ads

#আমি_শিক্ষক_আমাকে_আর_বিব্রত_করবেন_না_প্লিজ




করোনা মহামারী ঠেকাতে দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ডিজিটাল বাংলাদেশের বদৌলতে পাঠদান কার্যক্রম অনলাইনে (যতটুকু সম্ভব) হয়েছে। সরাসরি শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এ সময় শিক্ষকগণ প্রতিদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না গেলেও সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে (ভিজিল্যান্স, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম তদারকি, অ্যাসাইনমেন্ট প্রদান ও গ্রহণ, দাপ্তরিক কাজে অফিসকে সহযোগিতা, প্রতিষ্ঠানের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ, চলমান নির্মাণ ও সংস্কার কার্যক্রম তদারকি, অ্যাসাইনমেন্টে শিক্ষার্থীদের ত্রুটিগুলো সংশোধনের জন্য ব্রিফিং দেয়াসহ অদৃশ্য নানা কাজ) সপ্তাহে ৩-৪ দিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে উপস্থিত থেকেছেন।

সপ্তাহের বাকী ২-৩ দিন বাসায় অবস্থান করতেন। বাসায় অবস্থান করতেন মানে এই নয় যে, শিক্ষকগণ বাসায় অবসর সময় কাটাতেন! বরং এ সময়টায় অনলাইন ক্লাস প্রস্তুতি ও গ্রহণ, অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন, শিক্ষার্থীদের সাথে ফোনে যোগাযোগ রক্ষা (শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং পড়ালেখার খবর নেয়া), অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ, অনলাইনে মিটিংসহ নানাবিধ বায়বীয় কাজে ব্যস্ত থাকতেন।
অথচ এসবের বিনিময়ে শিক্ষকদের নানা কটূক্তি (শিক্ষকরা বসে বসে রাজভাণ্ডার উজার করছে! বসে বসে খেয়ে চর্বি জমাচ্ছে!! প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য শিক্ষকরা কিচ্ছু বলছে না!!! ব্লা ব্লা ব্লা!!!!) সহ্য করতে হয়েছে!!
এরপর গত সেপ্টেম্বরে যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হলো, শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকগণ সানন্দে শ্রেণিকক্ষে ফিরলেন। আহ!! কি প্রশান্তি!!! প্রকৃতপক্ষে, অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম কখনোই শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের বিকল্প হয় না; হতে পারে না।
এসময়টায় দেখা গেল শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভীড়, উপস্থিতির হার পূর্বের তুলনায় লক্ষ্যনীয় মাত্রায় বৃদ্ধি। শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে ক্যাম্পাস প্রাণ ফিরে পেল। শিক্ষকগণ কর্তৃক পুনরায় শুরু হলো শিক্ষার্থীদের চোখে স্বপ্ন বুননের কাজ।
আমি শিক্ষক; শ্রেণিকক্ষে আমিই লিডার। আমার প্রতিটি ক্লাসের ২০০-২৫০ জন শিক্ষার্থী মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমার পাঠ গ্রহণ করে; আমার সাথে বিচরণ করে স্বপ্নরাজ্যে। জ্ঞানের রাজ্যে ডুব দিয়ে আমরা ছুটে বেড়াই দিগ্বিদিক। আমি ওদের চোখে আগামীর পৃথিবী দেখি; ওদের প্রত্যেককে স্বপ্নবাজ হতে দীক্ষা দেই। এজন্য এ কোমলপ্রাণগুলো আমাকে শ্রদ্ধা করে, বিশ্বাস করে, ভরসা করে এবং আস্থা খুঁজে পায় আমার মধ্যে। বিশ্বাস করি- আমার উপর তাদের ভরসার এ মাত্রা, ওদের পিতা থেকে কোনো অংশে কম নয়। এটা আমি অনুভব করি এবং বুঝতেও পারি।
এ মাসে আবার বন্ধ হলো কলেজ। পুনরায় শুরু হলো ঐসব বায়বীয় কাজ!
নিজ এলাকায় আমার পদায়ন। তাই প্রয়োজনে কিংবা স্বল্প প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা আমার সাথে বেশ যোগাযোগ রাখে; এ যোগাযোগ হয় ফোনে, অনলাইনে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরাসরি।
যোগাযোগের বিভিন্ন পর্যায়ে এবার অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জিজ্ঞাসা নিম্নরূপ:
#শিক্ষার্থী: স্যার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবার বন্ধ হলো কেন?
#আমি: হঠাৎ করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সরকার এমনটা করতে বাধ্য হয়েছে।
#শিক্ষার্থী: স্যার, করোনা কি শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই বিরাজমান?
#আমি: না, দেখো- আমাদের শ্রেণিকক্ষগুলো ছোট কিন্তু শিক্ষার্থী অনেক। এখানে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানা সম্ভব নয়। তাই এমনটা করা হয়।
#শিক্ষার্থী: স্যার, হাটবাজার কিংবা বাণিজ্য মেলায় যে ভীড় থাকে, সেই ভীড় কি শ্রেণী কক্ষে থাকে?
#আমি: আসলে, দেখো- অর্থনীতির চাকাটা তো সচল রাখতে হয়। এজন্যই হয়তো এগুলো চালু রাখতে হয়।
#শিক্ষার্থী: স্যার, আপনারাতো শ্রেণী কক্ষে বলেন- "টেকসই অর্থনীতি কিংবা সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি শিক্ষার উপর নির্ভরশীল।" তাহলে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে গার্মেন্টস, হাটবাজার এবং বাণিজ্য মেলাসহ সবকিছু খোলা রেখে অর্থনীতির চাকা কি গতিশীল রাখা যাবে? গত দেড় বছরে শিক্ষার যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, শিক্ষার্থীসহ অর্থনীতিতে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কি পড়বে না??
#আমি: আসলে -------- (বিব্রত হয়ে সদুত্তর দিতে পারিনি!!)
#শিক্ষার্থী: স্যার, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আপনারা আমাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কলেজে আসতে বললেন। এ ব্যাপারে আপনারা কঠোরও হলেন। স্বল্পসংখ্যক আমাদের দুষ্টু বন্ধুরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কলেজে গেল। অথচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। যতটুকু সময় কলেজে থাকতাম, সেই সময়টুকুই ভালোভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হতো। তাছাড়া আমরা অধিকাংশ শিক্ষার্থীই করোনার ভ্যাক্সিন নিয়েছি। তারপরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন বন্ধের তালিকার শীর্ষে রাখা হলো?
#আমি: আরও অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। যৌক্তিক কোনো উত্তর দিতে পারিনি।
তাই পলিসি ম্যাকিং পর্যায়ে যাঁরা রয়েছেন, পুনরায় ছুটি বৃদ্ধির পূর্বে আরেকটিবার গভীরভাবে ভাবুন, প্লিজ। যে শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে আস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে; যারা আমাদেরকে অনুসরণ এবং অনুকরণ করে, তাদের সামনে আমাদেরকে বিব্রত করবেন না, আর খাটো করবেন না, প্লিজ।
হয় শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের সদুত্তর দিন, না হয় ছুটি বৃদ্ধি না করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলে দিন, প্লিজ।
(সংগৃহীত )

1 comment:

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.