ads

একমাত্র এবং একমাত্র প্রমিত বানান হলাে- ‘ব্যাবহারিক' ‘ব্যবহারিক’ নয়।


ব্যবহারিক’ নাকি ‘ব্যাবহারিক’ বিষয়টি সমাধানের জন্য দুটি বিষয় অবলম্বন করব।
১. ব্যাকরণিক বিশ্লেষণ (ব্যুৎপত্তিগত বিশ্লেষণ)
২. আভিধানিক সিদ্ধান্ত
শব্দটি প্রকৃতি-প্রত্যয় জাত একটি সাধিত শব্দ। যা এভাবে গঠিত হয়েছে-
ব্যবহার + ষ্ণিক / ইক = ব্যাবহারিক -
এখানে বৃদ্ধির সূত্রে ব্য > ব্যা হয়েছে।
বিষয়টিকে আত্মস্থ করতে বা হৃদয়ঙ্গম করতে বৃদ্ধি, প্রকৃতি, প্রত্যয় এ তিনটি সূত্র (সংজ্ঞা) জানা আবশ্যক। (যারা ব্যাকরণ না শিখে বানান শিখতে চান তাদের জন্য বিষয়টি প্রযোজ্য নয়। তাদের জন্য একটি সহজ উপায় আলোচনার শেষে দেখানোর চেষ্টা করব। )
এবার জানা যাক,
বৃদ্ধি কাকে বলে?
প্রকৃতির সাথে প্রত্যয়যুক্ত হলে প্রকৃতির আদি স্বর-
অ স্থলে আ,
ই / ঈ স্থলে ঐ,
উ / ঊ স্থলে ঔ এবং
ঋ স্থলে আর্ হলে তাকে বৃদ্ধি বলে।
উদাহরণ:
মনু +ষ্ণ=মানব, --- ম (ম্+অ) > (ম্ + আ) > মা;
শিশু + ষ্ণ = শৈশব, --- শিশু এর শি > শৈ
যুব + অন = যৌবন, -- যুব এর যু > যৌ
কৃ +ঘ্যণ =কার্য ---- কৃ > কার্
উপর্যুক্ত উদাহরণে মনু এর ম (ম্+অ) > (ম্ + আ) > মা; শিশু এর শি > শৈ; যুব এর যু > যৌ, কৃ > কার্ হয়েছে।
এবার জানি, প্রকৃতি ও প্রত্যয় কাকে বলে?
১. মনু + ষ্ণ =মানব,
২. ঢাকা + আই = ঢাকাই,
৩. গোলাপ + ঈ = গোলাপী
৪. বাড়ি +ওয়ালা = বাড়িওয়ালা,
৫. কৃ + তব্য = কর্তব্য,
৬. চল্ + অন্ত = চলন্ত
৭. পড়্ + আ =পড়া
প্রকৃতি : নামবাচক ও ক্রিয়াবাচক শব্দের মূলকে প্রকৃতি বলে।
উপর্যুক্ত উদাহরণে -মনু , ঢাকা ,গোলাপ , বাড়ি , কৃ চল্ , পড়্ প্রকৃতি
নামবাচক শব্দ:যে পদ দ্বারা কোনো কিছুর নাম বোঝায়, তাকে নামবাচক শব্দ বলে।
উপর্যুক্ত উদাহরণে - মনু , ঢাকা ,গোলাপ , বাড়ি নামবাচক শব্দ
ক্রিয়াবচক শব্দ: যে পদ দ্বারা কোনো কাজ বা ক্রিয়া বোঝায় তাকে ক্রিয়াবচক শব্দ বলে।
উপর্যুক্ত উদাহরণে , কৃ চল্ , পড়্ ক্রিয়াবচক শব্দের মূল
প্রত্যয়: প্রকৃতির সাথে যে সব বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাদের প্রত্যয় বলে।
১. মনু + ষ্ণ =মানব,
২. ঢাকা + আই = ঢাকাই,
৩. কৃ + তব্য = কর্তব্য,
৪. চল্ + অন্ত = চলন্ত
ষ্ণ, আই, তব্য, অন্ত, এগুলো প্রত্যয়।
এবার দেখা যাক এ শব্দগুলোতে বিষয়টি কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে-
সমুদ্র+ ষ্ণিক =সামুদ্রিক, -- স > সা
নগর + ষ্ণিক = নাগরিক, -- ন > না
ধর্ম + ষ্ণিক= ধার্মিক, ধ > ধা
সমর + ষ্ণিক = সামরিক স > সা
সমাজ + ষ্ণিক= সামাজিক,-- স > সা
অকস্মাৎ+ ষ্ণিক =আকস্মিক, অ > আ
