ads

প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান

 

ভূমিকা: বিশ্বের যাবতীয় ভৌত বিষয়াবলি পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ, যাচাই নিয়মসিদ্ধ, বিধিবদ্ধ ও গবেষণালব্ধ পদ্ধতি যা জ্ঞানকে তৈরিপুর্বক সুসংগঠিত করার কেন্দ্রস্থল, তাই হলাে বিজ্ঞান। মানুষ আজ সভ্যতার যে উচ্চ শিখরে অবস্থান করছে তার সবটকই বিজ্ঞানের কল্যাণে অর্জিত হয়েছে। আদিকাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত মানব সভ্যতার প্রতিটি পর্যায়েই। বিজ্ঞানের অবদান পরিলক্ষিত হয়। প্রস্তর যুগে হিংস্র বন্যপ্রাণী থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য মানুষ নির্মাণ করে প্রস্তর নির্মিত হাতিয়ার। পরবর্তীতে ধাতুর যুগে নির্মাণ করেছে ধাতব অস্ত্র। এভাবে প্রয়ােজনের তাগিদে মানষ বিজ্ঞানকে নিজের কাজে ব্যবহার করছে। বিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান বিস্তৃতিতে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রই এখন বিজ্ঞান নির্ভর হয়ে পড়েছে। অন্ধকারে আলাে ছড়াতে লাইট, গরমে স্বস্তি পেতে পাখা, বিশ্বের সবকিছু হাতের মুঠোয় রাখতে মঠোফোন ইত্যাদি ছাড়াও টিভি, রেডিও, ফ্রিজ, কম্পিউটার, ভিসিআর, এয়ারকুলার, লিফ্ট-বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত সেবাগলাে মানুষ প্রতিনিয়ত ব্যবহার করছে। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি চিন্তা-চেতনা, জীবনের স্বপ্ন এবং কল্যাণের পরিবর্তন ঘটিয়েছে বিজ্ঞান।

বিজ্ঞান কী? : বিজ্ঞানী ভ্যালেরীর মতে, “বিজ্ঞান হলাে কতগুলাে সাফল্যমণ্ডিত ব্যবস্থা ও ধ্যান-ধারণার সংগ্রহ।” প্রমথ চৌধরীর মতে “বিজ্ঞান শুধু একটি বিশেষ জ্ঞানের নাম নয়, একটি বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে যে জ্ঞান লাভ করা যায় আসলে তারই নাম হচ্ছে বিজ্ঞান।” হারবার্ট স্পেন্সারের মতে, “বিজ্ঞান হলাে সংঘবদ্ধ জ্ঞানের সমষ্টি।” বিজ্ঞানী মাদামকুরী বলেছেন, “আমার চোখে বিজ্ঞান হলাে অনিন্দ্য সুন্দর ।” 

আধুনিক বিজ্ঞান: বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বর্তমান সভ্যতা বিজ্ঞানের দান। সভ্যতার ক্রমবিকাশের পথে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে পরিপূর্ণ সমৃদ্ধি লাভ করেছে। সভ্য সমাজের সর্বত্রই বিজ্ঞানের গৌরবময় উপস্থিতি। নাগরিক সভ্যতার সাম্যতম অংশটিও অবৈজ্ঞানিক নয়। এর রাজপথ, যানবাহন, অট্টালিকা সবই বিজ্ঞানের আশীর্বাদপুষ্ট। সুইচ টিপলেই আলো জ্বলে, পাখা ঘােরে, গান বাজে, ছবি আসে, নিমিষেই ওড়া যায় নীল আকাশে, ভাঙা হাড় জোড়া লাগে। এ সবকিছুই এধব হয়েছে বিজ্ঞানের বদৌলতে।।



বিস্ময়কর আবিষ্কার: আধুনিক বিজ্ঞান সময় ও দূরত্বকে জয় করেছে। জেমস ওয়াট স্টিম ইঞ্জিন ও জর্জ স্টিফেনসন লাতি আবিষ্কার করেছেন। উড়ােজাহাজের সাহায্যে আমরা ঘণ্টায় তিনশ মাইলেরও বেশি পথ অতি সহজে আতিক্রম হতে পারি। মাইকেল ফ্যারাডে বিদ্যুৎ আবিষ্কার করেন এবং টমাস আলভা এডিসন বিদ্যুৎকে কাজে লাগান টেলিফোন, রেডিও ও টেলিভিশনের উৎকর্ষ সাধনে। মূলত এ যন্ত্রগুলাে বিদ্যুৎ তরঙ্গের রহস্যময় শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। 

