ads

জীবনচক্র

বিয়ে পুরুষের জীবনে একটা ভয়াবহ ঘটনা। বিয়ের পরে পুরুষের প্রকৃত আত্মত্যাগ শুরু হয়। ৯টা-৫টা অফিস। ৭ টার মধ্যে সরিষার তেল, এক কেজি আলু, আর এক পাতা মাথা বিষের বড়ি কিনে বাড়ি ফেরা। রাত ১০টার দিকে ভাত খেয়ে টিভিতে খবর দেখা। বউ এর সাথে জমিজমা, ডিপিএস, ওয়াশিং মেশিনের উপকারিতা, পাশের বাসার ভাবির ডাইনিং টেবিলের নকশা নিয়ে গল্প করা এরপর মিউজিক্যাল কোনো চ্যানেলে গান ছেড়ে ভলিউম বাড়িয়ে দেওয়া। মধ্যরাতে বাসায় একটা হোম থিয়েটার কেনার স্বপ্ন চোখে নিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া। মাইক্রো ওয়েভ, ড্রেসিং টেবিল, পাকিস্তানি ফ্যান বা এক শতক জমির লিস্টের নিচে চাপা খেয়ে যাওয়া যে স্বপ্ন আর পূরণ হয় না।
বাবা মায়ের বয়স বেড়ে যাচ্ছে। তারা নাতি-নাতনির মুখ দেখতে চান। কেন দেখতে চান জানি না। এমন তো নয় যে, তাদের নাতি-নাতনির তিনটা চোখ বা ৫ টা হাত থাকবে। অন্যান্য মানব শিশুর মতোই হবে দেখতে। তবুও তাদের দেখার শখ। এই দেখার শখ পূরণের জন্য জন্ম নিবে সন্তান। এর পরের জীবন হবে ডায়াপার, ফিডার এবং ল্যাক্টজেনময়। সন্তানকে বড় করা, ভালো স্কুলে পড়ানো, শখ পূরণ করা, জন্মদিন পালন, চিড়িয়াখানায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হবে দায়িত্ব। সপ্তাহের দুইটা দিন ছুটি। একদিন বাসায় আসবে বউ এর বান্ধবী আর তার জামাই। গল্প একদমই জমবে না জেনেও বউ এর বান্ধবীর জামাই এর সাথে হুদাই গ্যাজাইতে হবে। ক্রিকেট নিয়ে হুদাহুদি আলাপ করতে হবে। আরেকদিন বউ বাচ্চা নিয়ে চিড়িয়াখানা, শিশু পার্ক গমন। ফেরার পথে চা-ছ্যাঁকনি, ফুলের ঝাড়ু, একটা কড়াই, একটা তিন কোনা লোহার আকৃতি যেটা দিয়ে কী করে জানা নেই এবং সংসারের আরো ছোটো-খাটো প্রয়োজনীয় জিনিস। সন্তানের হাতে থাকবে একটা বাতাস ভর্তি মাছ আকৃতির বেগুনি রঙের বেলুন।
গ্রাম থেকে পরীক্ষা দিতে আসবে বউয়ের বড়ো মামার ছেলের ভাতিজা। বাসায় দুই দিন থাকবে। অফিস যাওয়ার আগে তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে রেখে আসতে হবে। পরীক্ষার পরের দিনও সে থাকবে। তাকে নিয়ে আবারো চিড়িয়াখানায় যেতে হবে। বাঘ-ভাল্লুক দেখাতে। ফেরার পথে জুস, কোন আইসক্রিম, ঝালমুড়ি খাওয়ায় বাড়ি ফিরতে হবে। চিড়িয়াখানায় এতবার যাওয়া পড়বে যে চিড়িয়াখানার পশুরা আপন কেউ ভাবা শুরু করবে।
বাসায় শশুর-শ্বাশুড়ি আসবেন। ফ্রিজ ভর্তি বাজার থাকা স্বত্তেও বাজার করে নিয়ে আসতে হবে সাথে বড়ো একটা বোয়াল মাছ। তাদের নিয়ে একদিন ঘুরতে যেতে হবে স্মৃতিসৌধে। ফেরার পথে চাইনিজে খাওয়া-দাওয়া। এই দিন রাতের বেলা বাসার চুলা বন্ধ। আরেক দিন যেতে হবে চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানায় গিয়ে জলহস্তি দেখাতে হবে। তারা আবার জলহস্তি দেখেননি। ঘড়িয়ালকে কুমির, কুমির বলে ডাকবে। এই দিন ফেরার পথে দুই কেজি কমলালেবু কিনে ফিরতে হবে বাসায়।
এভাবে বয়স বেড়ে যাবে, মাথায় চুলের সংখ্যা কমে যাবে। দাঁড়ি পাকা শুরু হয়ে যাবে। বউয়ের সাথে প্রেম জীবনের ইতি ঘটবে। সুন্দরী বউ তখন বিদায়ী যৌবনে। পেঁয়াজের দাম বাড়লে আপনার টেনশন হবে, তেলের দাম বাড়লে আপনার টেনশন হবে, রাস্তা পার হতে গিয়ে বাসের তলায় পরে কেউ মরে গিয়েছে শুনলে আপনার টেনশন হবে।
শেষ বয়সে সঞ্চিত কিছু অর্থ হবে। রিটায়ার্ড করার টাকা দিয়ে একটা সাদা কালারের রিকন্ডিশন্ড করোলা গাড়ি হবে। দীর্ঘদিন ডেস্ক জব করে এসে শরীরে হবে হরেক রকম অসুখ। হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস, পেশাব করার রাস্তায় ইনফেকশন। রিটায়ার্ড করে একটু আরাম আয়েশের জন্য করোলা গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াবেন, মেয়েকে ইউনিভার্সিটিতে রেখে আসবেন,বউয়ের সাথে টাঙাইলে শাড়ি কিনতে যাবেন, রিকশাওয়ালাকে ধরে থাপড়বেন। আপনার মেয়ের বিবাহ হবে। আপনি আপনার মেয়েকে দেখতে যাবেন। আপনার হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস আছে জেনেও আপনাকে পোলাও, কোরমা, মুরগির ঝোল, খাসির রেজালা, বোয়াল মাছের মাথা, ইলিশের ডিম খাওয়াবে। কারণ মেয়ে বলছে একদিন খেলে কিছু হয় না। খাওয়া শেষে পুডিং, পায়েস, দুধ চা,কমলা লেবু। এরপর আপনাকে জোর পূর্বক শোয়ায় দিবে। আপনি একটা সাদা স্যন্ডোগেঞ্জি গায়ে শুয়ে হাশফাশ করবেন।
আপনার একদিন ঘুমের মধ্যে হার্ট এট্যাক হবে। আপনি মারা যাবেন। আপনি এই জীবনে আপনার অধ্যায় শেষ করবেন। যে জীবন আর কখনো আপনি ফেরত পাবেন না। আপনি এটা মনে করারই সুযোগ পাবেন না যে আপনার বাসায় আপনার একটা হোম থিয়েটারের শখ ছিল! আপনি যখন মারা যান তখন আপনার ঘরে ছিল একটা গ্রী এসি, ড্রেসিং টেবিল, আলমারী, খাট এবং ঝলমলে একটি নকশা করা বাতি! আহারে জীবন! আহা জীবন!


সম্পাদনায়: পতিতপাবন মণ্ডল (পাবন)

No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.