অর্থ + ষ্ণিক / ইক= আর্থিক, অ > আ
বর্ষ+ ষ্ণিক / ইক= বার্ষিক, -- ব > বা -- (অ > আ)
পরিশ্রম+ ষ্ণিক / ইক= পারিশ্রমিক, -- প > পা (অ > আ)
নন্দন+ষ্ণিক / ইক= নান্দনিক, -- ন > না (অ > আ )
সময়+ষ্ণিক / ইক= সাময়িক, স > সা (অ > আ)
বিজ্ঞান+ ষ্ণিক = বৈজ্ঞানিক, বি > বৈ
ব্যবসায় + ষ্ণিক / ইক = ব্যাবসায়িক, ব্য > ব্যা
ব্যবহার + ষ্ণিক / ইক = ব্যাবহারিক, ব্য > ব্যা
এখানে মনে রাখার বিষয় হলো-- ‘ষ্ণিক’ প্রত্যয় এর পরবর্তী রূপ ইক …. অর্থাৎ ষ্ণিক প্রত্যয় যুক্ত হলে ‘ষ্ণ’ ইৎ হয়ে ‘ইক’ হয়। (প্রকৃতির সাথে প্রত্যয় যুক্ত হলে প্রত্যয়ের যে অংশ লোপ পায় তাকে ইৎ বলে। )
এবার দেখা যাক অভিধানে বিষয়টি কীভাবে গ্রহণ করেছে।
১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে 'বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে' বিকল্প শব্দ হিসেবে *ব্যবহারিক / ব্যাবহারিক* ৯১০ পৃষ্ঠায়, ২০১২-তে 'বাংলা একাডেমি বাংলা বানান-অভিধানে' *ব্যাবহারিক* ৬২৭ পৃষ্ঠায়, ২০১৬-তে 'বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে' *ব্যাবহারিক* ১০২৬ পৃষ্ঠায়। ২০১৭-তে 'সরকারি কাজে ব্যাবহারিক বাংলায়' *ব্যাবহারিক* ২০১৮-তে পবিত্র সরকারের 'ব্যাবহারিক বাংলা বানান-অভিধান'-এ *ব্যাবহারিক* ব্যবহৃত হয়েছে।
“ব্যাবসায়িক ও ব্যাবহারিক অধিকতর যুক্তিযুক্ত; কিন্তু বাংলায় অযৌক্তিকভাবে ব্যবসায়িক ও ব্যবহারিক চালু হয়েছে।” -- সুভাষ ভট্টাচার্য ‘আধুনিক বাংলা প্রয়োগ অভিধান’ ‘সংসদ বাংলা অভিধান’-এ “ব্যবহারিক-এর সংগত বানান ব্যাবহারিক বলে অভিহিত করা হয়েছে”
অতএব বলা যায়, ব্যাকরণের নিয়মানুসারে ‘ষ্ণিক/ইক’ প্রত্যয়যুক্ত শব্দের আদিস্বরের বৃদ্ধি ঘটে।-এ নিয়মে ও বাংলা একাডেমি হতে প্রকাশিত সর্বশেষ অভিধানমতে, একমাত্র এবং একমাত্র প্রমিত বানান হলাে, ‘ব্যাবহারিক'।
ব্যাকরণ না জেনে যারা মনে রাখতে চান তাদের জন্য
*** কোনো শব্দের শেষে ইক থাকলে অধিকাংশ সময় মূল শব্দের আদি স্বর অ > আ, ই / ঈ > ঐ হয় )
সূত্র:
সমগ্র ব্যাকরণ কৌমুদী - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর,
বাঙ্গালা ব্যাকরণ- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ- মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী
***আধুনিক বাংলা অভিধান ২০১৬
*** অন্যান্য অভিধান
*** ইন্টারনেট

পতিতপাবন মণ্ডল (পাবন)
বাংলা বিভাগীয় প্রধান
সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ
ঢাকা।



1 comment:

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.