চিকিৎসায় বিজ্ঞান: আমাদের কর্মমুখর জীবনের অসুস্থ মুহূর্তগুলাে নিতান্তই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। সহজ মরণকে বিজ্ঞান এখন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়। মুমূর্ষু রােগী আশ্চর্য সব ঔষধের গুণে বেঁচে উঠছে। ভরসা পাচ্ছে পৃথিবীকে আরাে অধিককাল উপভােগ করার । অলৌকিক শােনালেও সত্যি যে, প্লাস্টিক সার্জারীর মাধ্যমে মানুষের চেহারা আরাে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। পেনিসিলিন ও স্ট্রেপটোমাইসিন প্রভতি আবিষ্কৃত হওয়ায় লাখ লাখ মানুষ নানাবিধ ব্যাধির হাত থেকে রক্ষা পয়েছে। সম্প্রতি বিজ্ঞানের অপার মহিমায় পেনিসিলিনের মতাে ক্লোরােলিন নামে আরেক প্রকার জীবাণুনাশক আবিষ্কৃত হয়েছে। মাদাম কুরীর আবিষ্কৃত রেডিয়ামই আজ দুরারােগ্য ক্যান্সার রােগীর মনে জাগিয়েছে বাঁচার আশা। তাছাড়া জন গ্রে-এর ভ্যাক্সিন ও লুই পাস্তরের ইনজেকশনের কথা সবাই জানে।

ইঞ্জিনিয়ারিং কাজে বিজ্ঞান: পৃথিবীর এমন কোনাে স্থান নেই যেখানে পুরকৌশলের অবদান নেই। বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন শত শত ইমারত গড়ে উঠছে, পাহাড় কেটে রাস্তা হচ্ছে, সেতু গড়ছে, দুর্গম গিরিপথ, উত্তপ্ত মরুপ্রান্তর অবলীলায় মানুষ অতিক্রম করছে। 

কৃষি-শিল্পে বিজ্ঞান: বিজ্ঞান কৃষিতে এক যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটিয়েছে। সারের ব্যবহারে ফলন বেড়েছে। কীটপতঙ্গা নিপাত করছে ওষুধ, মরুময় পরিবেশ পরিণত হচ্ছে মনােহর উদ্যানে, বিরানভূমি জনারণ্যে পরিণত হচ্ছে। উন্নত সেচ ব্যবস্থা ও চাষাবাদের ফলে কৃষিক্ষেত্রে অনেক উন্নতি লাভ করেছ। 

বিশ শতকের বিজ্ঞান: বিশ শতকের বিজ্ঞানীগণ চন্দ্রালােকের অজ্ঞাত পরিবেশকে জানার জন্য উৎসুক হয়ে উঠছেন। ইতােমধ্যে মানষ চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করেছে। এছাড়া মঙ্গলগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে বের করার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চলেছে। এসব কাজের জন্য ব্যবহার হচ্ছে স্পুটনিক, ভয়েজার, পার্থফাইন্ডার প্রভৃতি নভােযান । 


একুশ শতকের বিজ্ঞান: বিজ্ঞান তার আওতাকে একুশ শতকে আরাে এগিয়ে নিয়ে যাবে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় । কেননা বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ পেয়েছে মানব ক্লোনিং এর মতাে ঘটনা। আর মানবদেহের ‘জিনােম সিকোয়েন্স' আবিষ্কার এ শতকে বিজ্ঞানের আরাে নতুন কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে।বিজ্ঞানে অকল্যাণ: আমাদের নিত্যজীবনে বিজ্ঞান শুধু আশীর্বাদই বয়ে আনেনি; অভিশাপও এনেছে। যন্ত্রের ওপর নির্ভর করতে গিয়ে মানষ দিন দিন শ্রমবিমুখ হয়ে পড়ছে। অবস্থা দেখে মনে হয় মানব জন্মের সব গৌরব হারিয়ে যন্ত্রের দাস হয়ে উঠছে। এছাড়া বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে যেসব মারণাস্ত্র তৈরি হচ্ছে তা শান্তিকামী মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলছে। দুটি মহাযুদ্ধের ধ্বংসলীলাই এর জ্বলন্ত প্রমাণ। একই সাথে যা আশীর্বাদ তা যে অভিশাপও হতে পারে তার জ্বলন্ত প্রমাণও আছে অনেক। আলফ্রেড নােবেল পাহাড়-পর্বত ডিঙিয়ে মনুষ্য যাতায়াতের টানেল কিংবা খনি থেকে খনিজদ্রব্য উত্তোলনের জন্য যে ডিনামাইট আবিষ্কার করেন, পরবর্তীতে মহাযুদ্ধে তা-ই অসংখ্য প্রাণ সংহার করেছে। যে পারমাণবিক শক্তি মানুষের শক্তিকে বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে, তাই আবার নাগাসাকি ও হিরােশিমায় লাখ লাখ লােক হত্যা করেছে। 


উপসংহার: ভালাের পাশে মন্দের উপস্থিতি আলাে-আঁধারের মতাে লুকোচুরি খেলবেই। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান তাই অনেক ভালাের সাথে কিছুটা অপ্রীতিকরও বৈকি। তাই বিজ্ঞানের অকল্যাণকর দিকগুলােকে দূরে ঠেলে এর সুন্দর অগ্রযাত্রকে আরাে ত্বরান্বিত করতে হবে। তবে এই মানুষ সমাজ উন্নত থেকে উন্নততর হবে, সমৃদ্ধি আসবে জগতের। 







1 comment:

  1. Thanks for this wonderful blog about Science!

    ReplyDelete

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.