ads

‘তুমি, নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’



পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মতো সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
কবি কামিনী রায়ের এ মর্মবাণী মনে-প্রাণে ধারণ করে জীবনধারায় যাঁরা অগ্রসরমান তাঁদের জীবন ত্যাগের মহিমায় আলোকিত, শুভ্র-সুন্দর মহিমান্বিত। পরম করুণাময় ঈশ্বরের অমোঘ আহ্বানে কঠোর অধ্যবসায়, সাধনা আর আত্ম-প্রত্যয়ে গঠনজীবনের বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে সংঘ, ম-লী ও মানব সেবায় যাঁরা সমগ্র জীবন নিজেকে নিয়োজিত করেন। নিজের বলতে যাঁদের কিছুই থাকে না, তারা হলেন হলিক্রস ফাদার-ব্রাদার-সিস্টার। নিজের বুকে কৌমার্যের কঠিন-তীরবিদ্ধ করে অর্থাৎ জগতের বিলাসমোহে মত্ত না হয়ে সরল, অনাড়ম্বর জীবন পথে চালিত হন তাঁরা। দরিদ্রতা, কৌমার্য, বাধ্যতা তাঁদের জীবনের ব্রত। যে ব্রত রক্ষায় মরণপণ দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ এ মহান মানবেরা। সাধারণ-জীবনে বা গার্হস্থ্যজীবনে দরিদ্রতা, কৌমার্য মেনে চলা হয় না একেবারেই। সমাজ ব্যবস্থায় গার্হস্থ্যজীবনের দাবীই থাকে দারা-পুত্র-পরিবার নিয়ে সুখে-শান্তিতে জীবন যাপন করা। গার্হস্থ্যজীবনে সুখের ভাবনা আলাদা, ত্যাগের চেতনা এখানে অনেক ক্ষেত্রে রহিত। স্বার্থপরতা, জরা, ঈর্শা, ঘৃণা, অশিক্ষা, লোভসহ নানা অন্ধকারে অষ্টে-পৃষ্টে জড়িয়ে যাদের জীবন তাদের আলোর পথে আনতে এ সব মহান ত্যাগী সন্ন্যাসী ব্রাদারদের জীবনবোধ জীবনের ঊষালগ্নে পবিত্র ক্রুশ কিশোরালয় থেকে তিল তিল করে গড়ে উঠতে থাকে উচ্চ মানবিক চেতনায়।


সেন্ট গ্রেগরীতে এমনি একজন ব্রাদারের সান্নিধ্যে আসার সৌভাগ্য হয় ১৪ জুন, ২০১৭ খ্রীষ্টাব্দ থেকে। ধীরে ধীরে সখ্য গড়ে ওঠে, হয়ে ওঠেন কাছের মানুষ, প্রাণের মানুষ। আজীবন সন্ন্যাসব্রত গ্রহণের পূর্ব মুহূর্তে যিনি এখানে তাঁর সেবা দিতে ঈশ্বরের আহ্বানে নিযুক্ত হন। কৌতূহলী মনের জানালায় বসন্তের বাতাস এসে জোর হাওয়া দিতে থাকে। সে হাওয়ায় ভেসে আসে নানা সুর যাতে জানতে পারি নাম তাঁর ব্রাদার যোসেফ রক্সি গোছাল সিএসসি। গাজীপুর জেলার মঠবাড়ী ধর্মপল্লীর দক্ষিণ ভাসানিয়া গ্রামে পিতা হেমন্ত আলবার্ট গোছাল ও মাতা গীতা ইউফ্রেজী গোছালের তৃতীয় সন্তান রূপে ১৩ অক্টোবর, ১৯৯০ খ্রীষ্টাব্দে ঈশ্বর তাকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন।




যাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয় ভাসানিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এর পর সেন্ট নিকোলাস উচ্চ বিদ্যালয়, গাজীপুর থেকে এসএসসি (২০০৭), এইচএসসি (২০০৯) নটর ডেম কলেজ ও অর্নাস করেন ইউল্যাব, ঢাকা থেকে। ডিপ্লোমা ইন থিওলোজি এন্ড ফিলোসফি করেন বনানী জাতীয় উচ্চ সেমিনারী, বনানী, ঢাকা থেকে।



