ads

ছাগল খাওয়া কূপ

আমাদের গ্রামের নাম হরিপুর। এই গ্রামেরই একজন বাসিন্দা রমিজ মিঞা, সে আমার দূরসম্পর্কে দাদু হয়। তাদের বাড়িতে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা, যা গ্রামের সবার মনে দাগ কেটে গিয়েছিল, সেই ঘটনাটিই আমি লিখছি।

রমিজ দাদুর ছিল দুই ছেলে এক মেয়ে। তাদের বাড়িতে একটি কূপ ছিল। ওই কূপে আগে পানি ছিল কিন্তু পরবর্তী সময়ে ওই পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কূপটি ময়লা ফেলার কাজে ব্যবহৃত হতে থাকে। একদিন সকালবেলা রমিজ দাদুর একটি ছাগল ওই কূপটিতে পড়ে যায়। তাই রমিজ দাদুর বড় ছেলে কাউছার চাচা কূপটিতে নামে ছাগলটিকে তুলে আনার জন্য। কিন্তু অনেকক্ষণ পার হয়ে যাওয়ার পরও সে উঠে আসে না। কূপটি ছিল খুব গভীর এবং অন্ধকার। তাই কিছু দেখা যাচ্ছিল না। অনেক ডাকাডাকির পরও যখন কাউছার চাচার কোনো সাড়া পাওয়া গেল না, তখন তার ছোট ভাই আলম চাচাও কূপটার ভেতর নামে। সবাই তাকে নামতে নিষেধ করলেও সে কারও কথা শোনে না। আলম চাচা নামার পর তারও কোনো খবর নেই।



অনেকক্ষণ হয়ে যায় কিন্তু সেও আর উঠে আসে না। বাড়ির সবাই তখন কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। গ্রামের অনেকেই তখন খবর পেয়ে রমিজ দাদুর বাড়িতে ভিড় করে। তারা বাড়ির সবাইকে সান্ত্বনা দেয়। কিন্তু সবার মনে একটাই প্রশ্ন জাগে, কী আছে ওই কূপটাতে? কেন দুজন জলজ্যান্ত মানুষ ওই কূপে নেমে আর উঠে এল না। তবে কি ওই কূপে অতিপ্রাকৃত কোনো শক্তি আছে? গ্রামের কেউই আর ভয়ে কূপটাতে নামে না। দুপুরের দিকে খবর পেয়ে আমাদের গ্রামের ডাক্তার কাকুও চলে আসেন রমিজ দাদুর বাড়িতে। তিনি সবকিছু শুনে কিছুক্ষণ কূপটার কাছে দাঁড়িয়ে থাকেন। কিছুক্ষণ পর তিনি একটি দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে কূপের ভেতরে ধরতেই কাঠিটির আগুন নিভে যায়। তখন তিনি সব বুঝতে পারেন এবং ব্যাপারটা সবাইকে বুঝিয়ে বলেন। তিনি বলেন, অনেক দিন এই কূপে ময়লা ফেলায় তা থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস উত্পন্ন হয়েছে। এর প্রমাণ হলো আমি দেশলাইয়ের কাঠিটা কূপের ভেতর ঢোকানোর সঙ্গে সঙ্গে তা নিভে যায়। কারণ, আগুন অক্সিজেন ছাড়া জ্বলতে পারে না। তাই কাউছার, আলম ও ছাগলটা এই কূপের ভেতর অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছে। তখন গ্রামের সবাই বুঝতে পারে কাউছার এবং আলমের মৃত্যুর রহস্য আসলে কী ছিল।
সূত্র: কিআ

No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.