ads

‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কাহিনি-সংক্ষেপ

.


 ‘সিরাজউদ্দৌলা’

- সিকান্ দার আবু জাফর

প্রিয় একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীবৃন্দ শুভেচ্ছা, এ কাহিনি সংক্ষেপ তোমাকে সিরাজউদ্দৌলা নাটক থেকে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে সহায়তা করবে। অংশটুকু মনোযোগসহকারে পড়লে এ নাটকটি সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ ও স্পষ্ট ধারণা তুমি অর্জন করবে। যা তোমাকে সহজে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে। তোমাদের জন্য নিরন্তর শুভকামনা

সিরাজউদ্দেলা নাটকে ১৭৫৬ সালের ১৯ জন থেকে ১৭৫৭ সালের ১৯ জন পর্যন্ত সময় সীমার মধ্যে ঘটে যাওয়া বিশেষ ঘটনা স্থান পেয়েছে। ১৭৫৬ সালের ১৯ জুন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সেনাবাহিনী ইংরেজদের ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণ করে। ক্যাপ্টেন ক্লেন মুষ্টিমেয় গােলন্দাজ নিয়ে কামান চালাচ্ছেন আর অন্য সৈন্যদের প্রাণপণে যুদ্ধ করার জন্য অনুপ্রাণিত করছেন। এর মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করার আদেশ দেওয়ার অনুরােধ করলে ক্লেটন বাঙালিদের উদ্দেশে আপত্তিকর মন্তব্য করায় বাঙালি ওয়ালি খান তার প্রতিবাদ করে। এ সময় হলওয়েল প্রবেশ করে নবাবের কাছে আত্মসমর্পণ করার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। গভর্নর ড্রেকের সঙ্গে পরামর্শের কথা বলে ক্লেটন পালিয়ে যান। তখন দুর্গের দায়িত্ব এসে পড়ে হলওয়েলের ওপর। যুদ্ধজয়ী নবাব হলওয়েলের কাছে কৈফিয়ত চাইলেন “বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে বাঙালির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবার স্পর্ধা ইংরেজরা পেল কোথা থেকে?” নবাবের নির্দেশে কাশিমবাজার কুঠির পরিচালক বন্দি ওয়াটসকে আনা হলে নবাব তাদের অশিষ্ট আচরণ ও অনাচারের জবাব চাইলেন। তারা কাশিমবাজারে গােলাবারুদ আমদানি করছে, কলকাতার আশপাশের গ্রামগুলাে নিজেদের দখলে নিচ্ছে দুর্গ সংস্কার করে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে, নবাবের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে কৃষ্ণবল্লভকে আশ্রয় দিয়েছে, এমনকি নবাবকে নজরানা পর্যন্ত পাঠায়নি। এসব ধৃষ্টতার জবাবদিহিতা না করা পর্যন্ত নবাব বাংলায় তাদের বাণিজ্য করা বন্ধ ঘােষণা দিলেন। একই সঙ্গে তিনি নির্দেশ দিলেন, গভর্নর ড্রেকের বাড়িটা কামানের গােলায় নিশ্চিহ্ন করে দিতে এবং ইংরেজদের অবিলম্বে কলকাতা ত্যাগ করতে। আর আশপাশের গ্রামবাসী যেন তাদের কাছে কোনাে সওদা বিক্রি না করে, সেটা জানিয়ে তাদের জানিয়ে দিতে বললেন। তিনি নির্দেশ দিলেন যে, প্রত্যেক ইংরেজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে যেন নবাবের তহবিলে জমা করা হয়। কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক ইংরেজের কাছ থেকে কলকাতা অভিযানের সমস্ত খরচ আদায় করারও ফরমান জারি করলেন নবাব।



কলকাতা থেকে বিতাড়িত হয়ে পলাতক ইংরেজরা ভাগীরথী নদীতে ভাসমান ফোর্ট উইলিয়াম জাহাজে আশ্রয় নেয়। অন্ন-বস্ত্রের অভাবে তারা অসহনীয় অবস্থার মধ্যে পড়ে। বন্দি করে বিচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হলওয়েল ও ওয়াটসকে নবাব ছেড়ে দেন। এতে তাদের ধারণা হয় কিছু উপহার-উপঢৌকন নিয়ে নবাবের দরবারে হাজির হলে তার সঙ্গে এখনও ভালাে সম্পর্ক তৈরি করা। যাবে। দূতের মাধ্যমে নবাবের অন্যতম অমাত্য উমিচাঁদের চিঠিতে তাদের জানানাে হলাে যে, কলকাতার দেওয়ান মানিকচাঁদ বারাে হাজার টাকা নজরানা নিয়ে ইংরেজদের ব্যবসায় করার অনুমতি দিয়েছে। এছাড়া সিরাজের সিপাহসালার মিরজাফর, অমাত্য রাজবল্লভ ও জগৎশেঠের দল শওকতজঙ্গকে সমর্থন দেবে এবং উমিচাঁদ ইংরেজদের সঙ্গে বন্ধুত্বের আশ্বাস দিয়েছেন।