২০০৫ খ্রীষ্টবর্ষের ৫ জানুয়ারি থেকে গাজীপুর জেলার নাগরীতে অবস্থিত পবিত্র ক্রুশ কিশোরালয়ে তাঁর গঠনজীবনের সূত্রপাত এর পর পবিত্র ক্রুশ প্রার্থীগৃহ, নারিন্দা, ঢাকা; পবিত্র ক্রুশ নব্যালয়, সাগরদী, বরিশাল; পবিত্র ক্রুশ জ্ঞান-তপস্যালয়, ঢাকা; পবিত্র ক্রুশ সাধনাগৃহ, ঢাকায় গঠন জীবনের বিভিন্ন পর্যায় অত্যন্ত সফলতা ও সার্থকতার সাথে শেষ করেন ২০১৭ খ্রীষ্টাব্দে। এ সময় তিনি তাঁর গঠনগৃহের পরিচালক, আধ্যাত্মিক পরিচালক ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের কাছ থেকে পান দিকনির্দেশনা, আদর্শ জীবনবোধ, আধ্যত্মিক চেতনা, উৎসাহ, অনুপ্রেরণা সেই সাথে তিনি তাঁর নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, অধ্যবসায়ের জন্য প্রভূত প্রশংসা অর্জন করেন।



ব্রাদার যোসেফ রক্সি সিএসসির ব্রতীয় জীবন শুরু হয় ২৩ জুলাই, ২০০৯ খ্রীষ্টাব্দে সাগরদী, বরিশালের নব্যালয়ে প্রবেশের মাধ্যমে। তিনি প্রথমব্রত গ্রহণ করেন ১৬ জুলাই, ২০১০ খ্রীষ্টাব্দে। আজীবন সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করতে যাচ্ছেন আগামী ৪ জানুয়ারি, ২০১৯ খ্রীষ্টাব্দে (মঠবাড়ী, গাজীপুর)। এ মহান ব্রত অনুষ্ঠানের সার্বিক মঙ্গল কামনা করি, সেই সাথে ব্রাদার যেন এ মহান ব্রতের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে সারাজীবন অন্ধকারে আলোর পথিকৃৎ হয়ে থাকেন উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় এ প্রার্থনা করি।


নিজে আলোকিত না হলে অন্যকে আলোকিত করা যায় না। তাই ঐশতত্ত্বে জ্ঞান লাভের পাশাপাশি একাডেমিক লেখাপড়ার প্রয়োগ ঘটাতে ও বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভের জন্য সেবা বা কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। সেন্ট নিকোলাস উচ্চ বিদ্যালয়ে সেবার মধ্য দিয়ে তাঁর সেবা বা কর্মজীবনে প্রবেশ ঘটে। এর পর কিছুদিন সেন্ট প্লাসিডস্ হাই স্কুল এন্ড কলেজ, পাথরঘাটা, চট্ট্রগ্রামে সেবা দিয়ে বর্তমানে তিনি সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে সেবায় নিয়োজিত আছেন। এ সময় তিনি হাজার, হাজার শিক্ষার্থী ও শত শত শিক্ষকের সান্নিধ্যে এসে বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।



