ads

কাকাতুয়ার গল্প



শোন একটা গল্প বলি, গল্পটা হলো কাকাতুয়ার গল্প। তোমরা কি জানো কাকাতুয়া কি? কাকাতুয়া হচ্ছে একটা পাখি। সেই পাখির একটা বিশেষ গুণ আছে। গুণটা কি জান? তা বলো এ পাখি কথা বলতে পারে কিন্তু নিজে নিজে কথা বলতে পারে না। শিখিয়ে দিলে কথা বলতে পারে। তোমরা গল্পটা খুব মন দিয়ে শুন। গল্পটা অনেক সুন্দর। গল্পটা প্রাচীন ভারতের একটা চমৎকার কাহিনী। এক ভদ্রলোক এক সকালে ঘুম থেকে উঠে এক ব্যাধের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলো। ব্যাধ কাকে বলে জানো? ঠিক আছে আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি। তার আগে বল, কসাই কাকে বলে? জান তারা কি করে? তারা বাজার থেকে পশু কিনে আনে তাকে জবাই করে তার পর টুকরো টুকরো করে মাংস বিক্রি করে। ব্যাধ হচ্ছে আরো ভয়ঙ্কর। ব্যাধ দোকানে গিয়ে পশু কেনে না। সে আস্ত একটা বল্লম নিয়ে জঙ্গলের মধ্যে চলে যায় একা একা পশুর সঙ্গে লড়াই করে লড়াই করে সে পশুকে হত্যা করে। হত্যা করার পরে সে সেটাকে দোকানে আনে টুকরো টুকরো করে। তার পর ওজন দরে বিক্রি করে। তাহলে বুঝতে পেরেছ তো যে ব্যাধ বাড়ো ভয়ঙ্কর মানুষ। হ্যাঁ কসাই কত ভয়ঙ্কর। আমরা কসাই দেখলে ভয় পাই। তার হাতে এতবড়ো একটা ছোরা থাকে। আর ব্যাধ তাহলে এর চেয়েও ভয়ঙ্কর। তো এ ব্যাধের বাড়িতে এক ভদ্রলোক গেছেন। দরজা দিয়ে ঢুকছেন হঠাৎ দেখেন দরজার পাশে একটা কাকাতুয়া বসে আছে একটা মঞ্চের ওপরে। অদ্ভুত সুন্দর দেখতে সেই কাকাতুয়া। যেমন রং তেমন রূপ তেমন শোভা একেবারে মোহিত হয়ে যাওয়ার মতো। কাকাতুয়াটা বসে আছে উনি ভাবলেন হায়! এত সুন্দর কাকাতুয়া!একটু কাছে গিয়ে দেখি তো। তাকে একটুু কাছে গিয়ে ছুয়ে দেখি। এভেবে তিনি ধীরে ধীরে কাকাতুয়ার দিকে এগিয়ে গেলেন। যেই না তিনি তার কাছে এসেছে ঠিত তখনেই সেই কাকাতুয়া অশ্লীল, অশ্রাব্য, মানে কদর্য ভাষায় সেই ভদ্রলোককে গালাগালি শুরু করল। শেষে বলল, ‘দূর হ শয়তান দূর হ শয়তান। উনি ভাবলেন আহা রে এত সুন্দর একটা কাকাতুয়া আমি তাকে আদর করে আরেকটু কাছে গিয়ে সুন্দর করে দেখতে চাইলাম আর সে আমাকে এরকমভাবে তাড়িয়ে দিলো। কদর্য কথা বলে। না না এ জায়গা তো ভালো না। আমি অন্য জায়গায় যাই। বলে উনি কোথায় গেলেন? এক ব্রাহ্মণের বাড়িতে গেলেন। দরজা দিয়ে ঢুকছেন হঠাৎ ডাইনে তাকিয়ে দেখেন একটা মঞ্চের উপরে হুবহু একই রকম কাকাতুয়া বসে আছে। ওই আগের কাকাতুয়ার যেমন রূপ যেমন সৌন্দর্য যেমন শোভা এ কাকাতুয়ারও তেমন সৌন্দর্য তেমন শোভা এবং দুজন হুবহু একরকম দেখতে। এইবার ঐ ভদ্রলোক কি তার দিকে