ads

বাংলা বানানের ৩২টি অনন্য নিয়ম।


১. যেসব তৎসম শব্দের বানানে হ্রস্ব ও দীর্ঘ উভয় স্বর (ই ঈ, উ ঊ) অভিধানসিদ্ধ, সে ক্ষেত্রে শুধু হ্রস্বস্বর (ই, ,ি উ, ু) হবে। 
যেমন : অঙ্গুরি, অটবি, আবির, আশিস্, উষা, কিংবদন্তি, কুটির, গণ্ডি গ্রন্থাবলি, চিৎকার, তরণি, তরি, দেশি, পদবি, বিদেশি, ভ্রু, শ্রেণি, সারণি। 
২. অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দের বানানে সর্বদা হ্রস্বস্বর ( ই, ,ি উ, ু ) হবে। 
যেমন :  আদমি, আপিল, আমিন, আলমারি, উকিল, উর্দু, কাজি, কারবারি, কারিগরি, কুমির, কেরানি, খ্রিষ্ট, খ্রিষ্টাব্দ, গরিব, গাজি, গাড়ি, গিন্নি, চাকরি, জরুরি, জানুয়ারি, ডিগ্রি, দরকারি, দাবি, দিঘি, ধুলো, নার্সারি, পড়শি, পদবি, বাড়ি, বাঁশি, বাঙালি, বে-আইনি, ভুতুড়ে, মিস্ত্রি, মুলো, মেয়েলি, যিশু, রেশমি, লটারি, লাইব্রেরি, শাশুড়ি, শিকারি, সবজি, সরকারি, সুন্নি, হাজি, হিজরি, ইদ।
৩. কয়েকটি স্ত্রীবাচক শব্দের শেষে সব সময় ঈ-কার হবে। 
যেমন : অভিনেত্রী, কর্ত্রী, কল্যাণী, কিশোরী, গাভী, গুণবতী, চণ্ডী, চতুর্দশী, ছাত্রী, জননী, তরুণী, দাসী, দুঃখিনী, দেবী, নারী, পত্নী, পিশাচী, বিদুষী, বুদ্ধিমতী, মাতামহী, মানবী, যুবতী, লক্ষ্মী, শ্রীমতী, সতী, সরস্বতী, হরিণী, হৈমন্তী। 
৪. ভাষা ও জাতির নামের শেষে ই-কার হবে। 
যেমন : আফগানি,আরবি, ইংরেজি, ইরাকি, ইরানি, ইহুদি, কাশ্মিরি, জাপানি, তুর্কি, নেপালি, পাকিস্তানি, পাঞ্জাবি, ফরাসি, বাঙালি, সাঁওতালি, সিন্ধি, হিন্দি। 
৫. বিশেষণবাচক ‘আলি’-প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই-কার হবে। 
যেমন : চৈতালি, পুবালি, বর্ণালি, মিতালি, মেয়েলি, রুপালি, সোনালি। 
৬. ক্রিয়াপদের বানানে পদের শেষে ও-কার ( ো ) দেওয়া অপরিহার্য নয়। 
যেমন: আনব, করত, খেলব, চলব, দেখত, ধরব, নাচব, পড়ব, বলত, মরব, মরাব, লড়ব, লিখব।
৭. বর্তমান অনুজ্ঞার ক্রিয়া পদের শেষে ও-কার হবে। 
যেমন: আনো, করো, খেলো, চলো, দেখো, ধরো, নাচো, পড়ো, বলো, মারো, লড়ো, লেখো। 
৮. ‘আনো’ প্রত্যয়ান্ত শব্দের শেষে ও-কার হবে। 
যেমন : করানো, খাওয়ানো, ঠ্যাঙানো, দেখানো, নামানো, পাঠানো, শোয়ানো। 
৯. অর্থ বা উচ্চারণ বিভ্রান্তি দূর করতে কয়েকটি বিশেষ্য, বিশেষণ ও অব্যয় শব্দে ও-কার প্রদান করতে হয়। 
যেমন : কাল (সময়), কালো (কৃষ্ণ বর্ণ); কোন (কী, কে, কোনটি), কোনো (বহুর মধ্যে এক); ভাল (কপাল), ভালো (উত্তম)। 