খ্রীষ্টান মিশনারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট গ্রেগরী পরিবারের সদস্য হওয়ার সুবাদে শ্বেতশুভ্র বস্ত্রধারী এ মহান ব্রতচারীদের উৎসর্গীকৃত জীবনের বাস্তব জীবনপ্রবাহ সম্পর্কে খানিকটা জানার সৌভাগ্য হয়েছে। পবিত্র ক্রশ সংঘের ব্রাদারগণের জীবনালেখ্য যেন বিস্ময়ের বিস্ময়, মহোনীয় এ জীবন যেখানে শুধু জগতের কল্যাণ, মানুষের সেবা। তাঁদের দর্শন, সৌন্দর্যবোধ স্বতন্ত্রম-িত। প্রকৃতির ক্ষয়-ক্ষতি, মানুষের অনৈতিকতা, কষ্ট, নিরক্ষরতা দেখলে ফাদার মরোর এ ভাবশিষ্যদের মন কেঁদে ওঠে। তাইতো পবিত্র ক্রুশ সংঘের শাশ্বত দর্শন ‘বিশ্বাসের শিক্ষক হিসেবে বিশ্বময় আলো ছড়িয়ে দেওয়া’ এ চেতনায় জাগ্রত হয়ে প্রাইমারি-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষালয়ে স্বমহিমায় তাঁরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালনা ও সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। ব্রাদারগণ মনে করেন শিক্ষাই পারে মানুষকে দেহ-মন-আত্মায় পরিপূর্ণ মানুষ করতে, দিতে পারে সকল প্রকার মুক্তি। এরই অংশ হিসেবে ব্রাদার যোসেফ রক্সি সিএসসির সেন্ট গ্রেগরীতে পদার্পণ।
এখানে প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরম শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ ব্রাদার প্রদীপ প্লাসিড গমেজ সিএসসি ও উপাধ্যক্ষ ব্রাদার লিটন নিকোলাস টলেন্টিনু সিএসসির অধীনে তিনি বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত আছেন। বিশেষ করে কুইজসহ অন্যান্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায়। সদা হাস্যোজ্জ্বল এ মানুষটি আমাদের সাথে ভীষণ সহযোগিতাপূর্ণ ব্যবহার করেন। প্রশ্ন-পত্র ই-মেইলে পাঠালে তিনি ধন্যবাদের সাথে তা গৃহীত হয়েছে এ মর্মে ফিরতি ই-মেইল প্রেরণ করেন। এতে যেমন নিশ্চিত হই তিনি ই-মেইলটি পেয়েছেন, তেমনি অনুপ্রেরণা পেয়ে উৎসাহবোধ করি পরবর্তী পর্যায়ে কাজ করার জন্য। অনেক সময় কম্পিউটার বিষয়ক বিভিন্ন কাজ ও কথা হয় ব্রাদারের সাথে। ব্রাদার এ সময় সামন্য উপকৃত হলে বার বার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অভিভূত হই, শেখার চেষ্টা করি নিজেকে বদলাতে। ব্রাদারদের গঠন জীবনের নিয়মতান্ত্রিকতা সর্বক্ষেত্রে আমাদের প্রভাবিত ও আলোকিত করে। ব্রাদারও নিয়ম মানতে ও মানাতে ভালোবাসেন।
শিক্ষক হিসেবে ব্রাদার ছাত্রদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়। তিনি সুশৃঙ্খলভাবে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সব সময় তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন, প্রয়োগ করেন ইতিবাচক শব্দ ও বাক্য যা শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ায় উৎসাহ যোগায়। ব্রাদার বিভিন্ন শ্রেণিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে পাঠ দান করেন তিনি তার শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে থাকেন বর্তমান ডিজিটাল এ যুগে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার বেশ সহজলভ্য। এগুলো ব্যবহার করে অনেক ভালো কাজ যেমন করা যায়, তেমনি মন্দ ব্যবহারের মাধ্যমে মূল্যবান সময় নষ্ট করে পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎও ধ্বংস করা যায়। তাই এগুলো ব্যবহারে সচেতন হও। একদিন এ ডিভাইস্গুলো তোমরা অনেক ব্যবহার করবে তাই এ বিষয়ে তোমাদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। তিনি শিক্ষার্থীদের বার বার তাগিদ দেন মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে। তিনি মনে করেন, অতিউত্তম (প্রচলিত-ভালো) শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার পাশাপাশি ভালো (প্রচলিত-মন্দ/দুর্বল) শিক্ষার্থীদের পাশে বিশেষভাবে থাকাই শিক্ষকতার প্রকৃত ধর্ম। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন শিক্ষক শুধু খবরের উৎস নন বা প্রয়োজনীয় সকল প্রকার তথ্য সরবরাহকারী নন, শিক্ষক শিক্ষার্থীর বন্ধু, পরিচালক ও যোগ্য উপেদেষ্টা; একজন সুদক্ষ শরীর গঠনকারী, মনের বিকাশ সাধনের সহায়ক তথা চরিত্র গঠনের নিয়ামক। তিনি সর্বদা বলে থাকেন উত্তম শিক্ষক হবেন উত্তম ছাত্র। অর্থাৎ শিক্ষক ছাত্রের চেয়ে অবশ্যই বেশি পড়বেন। সেই সাথে প্রতিনিয়ত শিক্ষা বিষয়ক সর্বশেষ তথ্যটি জেনে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
