনােই বলা যাবে না তােমার দ্বারা কিছুই হবে না। সে একবার না বুঝলে দু'বার কিংবা তিনবার প্রয়োজনে আরো বেশিবার বলে দিতে হবে। প্রয়ােজনে ক্লাসের শেষে তাকে আলাদাভাবে তার সাথে কথা বলতে হবে।

৮. সমস্যাযুক্ত শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলাে পরােক্ষভাবে জানার চেষ্টা করতে হবে। মা-বাবার মৃত্যু, পারিবারিক বন্ধন, বাসার পরিবেশ, আর্থিক স্বচ্ছলতা তার বন্ধু-বান্ধবের প্রকৃতি ইত্যাদি। ছাত্রের মনের অবস্থা বুঝে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তার সাথে বন্ধুর মতাে আচরণ করতে হবে। তখনই কোনো শিক্ষকের পক্ষে তার সমস্যা বুঝা ও প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে।

৯. আদর্শ শিক্ষক সর্বদা সময়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকে। পাঠদানের নির্দিষ্ট সময়কে কয়েকভাবে ভাগ নেওয়া কর্তব্য। পূর্ববর্তী ক্লাসের পড়া নেয়া, আজকের পাঠ, প্রশ্নোত্তর (মূল্যায়ন) বাড়ির কাজ ইত্যাদি। প্রত্যেক ধাপেই শিক্ষককে গভীর মনােযােগী থাকতে হবে।

১০. ক্লাসের অবস্থা বুঝে প্রয়ােজনীয় গ্রুপ করে নেওয়া প্রয়োজন। তাদের মধ্যে দলগত আলোচনা ব্যবস্থা করে নিতে হবে। এক গ্রুপ দিয়ে আরেক গ্রুপকে প্রশ্ন করানো যেতে পারে। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার ভাব আনতে পারলে শিখনে গতি আসতে বাধ্য।

১১. শিক্ষকের সুনির্দিষ্ট ড্রেসকোড মেনে চলা উচিত। পােশাক-পরিচ্ছদ, হাঁটার ভঙ্গি, বাচনভঙ্গি, মাথার চুল ঠিক পর্যায়ে আছে কিনা সেটা সর্তকতর সাথে খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষার্থীরা অনুকরণপ্রিয় শিক্ষকের সঠিক ব্যক্তিত্বের প্রভাব তাদের ওপর পড়বেই।

১২. শিক্ষককে আদর্শ ও সততার মূর্ত প্রতীক হতে হবে। আদর্শ ও সততার প্রভাব তার মাঝে পড়বেই। শিক্ষক যদি সারারাত জেগে টিভি দেখে কিংবা আড্ডা দিয়ে কাটায় বা কোনাে অপরাজনীতির সাথে জড়িয়ে থাকে অথবা মাদক বা নেশার সাথে জড়িত থাকে তাহলে তিনি কোনো অবস্থায়ই আদর্শ শিক্ষক হতে পারবেন না। তাকে নিয়মানুবর্তিতা চর্চা করতে হবে। তবেই তার শিক্ষার্থীরা নিয়মানুবর্তী হবে।

১৩. সুগভীর বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান থাকা একান্ত প্রয়োজন। পঠিতব্য বিষয়ে গভীর জ্ঞান থাকতে হবে নতুবা ভাসা ভাসা জ্ঞান দিয়ে আদর্শ শিক্ষক হওয়া যাবে না।

১৪. যতই জানা থাক না কেন ক্লাসের পূর্বে একবার পঠিতব্য বিষয়টা দেখে নেওয়া কর্তব্য, বাড়িতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রয়ােজনীয় লেকচারশিট, লেকচার প্লান তৈরি করতে হবে। ছোটো ছোটো পয়েন্টাকারে লেকচার লিখে রাখা যেতে পারে। তাহলে সুন্দর ক্লাস নেওয়া সম্ভব।

১৫. প্রয়ােজনীয় কলম, মার্কার, ডাস্টার, অন্যান্য শিক্ষা-উপকরণ নিতে কখনই ভুলা যাবে না। এটা প্রস্তুতির ঘাটতি যা লেকচারে চরম ব্যাঘাত ঘটায়। আদর্শ শিক্ষক সর্বদা তাঁর প্রয়োজনীয় শিক্ষা-উপকরণ প্রস্তুত রাখেন ও সাথে নিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেন।

No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.