এগিয়ে যাবেন না যাবেন না? আগের ঐ কাকাতুয়া আমাকে এইভাবে গালাগালি করেছে এ আবার এ নাকি গালাগালির শুরু করে বলে উনি পিছনে ঘুরে চলে যাচ্ছে। হঠাৎ শোনেন যে, তার পেছন থেকে সে কাকাতুয়াটা তাকে মিষ্টি ভাষায় সুমিষ্ট কণ্ঠে তাকে ডাকছে আসুন, বসুন একটু অপেক্ষা করুন। আমার গৃহস্বামী কিছুক্ষণ আগে বাইরে গেছেন উনি এক্ষুণি চলে আসবেন। আপনি একটু অপেক্ষা করুন বলে মধুর কণ্ঠে তাকে ডাকাডাকি করতে লাগল। তিনি ভাবলেন একই কাকাতুয়া একই চেহারা একই সবকিছু একজন কত কদর্য, অশ্লীল ভাষায় আমাকে গালাগালি করেছে আর এই কাকাতুয়া এতো মিষ্টি মধুর সুরে আমাকে ডাকছে ব্যাপারটা কি? তখন উনি সেই কাকাতুয়াকে বললেন যে, দেখ ভাই কাকাতুয়া আমি অমোঘ জায়গাতে ব্যাধের বাড়িতে গিয়েছিলাম হুবহু তোমার মতো দেখতে একরকম সৌন্দর্য তোমাদের । আমি তার কাছে গিয়ে তাকে ভালো করে দেখতে গেছিলাম সে আমাকে কদর্য ভাষায় গালাগালি করেছে। আর তুমি এতো মধুর ভাষায় আমাকে আহ্বান করছো এটা কি করে হলো? কেনো হলো? কাকাতুয়া বলল যে দেখো ওই ব্যাধের বাড়িতে তুমি যে কাকাতুয়াকে দেখেছ সে আর আমি একই মায়ের সন্তান। শুধু সন্তান না, আমরা যমজ সন্তান। এইজন্য আমাদের চেহারা একেবারে একই রকম। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সে পড়েছে কার হাতে ব্যাধের হাতে। ব্যাধেরা সকালবেলা উঠে কি করে মধুর স্বরে কথা বলে? নাকি গালি-গালাজ করে? কদর্য কথাবার্তা বলে। এইসব করে। আর আমি আমি পড়েছি কার হাতে আমি পড়েছি ব্রাহ্মণের হাতে। সকালবেলা উঠে আমি কী শুনি? হ্যাঁ ব্রাহ্মণদের মধুর কণ্ঠে মিষ্টি শাম গান শুনি। সেই মধুর কথা শুনতে শুনতে আমার কথা মধুর হয়ে গেছে। তো তার কথা যে কদর্য এটা যেমন তার দোষ নয়, আমার কথা যে মধুর এটাও আমার গুণ নয়। তাহলে কেনো হলো পরিবেশের কারণে। ভালো পরিবেশে যদি তুমি মানুষও তাহলে তুমি মধুর হবে, মিষ্টি হবে, সুন্দর হবে, আর তুমি খারাপ পরিবেশে যদি তুমি মানুষও তাহলে তোমাদের জীবন ঐরকম ব্যাধের বাড়ির কাকাতুয়ার মতো হয়ে যাবে। তো তোমাদের সৌভাগ্য যে, তোমরা পড়তে এসেছো কোন বাড়িতে? ব্যাধের বাড়িতে ? কার বাড়িতে ? এখানে কুৎসিত, কদর্য কথা তোমরা শোনো নাকি মধুর মিষ্ট কণ্ঠের আহ্বান শোনো। হ্যাঁ এমন করে সুন্দরভাবে শুনতে থাকো তোমরা ভালো হবে, তোমরা বড়ো হও কারণ তোমরা বড়ো হলে বাংলাদেশ ছোটো হবে না। বড়ো হবে।

সম্পাদনায় 
পতিতপাবন মণ্ডল (পাবন) 
বাংলা বিভাগীয় প্রধান
সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ। 


No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.