আমার ছেলে প্রভাতী শাখায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার কারণে প্রতি কর্মদিবসে ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যেতে হয় ৬ টা ৫০ মিনিটের মধ্যে। বিদ্যালয়ে পৌঁছে সাদা ক্যাসাকের উপরে কোমরবদ্ধ কালো সুতার রশি, গলায় নোঙ্গরযুক্ত পবিত্র ক্রশ পরিহিত সন্ন্যাসীবেশী সম্মানিত ব্রাদার প্রদীপের সাথে আর যাঁকে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের অভ্যর্ধনা জানাতে ও সাদরে গ্রহণ করতে দেখি তিনি ব্রাদার যোসেফ রক্সি সিএসসি। আমাকে দেখেই গুড মর্নিং বলেন, বেশিরভাগ দিনই আমি আগে গুড মর্নিং বলার সুযোগ পাই না। ভীষণ ভালো লাগে। মনে হয় যেন- স্বয়ং ঈশ্বর আমার সামনে হাসছেন, আমাকে গুড মর্নিং বলে আশীর্বাদিত করে আমার জন্য শুভ কামনা করছেন, দিচ্ছেন অনুপ্রেরণা। শিক্ষার্থীদের খুব ভালোবাসেন তিনি, শিক্ষার্থীরাও তাঁকে খুব ভালোবাসে। সকালে ব্রাদারকে দেখে আমার ছেলেসহ অন্যান্য ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা পরম মমতায় তাঁর দিকে দৌঁড়ে যায়, প্রণাম করে, সুপ্রভাত জানায় বিষয়টি ব্রাদার খুব উপভোগ করেন বলেই মনে হয়। নার্সারি থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সাথে যেমন, তেমনি দিবা শাখার ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সাথেও ব্রাদারের সুমধুর সম্পর্ক দেখতে পাই।
ব্রাদার সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় ভালোবেসে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করে থাকেন। বিজ্ঞানমেলা, জাতীয় বিতর্ক উৎসব, জাতীয় নলেজ ফিয়েস্তা, ইংলিশ-ম্যাথ কার্নিভালসহ সকল প্রকার আয়োজনে আমরা প্রচ- সহযোগিতা পেয়ে থাকি তাঁর কাছ থেকে। বিশেষকরে বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ, প্রিন্টিং বিষয়ক কাজ নিপুণতার ও ক্ষিপ্রতার সাথে করে দেন। ট্রফি, প্রাইজ, সম্মাননা স্মারক, ম্যাগাজিন ও ব্যানার পোস্টারের লেখা-লেখিসহ বিভিন্ন ধরনের কাজে যখনই সহযোগিতা চেয়েছি ব্রাদার কখনো ফিরিয়ে দেন না। সহশিক্ষা কার্যক্রমের ব্যাপারে ব্রাদারের আগ্রহও তুঙ্গে। ছুটির পরে সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় ব্রাদার আমাদের পাশে থাকেন, ছাত্রদের পাশে বসে তাদের উৎস দেন, যা আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
খেলার মাঠেও ব্রাদার খ্বুই প্রাণবন্ত, ফুটবল, বাস্কেটবল, ক্রিকেট, টেবিল টেনিস বা পিং পংসহ সকল প্রকার খেলাধুলায় ব্রাদার বেশ পারদর্শী। ব্রাদার নিয়মিত নিজে শরীর চর্চা করেন অন্যকে শরীর চর্চায় উদ্বুদ্ধ করেন। ব্রাদার বেশ স¦াস্থ্য সচেতন, দরিদ্রতা ও কৃচ্ছ্রসাধনার সাথে স্বল্প আহারী মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের কাছে পরিচিত। ব্রাদার ছবি তুলতে ও হাসতে ভালোবাসেন। ব্রাদার মনে করেন হাসলে ঈশ্বরও আমাদের সাথে হাসেন, দান করেন আমাদের সুস্থ জীবন। আর ছবি জীবনকে দান করে মধুময়স্মৃতি।
ভ্রমণে ব্রাদারের রয়েছে প্রবল আগ্রহ। তিনি সুযোগ পেলেই ঘুরতে বের হন। সেটা হোক কাছে কিংবা দূরে। প্রকৃতির সান্নিধ্যকে খুব ভালোবাসেন তিনি। প্রকৃতি যেন তার অতি প্রিয়জনসম সাথী। প্রকৃতি তাঁকে দান করে অপরিসীম শক্তি, দেয় আনন্দ। নদীর কলধ্বনি, পাখির ডাক, তরুর মর্মর-সমস্ত তাঁর কাছে নবরূপে ধরা দেয়। তাঁর জন্ম গাছ-পালায় ঘেরা সোনার বাংলার নিভৃত পল্লিতে। তাঁর মাতৃ-ভূমির চমৎকার জলবায়ু-সহনীয় রৌদ্রতাপ, নমনীয় জল-বৃষ্টি হওয়ায় মাঠ ভরে ওঠে সোনালি ধানে, সবুজ পাটে, নানা বর্ণের ফলমূলে। এ পরিবেশে বেড়ে ওঠায় প্রকৃতি এক বিশেষ রূপে ধরা দেয় তাঁর কাছে। তাই তো তিনি তার অফিস কক্ষটি সুসজ্জিত করেছেন বিভিন্ন লতা জাতীয় গাছ দিয়ে। আজ বিশ্বব্যাপী পরিবেশের প্রতি মমত্ব সৃষ্টির তাগিদ অনুভূত হচ্ছে যা ব্রাদার মনে প্রাণে ধারণ করেন।