নবাব আলিবর্দি খাঁর ইঙ্গিতে সিরাজ ঢাকার সেনাপতি হােসেন কুলি খাঁকে হত্যা করলে সিরাজের সঙ্গে তার খালা ঘসেটি বেগমের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সেই ঘটনার সূত্র ধরে সিরাজের স্থলে নিজ পালকপুত্র শওকতজঙ্গকে নবাবি আসনে বসানাের প্রক্রিয়ায় প্রধান সেনাপতি ও অন্যতম অমাত্যদের সমর্থন লাভের উদ্যোগ নেন মতিঝিল প্রাসাদে। এ সময় নবাব সিরাজউদ্দৌলা উপস্থিত হয়ে ঘসেটি বেগমকে নিজ প্রাসাদে নিয়ে আসেন । কারণ নবাব বুঝতে পারেন, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীরা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে রেখেছে। ওদিকে ইংরেজরাও ব্যবসায়ের নামে বাঙালিদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছে। এ অবস্থায় চক্রান্তকারীদের অন্তরে শুভবােধ জাগ্রত করার জন্য সেনাপতি, অমাত্যবর্গ ও ইংরেজ প্রতিনিধিদের নিজ দরবারে ডাকেন এবং তাদের আন্তরিক সহযােগিতা কামনা করেন। ধর্মগ্রন্থ নিয়ে শপথ করলেও নিজ নিজ অবস্থানে তারা পুনরায় ষড়যন্ত্রে সক্রিয় হয়ে ওঠে। নবাব মােহনলালকে দিয়ে শওকতজঙ্গকে দমন করেন। মানিকচাঁদকে কয়েদ করে দশ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেন। এর ফলে ষড়যন্ত্রকারী ও ইংরেজরা প্রমাদ গুণতে থাকে। অবশেষে মিরজাফরপুত্র মিরনের বাড়িতে তাদের শেষ মন্ত্রণাসভা বসে । নর্তকীদের সমাগমে সেই সভায় রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, মিরজাফর উপস্থিত হন। মহিলার ছদ্মবেশে আসেন ক্লাইভ ও ওয়াটস। রায়দুর্লভ এসে তার নিজের জন্য সিপাহসালারের পদটির প্রত্যাশা জানিয়ে যান। ধুরন্ধর রবার্ট ক্লাইভ একথা বুঝতে পেরে নিরাপদ বােধ করেন। কারণ এখানে সবাই স্বার্থের পশ্চাতে ধাবমান। বিশেষ করে উমিচাঁদের লােভের সীমা-পরিসীমা নেই। তাই তাঁকে ঠকানাের জন্য নকল দলিলে বিশ লক্ষ টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়, আর আসল দলিলে উমির্চাঁদের কোনাে উল্লেখই থাকে না। দলিলে ভয়ানক যে বিষয়টি রাজবল্লভ লক্ষ করেন তা হলাে— “এই সন্ধি অনুসারে সিপাহসালার শুধু মসনদে বসবেন। আর রাজ্য চালাবে কোম্পানি।” মিরজাফরের তখন এত কিছু ভেবে দেখার মতাে অবস্থা ছিল না। এভাবেই ইংরেজদের কূটকৌশলচক্রে ধরা দিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সুবিধালােভী বিশ্বাসঘাতকরা নবাবের বিরােধিতা করে, যুদ্ধ না করে, তাদের পক্ষে কাজ করে। তারা বাংলাকে পরাধীনতায় ঠেলে দেয়। 

নবাব সিরাজউদ্দৌলা তার সংক্ষিপ্ত শাসনামলে একদিনও নিশ্চিন্তে কাটাতে পারেননি। স্ত্রী লুৎফার সঙ্গে আলােচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, তার চারদিকে কেবল দেয়ালের সমাহার। কোনােটি ভাঙছেন, কোনােটি ডিঙাচ্ছেন তবুও দেয়ালের শেষ হচ্ছে না। পলাশির যুদ্ধের আগের রাতে নবাব তার অনুগত সেনাপতিদের সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধের হিসাব-নিকাশ করেছেন। ইংরেজদের মােট সৈন্য তিন হাজারের বেশি নয়, নবাবের পঞ্চাশ হাজার। ছােটে-বড়ো মিলিয়ে ওদের কামান দশটি, আর নবাবের পঞ্চাটিরও বেশি। তবুও নবাব চিন্তিত ছিলেন কারণ তিনি জানতেন তার বড়ো সেনাদলের সেনাপতিরাই বিশ্বাসঘাতকতা করবে। তিনি এও জানতের তার সব কামান থেকে গোলা বের হবে না।  ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশির প্রান্তরে ইংরেজদের সঙ্গে নবাবের যুদ্ধ শুরু হয়। নবাবের কাছে একের পর এক সেনাপতিদের মৃত্যুর সংবাদ আসতে থাকে। মােহনলাল আর মিরমর্দান নবাবকে যুদ্ধ বন্ধ না করার অনুরােধ করেন, তখন তারা বিজয়ের প্রান্তে। কিন্তু এ সময় মিরজাফর ও রায়দর্লভের পরামর্শে তিনি যুদ্ধ বন্ধ করার ঘােষণা দিয়ে মুর্শিদাবাদ রওয়ানা হন। যাওয়ার পথে তিনি ধরা পড়ে বন্দি হন। পরে মিরনের আদেশে মােহাম্মদি বেগ তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয় । বাংলার ভাগ্যাকাশে নেবে আসে আমানিশা যা প্রায় ২০০ বছর চলতে থাকে।


পতিতপাবন মণ্ডল (পাবন)
বাংলা বিভাগীয় প্রধান 
সেন্ট গ্রেগরী হাই স্বুল অ্যান্ড কলেজ  
লক্ষ্মীবাজার,  ঢাকা-১১০০

3 comments:

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.