১০. পদান্তে বিসর্গ (ঃ) থাকবে না। 
যেমন : ক্রমশ, দ্বিতীয়ত, প্রথমত, প্রধানত, বস্তুত, মূলত। 
১১. পদমধ্যস্থ বিসর্গ থাকবে। 
যেমন : অন্তঃস্থ, দুঃখ, দুঃসহ, নিঃশব্দ, পুনঃপুন, স্বতঃস্ফূর্ত। 
১২. অভিধানসিদ্ধ হলে পদমধ্যস্থ বিসর্গ বর্জন করা যেতে পারে। 
যেমন : দুস্থ, নিশ্বাস, নিস্পৃহ, বহিস্থ, মনস্থ। 
১৩. ট-বর্গীয় বর্ণ অর্থাৎ ট ঠ ড ঢ এর পূর্বে তৎসম শব্দে মূর্ধন্য-ণ হয়। 
যেমন : কণ্টক, ঘণ্টা, নির্ঘণ্ট, বণ্টন, অকুণ্ঠ, আকণ্ঠ, উৎকণ্ঠা, উপকণ্ঠ, কণ্ঠ, কণ্ঠনালি, লুণ্ঠন, অকালকুষ্মাণ্ড, অণ্ড, কাণ্ড, কাণ্ডারী, কুণ্ডল, খণ্ড, চণ্ডী, দণ্ড, পণ্ডিত, ভণ্ড, ভণ্ডামি। 
১৪. তৎসম শব্দে ঋ, র, ষ, ক্ষ- এর পর মূর্ধন্য-ণ হয়। 
যেমন : ঋণ, তৃণ, অরণ্য, ত্রাণ, বর্ণ, বিদূষণ, বিশেষণ, ক্ষণ, ক্ষণিক। 
১৫. ঋ, র, ষ, ক্ষ-এর পরে স্বরবর্ণ, ক-বর্গের বা প-বর্গের বর্ণ বা য়, ব, হ, থাকলে তৎসম শব্দে মূর্ধন্য-ণ হয়। 
যেমন : কৃপণ, নিরূপণ, অগ্রহায়ণ, অকর্মণ্য, নির্বাণ, সর্বাঙ্গীণ, অপেক্ষমাণ, বক্ষমাণ, রামায়ণ, গ্রহণ, অর্পণ, হরিণ, রুক্মিণী । 
১৬. প্র, পরা, পরি, নির- এই চারটি উপসর্গের পর তৎসম শব্দে মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন : প্রণাম, প্রণব, প্রণীত, প্রণিপাত; পরায়ণ, পরাহ্ণ; পরিণতি, পরিণাম, পরিণয়; নির্ণীত, নির্ণয়, নির্ণায়ক। 
১৭. যুক্তব্যঞ্জন গঠনে অতৎসম শব্দ অর্থাৎ দেশি, বিদেশি, তদ্ভব, মিশ্র শব্দে ট-বর্গের পূর্বে দন্ত্য-ন হয়। 
যেমন: ইন্টার, উইন্টার, কারেন্ট, গ্র্যান্ড, টেন্ডার, প্যান্ট, ব্যান্ড, লন্ডন, সেন্ট্রাল।
১৮. যুক্তব্যঞ্জন গঠনে সকল শব্দে ত-বর্গের পূর্বে সর্বদা দন্ত্য-ন হয়। 
যেমন : অনন্ত, অন্তরঙ্গ, একান্ত, ক্লান্ত, জ্বলন্ত, মন্ত্রী, গ্রন্থ, পান্থ, অনিন্দ্য, পরান্ন, প্রচ্ছন্ন, রান্না, সান্নিধ্য, বৃন্ত, বৃন্দ। 
১৯. সন্ধি ও সমাসযোগে গঠিত শব্দের বানানে দন্ত্য-ন বহাল থাকে অর্থাৎ মূর্ধন্য-ণ হয় না। 
যেমন : অগ্রনায়ক, অহর্নিশ, ক্ষুন্নিবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, দুর্নাম, দুর্নিবার, দুর্নীতি, নির্নিমেষ , শিক্ষাঙ্গন।
২০. তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দে সর্বদা দন্ত্য-ন হবে। 
যেমন : আপন, আয়রন, কুর্নিশ, কোরান, গ্রিন, চিরুনি, ঝরনা, ধরন, বার্নিশ, মেরুন, লন্ডন, শিহরন, হর্ন। 
২১. ঋ - এর পরে তৎসম শব্দে মূর্ধন্য-ষ হয়। 