দখবধৎহ ভৎড়স ঊাবৎুড়হব, ঋড়ষষড়ি হড় ঙহব.’ এ উক্তিটিকে তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন। মানুষ হিসেবে মৌলিকতা মুল্যবান চিত্তসম্পদ। তাঁর পরিচয়ের স্বাক্ষর বহন করবে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। কল্পনা ও প্রকাশভঙ্গির স্বাতন্ত্র্য, ভাব ও ভাবনার ব্যঞ্জনা, চিত্রানুগ বর্ণনাশৈলী, সৃষ্টিশীল কর্মতৎপরতা মানুষের মৌলিক সম্পদ। এটি অর্জনে তিনি সদা তৎপর।
ব্রাদারকে যতটুকু দেখেছি, কথা বলে অনুধাবন করেছি তাতে মনে হয়, ব্রাদার দীর্ঘ চৌদ্দ-পনেরো বছর কঠোর সাধনায় তাঁর ব্রতত্রয়ে বিশস্ত থেকেছেন। আর বার বার নানা রূপ পরীক্ষা-নীরিক্ষা-পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এ শুভকক্ষণে উপনিত হতে পেরেছেন। ভোগ-বিলাসের সুযোগ থাকলেও দরিদ্রতা ব্রত স্বেচ্ছায় পালন মানুষের পক্ষে সত্যিই খুব কঠিন। এ কঠিন কাজটিকে ব্রাদার প্রবল আত্ম-বিশ্বাসে সহজ করে নিয়েছেন, করেছেন অভ্যাসে পরিণত। ব্রাদারকে দেখলেই সহজেই অনুমেয় হয় তিনি সহজ-সরল কথায় ও কাজে বিশ্বাসী, বাধ্যতা তার অলংকার। তিনি সর্বদা তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বাধ্য থেকে সাধ্যাতীত সেবা প্রদানে সচেষ্ট। শুচিতার বিষয়টি অলক্ষ্য হওয়ায় এ বিষয়ে বাইরে থেকে সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া কষ্ট সাধ্য। তবু প্রার্থনা করি ব্রাদার যেন তাঁর গঠন জীবন ও ব্রত জীবনের শিক্ষাকে হৃদয়ে ধারণ করে কৌমার্যের কঠিন শুচিতা আজীবন ধরে রাখেন। তিনি যেন নিজের সাথে প্রবঞ্চনা না করেন। এ কাজে পরমপিতা তাঁকে সহয়তা করুন। যেখানে হিংসা, স্বার্থপরতা, অন্যায়, দুঃখ, কষ্ট, অন্ধকার সেখানে ব্রাদার পরম দয়ালু মহাশক্তি প্রভুর আলোয় আলোকিত হয়ে উপস্থিত হবেন আলোর দিশারি হয়ে এ প্রাত্যাশা ব্রাদারের কাছে ব্যক্ত করি। সেই সাথে অনুরোধ ব্রাদার যেন সারা জীবন সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলার সৎ সাহস রাখেন। পক্ষপাতিত্ব মনোভাব যেন কোনোভাবে ব্রাদারের পবিত্র আত্মাকে স্পর্শ করতে না পারে।


ঈশ্বরের পরম দয়ায় দ্রাক্ষাক্ষেত্রে সেবায় মনোনিত হয়ে দীক্ষা গ্রহণ করে নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে ঈশ্বরের নামে জীবনোৎসর্গ করা ভীষণ ভীষণ কঠিন কাজ, নানা বাধা, নানা চ্যালেঞ্জ। ব্রাদারগণ সংসার বা পরিবার গঠন করেন না। মা-বাবা-ভাই-বোন ও স্বজনদের মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে মানব-কল্যাণে, জগৎ কল্যাণে নিজেকে সমর্পণ করেন। সেমিনারিতে প্রবেশের পর দীর্ঘ চৌদ্দ-পনেরো বছর কঠিন থেকে কঠিনতর সাধনায় একজন ব্রতধারী সন্ন্যাসী ঈশ্বরের প্রকৃত সেবক হিসেবে নিজেকে যোগ্য করে তোলেন। অনেকেই এ মহিমাময় জীবনের আহ্বান শুনে এ জীবনে প্রবেশ করেন কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য একটা বিরাট অংশ শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেন না। যাঁরা টিকে থাকে প্রতিনিয়ত তাঁদের কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। ব্রাদার যোসেফ রক্সি সিএসসি তেমনি একজন যিনি এ কঠিন জীবনে বিশ্বস্ততার সাথে কাটিয়ে দিয়েছেন প্রায় ১৫টি বছর। এ সময়ে স্বভাবতই তাঁকেও নানা রূপ প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এ পর্যায়ে উপনিত হতে হয়েছে। আজীবন সন্ন্যাসব্রত গ্রহণের এ ক্ষণে ব্রাদার অধীরভাবে অপেক্ষা করছেন সাধু যোসেফের মেডেল পরার জন্য। স্বপ্ন দেখছেন প্রতিনিয়ত সেই ছোট্ট কাঠের ক্রশটির জন্য যা তিনি বালিশের নিচে রেখে সুখনিদ্রা যাবেন পরম পিতার ছায়াশীতল মমতায়। ব্রাদারের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করছি প্রভুর পাদপদ্মে। ব্রাদার যোসেফ রক্সি সিএসসির কাছে আমার প্রত্যাশা-
তুমি, নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে।
তব, পূণ্য-কিরণ দিয়ে যাক, মোর
মোহ-কালিমা ঘুচায়ে।

পতিতপাবন মণ্ডল (পাবন)
বিভাগীয় প্রধান, বাংলা
সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
লক্ষ্মীবাজর, ঢাকা, বাংলাদেশ

No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.