যেমন : ঋষি, কৃষি, কৃষক, কৃষ্ণ, তৃষ্ণা, তৃষিত, দৃষ্টি, সৃষ্টি, হৃষ্টচিত্ত। 
২২. র-এর পরে তৎসম শব্দে মূর্ধন্য-ষ হয়। 
যেমন : আকর্ষণ, ঈর্ষা, উৎকর্ষ, বর্ষা, বর্ষণ, বিমর্ষ, মুমূর্ষু, শীর্ষ, সপ্তর্ষি, হর্ষ। 
২৩. অ, আ ভিন্ন অন্য কোনো স্বরবর্ণ বা ক্,র্ বর্ণের পরবর্তী দন্ত্য-স মূর্ধন্য - ষ হয়। 
যেমন : ঈষৎ, উষা, এষণা, কোষ, জিগীষা, বিষম, ভবিষ্যৎ, রোষ, সুষমা। 
২৪. ই-কারান্ত ও উ - কারান্ত উপসর্গের পর কয়েকটি ধাতুতে মূর্ধন্য-ষ হয়। 
যেমন : অনুষঙ্গ, সেক> অভিষেক, স্থান> অধিষ্ঠান, সুপ্ত> সুষুপ্ত। 
২৫. ট-বর্গের পূর্বে তৎসম শব্দে মূর্ধন্য-ষ হয়। 
যেমন : অনিষ্ট, অষ্টম, আড়ষ্ট, উচ্ছিষ্ট, উপদেষ্টা, কষ্ট, চেষ্টা, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠা, ভূমিষ্ঠ, শ্রেষ্ঠ, সুষ্ঠু। 
২৬. যুক্তব্যঞ্জন গঠনে তৎসম, অতৎসম সকল শব্দে ত-বর্গের পূর্বে দন্ত্য-স হয়। যেমন : অধস্তন, ইস্তফা, উদ্বাস্তু, ওস্তাদ, কস্তুরি, কাস্তে, জবরদস্তি, স্থান, স্থানীয়, স্বাস্থ্য। 
২৭. যুক্তব্যঞ্জন গঠনে সকল শব্দে চ-বর্গের পূর্বে তালব্য-শ হয়। যেমন : আশ্চর্য, দুশ্চরিত্র, নিশ্চয়, পশ্চাৎ, প্রায়শ্চিত্ত, বৃশ্চিক। 
২৮. রেফ (র্ ) - এর পর কোথাও ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। 
যেমন : কর্জ, কর্ম, কার্য, পূর্ব, ফর্দ, মর্মর, শর্ত, সূর্য। 
২৯. ব্যঞ্জন সন্ধির নিয়মানুসারে ম্ এর পর ‘ক’ বর্গের বর্ণ থাকলে ম্ এর স্থলে ং (অনুস্বার) হয়। যেমন : অহংকার (অহম্ +কার), কিংকর, কিংবদন্তি, ঝংকার, ভয়ংকর, সংকল্প, সংকীর্ণ, সংগীত, সংঘ, সংঘাত, হুংকার। 
৩০. সন্ধিজাত না হলে, যুক্তব্যঞ্জনে ক - বর্গের পূর্বে ম্ স্থানে ঙ (উয়োঁ)) হবে।
 যেমন:আকাঙ্ক্ষা, অঙ্কুর, অঙ্গ, ইঙ্গিত, উচ্ছৃঙ্খল, কঙ্কাল, কাক্সিক্ষত, গঙ্গা, জঙ্গি, দাঙ্গা, পঙ্কজ, পঙ্গু, বঙ্গ, ভঙ্গি, লঙ্ঘন, শিক্ষাঙ্গন, সঙ্গী। 
৩১. প্রত্যয় ও বিভক্তিহীন শব্দের শেষে ং (অনুস্বার) ব্যবহৃত হয়। 
যেমন : আড়ং, ইদানীং, এবং, ঠ্যাং, ঢং, পালং, ফড়িং, বরং, রং, শিং।
৩২. অনুস্বারযুক্ত শব্দে প্রত্যয়, বিভক্তি বা স্বরবর্ণ যুক্ত হলে ং স্থলে ঙ লেখা হবে। 
যেমন : আড়ঙে, টঙে, ঢঙে, ফড়িঙের, রঙিন, রাঙিয়ে, সঙের।

পতিতপাবন মণ্ডল (পাবন), 
 বাংলা বিভাগীয় প্রধান, 
সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ,  ঢাকা-১১০০। 

2 comments:

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.